Blog Archive
Monday, October 25, 2010
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩০
পুরুর জরাগ্রহণ ও যযাতির যৌবন-প্রাপ্তিঃ
দেশে ফিরে রাজা সিংহাসনে বসলেন এবং জ্যৈষ্ঠপুত্র যদুকে ডেকে বললেন শুক্রশাপে জরা তাকে আক্রমণ করেছে কিন্তু যৌবনভোগে তার মন এখনও শান্ত হয় নি। যদু তার জ্যৈষ্ঠ সন্তান এবং পরম পন্ডিত। সেই তার দুঃখ দুর করতে পারে, পিতার জরাগ্রহণ করে। এভাবে যযাতি পুত্রের কাছে পুত্রের যৌবন ভিক্ষা করলেন।
পিতার বাক্য শুনে যদু বিরস বদনে বললেন –জরার মত দুঃখ সংসারে আর কিছু নেই। শরীর শক্তিহীন হয়, দেহ হয় কুৎসিত, লোকে উপহাস করে।
তাই যদু পিতার জরা নিতে প্রস্তুত নন জানান। পিতার আরো চার পুত্র আছে তাদের এই প্রস্তাব দেওয়া হোক।
একথা শুনে রাজা ক্রোধ ভরে বললেন –জ্যৈষ্ঠ পুত্র হয়ে যদু পিতার বাক্য অমান্য করলেন তাই তার বংশের কেউ কোনদিন রাজা হবে না।
যযাতি এরপর তুর্বসুকে ডেকে সব বললেন এবং সহস্র বছর পর তিনি তাকে যৌবন দান করে জরা গ্রহণ করবেন–এ অঙ্গীকারও করলেন।
তুর্বসুও জরাগ্রহণে অপারগ হলেন। যযাতি তাকেও শাপ দিলেন পিতৃবাক্য অমান্য করায় তুর্বসু নীচজাতিদের রাষ্ট্রের দন্ডধর হবেন এবং তার বংশে যত পুত্র জন্মাবে তারা সকলে মূর্খ হয়ে অভক্ষ্য ভক্ষণ করবে।
এভাবে দেবযানীর দুই পুত্র কেউই যখন পিতার জরাগ্রহণ করলেন না, তখন রাজা শর্মিষ্ঠার পুত্রদের ডাকলেন।
শর্মিষ্ঠার জৈষ্ঠ্যপুত্র দ্রুহুও পিতার জরাযন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন না বললেন।
একথায় যযাতি তাকেও শাপ দিলেন যে দেশে চারজাতির ভেদ নেই সেই দেশের রাজা হবে তার ঔরসে। দ্রুহু যা আশা করবে সব নৈরাশ্যে ডুববে, তার মনকামনা কখনো পূর্ণ হবে না।
তারপর রাজা অনুকে ডাকলেন এবং তার যৌবন প্রার্থনা করলেন।
অনু বললেন –রাজন, জরাসম দুঃখ জগতে আর কিছু নেই। সদা অশুদ্ধ দেহ, অনাচার, কিছু খেলে উদরে তা জীর্ণ হয় না।
তাই সেও জরাগ্রহণ করতে পারবে না। রাজা ক্রোধে বললেন পিতার বাক্য অমান্য করায় অনু জরার যে যে দোষের কথা বলেছে সব ভোগ করবে এবং তার পুত্রেরা যৌবনে সবাই মারা যাবে।
এবার রাজা যযাতি চিন্তিত হয়ে সর্ব কনিষ্ঠ পুরুকে ডেকে পাঠালেন। বললেন সেই রাজার সর্বপ্রিয় পুত্র, সেই এখন তাকে সুখি করতে পারে।
পিতার বাক্য শুনে যোড়করে পুরু বলেন পিতার বাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। যে জন পিতৃবাক্য রক্ষা করে না সে ইহলোকে অপযশ পায় এবং নরকে গমন করে। তিনি পিতার কাছে জরা প্রার্থনা করলেন এবং তার যৌবন পিতাকে ভোগ করতে বললেন।
পুত্রের এই বাক্যে রাজা আনন্দিত হন। তার মুখ চুম্বন করে বলেন –ধর্ম পথে পুরুর বংশবৃদ্ধি হবে, তার বংশধররাই রাজা হবে।
তারপর তিনি শুক্রাচার্যকে স্মরণ করেন এবং পুরুকে জরাদান করে যৌবনপ্রাপ্ত হন।
এরপর যযাতি ধর্মকর্মে লিপ্ত হন। যজ্ঞহোমে দেবতাদের তুষ্ট করেন।
শ্রাদ্ধাদি তর্পণের দ্বারা পিতৃপুরুষদের সন্তুষ্ট করেন।
দরিদ্র ভিক্ষুকদের দান করেন, প্রজাদের প্রতি যতার্থ সেবা করেন, অতিথি অভ্যাগতদের সেবা করেন।
তার প্রতাপে দুষ্টেরা রাজ্য ত্যাগ করে।
রাজা কামরসে কামিনীদের তুষ্ট করেন, প্রিয় ভাষণে বন্ধুবান্ধব-মন্ত্রীদের তুষ্ট রাখেন।
এভাবে যযাতি সহস্র বছর রাজত্ব করেন। এসময় তার পূর্ববাক্য স্মরণে আসে। জরা পীড়িত পুত্রকে দেখে রাজা আপনাকে ধিক্কার করেন।
ভাবেন নিজের জরার জন্য তিনি পুত্রকে দুঃখ দিলেন, ভোগে মত্ত হয়ে তিনি পুত্রের দুঃখ দেখলেন না।
ভাবলেন কামুকের কাম কখনো পূর্ণ হয় না, যত ইচ্ছা করে তত তা বাড়ে, মন কখনও তৃপ্ত হয় না।
এসব কথা চিন্তা করে রাজা পুত্রকে ডেকে বলেন –বহু ভোগ আমি করেছি তোমার যৌবন নিয়ে। তুমি প্রকৃতই পুত্রকর্ম করে আমায় সন্তুষ্ট করেছ। তোমার মহিমা সংসারে প্রচারিত হবে। এখন তুমি আমায় জরাদান করে যৌবন গ্রহণ করো।
রাজা তাকে ছত্রদন্ড দান করবেন কথা দিলেন।
এতকথা বলে যযাতি জরাগ্রহণ করলেন এবং পুরুকে যৌবন ফিরিয়ে দিলেন। পুরু আপন যৌবন প্রাপ্ত হলেন।
রাজা পাত্র, মিত্র, অমাত্যদের ডেকে ঘোষণা করলেন পুরুই পরবর্তি রাজা হবেন।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র-রাজ্যের সকলকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন।
পুরুর অভিষেক দেখে প্রজারা রাজাকে প্রশ্ন করলেন বিজ্ঞ রাজা জ্যৈষ্ঠ পুত্র বিদ্যমান থাকতে কনিষ্ঠকে রাজা করলেন কেন!
রাজা বলেন -যে পুত্র পিতামাতার বাক্য অমান্য করে সে কোন শাস্ত্রমতেই পুত্রের যোগ্য নয়। পুরুই কেবল আমার প্রকৃত পুত্র-অন্যরা অকারণ। পুরু পরম পন্ডিত, সেই কেবল পুত্রের কর্ম করেছে। জরা পীড়িত পিতাকে যৌবন দিয়েছে। অন্য চারপুত্র পিতার বাক্য মানেনি। পিতৃ আজ্ঞায় পুরু সহস্র বছর জরাগ্রহণ করলেন সে কারণেই সে প্রকৃত রাজ্যের উত্তরাধিকারী।
প্রজারা বলেন শুক্র তার দৌহিত্রদের এই বঞ্চনা সহ্য করবেন না, আর শুক্রের ক্রোধ সকলেই অবদিত।
রাজা বলেন শুক্র নিজেই এই আশির্বাদ করেছেন যে পুত্র তার জরাগ্রহণ করবেন সেই হবে রাজ্যের প্রকৃত দাবিদার। প্রজারা একথায় সন্তুষ্ট হয়।
সকলের সহমতে পুরুর অভিষেক সম্পন্ন হয়।
যযাতি পুত্রকে রাজনীতির শিক্ষা দান করেন।
..........................................
Tuesday, October 12, 2010
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৯
যযাতির প্রতি শুক্রের অভিশাপঃ
একদিন যযাতি দেবযানীর সঙ্গে বনবিহারে এলেন, নানা বৃক্ষে সুশোভিত অশোক বনে। শর্মিষ্ঠা সেখানে উপস্থিত হলেন। তার তিনপুত্রও পিতাকে দেখে ছুটে এলো। তিন সুন্দর পুত্র দেখে দেবযানী রাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন এদের পিতা কে!
রাজা নিরুত্তর থাকলে তার সন্দেহ হল। তিনি পুত্রদের সত্বর আত্মপরিচয় জানাতে চাইলেন এবং এস্থানে তারা কি কারণে এসেছে জিজ্ঞাসা করলেন।
তিনকুমার এত কথা শুনে বললো তাদের মার নাম শর্মিষ্ঠা এবং রাজাকে দেখিয়ে বললো ইনিই তাদের পিতা-এই বলে তারা রাজাকে প্রণাম করলো।
দেবযানীর ভয়ে রাজা বিরস বদনে শিশু তিনটিকে কোলে নিলেন।
সবকথা শুনে দেবযানী ক্রোধিত হয়ে শর্মিষ্ঠাকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন আগে সে বলেছিল এরা ঋষিকুমার অর্থাৎ সে মিথ্যাবাক্য বলেছিল!
একথা শুনে শর্মিষ্ঠা অবাক হলেন। করজোড়ে বললেন ধর্ম মতে তিনি মিথ্যা বলেন নি। দেবযানী তার ঈশ্বরী হওইয়ায় রাজাই ধর্মত তার পতি-সে কারণে তার পুত্রদের দেখে দেবী যেন ক্রোধ না করেন।
দেবযানী বললেন সেবিকা হয়ে শর্মিষ্ঠার সাহস দেখে তিনি স্তম্ভিত! কি সাহসে সে তার স্বামীকে ভোগ করে!
দেবযানী রাজাকেও ক্রোধের সঙ্গে বলেন –রাজা শুক্রাচার্যের বাক্য লঙ্ঘন করে সেবিকা গমন করেছেন-এ ঘোর পাপ কর্ম।
তাই তিনি আর রাজার সঙ্গে থাকবেন না।
এত বলে দেবযানী কাঁদতে কাঁদতে পিতৃগৃহে গমন করেন। রাজা বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাতে থাকেন, কিন্তু তার ক্রোধ দেখে তিনি ভয় পান। রাজাও তার সঙ্গে চললেন।
পিতার সামনে উপনিত হয়ে দেবযানী স্বামীর চরিত্রবর্ণনা করেন –অধর্মে প্রবৃত্ত হয়ে রাজা শুক্রের বাক্য লঙ্ঘন করে বৃষপর্বের কন্যা শর্মিষ্ঠার সঙ্গে রমণ করেছেন।
একথা শুনে শুক্র ক্রোধের সঙ্গে রাজাকে বলেন –রাজা সর্বধর্মজ্ঞাত পরম পন্ডিত হয়েও তার বাক্য লঙ্ঘন করলেন! গুরুবাক্য লঙ্ঘন করার অপরাধে তাকে জরা অঙ্গে ধারণ করতে হবে।
গুরুর শাপে রাজা কম্পিত হৃদয়ে করজোড়ে বললেন, প্রভুবাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। তিনি কামভাবে শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করেন নি। ঋতুদানে শর্মিষ্ঠা বারবার প্রার্থনা করায় তিনি তার ঋতু রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা না শুনলে তিনি মহাপাপে পতিত হতেন, নপুংসক হয়ে জন্মাতেন এবং নরকে যেতেন। ধর্মের ভয়েই তিনি ঋতুদান করেন। আর রাজার কাছে যে যা প্রার্থনা করে তা তিনি পূরণ করতে বাধ্য সে কারণেও এই কর্ম।
শুক্র বলেন -ধর্মের ভয়ে তুমি এ কাজ করলে, আমার ভয় তোমার ছিল না - এতো তোমার অহংকার!
এত কথা বলার সাথে সাথেই জরা এসে রাজাকে আক্রমণ করল।
নিজের এই বৃদ্ধ বেশ দেখে রাজা হতবুদ্ধি হলেন এবং দুঃখের সঙ্গে শুক্রকে বললেন এখনও তিনি যুবক রূপে সব কামনায় তৃপ্ত হননি এবং শুক্রের কন্যা দেবযানীও প্রথম যৌবনা, এভাবে বৃদ্ধ হয়ে তিনি সংসারের সব সুখ থেকে বঞ্চিত হলেন। প্রভু যদি কৃপা করেন তবে তিনি এই শাপ থেকে মুক্ত হন।
শুক্র বলেন, তার বাক্য খন্ডন হওয়ার নয়, যদি রাজার মন এখনো ভোগে আসক্ত থাকে তা হলে তিনি নিজের জরা অন্য কাউকে দিয়ে তা ভোগ করতে পারেন।
রাজা বলেন তার পাঁচ পুত্র যে তার জরা গ্রহণ করবে তাকেই তিনি রাজ্যভার দান করবেন।
শুক্র আশির্বাদ দিয়ে বলেন যে জন রাজার জরা গ্রহণ করবেন সে দীর্ঘায়ু হবেন রাজ্যের কল্যানে। তার বংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সে জন পরম পন্ডিত ও মহাতেজা হবেন।শুক্রের বাণী শুনে রাজা যযাতি দেবযানীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে গমন করেন।
..........................................
Monday, October 11, 2010
মহালয়ার গান :)
Subscribe to:
Posts (Atom)