Blog Archive

Sunday, August 31, 2014

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৩

হিড়িম্ব–রাক্ষস বধঃ 
 

ভীম ও হিড়ম্বা যখন কথোপকথন করছিলেন হিড়ম্ব তাদের দুর থেকে নিরীক্ষণ করল। হিড়িম্বা ভুবনমোহন রূপে বিদ্যু ঝলকে ভীমের বামদিক আলো করে বসে আলাপ করছে। খোপায় তার ফুলের মালা, গলায় মুক্তা-মানিক-প্রবালের মালা দুলছে। পায়ে নূপুর কঙ্কণ, বসন ভূষণ সজ্জায় যেন স্বর্গের বিদ্যাধরী, যৌবনের মোহে নবীন, কথায় প্রিয় সম্ভাষণ দেখে মনে হয় দম্পতী যুগল যেন কথা কয়। 
দেখে হিড়িম্ব ক্রোধে জ্বলতে লাগল। ভগিনীকে ডেকে সে বলে -এই জন্য তোর এত দেরি হচ্ছে! কুলের কলঙ্কিনী তুই, তোর জীবনকে ধিক্কার। হে পাপিনী তুই এক মানুষকে স্বামীরূপে লোভ করছিস! আমার ক্রোধ তুই ভুলে গেলি! আমার আহারে ব্যাঘাত ঘটালি! সেই কারণে আগে তোকে মারব তারপর এদের মেরে আহার করব। এত বলে চোখ লাল করে, দাঁত কড়কড় করতে করতে সে হিড়িম্বাকে মারতে গেল। 
ভীম তা দেখে বলে – রাক্ষস তোর লজ্জা করল না, বোনকে অচেনা পুরুষদের স্থানে পাঠালি। তুই পাঠালি তাই সে এলো ও মদনের শরে আক্রান্ত হয়ে আমাকে কামনা করল। আমার সামনে তুই আমার কামপত্নী, নিজের বোনকে যা খুশি বললি, আবার অহঙ্কার করে মারতে আসছিস! এখনি তোকে যমের দ্বারে পাঠাব। 
বেশি গর্জন করলে মা-ভাইদের ঘুম ভেঙ্গে যাবে ভেবে ভীম রাক্ষসকে দুরে টেনে নিয়ে গেল। 
ভীমের কথা শুনে হিড়িম্ব দুহাত বাড়িয়ে তাকে মারতে এগিয়ে এলো। হেসে কুন্তীপুত্র তাকে একটানে নিজের দিকে টেনে নিলেন। এভাবে রাক্ষস ও ভীমের ভীষণ যুদ্ধ শুরু হল। ভীম এই যুদ্ধে পরম আনন্দ পাচ্ছিলেন। দেখে মনে হল দুটি হাতি পরস্পরকে শুঁড়ে টেনে মাটিতে ফেলছে। দুই মোষ যেন মাথা ঠুকেঠুকে যুদ্ধ করছে। দুই মত্ত সিংহ যেন দাঁত কড়মড় করে ঘনঘন নিশ্বাস সিংহনাদ দিচ্ছে। মেঘেরা যেন আহ্লাদে গর্জন শুরু করেছে। তাদের আস্ফালনে বৃক্ষ ভেঙ্গে পড়তে লাগল। বন্যপ্রাণীরা পালাতে লাগল। সম্পূর্ণ বন তাদের গর্জনে কাঁপতে লাগল। 
কুন্তী ও চারভাই শব্দে জেগে উঠলেন। কুন্তী পাশে সুন্দরী চিন্তিতা হিড়িম্বাকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলেন। আশ্চর্য হয়ে দ্রুত উঠে বসে তিনি হিড়িম্বাকে জিজ্ঞেস করলেন –কে তুমি অপ্সরা, নাগিনী না বনের দেবী! কোথা থেকে এলে! 

হিড়িম্বা কুন্তীকে প্রণাম করে বলে – জাতে আমি রাক্ষসী। এ বনেই আমার বাস। আমার ভাই হিড়িম্ব মহাযোদ্ধা বীর রাক্ষস। আপনাকে ও পাঁচভাইকে ধরে আনার জন্য আমাকে পাঠায়। কিন্তু আপনার পরম সুন্দর পুত্র ভীমকে দেখে আমি তাকে স্বামীরূপে কামনা করি। দেরি দেখে ভাই এখানে চলে আসে এবং আপনার ছেলের সাথে এখন তার যুদ্ধ হচ্ছে। 
হিড়িম্বার মুখে সব শুনে চারভাই যুদ্ধস্থানে উপস্থিত হলেন। ভীম-হিড়িম্বের বর্ণনাতিত সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ হতে দেখলেন। তাদের যুগল পর্বতের মত লাগল। দুজনেই ধুলোয় ধূসর। কুয়াসায় যেন পর্বত আচ্ছাদিত। দুজনেই দুজনকে টানছে। তাদের নিশ্বাস ঝড়ে বৃক্ষ উড়ে গেল। 
সব দেখে যুধিষ্ঠির চেঁচিয়ে বললেন- ভাই রাক্ষসকে ভয় পেয় না। আমরা ঘুমাচ্ছিলাম তাই তোমাদের ঝগড়ার কথা কিছু জানতে পারিনি। এখনি সব ভাই মিলে রাক্ষসকে মারব। 
শুনে দুঃখিত হয়ে ভীম বলেন – কেন আমায় সন্দেহ করছ। এখনি আমি রাক্ষস বিনাশ করব। তোমারা দুরে দাঁড়িয়ে দেখ। বলে হাত বাড়িয়ে হিড়িম্বকে মারতে গেলেন। 
অর্জুন বলেন – রাক্ষসের সাথে অনেক যুদ্ধ করলেন, অনেক পরিশ্রম হল, এখন আপনি বিশ্রাম করুন, আমি এই দুষ্ট নিশাচরের বিনাশ করব।

অর্জুনের কথায় ভীম আরো রেগে গেলেন চুল ধরে হিড়িম্বকে মাটিতে আছড়ে ফেললেন। চড়-চাপড়-ঘুষি-পদাঘাত চলতে লাগল। পাখির মত তাকে শেষ করলেন। মাঝখান থেকে দুইখান করলেন। তারপর ভাইদের দেখালেন। পঞ্চভাই পরষ্পরকে আলিঙ্গন করলেন। চারভাই বৃকোদর ভীমের বহু প্রশংসা করতে লাগলেন। 
অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে ব্যগ্র হয়ে বলেন- ঐ সামনে একটা গ্রাম দেখতে পাচ্ছি এখনি সেখান থেকে কেউ এসে সব দেখে দুর্যোধনকে খবর দেবে, তাই এখানে আমাদের থাকা নিরাপদ নয়, শীঘ্র অন্য স্থানে যাওয়া উচিত। এই সব ভেবে কুন্তী ও পাঁচভাই দ্রুত সেস্থান থেকে গমন করলেন। 

হিড়িম্বা কুন্তীর সাথেই যেতে লাগল। হিড়িম্বাকে দেখে ভীম রেগে গেলেন। চেঁচিয়ে বললেন – রাক্ষসরা সহজেই মায়া করতে পারে। মোহিনীরূপ ধরলেও স্বভাব একই থাকে। সময় গেলে এও আমাদের মারবে। ভায়ের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সে আমাদের সাথে চলেছে। এক চড়ে তোকেও ভায়ের কাছে পাঠাব। 
এই বলে ভীম হিড়িম্বাকে মারতে এল। 

যুধিষ্ঠির তাকে বাঁধা দিয়ে বলেন- ভীম ধর্মে বলে স্ত্রীজাতিকে বধ করা অন্যায়। তুমি কেন এমন পাপ কাজ করছ! তোমাকে মহা বলবান হিড়িম্ব মারতে পারল না, এর কি শক্তি যে তোমায় সংহার করবে! 
যুধিষ্ঠিরের কথায় ভীম শান্ত হলেন।
হিড়িম্বা কাতর কণ্ঠে কুন্তীকে বলে –কায়মনোবাক্যে আমি সত্য অঙ্গীকার করছি তুমি ছাড়া আমার আর গতি নেই। তোমাকে মিথ্যে বলছি না, তুমিও নারী আমার মনোকষ্ট তুমি বুঝবে। কামবশে অজ্ঞান হয়ে আপন ভাই ও কুল ত্যাগ করে তোমার পুত্রকে ভালবাসলাম। এখন সব হারিয়ে আমি তোমার শরণে এসেছি। শরণাগতের উপর ক্রোধ অনুচিত, আপনি দয়া করে আমার ব্যবস্থা করুন। সব সময় আমি আপনার সেবা করব। সব সঙ্কট থেকে উদ্ধার করব। আপনি ভীমকে আজ্ঞা করুন আমাকে গ্রহণ করার জন্য। না হলে এখনি আপনার সামনে আমি প্রাণত্যাগ করব। কৃতাঞ্জলি করে আমি সবিনয়ে এ অনুরোধ জানাচ্ছি। না হলে অধর্ম অবশ্যই হবে।
 
হিড়িম্বার এত কথা শুনে দয়াময় যুধিষ্ঠির বলেন – হিড়িম্বা মন থেকে সত্য কথা বলছে। কেউ শরণ চাইলে তাকে রক্ষা করতে হয়। ভাই ভীম তুমি হিড়িম্বাকে নিয়ে সুখে বনের ভিতর বিচরণ কর । পরে আবার আমরা দেখা করব। আমার বাক্য লঙ্ঘন করো না। 


ধর্মপুত্রের আজ্ঞা পেয়ে হিড়িম্বা খুশি হল এবং ভীমকে নিয়ে শূণ্যপথে চলে গেল। নানা বনে উপবনে যেখানে খুশি তারা ঘুরে বেড়াতে লাগল মনের আনন্দে। কত নদ-নদী-পাহাড়-পর্বত ঘুরলো, নতুন নতুন সাজে পরস্পরকে আকর্ষণ করে বহুদিন কাটাল। এর কিছু পরেই ঋতুযোগে হিড়িম্বা গর্ভবতী হল। ভয়ঙ্কর মূর্তির এক পুত্র সে জন্ম দিল। জন্মমাত্র পুত্র মহাবীর যুবক হল। তার বিশাল শরীর ঘটের মত মাথা ও খাড়া খাড়া চুল – ভীম তার নাম রাখল ঘটোৎকচ। এই মহা বলবান হিড়িম্বাপুত্রই হবে ইন্দ্রের একাঘ্নী শক্তির আধার। ঘটোৎকচ মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ভীমকে কৃতাজ্ঞলি সহ দন্ডবৎ করে বলেন – আজ্ঞা করুন আমরা নিজেদের স্থানে যাই। যখনই স্মরণ করবেন অবশ্যই উপস্থিত হব। 

মাতা ও পুত্র ভীমের আজ্ঞা পেয়ে উত্তরদিকে নিজেদের স্থানে যাত্রা করল। ভীম আবার মা ও ভাইদের সাথে মিলিত হলেন। তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরতে লাগলেন। কোন স্থানে এক রাত্রের বেশি অবস্থান করলেন না। পরিধানে গাছের ছাল, মাথায় জটার ভার। কোথাও ব্রাহ্মণ কোথাও তপস্বী রূপে তারা থাকতে লাগলেন। পথে লোক দেখলে বনে লুকিয়ে পরতেন। যেখানে কেউ থাকেনা সেখানেই আশ্রয় নিতেন। ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল, মৎস্য ও অনেক দেশে বহু কষ্টে ভ্রমণ করে বেরাতে লাগলেন।

হঠাৎ একদিন ব্যাসদেব পান্ডবদের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তাকে দেখে কুন্তীদেবী এগিয়ে এসে সবার সাথে ব্যাসকে প্রণাম জানালেন। ব্যাসকে দেখে কুন্তী নিজেকে সংবরণ করতে পারলেন না। বহু বিলাপ করতে করতে কাঁদতে লাগলেন। 
বেদব্যাস তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন - আমাকে কি আর বলবে, সবই আমি জানি। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা অধর্ম করল তোমাদের সাথে। তাই আজ তোমাদের বনে বনে ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তারা যা করেছে সব আমার গোচরে এসেছে সে জন্যই তোমাদের দেখতে এলাম। তিনি পুত্রবধূকে মনস্থির করে দুঃখ করতে বারণ করলেন এবং আশির্বাদ করলেন অচিরেই সব দুঃখ দুর হবে। 
ব্যাস বলেন – তোমার পুত্রদের গুণ তুমি যান না, আমি সব জানি। ধর্মবলে, বাহুবলে সকলকে জয় করবে, সাগরান্ত ভূমন্ডলের সম্পদ হবে। এখন আমি যা বলছি সাবধানে শোন। বহু দুঃখে অনেক বনে ঘুরলে। এখন কাছেই একচক্রা নামে এক নগর আছে। কিছুদিন সেখানে বিশ্রাম কর। গোপনে ছন্মবেশে ছয়জনে বাস কর সেখানে যতদিন না আমি ফিরে আসি। 
এত বলে ব্যাসদেব তাদের নিয়ে একচক্রা নগরে চললেন। সেখানে এক ব্রাহ্মণের গৃহে তাদের থাকার ব্যবস্থা হল। ব্রাহ্মণের ঘরে ছয়জনকে রেখে ব্যাসদেব চলে গেলেন।
......................................

Wednesday, August 13, 2014

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬২

পান্ডবের নিকট হিড়িম্বার আগমনঃ 


নিশাচরী হিড়িম্বা দুর থেকে ভীমকে দেখতে লাগলো। ভীমের সুন্দর দেহ ঘন ঘন অবলোকন করে হরষিত হল। পাহাড়ের মত উচ্চ, শালগাছের তেজী চারার মত তেজ, চাঁদের মত মুখ, পদ্মের মত চোখ, সিংহের বিক্রম, হাতদুটি হাতির মত বলশালী, শঙ্খের মত গম্ভীর স্বর, পাখির ঠোঁটের মত নাক – ভীমের শরীরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সে অনঙ্গ(মদন) বাণে বিদ্ধ হল। 

হিড়িম্বা চিন্তা করলো- এমন সুন্দর রূপ ইহলোকে যক্ষ–রক্ষ-মানুষের মধ্যে সে দেখেনি। 
সে ভাবল – আমি ভাগ্যবতী আজ বিধি এঁনার সাথে আমায় মেলালেন। এঁনাকেই আমি স্বামীরূপে বরণ করব। ভাই আমার দুরাচারী। এমন সুন্দর মানুষকে মেরে মনের সুখে খেতে চায়! একে আমি বাঁচাব, স্বামীরূপে লাভ করে চিরকাল এর সাথে সুখে কাটাব। 

-এতসব কামনা করে কামরূপা নিশাচরী হিড়িম্বা দিব্যরূপে সুন্দরী নারী হল। পূর্ণচন্দ্রের মত তার মুখটি হল, নয়ন হরিণের মত চঞ্চল, ভারি স্তন, সুগঠিত স্থূল নিতম্ব। ভুরুটি কামে ধনুকের মত বাঁকা, তিলফুলের মত সুচারু নাসিকা, কানদুটি শকুনিকেও হারায়, উরু দুটি হস্তির মত যেমন বলশালী তেমনি কলাগাছের মতই সুন্দর, মত্ত হস্তিনীর মত তার চলন। চাঁপাফুলের মত তার শরীরের মোহিত করা অঙ্গ শোভা, দেখে মুনিরাও মোহিত হবেন। 
সলজ্জ ভাবে সে ভীমের পাশে এসে বসল ও কোকিলের মত মৃদু সুকন্ঠে বলল – কে তুমি, কোথা থেকে, কি কারণে এ বনে এসেছো! দেবতার মত প্রায় দেখতে এই চারজন যারা মাটিতে ঘুমাচ্ছে তারাই বা কে হন! নিদ্রারতা এই ঘন শ্যামা নিরুপমা নারীই বা তোমার কে হন! 
এই ঘনবনে সবাই অচেতনে নিদ্রা যাচ্ছেন- যান এটি একটি রাক্ষসের বাসস্থান। তোমাদের একটুও ভয় নেই, মনে হচ্ছে খুব দু;সাহস! এই বন পাপাচারী ভয়ঙ্কর হিড়িম্ব রাক্ষসের। সে আমার ভাই হয়। আমাকে এখানে তোমাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। মানুষের শত্রু সে, মাংসের লোভী - তোমাদের খেতে চায়। 
তোমার দেহ সৌন্দর্য দেখে আমার কাম ভাব জাগ্রত হয়েছে, তোমাকে স্বামীরূপে বরণ করতে চাই। আমি মিথ্যে কথা বলছি না, স্বামী! রাক্ষসের থেকে সাবধান হও। তুমি যদি আজ্ঞা কর এক্ষুনি তোমায় অন্যস্থানে নিয়ে যাই। 

হিড়িম্বার কথা শুনে মেঘের মত গম্ভীর স্বরে ভীম বলেন – তোমায় সুলক্ষণী দেখতে, কিন্তু অনীতির কথা বললে যা সভ্য মানুষের মত নয়। মা আর ভাইদের ছেড়ে এক নারীর সাথে চলে যাব এমন দুরাচারী আমি নই। সকলকে রাক্ষসের মুখে ফেলে আমি তোমার সাথে সুখে বাস করবো কামশরে অজ্ঞান হয়ে এমন কাজ করতে, এমন বাক্য বলতে তোমার লজ্জা হল না! 

এত শুনে মৃদু স্বরে যোড়হাতে হিড়িম্বা সুন্দরী বলে –আজ্ঞা করুন মহাশয়! আপনার যারা প্রিয় আমি তাদের প্রাণ রক্ষা করব। আমার দুষ্ট ভাই এখনই এখানে আসবে, তাই আমি আপনাদের সাবধান করছি। এনাদের সবাইকে জাগিয়ে আপনারা আমার পিঠে উঠে বসুন। আমি আপনাদের অন্য নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাব। 

ভীম বলেন –আমার মা ও ভাইরা সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, তাদের কেন বিরক্ত করব। তোমার ভাইকে! তাকে আমি চিনি না, ভয়ও পাই না। কীটের মত আমি রাক্ষসদের মারি। দেবতা-গন্ধর্ব-যক্ষ কেউ আমার পরাক্রমের সামনে দাড়াতে পারবে না। হে সুন্দরী সুলোচনা, আমার হাতদুটি দেখ, যমও এদের ভয় পান। তুমি এখানে থাকবে কি যাবে তা তোমার ইচ্ছে। তবে ভাইকে গিয়ে পাঠাতেও পার। দেখি সে আমার কি করতে পারে। 

ভীম ও হিড়ম্বা যখন আলাপ করছেন তখন ওদিকে বোনের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে প্রচন্ড রেগে হিড়িম্ব রাক্ষস সেখানে উপস্থিত হল। তার অতি ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে মনে হয় যুগান্ত সামনে দাঁড়িয়ে। ঘোড় গর্জন করতে করতে সে এগিয়ে এলো। 

ভাইকে এভাবে আসতে দেখে হিড়িম্বা সুন্দরী স্তব্ধ হয়ে গেল। সকরুন স্বরে ভীমকে বললো –দেখ আমার ভাই প্রচন্ড রেগে দুরন্ত বেগে আসছে। সে অতি নিষ্ঠুর, নির্দয়। অনেক মানুষ খেতে দেখেছি তাকে। তুমি আর দেরি করো না। এটা এই রাক্ষসেরই ভূমি। আজ্ঞা কর প্রভূ, আমার পিঠে করে তোমাদের নিয়ে আকাশে উড়ে যাই, যেখানে বলবে নিমেষে সেখানে নিয়ে যাব-আমি মায়াবিনী। 

হিড়িম্বের রাগ ও হিড়িম্বার উদ্বেগ দেখে ভীম হেসে বললেন- স্থির হও রাক্ষসনন্দিনী, ভয় করো না, তুমি বসে আমার কৌতুক দেখ। আসুক তোমার ভাই, মুহুর্তে সে পতঙ্গের মত প্রাণ দেবে। আমি দুঃখিত যে কিছুক্ষণ পর তোমায় ভাতৃশোকে মুজ্ঝমান হতে হবে ভেবে। 

এই ভারত সঙ্গীত রস শ্রবণ করলে বাড়ে পুণ্য যশ, এটি শুভ ও পরম পবিত্র। কলির কলুষতা নাশ করতেই কাশীরাম রচনা করলেন আদি পর্বে পান্ডব চরিত্র।

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers