Blog Archive

Saturday, June 12, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত – ৪

সমুদ্র–মন্থন স্থানে মহাদেবের আগমন:

পার্বতীর কটুকথা শুনে মহাদেব ক্রোধিত হলেন। তিনি তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে সমুদ্রমন্থন স্থানে উপস্থিত হলেন। তাঁর ভয়ংকর রূপ দেখে জগৎ প্রমাদ গুনল।
…………………………



পুনরায় সিন্ধু মন্থন ও মহাদেবের বিষপান:

করজোড়ে সকল দেবতা তাঁর সামনে দাড়াল।
শিব বললেন -মন্থন বন্ধ হল কেন?
ইন্দ্র উত্তর দিলেন -মন্থন শেষ করে এখনি বিষ্ণু প্রস্থান করেছেন।
পূর্বেই মহাদেব ক্রুদ্ধ ছিলেন। ইন্দ্রের বাক্যে আরো ক্রোধিত হয়ে বললেন -দেবতাদের এত স্পর্ধা যে নিজেদের মধ্যে সমস্ত ভাগ করে নিলেন অথচ মহাদেবের কথা ভুলে গেলেন!

তিনি আদেশ দিলেন পুনর্বার মন্থনের। তাঁর কথা শুনে সকলে ভয়ে চুপ করে রইলেন।

তখন কশ্যপমুনি মহাদেবকে বললেন সিন্ধু-মন্থনের কারণ।

পারিজাতমালা দুর্বাসার গলায় ছিল। তিনি স্নেহ ভরে তা ইন্দ্রের গলায় পরান। হাতির পিঠে ইন্দ্র থাকায়, মালাটি হাতির দাঁতে পড়ল। হাতিটি মালাটির মূল্য না বুঝে তা শুঁড়ে করে মাটিতে ফেলল। এই দেখে দুর্বাসা ক্রুদ্ধ হলেন। ভাবলেন অহঙ্কারে ইন্দ্র তাঁর মালা ছিঁড়ে ফেলল। তিনি শাপ দিলেন ইন্দ্রের সাম্রাজ্য লক্ষ্মীহারা হবে। ব্রহ্মশাপে লক্ষ্মী পাতালে প্রবেশ করলেন।
লক্ষ্মীর অভাবে ত্রিলোকে হাহাকার পড়ে গেল। ব্রহ্মা সকলের এই কষ্টের কথা বিষ্ণুকে জানালেন। বিষ্ণুর আজ্ঞায় দেব ও দানব সমুদ্রমন্থন শুরু করল। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মী পাতাল থেকে উঠে আসলেন এবং বিষ্ণুর আজ্ঞায় মন্থন বন্ধ হল।

কশ্যপমুনি বললেন -আবার মহাদেব তাদের মন্থনের আদেশ দিচ্ছেন। পূর্বে বিষ্ণুর কৃপায় মন্থনকালে সকলে জীবিত ছিল, এখন বিষ্ণু বিনা সকলে ভীত। তাছাড়া প্রথমবার মন্থনের ফলে নাগরাজ প্রচন্ড আহত হন, তিনি এখনও সুস্থ হননি। বরুণ অর্থাৎ সমুদ্রেরও কষ্টের শেষ নেই। তাই তারা প্রার্থনা করছেন মহাদেব যেন আর মন্থনের আজ্ঞা না দেন।

শিব অনুরোধ করলেন -আমার জন্য একবার অন্তত সমুদ্রমন্থন কর, যাতে আমার আগমন অকারণ না হয়।
শিববাক্য কেউ অমান্য করতে পারলেন না, তাই পুনরায় সুরাসুর মন্থন শুরু করল।

পূর্ব শ্রমের ফলে সকলের শরীরই অশক্ত। নাগের ফণা দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। অত্যন্ত ঘর্ষণে মন্দর পাহাড় আগুনের মত তপ্ত। নাগের শরীর খন্ড খন্ড হতে থাকল। ক্ষীরোদ সাগরে বিষ বইতে লাগল। নাগের সহস্র মুখ দিয়ে বিষ উদ্গার হতে থাকল। সিন্ধুর ঘর্ষণের অগ্নি, নাগের গরলের অগ্নি, দেবতাদের নিশ্বাসের অগ্নি ও পর্বতের ঘর্ষণের অগ্নি- এই চারি অগ্নি মিলিত হয়ে এক হল। এভাবে চারদিকে দাবানলের সৃষ্টি হল। তিনলোকে হাহাকার শুরু হল।

সব কিছুই ত্রিলোচন শিব বিষণ্ণ নয়নে দেখতে লাগলেন।
দূরে থেকে সকল দেবতা তাঁর স্তুতি করতে থাকলেন। সকলে ভুতনাথকে(শিব) রক্ষা করতে বললেন।
শিব বললেন এবার মন্থনের ফলে যে রত্ন উঠবে তাই হবে তাঁর। সুতরাং এবার মন্থনে যে বিষ উঠল তা তিনি পান করলেন। কিন্তু সে বিষ তিনি পান করে কন্ঠে ধারন করলেন। এভাবে তাঁর কন্ঠ নীলবরণ ধারন করল। তার থেকেই তিনি নীলকন্ঠ নামে জগৎ বিখ্যাত হলেন।
স্বর্গ, মর্ত, পাতালের সকলে তা দেখে অবাক হয়ে গেল। সকলে হরের স্তব শুরু করল।

মহাদেব সকলকে আজ্ঞা দিলেন মন্দর পর্বত যেখানে ছিল সেখানে রাখতে এবং মন্থন বন্ধ করতে আজ্ঞা দিলেন। সব শুনে দেবতারা খুশি হলেন। কিন্তু কেউ মন্দর পর্বত যথাস্থানে রাখতে পারল না। তখন শিবই সেই কাজটি করলেন। এভাবে সমুদ্রমন্থন শেষ হল এবং যে যার দেশে ফিরে গেল।
……………

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers