Blog Archive

Tuesday, October 12, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৯


যযাতির প্রতি শুক্রের অভিশাপঃ

একদিন যযাতি দেবযানীর সঙ্গে বনবিহারে এলেন, নানা বৃক্ষে সুশোভিত অশোক বনে। শর্মিষ্ঠা সেখানে উপস্থিত হলেন। তার তিনপুত্রও পিতাকে দেখে ছুটে এলো। তিন সুন্দর পুত্র দেখে দেবযানী রাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন এদের পিতা কে!
রাজা নিরুত্তর থাকলে তার সন্দেহ হল। তিনি পুত্রদের সত্বর আত্মপরিচয় জানাতে চাইলেন এবং এস্থানে তারা কি কারণে এসেছে জিজ্ঞাসা করলেন।


তিনকুমার এত কথা শুনে বললো তাদের মার নাম শর্মিষ্ঠা এবং রাজাকে দেখিয়ে বললো ইনিই তাদের পিতা-এই বলে তারা রাজাকে প্রণাম করলো।
দেবযানীর ভয়ে রাজা বিরস বদনে শিশু তিনটিকে কোলে নিলেন।

সবকথা শুনে দেবযানী ক্রোধিত হয়ে শর্মিষ্ঠাকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন আগে সে বলেছিল এরা ঋষিকুমার অর্থাৎ সে মিথ্যাবাক্য বলেছিল!


একথা শুনে শর্মিষ্ঠা অবাক হলেন। করজোড়ে বললেন ধর্ম মতে তিনি মিথ্যা বলেন নি। দেবযানী তার ঈশ্বরী হওইয়ায় রাজাই ধর্মত তার পতি-সে কারণে তার পুত্রদের দেখে দেবী যেন ক্রোধ না করেন।

দেবযানী বললেন সেবিকা হয়ে শর্মিষ্ঠার সাহস দেখে তিনি স্তম্ভিত! কি সাহসে সে তার স্বামীকে ভোগ করে!

দেবযানী রাজাকেও ক্রোধের সঙ্গে বলেন –রাজা শুক্রাচার্যের বাক্য লঙ্ঘন করে সেবিকা গমন করেছেন-এ ঘোর পাপ কর্ম।

তাই তিনি আর রাজার সঙ্গে থাকবেন না।
এত বলে দেবযানী কাঁদতে কাঁদতে পিতৃগৃহে গমন করেন। রাজা বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাতে থাকেন, কিন্তু তার ক্রোধ দেখে তিনি ভয় পান। রাজাও তার সঙ্গে চললেন।

পিতার সামনে উপনিত হয়ে দেবযানী স্বামীর চরিত্রবর্ণনা করেন –অধর্মে প্রবৃত্ত হয়ে রাজা শুক্রের বাক্য লঙ্ঘন করে বৃষপর্বের কন্যা শর্মিষ্ঠার সঙ্গে রমণ করেছেন।

একথা শুনে শুক্র ক্রোধের সঙ্গে রাজাকে বলেন –রাজা সর্বধর্মজ্ঞাত পরম পন্ডিত হয়েও তার বাক্য লঙ্ঘন করলেন! গুরুবাক্য লঙ্ঘন করার অপরাধে তাকে জরা অঙ্গে ধারণ করতে হবে।

গুরুর শাপে রাজা কম্পিত হৃদয়ে করজোড়ে বললেন, প্রভুবাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। তিনি কামভাবে শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করেন নি। ঋতুদানে শর্মিষ্ঠা বারবার প্রার্থনা করায় তিনি তার ঋতু রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা না শুনলে তিনি মহাপাপে পতিত হতেন, নপুংসক হয়ে জন্মাতেন এবং নরকে যেতেন। ধর্মের ভয়েই তিনি ঋতুদান করেন। আর রাজার কাছে যে যা প্রার্থনা করে তা তিনি পূরণ করতে বাধ্য সে কারণেও এই কর্ম।

শুক্র বলেন -ধর্মের ভয়ে তুমি এ কাজ করলে, আমার ভয় তোমার ছিল না - এতো তোমার অহংকার!
এত কথা বলার সাথে সাথেই জরা এসে রাজাকে আক্রমণ করল।

নিজের এই বৃদ্ধ বেশ দেখে রাজা হতবুদ্ধি হলেন এবং দুঃখের সঙ্গে শুক্রকে বললেন এখনও তিনি যুবক রূপে সব কামনায় তৃপ্ত হননি এবং শুক্রের কন্যা দেবযানীও প্রথম যৌবনা, এভাবে বৃদ্ধ হয়ে তিনি সংসারের সব সুখ থেকে বঞ্চিত হলেন। প্রভু যদি কৃপা করেন তবে তিনি এই শাপ থেকে মুক্ত হন।

শুক্র বলেন, তার বাক্য খন্ডন হওয়ার নয়, যদি রাজার মন এখনো ভোগে আসক্ত থাকে তা হলে তিনি নিজের জরা অন্য কাউকে দিয়ে তা ভোগ করতে পারেন।

রাজা বলেন তার পাঁচ পুত্র যে তার জরা গ্রহণ করবে তাকেই তিনি রাজ্যভার দান করবেন।

শুক্র আশির্বাদ দিয়ে বলেন যে জন রাজার জরা গ্রহণ করবেন সে দীর্ঘায়ু হবেন রাজ্যের কল্যানে। তার বংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সে জন পরম পন্ডিত ও মহাতেজা হবেন।শুক্রের বাণী শুনে রাজা যযাতি দেবযানীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে গমন করেন।
..........................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers