Blog Archive

Sunday, August 16, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০০

[পূর্বকথা - অর্জুন বারো বছরের বনবাস কালে প্রভাস তীর্থে এলে গোবিন্দ তাকে দ্বারকায় নিয়ে আসেন..সেখানে সুভদ্রাকে দেখে অর্জুনের ভাল লাগে...কথা প্রসঙ্গে পারিজাত হরণের কথা ওঠে...নারদ পারিজাতপুষ্প কৃষ্ণকে দিলে তিনি তা স্ত্রী রুক্মিণীকে পরিয়ে দেন... সে কথা শুনে সত্যভামার অভিমান হয়...তিনি আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন, কৃষ্ণ এসে তার মানভঞ্জন করেন এবং পারিজাত বৃক্ষ উপহারের আঙ্গিকার করেন...] 


শ্রীকৃষ্ণের সুরপুরী গমনঃ

নারদ কৃষ্ণকে বললেন –হে নারায়ণ, দেবতাদের মাতা অদিতি তার কুন্ডলের কারণে খুবই দুঃখিত। নরকাসুর অমরাবতীর সব দেবতাদের হারিয়ে বলপ্রয়োগ করে অদিতির কুন্ডল হরণ করেছে। পৃথিবীর পুত্র এই নরক দুর্মতি। তাকে না মারলে পুনরায় স্বর্গের বসতি প্রতিষ্ঠা হবে না। 


নরকাসুর হত্যা

শুনে গোবিন্দ নরকাসুরকে হত্যা করতে চললেন। 


নরককে হত্যা করে ষোল হাজার দেব কুমারীকে উদ্ধার করলেন। তারা স্বেচ্ছায় মুরারিকে বিবাহ করল। 


গোবিন্দ মাতা অদিতির কুন্ডল তাকে ফিরিয়ে দিলেন ও অমর নগরে চললেন। 

নন্দনকাননে প্রবেশ করতেই কুসুমরাজ পারিজাতের সৌরভে সকলে আমোদিত হলেন। কৃষ্ণ সাত্যকিকে বৃক্ষটি আনতে বললেন। শুনে সাত্যকি দ্রুত বৃক্ষের কাছে গেলে দেখল বহু রক্ষ তা পাহারা দিচ্ছে। 


তারা অস্ত্র হাতে তেড়ে এলে সাত্যকি তাদের বলে –নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে চাইলে যুদ্ধ না করে দ্রুত ইন্দ্রের কাছে গিয়ে সব জানাও। 

সকলে ইন্দ্রকে গিয়ে বলল –প্রভূ দ্রুত চলুন গরুড়ে করে তিনজন মানুষ এসে পারিজাত বৃক্ষের জন্য নন্দন বন ভাঙ্গছে। 

শুনে ইন্দ্রের মনে পরল গোবিন্দের পারিজাত নিতে আসার কথা ছিল। 
ক্রোধে তিনি থরথর, সহস্র লোচন কালচক্রের মত ঘোরে। নানা অস্ত্রে তিনি সমর সাজ করতে লাগলেন। হাতে বজ্র নিয়ে দেবরাজ যুদ্ধে চললেন। 

শচীদেবী বলেন –আমিও আপনার সাথে যাব, যুদ্ধ দেখব। 
শুনে ইন্দ্র নিজের বামে স্ত্রীকে বসালেন। সঙ্গে সখা জয়দেব ও পুত্র জয়ন্তকে সঙ্গে নিলেন। এভাবে চারজনে গজে করে নারায়ণ যেখানে আছেন সে স্থানে চললেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত লহরী, কাশীদাস কহেন, শুনে তরি ভববারি।
..................


শ্রীকৃষ্ণের সহিত ইন্দ্রের যুদ্ধঃ

কৃষ্ণ ও ইন্দ্রের যুদ্ধ শুরু হল। ছয়জনের অস্ত্রে অস্ত্রে আগুন ঝড়তে লাগল। 

উপেন্দ্রাণী-সত্যভামাকে দেখে ইন্দ্রাণী ক্রোধে বলেন –হে ভারতী, তোমার এত গর্ব যে আমার ভূষণ-পুষ্প হরণ করতে এসেছ! তোমার মর্যাদাবোধ থাকলে নিজে এগিয়ে গিয়ে যেখান থেকে পারিজাত উপড়েছ সেখানে রেখে এস। বামন হয়ে চাঁদ ধরার ইচ্ছে! আজ এমন শিক্ষা দেব যে সব গর্ব ভাঙ্গবে। 

সত্যভামা বলেন –শচী, মিছে গর্ব কর। তোমার ক্ষমতা আমি সব জানি। শাশুড়ির কুন্ডল যখন নরক হরণ করল তখন স্বামী আখণ্ডলকে(ইন্দ্র) বলে তা উদ্ধার করতে পারলে না! সে অসুর তো স্বর্গ লুটেপুটে ছারখার করল, তোমার ভাতার(স্বামী) তো কিছুই রক্ষা করতে পারল না। সেই নরকাসুরের পুরী ভেঙ্গে তাকে হত্যা করে আমার স্বামী হরি তোমার শাশুড়ি অদিতির কুন্ডল উদ্ধার করে আনলেন। এই পারিজাতের পুষ্পে কেবল তোমার একার কি ভাবে অধিকার হয়! সমুদ্র মন্থনে এর জন্ম। তাই এর বিভাগ সমান হবে। আমাদেরও ভাগ দিতে হবে। তুমি কেন একা পারিজাত পুষ্প ভূষণ করবে! দেখি আজ আমি পারিজাত নিয়েই যাব, কিভাবে তুমি রাখতে পার। 

সতী সত্যভামা ও শচীর কোন্দল শুনে মুখে বস্ত্র দিয়ে দেবতারা হাসতে থাকেন। 
আনন্দ লহরীতে নারদ মুনিকে হাসতে দেখে পুরন্দর ইন্দ্র অতিশয় রোষে(রাগে) কাঁপতে থাকেন। 


উপেন্দ্র(কৃষ্ণ) ও ইন্দ্রের স্বর্গে এমন যুদ্ধ দেখে ত্রিভুবন চমৎকৃত হল। স্বর্গে তাদের নানা অস্ত্রের প্রহার পৃথিবীর মধ্যে উড়ে আসে উল্কার আকার। দর্পক(কন্দর্প-কামদেব) ও জয়ন্তের যুদ্ধের তুলনাও দেওয়া যাবে না। শরজালে দুজনে গগন ছাইল। 
সাত্যকি সে সময় পারিজাত বৃক্ষতরু গরুড়ের উপর তুলল। তার সাথে জয়দেবের যুদ্ধ শুরু হল। 
খগেন্দ্র(গরুড়) ও গজেন্দ্রের(ঐরাবত) যুদ্ধও বর্ণনাতীত। তাদের গর্জনে ত্রৈলোক্যজন বধির হল। গজেন্দ্র তার দাঁত দিয়ে গরুড়কে প্রহার করে। গরুড়ও গজেন্দ্রের শুড় নখে বিদ্ধ করেন। গরুড়ের নখাঘাতে গজেন্দ্র অস্থির। তার সর্বাঙ্গ খন্ড খন্ড করে রক্তধারা বহে। গজেন্দ্র আর শূন্যে থাকতে পারল না, অজ্ঞান হয়ে ভূমিতে পরল। সারা শরীর দিয়ে রক্ত বহে, শরীর কাঁপতে থাকে মাতঙ্গরাজের, তিনি পর্বতের উপর গিয়ে পড়লে পর্বত অর্ধেক তলিয়ে গেল। আখন্ডল ইন্দ্র সেই পর্বতের উপর গিয়ে দাঁড়ালেন। 

ইন্দ্র বলেন –কৃষ্ণ তুমি গর্ব করো না। আমি যুদ্ধে ভয় পাইনি কিন্তু আমার বাহন গরুড়ের আঘাতে অস্থির। চল আমরা ভূমিতে নেমে যুদ্ধ করি। 

ইন্দ্রের কথায় কৃষ্ণ হেসে বলেন –তুমি যেখানে বলবে সেখানে গিয়েই আমি যুদ্ধ করতে রাজি। 

পুনরায় যুদ্ধ শুরু হল। ইন্দ্র যত অস্ত্র মারেন, কৃষ্ণ দামোদর সহজেই তা কাটেন। 
সর্ব অস্ত্র ব্যর্থ হচ্ছে দেখে মনে মনে লজ্জা পেয়ে ইন্দ্র অতি ক্রোধে কৃষ্ণের উপর বজ্র প্রহার করলেন। 

গোবিন্দ গরুড়কে বলেন –সুরপতি ইন্দ্র বজ্র অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। সুদর্শন চক্র এক্ষুনি তা তিল তিল করে কাটবে। কিন্তু তাতে মুনি বাক্য ব্যর্থ হবে ভেবে আমার খারাপ লাগছে। তুমি এর উপায় বার কর খগেশ্বর। নিজের একটি পক্ষ বজ্রের উপর ফেল। 


প্রভুর আজ্ঞা পেয়ে গরুড় ঠোঁটে নিজের একটি পালক উপড়ে বজ্রের উপর ফেললেন। বজ্র পক্ষ চূর্ণ করে পুনরায় ইন্দ্রের কাছে ফিরল। একবারই বজ্র ব্যবহার করা যায়। দেখে আখন্ডল অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান। 

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers