Blog Archive

Tuesday, July 27, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত – ১৫

উপমন্যু ও আরুণির উপাখ্যানঃ



সৌতি বলেন –মুনিগণ এবার পুরাণের কাহিনী শ্রবণ করুন।

অবন্তীনগরে ধৌম নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার গুরুকুলে শিষ্যরা শিক্ষাগ্রহণ করতে আসত।

এক শিষ্যকে গুরু তার গরুগুলিকে দেখভালের দায়িত্ব দিলেন। গুরুর আজ্ঞায় শিষ্য গরুগুলির সেবা করে।

একদিন গুরু বললেন –তোমায় বেশ পুষ্ট দেখছি! তুমি কি খাও, কোথায়ই বা এত খাবার পাও!

শুনে শিষ্য জোর হাতে বলে –বাছুরদের দুধ পানের পর আমি দুধ পান করি।

গুরু বললেন –এবার বুঝেছি বাছুরগুলি এত দূর্বল কেন। আর কখনও এমন কাজ করো না।

কিছুদিন পর আবার গুরু শিষ্যকে ডেকে বললেন –আবারও তোমায় বেশ পুষ্ট লাগছে, এর কারণ কি! তুমি কি আবার বাছুরদের বরাদ্দ দুধ পান করছ!

শিষ্য বলে –না প্রভু! তুমি বারণ করার পর থেকে আমি আর দুধ খাই না। ভিক্ষা করে পেট ভরাই।

গুরু বলেন –এবার থেকে ভিক্ষা করে সব আমার কাছেই এনে দিও।

এর কিছুদিন পর আবার গুরু শিষ্যকে বললেন –এখনও তোমায় বেশ পুষ্ট লাগছে!

শিষ্য বলে -গাভীদের চরতে দিয়ে আমি সকালে ও সন্ধ্যায় ভিক্ষা করি। সকালেরটা তোমায় দিই। সন্ধ্যার ভিক্ষায় নিজের চলে যায়।

শুনে গুরু হেসে বলেন –সন্ধ্যার ভিক্ষা বেশি হয়। সেটি তুমি নিজে নিচ্ছ! এবার থেকে সকাল ও সন্ধ্যার ভিক্ষাও আমায় দেবে।

এরপর শিষ্য গাভী নিয়ে বনে গেল। খিদেতে তার পাগলের মত অবস্থা। সারা বনে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে ফেরে। শেষে অর্ক বা আকন্দের কোমল পাতা খেয়ে পেট ভরায়। কিন্তু ধিরে ধিরে সে দূর্বল হয়ে পড়ল। এমনকি চোখেও কিছু দেখতে পাচ্ছে না! তবু গরু চরান বন্ধ করল না।

ঘুরতে ঘুরতে শেষে সে এক কূপে গিয়ে পড়ল। সমস্ত দিন গেল সন্ধ্যা উপস্থিত হল। সব গরুরপাল গৃহে ফিরে এল।

কিন্তু শিষ্যের দেখা নেই। গুরু চিন্তিত হলেন। নিজেই বনে শিষ্যকে খুঁজতে বেরলেন।
বনে গিয়ে গুরু ‘উপমন্যু, উপমন্যু’ নাম ধরে ডাকতে লাগলেন।
উপমন্যু কূপের ভিতর থেকে বললো –আমি এখানে আছি।
গুরু এগিয়ে এসে বললেন -তুমি কূপের মধ্যে পড়লে কি করে!
উপমন্যু বলে –আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি না, প্রভু! অর্কের পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে গেছি।
গুরুর অনুশোচনা হল। তিনি উপমন্যুকে সঙ্গে সঙ্গে দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারদের স্মরণ করতে বললেন।
শিষ্য জোড়হাতে বহু স্তব করলে আবার চোখে দেখতে পেল। গুরুর হাত ধরে সে কূপ থেকে উঠে এলো।
গুরু সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আশির্বাদ করলেন। সেই আশির্বাদে চারবেদে উপমন্যু পন্ডিত হলেন। গুরু আজ্ঞায় তিনি গৃহে ফিরে গেলেন।


আরুণি নামে গুরুর আরেক শিষ্য ছিল। গুরু তাকে ডেকে একদিন বললেন –ধানের ক্ষেতে আল ভেঙেছে। সব জল বেরিয়ে যাচ্ছে। যাও আল ভাল করে বাঁধ দাও।

আরুণি ক্ষেতে গিয়ে আল বাঁধার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু জলের বেগে বারবার আল ভাঙতে লাগলো। জল বেরিয়ে যাচ্ছে! যদি গুরু রাগ করেন! এই ভেবে সে নিজেই শুয়ে পড়ে আলে বাঁধ দিল।

সমস্ত দিন গেল, সন্ধ্যা নেমে এলো। তবু শিষ্যকে ফিরতে না দেখে গুরু চিন্তিত হলেন। শেষে শিষ্যের খোঁজে বের হলেন।

ক্ষেতের মাঝে গিয়ে তিনি শিষ্যকে ডাক দিতে লাগলেন।
শিষ্য বলে –আমি আলে শুয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করলাম তবু বাঁধ দিতে পারলাম না। তাই নিজেই শুয়ে বাঁধ দিচ্ছি।

গুরু তাকে উঠে আসতে বললেন। শিষ্য উঠে এসে গুরুকে প্রণাম করলেন।

গুরু আরুণিকে আশির্বাদ করে বললেন –তুমি চারবেদ ও ছয় শাস্ত্রে পন্ডিত হও।

আরুণি গুরুকে প্রণাম করে গৃহে ফিরে গেলেন। তাকে গুরু উদ্দালক উপাধি দিলেন।

গুরুকুল
..............................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers