Blog Archive

Wednesday, February 16, 2011

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৩

মহাভিষ রাজার প্রতি ব্রহ্মার অভিশাপ এবং শান্তনুর উৎপত্তিঃ
ব্রহ্মা

জন্মেজয় বলেন –মুনি খুব সংক্ষেপে সমস্ত বর্ণনা করলেন।
তিনি শুনে অবাক হলেন ত্রৈলোক্যপাবনী গঙ্গা বিষ্ণু অংশে যার জন্ম, তিনি শান্তনুর স্ত্রী হলেন কি রূপে!

মুনি বলেন –তবে শোন সকল কথা।

মহাভিষ নামে ইক্ষাকুবংশীয় এক রাজা ছিলেন। তিনি ইন্দ্রের সম্মতিতে সহস্রবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। দেবতা, ব্রাহ্মণ, দরিদ্র সকলকে তিনি তুষলেন। তার দানে পৃথিবী পূর্ণ হল।

যজ্ঞের পূণ্যফলে তিনি ব্রহ্মলোকে গেলেন। ব্রহ্মার সাথে তার সাক্ষাৎ হল। তিনি সেখানে বহুকাল অবস্থান করলেন।

একদিন রাজা দেখেন ব্রহ্মা ধ্যানে বসে আছেন এবং মুনিরা তাকে ঘিরে আছেন। ব্রহ্মার সভায় দক্ষাদি, প্রজাপতি, ইন্দ্র সবাই আসেন। দেব-ঋষি-মুনিরা নিত্য সেবা করছেন।
সভা আলো করে মুনিরা বসে আছেন এবং ব্রহ্মা যেন সেখানের মহারাজ। সে স্থানে মহাভিষও ছিলেন।



এ সময় গঙ্গাদেবী সেখানে ব্রহ্মার কাছে সাক্ষাৎ করতে এলেন। হঠাৎ প্রচন্ড বায়ু বইতে শুরু করল। বাতাসে দেবী গঙ্গার বসন উড়ে গেল। তা দেখে সকলে মাথা নিচু করে নিলেন।

কিন্তু গঙ্গার অপূর্ব দেহসৌষ্টব দেখে মহারাজ মহাভিষ মুগ্ধ হলেন এবং নিশ্চল নয়নে তাকে দেখতে থাকলেন। মহাভিষ রাজাও অতি রূপবান ছিলেন, গঙ্গাদেবীও তাকে দেখতে লাগলেন।

দু’জনকে মহামতি প্রজাপতি অবলোকন করেন এবং বলেন –আমার লোকে এসে রাজা অনীতি করলেন।

ব্রহ্মলোকে এসে তুমি মনুষ্য আচরণ করায় পুনরায় মর্তে জন্ম গ্রহণ কর। পুনরায় নিজ পূণ্যবলে তুমি এখানে আসবে।

সোমবংশে জন্মগ্রহণের আজ্ঞা পেয়ে চিন্তিত মহাভিষ মর্তে পতিত হলেন এবং সোমবংশের রাজা প্রতীপের গৃহে জন্মগ্রহণ করলেন।

গঙ্গাও ব্রহ্মাকে প্রণাম করে ফিরলেন। পথে তার সাথে অষ্টবসুর দেখা হল। তারা বিরস বদনে ফিরছিলেন। গঙ্গা তাদের দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।

তারা জানালেন বশিষ্টের অভিশাপে তাদের পৃথিবীতে জন্মাতে হবে-এই ভেবে তারা দুঃখিত। তারা আনন্দিত হলেন গঙ্গাকে দেখে। কারণ গঙ্গাই পাপীদের উদ্ধার করেন। তারাও গঙ্গাকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করলেন। গঙ্গা আশ্বাস দিলেন তিনি তাদের জন্য যথাসাধ্য করবেন। তারাই বলুন তিনি কি করতে পারেন।

অষ্টবসুরা অনুরোধ করলেন গঙ্গা মনুষ্যলোকে রাজরাণী হয়ে যান এবং তাদের সবাইকে গর্ভে ধারণ করুন। আরেকটি নিবেদন, তাদের জন্মমাত্র যেন গঙ্গা তাদের ভাসিয়ে দেন।


বসুদের কথায় গঙ্গা সম্মত হলেন। বসুরাও আনন্দিত হলেন।

কুরুবংশের ধার্মীক মহাতেজা রাজা ছিলেন প্রতীপ। তার প্রথম সন্তান দেবাপি অল্পবয়সে সন্ন্যাসী হলে তিনি দুঃখীত হন এবং গঙ্গাজলে প্রবীণ বয়সে তপ, জপ, ব্রত ও বেদ অধ্যয়ন করতে থাকেন।


বৃদ্ধ বয়সেও রাজার মদনের মত রূপ। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে গঙ্গা জল থেকে উঠে এসে রাজার ডান কোলে বসলেন। গঙ্গার রূপেরও শেষ নেই। যেন দ্বিতীয় চন্দ্রের কিরণ। দেখে কৌরবকুমার বিস্মিত হলেন।

রাজা বলেন –কি তব ইচ্ছা কন্যা আমায় বল।

গঙ্গা বলেন –তুমি কুরু শ্রেষ্ঠ। তোমায় আমি ভজনা করছি তুমি আমার পতি হও। স্ত্রী হয়ে পুরুষে যে নারী ভজনা করে, পুরুষ না ভজনা করলে পাপকারী হয়।

রাজা বলেন –আমি পরের স্ত্রীকে ভজনা করতে পারি না। পরের স্ত্রীকে কামনা করলে নরকে যেতে হয়।

গঙ্গা বলেন –আমি পরের স্ত্রী নই। আমি দেবকন্যা। তুমি আমায় কামনা করো।

রাজা বলেন –কন্যা এমন বাক্য বোল না। দক্ষিণ উরুতে তুমি এসে বসেছ, যেখানে পুত্র, কন্যা আর পুত্রবধূর স্থান। তাই তুমি আমার পুত্রবধূ হবে। পুরুষের বাম উরু স্ত্রীর আসন। ডান উরুতে বসেছ তাই তুমি কন্যা স্থানীয়া।
তিনি অন্যায় কর্ম করতে পারবেন না।

গঙ্গা বলেন –মহারাজ তুমি ধর্ম অবতার। তোমার বচনে আমি সম্মত হলাম। তোমার পুত্রকেই আমি বরণ করবো।
তবে আমারও কিছু অনুরোধ আছে। আমার প্রিয় কাজে কেউ বাধা দেবে না।

তবেই তিনি তার পুত্রকে গ্রহণ করবেন, এই বলে গঙ্গা অন্তর্ধান হলেন।
কন্যার বচনে রাজা প্রীত হলেন এবং স্ত্রীকে নিয়ে ব্রতাচার শুরু করলেন। দশমাস দশদিন পর রাজীব লোচন, চন্দ্রের মত মুখ, শান্তশীল পুত্র জন্মাল। নাম রাখা হল শান্তনু। তার ছোট ভ্রাতা হলেন বাহ্লীক। দিনে দিনে দুই ভ্রাতা বড় হন।


শান্তনু যখন যুবক তখন প্রতীক তাকে রাজনীতি, ধর্ম শিক্ষা দিলেন।
এবং একদিন তাকে ডেকে বললেন –আমার কথায় বিস্মিত হয়ো না। একদিন এক কন্যা আমার কাছে এলে আমি তাকে পুত্রবধূ করার অঙ্গীকার করি। পরিচয়ে যানি তিনি দেবকন্যা। তিনি যদি পুনর্বার তোমার কাছে আসেন তাকে তুমি গ্রহণ করো। তাকে কখনো তার কর্মে বাধা দিও না।

পিতার বাক্যে পুত্র সম্মত হলেন। শান্তনুকে রাজ্য দিয়ে রাজা বনে গেলেন।
..........................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers