Blog Archive

Thursday, July 1, 2010

বিষ্ণু দশ অবতার রূপে :


বিষ্ণুর অবতার: মৎস(মাছ), কুর্ম(কচ্ছপ), বরাহ, নৃসিংহ(নর-সিংহ), বামন, পরশুরাম(পরশু অর্থাৎ কুঠার সহ রাম), রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি।

১) মৎস্য (মাছ) হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর প্রথম অবতার।মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ। মৎস্যের উর্ধ্বশরীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুর এবং নিম্নাঙ্গ একটি মাছের।

মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।

প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।
..................
২)কূর্ম অবতারে বিষ্ণু কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
কূর্ম অবতারে বিষ্ণু ক্ষীরোদসাগরে সমুদ্র মন্থনের সময় মন্দর পর্বতকে নিজের পিঠে ধারণ করেন। এভাবে বিষ্ণু, মন্দর পর্বত ও বাসুকি নাগের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন সংঘটিত হয়।
..................
৩)বরাহ অবতারে শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
বরাহ অবতারে দেখা যায় রাক্ষস হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীর উপর নানা রকম অত্যাচার করলে পৃথিবী বিষ্ণুর কাছে রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান। বরাহ বা বন্য শুকরের রূপ ধরে বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেন। এই বরাহ অবতারে পৃথিবীর সাথে বিষ্ণুর বিবাহ হয়।
........................
৪)নৃসিংহের অবতারে বিষ্ণু সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।

ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত নৃসিংহের কাহিনিটি: নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। দাদার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন।
তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন:
হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে।
এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন।
এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না।'

হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন।
দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।

ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।

হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা।

প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন।

হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন।
তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।

ভাগবত পুরাণ-এ আরও বলা হয়েছে:
হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পর সকল দেবতাই নৃসিংহদেবের ক্রোধ নিবারণে ব্যর্থ হন। নৃসিংহকে শান্ত করতে শিব প্রথমে বীরভদ্রকে প্রেরণ করেন। বীরভদ্র ব্যর্থ হল। বিফল হন স্বয়ং শিবও।(বীরভদ্র ব্যর্থ হলে শিব স্বয়ং মনুষ্য-সিংহ-পক্ষী রূপী শরভের রূপ ধারণ করেন। এই কাহিনির শেষভাগে বলা হয়েছে, শরভ কর্তৃক বদ্ধ হয়ে বিষ্ণু শিবের ভক্তে পরিণত হন। )
সকল দেবগণ তখন তাঁর পত্নী লক্ষ্মীকে ডাকেন; কিন্তু লক্ষ্মীও স্বামীর ক্রোধ নিবারণে অক্ষম হন।

তখন ব্রহ্মার অনুরোধে প্রহ্লাদ এগিয়ে আসেন। ভক্ত প্রহ্লাদের স্তবগানে অবশেষে নৃসিংহদেব শান্ত হন। প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নৃসিংহদেব প্রহ্লাদকে রাজা করে দেন।
.....................
৫)বামনের রূপে বিষ্ণু ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন।
বামনঅবতারঃ অদিতি ও কশ্যপের পুত্র বামন। তিনি দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। ইনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রূপেও পরিচিত।
পরাক্রমী রাক্ষসরাজ বালি, যিনি প্রহ্লাদের নাতি-যোড় করে ইন্দ্রের অমরাবতী হরণ করলে বিষ্ণু বামন অবতারে আবির্ভূত হন। রাজা বালি গুরু শুক্রাচার্যের সাহায্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করলেন।

খর্বাকার বামন হাতে বাঁশের ছত্র নিয়ে অতিথি হয়ে সেখানে আমন্ত্রিত হলেন। বামন রাজার কাছে তিনপদ জমি প্রার্থনা করলেন। গুরু শুক্রাচার্যের নিষেধ সত্তেও ছোট বালক ভেবে রাজা তা দিতে অঙ্গিকার করেন।

তখন বিষ্ণু স্বরূপে এসে একপদে পৃথিবী, অপরপদে আকাশ অধিকার করেন। তিনি তৃতীয়পদ কোথায় রাখবেন রাজাকে প্রশ্ন করলে রাজা বালি সমস্ত বুঝতে পারেন এবং বিষ্ণুর সামনে নিজের মস্তক নত করে সেখানে বামনরূপী বিষ্ণুর তৃতীয় চরণ রাখার অনুরোধ করেন।
...............
৬)পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

পরশুরাম অবতারঃ আদিকালে জলের মধ্যেই ঘটেছিল প্রথম প্রাণের সঞ্চার। জলচর প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তত্কালীন প্রাণিজগতে ঈশ্বরের উপস্থিতি তাই মত্স্যরূপেই ছিল স্বাভাবিক।
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো। সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর। ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে।

প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল। ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে।

স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ। সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ। অর্ধেক নর অর্ধেক পশু।

তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ। বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত।

এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে।

তিনিই পরশুরাম। এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে। ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে। পরশুরামের হাতে তাই হরধনু।

পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট।
এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন। গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে।
গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন। ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন।

সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার। দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে।

বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী। সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়।

এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা। ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র।

একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ)।

পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।

অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান।

তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন।
প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান।

কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন।

পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি।

কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল। শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি। পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা।
পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা—এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে;
মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান।

পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল।

পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে।

তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন।
লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি।
ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ।
এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।
.....................

৭)রাম অবতারে অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

রামচন্দ্র প্রাচীন ভারতের কিংবদন্তী রাজা। হিন্দু ধর্মে রামকে বিষ্ণু দেবতার সপ্তম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়।

রাম দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত হিন্দুধর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ও দেবতাগুলির একটি।
রামের চরিত্রের সবচেয়ে ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যায় রামায়ণ নামের মহাকাব্যে।
অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর স্ত্রী কৌশল্যার ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে রামের জন্ম হয়। হিন্দুধর্মে রামকে পুরুষোত্তম মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রামের স্ত্রী হলেন সীতা। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মী দেবীর একজন অবতার ও ত্রুটিহীনা নারীর রূপায়ন হিসেবে গণ্য করে।
..............................
৮)কৃষ্ণ অবতারঃ দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

হিন্দুধর্মানুসারে, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তাঁকে স্বয়ং ভগবান এবং বিষ্ণুর পূর্ণাবতারও মনে করা হয়।

গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করেন। তাঁর এই আগমন ঘটে কখনও মনুষ্যরূপে, কখনও বা মনুষ্যেতর প্রাণিরূপে এবং একেই বলা হয় অবতার।

কৃষ্ণের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে। ঋগ্বেদে একাধিকবার কৃষ্ণের উল্লেখ আছে। কৃষ্ণকে দেবকীপুত্র বলা হয়েছে। মহাভারত , বিভিন্ন পুরাণ , শ্রীমদ্ভাগবত এবং বৈষ্ণবকাব্যে যে কৃষ্ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাঁর আবির্ভাব দ্বাপর যুগে।

প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে মাতুল কংসের কারাগারে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণের জন্ম। তাঁর জন্মসূত্রে এ দিনটি প্রতিবছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়।
...........................
৯)বুদ্ধ, কলিযুগে অবতীর্ণ হন।

বুদ্ধ অবতারে বিষ্ণু অসুরী শক্তির বিনাশ ঘটানোর জন্য আবির্ভূত হন। ইনিই গৌতম বুদ্ধ-বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা।
.....................

১০) দশম অবতার হচ্ছে কল্কি। তিনি এখনও অবতীর্ণ হননি।হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

কল্কি অবতারঃ কল্কি বিষ্ণুর ভবিষ্যৎ অবতার মানা হয়। পুরাণকথা অনুসারে কলিযুগ পাপে পূর্ণ হলে বিষ্ণু দুষ্টের দমনের জন্য কল্কি অবতারে আবির্ভূত হবেন। কল্কি অবতার কলিযুগ অবসানের জন্য হবে। যখন কলিযুগে মানুষ ধর্মপথ ত্যাগ করবে তখন ইনি প্রকাশ পাবেন।

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯

ইন্দ্রের প্রতি বাল্যখিল্যাদির অভিসম্পাত:

ইন্দ্র

মুনিরা আবার জিজ্ঞাসা করেন -বল সূত-নন্দন, ইন্দ্রের কি কারণে পাপ হল! কশ্যপমুনি ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের একজন। তার পুত্রের পাখি হওয়ার কারণই বা কি!
সৌতি তখন মুনিদের আবার কাহিনী বর্ণনা শুরু করলেন।

পূর্বে কশ্যপমুনি একবার যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। অনেক মুনি, ঋষি এবং দেবতারা তাঁকে সাহায্য করেন।
ইন্দ্র যজ্ঞের জন্য পর্বত প্রমাণ কাঠ বন থেকে নিয়ে আসেন। ফেরার পথে তিনি দেখেন আঙ্গুলী সমান বাল্যখিল্য মুনিরা পলাশের পাতা মাথায় দিয়ে ধিরে ধিরে যাচ্ছেন। একটি গরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ফলে যে গর্ত তার ক্ষুরে সৃষ্টি হয় তা মুনিরা পার হতে পারছেন না। দেখে ইন্দ্র তাঁদের উপহাস করলেন।
তাতে বাল্যখিল্যমুনিরা রেগে গিয়ে বললেন –মত্ত দুরাচার! তুমি অহঙ্কারে আমাদের চিনতে পারছ না!

তাঁরা ইন্দ্রকে জব্দ করার জন্য ইন্দ্রের চেয়েও শক্তিশালী বীরের আবির্ভাবের জন্য যজ্ঞ শুরু করলেন। ইন্দ্র ভয় পেয়ে ব্রহ্মা এবং কশ্যপমুনিকে তুষ্ট করলেন।

ব্রহ্মার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বাল্যখিল্য মুনিরা অনেক দুর এগিয়েও যজ্ঞ বন্ধ করলেন।

বাল্যখিল্য মুনিরা বললেন –এতদুর এগিয়েও সব পন্ড হবে!

কশ্যপ মুনি বললেন –তা কেন! এর ফলে পক্ষীন্দ্র অর্থাৎ পক্ষীদের রাজা জন্মাবেন এবং সেই ত্রিভুবন জয় করবেন।

মুনিরা ইন্দ্রকে শান্তনা দিয়ে বললেন আর কখনও কাউকে উপহাস করো না, অহঙ্কারও করো না, ব্রাহ্মণের ক্রোধ থেকে কারো নিস্তার নেই। এরপর তারা বিদায় সম্ভাষণ জানান।

কশ্যপমুনি তার স্ত্রী বিনতাকে বলেন ব্রত সফলরূপে শুনলে তার গর্ভে খগেন্দ্র অর্থাৎ পক্ষীরাজ জন্মাবেন। শুনে বিনতা খুশি হলেন। এভাবে কশ্যপের পুত্র হলেন গরুড়।



যখন গরুড় স্বর্গে গেলেন, তার ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে সকলে ভয় পেলেন। সকল দেবতা তাদের সকল অস্ত্র গরুড়ের উপর প্রয়োগ করলেন। কামরূপী অর্থাৎ ইচ্ছানুযায়ী গরুড় তার আকৃতি পরিবর্তন করে দেবতাদের আচরণে হাসতে লাগলেন। যত অস্ত্র তার উপর ফেলা হতে লাগলো, ততোই গরুড়ের তেজ বাড়তে লাগলো। মেঘের মত গর্জন করতে লাগলেন গরুড়।
তিনি ভাবলেন ইন্দ্র ও অন্য দেবতারা তার শক্তির পরিচয় বুঝতে না পেরেই তাঁর বিরোধীতা করছেন। এই ভেবে তিনি তাঁর পাখনার ঝাপ্‌টায় ইন্দ্রপুরী ধুলায় ভরালেন। ইন্দ্রপুরী লন্ডভন্ড হতে লাগলো।
ইন্দ্রও পবনকে ধুলা উড়ানোর আজ্ঞা করলেন। সকল দেবতা গরুড়কে আবার বাঁধতে চাইলেন।

এতসব দেখে গরুড় রেগে উঠলেন এবং আক্রমণ শুরু করলেন। কারো হাত ভাঙ্গল, কারো বা পা। সকলের মাথা ফেটে রক্তগঙ্গা! কারো বা হাড় ভেঙ্গে গেল। সকলে পালাতে চেষ্টা করলেন। পশ্চিমে রবি পালালেন। অশ্বিনীকুমাররা উত্তরে পালালেন।
সকল দেবতা কেবল অমৃতের জোরেই বেঁচে গেলেন এবং বার বার এসে যুদ্ধ করতে লাগলেন। কামরূপী গরুড় শেষে জ্বলন্ত আগুনে পরিণত হলেন। প্রলঙ্কারীরূপে সকলকে জ্বালাতে লাগলেন। আর সহ্য করতে না পেরে দেবতারা হার মানলেন।


তখন গরুড় চন্দ্রলোকে এলেন। চন্দ্রের চারপাশে তিনি অগ্নিকে দেখলেন। শেষে এক উপায় বার করলেন। সোনার বর্ণ হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অগ্নি পার হলেন। গরুড় দেখলেন অতি সূক্ষ্ম এক রন্দ্র। তার মধ্যে দিয়ে কামরূপী প্রবেশ করে অমৃত নিয়ে আনন্দে তা পাখায় নিয়ে নিমেষে চলে গেলেন।

তার মহাকায়রূপে যেতে ইচ্ছে করল। তার এই রূপ দেখে বিষ্ণু রেগে গেলেন। তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হল। বিষ্ণু চার হাতে যুদ্ধ করলেন। গরুড় তার পাখনা ও নখের সাহায্যে যুদ্ধ করলেন। শেষে গরুড়ের বীরত্বে বিষ্ণু খুশি হলেন এবং বর দিতে চাইলেন।

গরুড় প্রার্থনা করলেন তিনি বিষ্ণুর থেকেও উচ্চস্থানে অধিষ্ঠান করতে চান। তিনি আরো বললেন, এই সংসারে তিনি অজর, অমর ও অপরাজিত হতে চান। বিষ্ণু তাকে সেইরূপ বরই দিলেন।

হৃষ্টচিত্তে গরুড়ও বিষ্ণুকে বর দিতে চাইলেন। এবার বিষ্ণু তাকে নিজের বাহনরূপে প্রার্থণা করলেন। গরুড় তাকে সেই বরই প্রদান করলেন।


এভাবে দু’জনে দু’জনকে বর দিলেন। গরুড় বিষ্ণুর বাহন হলেন এবং বিষ্ণুর বরে তাঁর উচ্চস্থানে অর্থাৎ বিষ্ণুর রথের উপর আসনগ্রহণ করেন।

এরপর তীব্রবেগে গরুড় ফিরে চললেন। ইন্দ্র তাকে দেখে রেগে বজ্র মারলেন।
হেসে গরুড় বলেন –বজ্র ব্যর্থ হলে ইন্দ্রকে লজ্জা পেতে হবে!
তাই তিনি নিজের দেহের একটি পালক ইন্দ্রকে উপহার দেন। তার আচরণে ইন্দ্র বিস্ময়াপন্ন হন এবং গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে চান।

ইন্দ্র বলেন –গরুড়ের তেজ দেখে তিনলোক ভয় পায়।

গরুড় লাজুক হেসে জানালেন তিনি সাগর এবং পৃথিবীকে এক ডানায় এবং অন্য ডানায় ইন্দ্রের অমর–নগরী নিয়ে উড়ে যেতে পারেন।
এভাবে একশ বছর উড়লেও তার কোন কষ্ট হবে না।

ইন্দ্র বললেন –তা সত্যই বটে!
তিনি অনুরোধ করলেন গরুড় দয়া করে অমৃত ফিরিয়ে দিক।

গরুড় তখন ইন্দ্রকে তাঁর মার দাসীরূপের দুঃখের কাহিনী জানালেন।

ইন্দ্র তাকে বললেন সর্পদের অমর করে কোন লাভ নেই। তারা সংসারের ক্ষয় করে। গরুড়ের যে শত্রু, ইন্দ্রেরও সে শত্রু। শত্রুকে তিনি অমৃত দান করতে পারেন না।

কিন্তু গরুড়ও মায়ের কাছে অমৃত দানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ!

শেষে ঠিক হল গরুড় সর্পদের অমৃত দেবেন এবং মাকে মুক্ত করবেন। সুযোগ বুঝে ইন্দ্র অমৃতভান্ডার লুকিয়ে ফেলবেন। এ পরিকল্পনায় দুই বন্ধুই খুশি হলেন।

ইন্দ্র গরুড়কে বর দিতে চাইলে গরুড় সাপদের খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করতে চাইলেন। ইন্দ্র তাকে সেই বর দিলেন। এবং ছায়ারূপে গরুড়ের সাথে চলতে লাগলেন।
আসলে ইন্দ্র সম্পূর্ণরূপে গরুড়কে বিশ্বাস করলেন না যে সে অমৃত ফিরিয়ে দেবে।

যা হোক্‌! গরুড় নাগলোকে গিয়ে সর্পদের ডেকে অমৃত তাদের হাতে তুলে দিলেন এবং মাকে দাসীত্ব থেকে মুক্ত করলেন।



গরুড় সর্পদের বললেন –যাও তোমরা স্নান করে এসে শুচি হয়ে অমৃত পান কর। ঐ দেখ সুধা কুশের উপর রাখা আছে। এই বলে গরুড় মাকে নিয়ে চলে গেলেন।

সকল নাগ স্নানের উদ্দেশ্যে গেলে ইন্দ্র সুধাভান্ড নিয়ে পালালেন। স্নান করে এসে নাগেরা সুধা দেখতে না পেয়ে হাহাকার করতে লাগল। তারা জানতে পারল ইন্দ্র তা নিয়ে গেছেন। সবাই তখন দৌড়ে সেই কুশ চাটতে লাগল। এভাবে চাটতে চাটতে তাদের জিভ চিরে গেল। সেই থেকে সাপেদের জিভ চেরা। অন্যদিকে সুধার স্পর্শে কুশ চিরদিনের জন্য পবিত্র হয়ে গেল।

গরুড়ের বিক্রম আর বিনতার দাসীত্ব মোচন, নাগেদের নৈরাশ্য, ইন্দ্রের অমৃত হরণ - এসব রহস্যের কথা যে জন শ্রবণ করবেন তার আয়ু এবং যশ বৃদ্ধি হবে দিনে দিনে। পুত্রার্থীর পুত্র হবে, ধনার্থীর ধন – যার উপর প্রসন্ন হন বিনতা নন্দন।

..............................

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮

সুধা আনিতে গরুড়ের স্বর্গে গমন:


গরুড় দাদাকে সূর্যের রথের সারথী করে মাকে মুক্ত করার জন্য স্বর্গে সুধা আনতে গেলেন।

এর পূর্বে ক্ষীরসিন্ধুর মাঝে দুঃখী মার সাথে দেখা করতে গেলে কদ্রু বিনতাকে রম্য-দ্বীপে কাঁধে করে নিয়ে যেতে বলেন।
বিনতা নিলেন কদ্রুকে, গরুড় নিলেন শতপুত্রকে। গরুড় সূর্যলোক দিয়ে গেলে বহু নাগ মারা যায়। কদ্রু ইন্দ্রের স্মরণে গেলেন। ইন্দ্র সকল জলধরকে মেঘে আকাশ ঢেকে দিতে বললেন। প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলে নাগেরা সূর্যের তেজ থেকে বাঁচল। অপূ্র্ব সুন্দর রম্য দ্বীপে শেষ পর্যন্ত নাগেরা পৌছাল। নাগেরা গরুড়কে আবার পিঠে করে আর এক দ্বীপে নিয়ে যেতে বলল।
গরুড় মার কাছে গিয়ে সে কথা জানাল।
বিনতা বললেন –তুমি দাসীপুত্র, তাই তাদের আজ্ঞা শুনতে হবে।

বিনতার দাসী হওয়ার কারণ শুনে গরুড়ের ক্রোধ হল। কদ্রুর কাছে সে জানতে চাইল কি ভাবে তার মাকে দাসীবৃত্তি থেকে মুক্ত করা যাবে। কদ্রু স্বর্গের অমৃত নিয়ে আসতে বললেন।

সুধা আনার আগে গরুড়ের খিদে পেল। মা তাকে সমুদ্রে গিয়ে নিশাচরদের খেতে আজ্ঞা দিলেন। এও বললেন সেখানে এক ব্রাহ্মণ আছেন, তাকে যেন না খায়। কারণ অগ্নি, সূর্য, বিষ-এর প্রতিকার আছে। কিন্তু ব্রাহ্মণের ক্রোধের থেকে নিস্তার নেই।
গরুড় জিজ্ঞাসা করলেন কি ভাবে ব্রাহ্মণকে চিনবেন!
বিনতা বললেন যাকে খেতে কষ্ট হবে সেই বুঝবে ব্রাহ্মণ।

বিনতার আশীর্বাদ নিয়ে গরুড় সুধা আনতে চললেন। চারপাশ কেঁপে উঠল। খিদের জ্বালায় গরুড় এক নিশ্বাসে সব মুখে পুড়লেন। কিন্তু পেটে জ্বালা শুরু হলে মার কথা মনে পড়ল এবং ব্রাহ্মণকে উদর থেকে বের হয়ে আসতে অনুরোধ করলেন। ব্রাহ্মণ তার ব্রাহ্মনীকে নিয়ে বের হলে গরুড় আবার স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

পথে পিতা কশ্যপের সাথে দেখা হলে তিনি পিতাকে খাদ্যের সন্ধান দিতে বললেন। কশ্যপ বললেন দেব-নরের বিখ্যাত এক সরোবর আছে সেখানে হাতি ও কচ্ছপের যুদ্ধ হচ্ছে, তার বৃত্তান্ত আগে শুন।
.............................................

গজ-কুর্ম্মের বিবরণ:

বিভাবসু ও সুপ্রতীক দুই ভাই। এরা মুনিপুত্র এবং মহাধনী। শত্রুরা হিংসা করে তাদের মধ্যে কলহ লাগাল। সম্পত্তির জন্য তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।

সুপ্রতীক, ছোটভাই, সে সম্পত্তির সমান ভাগ দাবি করতে লাগল। এভাবে বারবার বিভাবসুকে সম্পত্তি নিয়ে বিরক্ত করলে বিভাবসু রাগ করে ভাইকে শাপ দিল, হস্তী হয়ে সুপ্রতীক বনে বনে ঘুরে বেড়াবে। সুপ্রতীকও দাদাকে শাপ দিল, সে কচ্ছপ হয়ে জলে বাস করবে।

শত্রুর কথায় দু’ভাই বিবাদ করে সংসার নষ্ট করল।
শেষ পর্যন্ত একজন বনে আর একজন জলে গিয়ে বাস করতে লাগল। কখনও সামনাসামনি হলেই তারা যুদ্ধে মেতে উঠত।

কশ্যপ গরুড়কে বললেন তাদের গিয়ে ভক্ষণ করতে। এতে পৃথিবীর মঙ্গল হবে। পিতার আজ্ঞা পেয়ে খগরায় সেই স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
আকাশপথে দেখলেন গজ ও কুর্ম্মের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তিনি দুজনকে নখে ধরে উড়ে গেলেন এবং কোথায় বসে খাবেন তা ভাবতে লাগলেন।

এ সময় শত যোজন বিস্তৃত রৌহীণবৃক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানালেন তার ডালে বসার জন্য। ডালে বসলে ভারে ডাল ভেঙে গেল।



সেই ডালে বালখিল্য মুনিরা অধোমুখে জপ করছিলেন। তা দেখে গরুড় ভয় পেলেন। ডাল মাটিতে পড়লে মুনিদের মৃত্যু হবে, এই ভয়ে সে ঠোঁটে ডাল ও দুই নখে গজ ও কুর্ম নিয়ে উড়তে থাকলেন।

এভাবে বহুদিন গরুড় উড়তে লাগলেন। পিতা কশ্যপ গন্ধমাদন পর্বত থেকে গরুড়ের দুর্দশা দেখে মুনিদের স্তব শুরু করলেন। ছয় সহস্র মুনি সন্তুষ্ট হয়ে হিমগিরি পর্বতের দিকে গমন করলেন।

খগেশ্বর পিতার আজ্ঞায় সেই ডাল জীবজন্তুহীন পর্বতে ফেলে সেখানেই গজ-কুর্ম ভক্ষণ করলেন।

এরপর সুধা আনতে স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তার পাখার ঝাপ্‌টায় পর্বত উড়ল, সূর্য অন্ধকারে ঢেকে গেল, মেঘ-বৃষ্টি শুরু হল।

এসব দেখে ইন্দ্র বৃহস্পতিকে এই অশান্তির কারণ জানতে চাইলেন।

বৃহস্পতি বললেন –তোমার পূর্বের পাপের জন্য গরুড় এখানে আসছেন। সে সুধা স্বর্গ থেকে অবশ্যই নিয়ে যাবে। এত শুনে ইন্দ্র রেগে গেলেন। তিনি সকল দেবতাদের যুদ্ধে প্রস্তুত হতে বললেন।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers