Blog Archive

Saturday, June 27, 2009

জন্মদিনে চিড়িয়াখানায়

মনু আজ চিড়িয়াখানায় যাবে। তাই খুব ব্যস্ত। মা কেবল বলছে চারটি বাজতে এখন ঢের দেরি। কিন্তু মনু কি তা শোনে! সে এখনি জামা-কাপড় পরে তৈরী। কিন্তু বাবাটা যে কি! এখনি দু’টো বেজে গেল, কখন যে আসবে তার ঠিক নেই! মনু বার২ করে বলে দিয়েছে দু’টোর মধ্যে দোকান বন্ধ করে চলে আসতে, তাও আসে না! বাবা আসবে, খাবে, তৈরী হবে...তারপর না যাওয়া! উফ্‌, মনু যে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। টিম্পিকেও তৈরী থাকতে বলেছে। টিম্পি, মনু, রুমা আর তপু বাবার সাথে চিড়িয়াখানায় যাবে। আজ মনুর জন্মদিন। চিড়িয়াখানা থেকে ঘুরে এসে সন্ধেবেলা সে কেক কাটবে। আজ সকাল থেকে মনু পড়তেই বসেনি, তার জন্য কেউ বকেও নি। ঘুম থেকে উঠেই আজ সে দাদু, দিদা, বাবা, মাকে প্রণাম করেছে। দিদু সকালেই একটা সুন্দর পেন তাকে দিয়েছে। মনু এখনও পেনসিলেই লেখে, তবে আজ পেনে লিখে দেখবে। কিন্তু এখনও বাবা আসেনা কেন? যাবে নাকি একবার তপুর বাড়ি! মা কি ছাড়বে? আজ মা একটুও বকেনি তাকে। ঐ সাইকেলে আওয়াজ হল, বাবা এলো। আঃ কি মজা! মনু দৌড়ে গেল বাবার কাছে। বাবা কি যেন একটা মাকে দিয়ে দিল। মনু ঠিক দেখে নিয়েছে। নিশ্চয়ই এটা তার! খুব ইচ্ছে করছে বাবা কি এনেছে দেখতে। কিন্তু নাঃ, সন্ধেবেলা যখন পাবে তখনই দেখবে মনু। ‘ও বাবা, তাড়াতাড়ি তৈরী হও! দেখ তিনটে বাজে। কখন বেরবে?’ বাবা হেসে খেতে বসলেন। মনুকেও কাছে টেনে নিলেন।
এখন ঠিক চারটে বাজে। মনু, টিম্পি, তপু আর রুমা বাবার সাথে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। আজ ট্যাক্সি করে সবাই চিড়িয়াখানা যাবে। মনু আর ওর বন্ধুদের খুব মজা। বাবা ঐ ট্যাক্সি ডাকছে। সকলে ট্যাক্সিতে উঠল। বাবা সামনে। পিছনে বন্ধুদের সাথে মনু। একটা জানলার দিকে মনু, আজ তার জন্মদিন। আর একটাতে টিম্পি, কারণ সে সব চেয়ে বড় কিনা! তাই এ ব্যবস্থা। ট্যাক্সিকাকু দরজা দুটো লক্‌ করে দিল। এবার তারা সোজা চিড়িয়াখানায়! ‘ট্যাক্সিকাকু, খুব জোড়ে ট্যাক্সি চালাবে কিন্তু!’ রুমা বলে উঠল। তপুরাও হ্যাঁ২ করে উঠল। রাস্তার গাড়িগুলো পাশ দিয়ে সাঁ-সাঁ করে সরে যাচ্ছে।
এখন মনুরা চিড়িয়াখানায়। ওরা বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে। উঃ, কি গন্ধরে বাবা, টেঁকাই দায়!-ভাবল মনু। বাঘটার দিকে তাকিয়ে মনুর খুব কষ্ট হল। আহা, আজ মনুর জন্মদিন, আজ তো সকলের খুশি থাকা উচিত। অথচ দেখ বাঘটার কি কষ্ট! একটা খাঁচায় ওকে পুরে সবাই মজা দেখছে। চোখ দু’টো ওর কি করুন! মনু ভাবছে-‘আমি যদি এরকম একটা ছোট্ট খাঁচায় বন্ধ থাকতাম দিন-রাত! তপু, রুমাদের সাথে খেলতে পারতাম না, কোথাও যেতে পারতাম না, গল্পের বই পড়তে পেতাম না-উঃ, কি কষ্টটাই না হত! আহা, না জানি বাঘটারও কত কষ্ট! দুঃখে ও কেমন করে হাই তুলছে দেখ! ওর তো কিছুই করার নেই। তাই অমন দুঃখ দুঃখ মুখ করে আমায় দেখছে। ওর বোধ হয় ওর মা-বাবা-দিদা-দাদু-বন্ধুদের কথা মনে পরছে।’ রুমা বলল-‘এই মনু কি এত দেখছিস? অত কাছে যাস না, বাঘদাদা খেয়ে ফেলবে যে! আয় ও দিকে যাই বাঁদর দেখব।’ ওরা সবাই বাঁদরের খাঁচার দিকে চলল। বাবা সবার হাতে পপ্‌কনের প্যাকেট দিয়েছে। ওই তো বাঁদরের খাঁচা। আরেঃ, এখানে অনেক বাঁদর এক সাথে থাকে। এমা, একটা আবার কট্‌টুকুনি! মার কোলে বসে আছে। ওর নাম কি? এরা তো দেখে মনে হচ্ছে বেশ সুখি। আহা, বাড়ির সকলে এক সাথে আচ্ছে কিনা! তাই দুঃখটাও একটু কম। ঐ দেখ একটা বাঁদর কি সুন্দর কলা খাচ্ছে। ইসঃ, এটা আবার দাঁত খেঁচায়! এ নিশ্চয়ই ভিষণ দুষ্টু। টিম্পি পাখি দেখবে বলে বায়না ধরল। একটু দূরে ময়ূরের খাঁচা। বাবার পাশে একজন কি সুন্দর ময়ূরকে খাওয়াচ্ছে! মনুরও ইচ্ছে হল ময়ূরকে খাওয়াবে। সে ময়ূরকে নিজের পপকন থেকে একটা২ করে খাঁচার জালে ধরছে আর ময়ূরটা কি সুন্দর টেনে নিচ্ছে। তপু নিজেরটা সব খেয়ে নিয়ে এখন হা করে দেখছে। পাশেই রাজহাঁসের খাঁচা। প্যাঁক২ করে ডাকছে। ‘কি বিচ্ছিরি ডাকেরে বাবা!’- রুমা বলল। টিম্পি অমনি বলে উঠল-‘কোথায় বিচ্ছিরি!’ মনু ওদের ও খাওয়াতে গেল। বাবা বলল-‘ওরা কিন্তু কামড়ে দেয়’। কিন্তু আজতো মনুর জন্মদিন আজ কি কখন কেউ মনুকে কামড়ায়! আহা, ওদের কি খিদেই না পেয়েছে! তপু হঠাৎ বলে উঠল ও খরগোস দেখবে। বাবা আবার একজনকে জিজ্ঞেস করে তাদের খরগোসদের কাছে নিয়ে এলো। একটা ছোট্ট খরগোস ঠিক মনুর কাছে এসে দু’পায়ে উঠে দাঁড়াল। যেন মনুকে বলছে-‘মনু, জন্মদিনে আমায় খাওয়াবে না!’ মনু অমনি বাবার কাছে আরেকটা প্যাকেট চেয়ে আনল। বাবা বলল ‘আর কেন! চল সবাই বাইরে গিয়ে খাব।’ কিন্তু মনু কি ঐ ছোট্ট খরগোস বন্ধুকে না খাইয়ে যেতে পারে! আহাঃ, ওর পাশে একটা কানা খরগোস। ওর ও বোধ হয় খিদে পেয়েছে। ওরে, বাবাঃ সব খরগোস দেখছি মনুর কাছ থেকেই খাবে ঠিক করেছে। মনুর খুব ভাল লাগছে। আজ ওর কত বন্ধু হয়ে গেল। রুমা, টিম্পি, তপু-এমন কি বাবাও খরগোসদের খাওয়াছে।
দেখতে২ সন্ধে হয়ে এলো, এবার বাড়ি ফিরতে হবে। চিড়িয়াখানার এত বন্ধুদের ছেরে চলে যেতে হবে ভেবে মনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। দিনটা যদি আরো বড় হত! আরো ঘোরা যেত, আরো কত জনের সাথে বন্ধুত্ব হত! বাড়িতে যদিও মা, দাদু, দিদা-মনুর জন্য আপেক্ষা করছে। বাইরের ঘরটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে সাজান হয়ে গেছে! নাঃ, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেই হবে। চিড়িয়াখানা থেকে বের হওয়ার সময় মনু সব পশু বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল-‘আবার আমি তোমাদের কাছে ফিরে আসব।’ ওরা সকলে নতুন বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers