Blog Archive

Thursday, December 16, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩১


যযাতির স্বর্গ গমনঃ
নৃপতি যযাতি রাজ্য ত্যাগ করে মুনিদের সঙ্গে বনে গেলেন। সেখানে কঠিক তপস্যা শুরু করলেন।

বনের ভিতর ফলমূলাহার করেন, অতিথি সেবা করেন। এভাবে সহস্র বছর কেটে যায়। শেষে তিনি সব কিছু পরিহার করে একমনে তপস্যা শুরু করেন এবং অস্তিচর্মসার হয়ে যান। এভাবে আরো দুই সহস্র বছর যায়।

শেষে যোগের মাধ্যমে তিনি শরীর ত্যাগ করে দিব্যরথে চড়ে ইন্দ্রের সভায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে যান ব্রহ্মলোকে। দশলক্ষ বর্ষ সেখানে অবস্থান করে আবার ইন্দ্রের সভায় ফিরে আসেন।

ইন্দ্র হেসে জিজ্ঞেস করেন প্রিয় পুত্রকে তিনি কি শিক্ষা দিয়েছেন। আর তিনি ব্রহ্মার সমাজ থেকে ফিরে এলেন কেন।

রাজা বলেন তবে অবধান কর পুত্রকে কি কি শিক্ষা দিলামঃ

শাস্ত্রানুসারে বিধি মতে রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে তাকে বলি পৃথিবীতে তারাই শ্রেষ্ঠ, যারা ক্রোধ করালেও ক্রোধী নয় না, গালি দিলেও কিছু বলে না, পরের দুঃখে যে পরোপকারী, মধুর কোমল বাক্য বলে মৃদু স্বরে।

নিজের অন্তরের দুঃখের কথা পরকে বলে না, কপটতা কুবৃত্তি করে না, সদা সত্য বাক্য বলে।
নিজেকে কষ্ট দিয়ে সেই পরিত্রাণ পাবে। পৃথিবীতে তার সমান শ্রেষ্ঠ কেউ হবে না। এমন ব্যক্তিদের বাক্যশুনে পুত্রের মত প্রজাদের পালন করবে।

দরিদ্রের দুঃখ বিনাশ করবে সাধ্য মত, ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধা করবে। বন্ধুদেরও সন্তুষ্ট করবে। চোর-দস্যুদের রাজ্যে স্থান দেবে না। বৃদ্ধদের পালন করবে। অতিথিদের অবহেলা করবে না।

এসব শিক্ষাদান করে রাজা রাজ্য ত্যাগ করেন ও বনে তপস্যা করতে যান।

ইন্দ্র বলেন –রাজা, তুমি পরম পন্ডিত। তোমার মত ধার্মীক কেউ নেই। তুমি নিজ ইচ্ছায় ইন্দ্রলোক, ব্রহ্মলোক ভ্রমণ করতে পারো। তুমি কি পূণ্য করলে ধরায় জন্মগ্রহণ করে!

রাজা বলেন –আমি বৃষ্টিধারা গুণতে পারি। আমার পূণ্য কথা অশেষ। স্বর্গ, মর্ত, পাতালে আমার তুল্য কাউকে দেখি না।

শুনে ইন্দ্র হেসে বলেন –অহংকার করে তুমি দেবতাদের সমাজকে নিন্দা করলে। এই পাপে তুমি ক্ষীণপূণ্য হলে। তাই তোমায় আর স্বর্গে স্থান দেওয়া যায় না।

এতে রাজা অবাক হলেন।
বললেন –আমার কপালে এই কর্মই ছিল। পাপের শাস্তি আমি নেব। কিন্তু আমার একটা প্রার্থনা আছে। পূণ্যবান লোকরা যে পথে আছেন সেই পথ দিয়েই যেন আমি পতিত হই।

ইন্দ্র বলেন –নিজ গুণে তুমি পুনরায় স্বর্গে আসবে।

এরপর রাজা যযাতি নিচে পতিত হলেন, যেন আকাশ থেকে সূর্য পতিত হলেন।

এই সময় শূণ্যে চারজন ডাক দিয়ে বলেন –কে পতিত হন!
পূণ্যবানের আজ্ঞায় রাজা শূণ্যে আটকে যান।

সেই অষ্টকরা বলেন –তুমি কোন মহাজন! কার পুত্র, সূর্য-অগ্নি-চন্দ্রের মতো তোমার তেজ। তুমি স্বর্গ থেকে চ্যুত হলে কেন!

রাজা বলেন –আমি যযাতি, পুরুর পিতা, নহুষের পুত্র। পূণ্যবানদের অবজ্ঞা করায় আমি ক্ষীণপূণ্য হয়ে স্বর্গচ্যুত হলাম। ধনহীনে যেমন পৃথিবীতে বন্ধুরা ত্যাগ করে, পূণ্যহীনে তেমনি স্বর্গ থেকে দেবতারা ত্যাগ করেন।

অষ্টক বলেল –কোথায় তুমি ছিলে! কেনই বা এরূপ হল!

রাজা বলেন –পৃথিবীর রাজারূপে অবস্থানকালে লক্ষ রাজা আমায় পূজা করেন। পুত্রকে রাজ্য দিয়ে বনে তপস্যা করতে গেলাম। শেষে স্বর্গে আমার স্থান হলো। স্বর্গসুখ বর্ণনাতীত! সহস্র বছর স্বর্গসুখ ভোগ করে ইন্দ্রের সভায় যাই। সেখানেও মহাসুখে সহস্র বছর অবস্থান করি। সেখান থেকে আবার ব্রহ্মলোকে। নন্দনকাননের কথা কি আর বর্ণনা করবো! অপ্সরীদের সাথে ক্রীড়া করলাম, কামরূপী হয়ে বেরালাম।

দৈবের নির্দেশে একদিন ইন্দ্র প্রশ্ন করলেন তার উত্তরে নিজ পূণ্যের গান গাইলাম। সে দোষেই আজ স্থানচ্যুত।

অষ্টকরা প্রশ্ন করলেন -স্বর্গ থেকে যারা পতিত হন তাদের কি গতি হয়!

রাজা বলেন –ক্ষীণপূণ্য করে সেইজন নরকে পতিত হন। তারা পুনরায় দেহ ধারণ করেন দ্বিপদ-চৌপদ প্রাণীরূপে। পশু, কীট, পতঙ্গ বিভিন্ন রূপ পান। শকুন, শেয়াল তাদের খায়। তারা বারবার জন্মায়, বারবার মরে। নিজের কর্মফল খন্ডন করতে পারে না।

অষ্টকরা শুনে দুঃখিত হন এবং এর প্রতিকার জানতে চান।

রাজা বলেন –যজ্ঞ, হোম, ব্রত, অতিথি সেবা, গুরু ব্রাহ্মণের সেবা, দেবতার আরাধনা, সুখদুঃখে সমান থাকা-এসবের মাধ্যমেই নরক থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।

অষ্টকরা বলেন –রাজা, তুমি পূণ্যবান। তোমার সমান কেউ নেই। তুমি এখানে নিশ্চিন্ত হয়ে অবস্থান কর। এখানে ইন্দ্রের ভয় নেই।
রাজা জানান তিনি ক্ষীণপূণ্য তাই স্বর্গে আর তার স্থান নেই।

শুনে অষ্টক, শিবি, বসু, প্রতর্দন রাজাকে ডেকে বলেন –আমাদের চারজনের যা পূণ্য আছে তা নিয়ে তুমি হেথায় অবস্থান করো।

রাজা বলেন –আমি কৃপণের মতো পরের দ্রব্য গ্রহণ করতে পারবো না।

শিবি বলেন –রাজা তুমি কিছু তৃণ দিয়ে আমাদের পূণ্য ক্রয় করো।
রাজার তাতেও ঘোর আপত্তি। ছেলেমানুষের মতো বাক্য। তৃণ দিয়ে পূণ্য ক্রয় করে লোকের উপহাস তিনি গ্রহণে অপরাগ।

এত শুনে তারা বলেন –রাজা তুমি আমাদের বাক্য না শুনলে আমরাও তোমার সাথে তুমি যেখানে যাবে সেখানে যাবো।

এতসব কথোপকথন যখন হচ্ছে সে সময় পাঁচটি দিব্যরথ সেথায় উপস্থিত হল। তাদের সে রথে করে ইন্দ্রের অমরাবতীতে আনা হল।

বৈশম্পায়ন বলেন –শুন মহারাজ, জন্মেজয়! সেই চারজন রাজা যযাতির কন্যার পুত্র। কন্যার পুত্রের পূণ্যে যযাতি মুক্ত হলেন। পুনরায় তিনি স্বর্গে অবস্থান করলেন।

Monday, October 25, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩০


পুরুর জরাগ্রহণ ও যযাতির যৌবন-প্রাপ্তিঃ

দেশে ফিরে রাজা সিংহাসনে বসলেন এবং জ্যৈষ্ঠপুত্র যদুকে ডেকে বললেন শুক্রশাপে জরা তাকে আক্রমণ করেছে কিন্তু যৌবনভোগে তার মন এখনও শান্ত হয় নি। যদু তার জ্যৈষ্ঠ সন্তান এবং পরম পন্ডিত। সেই তার দুঃখ দুর করতে পারে, পিতার জরাগ্রহণ করে। এভাবে যযাতি পুত্রের কাছে পুত্রের যৌবন ভিক্ষা করলেন।

পিতার বাক্য শুনে যদু বিরস বদনে বললেন –জরার মত দুঃখ সংসারে আর কিছু নেই। শরীর শক্তিহীন হয়, দেহ হয় কুৎসিত, লোকে উপহাস করে।

তাই যদু পিতার জরা নিতে প্রস্তুত নন জানান। পিতার আরো চার পুত্র আছে তাদের এই প্রস্তাব দেওয়া হোক।

একথা শুনে রাজা ক্রোধ ভরে বললেন –জ্যৈষ্ঠ পুত্র হয়ে যদু পিতার বাক্য অমান্য করলেন তাই তার বংশের কেউ কোনদিন রাজা হবে না।

যযাতি এরপর তুর্বসুকে ডেকে সব বললেন এবং সহস্র বছর পর তিনি তাকে যৌবন দান করে জরা গ্রহণ করবেন–এ অঙ্গীকারও করলেন।

তুর্বসুও জরাগ্রহণে অপারগ হলেন। যযাতি তাকেও শাপ দিলেন পিতৃবাক্য অমান্য করায় তুর্বসু নীচজাতিদের রাষ্ট্রের দন্ডধর হবেন এবং তার বংশে যত পুত্র জন্মাবে তারা সকলে মূর্খ হয়ে অভক্ষ্য ভক্ষণ করবে।

এভাবে দেবযানীর দুই পুত্র কেউই যখন পিতার জরাগ্রহণ করলেন না, তখন রাজা শর্মিষ্ঠার পুত্রদের ডাকলেন।

শর্মিষ্ঠার জৈষ্ঠ্যপুত্র দ্রুহুও পিতার জরাযন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন না বললেন।
একথায় যযাতি তাকেও শাপ দিলেন যে দেশে চারজাতির ভেদ নেই সেই দেশের রাজা হবে তার ঔরসে। দ্রুহু যা আশা করবে সব নৈরাশ্যে ডুববে, তার মনকামনা কখনো পূর্ণ হবে না।

তারপর রাজা অনুকে ডাকলেন এবং তার যৌবন প্রার্থনা করলেন।

অনু বললেন –রাজন, জরাসম দুঃখ জগতে আর কিছু নেই। সদা অশুদ্ধ দেহ, অনাচার, কিছু খেলে উদরে তা জীর্ণ হয় না।

তাই সেও জরাগ্রহণ করতে পারবে না। রাজা ক্রোধে বললেন পিতার বাক্য অমান্য করায় অনু জরার যে যে দোষের কথা বলেছে সব ভোগ করবে এবং তার পুত্রেরা যৌবনে সবাই মারা যাবে।



এবার রাজা যযাতি চিন্তিত হয়ে সর্ব কনিষ্ঠ পুরুকে ডেকে পাঠালেন। বললেন সেই রাজার সর্বপ্রিয় পুত্র, সেই এখন তাকে সুখি করতে পারে।

পিতার বাক্য শুনে যোড়করে পুরু বলেন পিতার বাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। যে জন পিতৃবাক্য রক্ষা করে না সে ইহলোকে অপযশ পায় এবং নরকে গমন করে। তিনি পিতার কাছে জরা প্রার্থনা করলেন এবং তার যৌবন পিতাকে ভোগ করতে বললেন।

পুত্রের এই বাক্যে রাজা আনন্দিত হন। তার মুখ চুম্বন করে বলেন –ধর্ম পথে পুরুর বংশবৃদ্ধি হবে, তার বংশধররাই রাজা হবে।

তারপর তিনি শুক্রাচার্যকে স্মরণ করেন এবং পুরুকে জরাদান করে যৌবনপ্রাপ্ত হন।

এরপর যযাতি ধর্মকর্মে লিপ্ত হন। যজ্ঞহোমে দেবতাদের তুষ্ট করেন।

শ্রাদ্ধাদি তর্পণের দ্বারা পিতৃপুরুষদের সন্তুষ্ট করেন।
দরিদ্র ভিক্ষুকদের দান করেন, প্রজাদের প্রতি যতার্থ সেবা করেন, অতিথি অভ্যাগতদের সেবা করেন।
তার প্রতাপে দুষ্টেরা রাজ্য ত্যাগ করে।
রাজা কামরসে কামিনীদের তুষ্ট করেন, প্রিয় ভাষণে বন্ধুবান্ধব-মন্ত্রীদের তুষ্ট রাখেন।


এভাবে যযাতি সহস্র বছর রাজত্ব করেন। এসময় তার পূর্ববাক্য স্মরণে আসে। জরা পীড়িত পুত্রকে দেখে রাজা আপনাকে ধিক্কার করেন।
ভাবেন নিজের জরার জন্য তিনি পুত্রকে দুঃখ দিলেন, ভোগে মত্ত হয়ে তিনি পুত্রের দুঃখ দেখলেন না।
ভাবলেন কামুকের কাম কখনো পূর্ণ হয় না, যত ইচ্ছা করে তত তা বাড়ে, মন কখনও তৃপ্ত হয় না।

এসব কথা চিন্তা করে রাজা পুত্রকে ডেকে বলেন –বহু ভোগ আমি করেছি তোমার যৌবন নিয়ে। তুমি প্রকৃতই পুত্রকর্ম করে আমায় সন্তুষ্ট করেছ। তোমার মহিমা সংসারে প্রচারিত হবে। এখন তুমি আমায় জরাদান করে যৌবন গ্রহণ করো।

রাজা তাকে ছত্রদন্ড দান করবেন কথা দিলেন।
এতকথা বলে যযাতি জরাগ্রহণ করলেন এবং পুরুকে যৌবন ফিরিয়ে দিলেন। পুরু আপন যৌবন প্রাপ্ত হলেন।
রাজা পাত্র, মিত্র, অমাত্যদের ডেকে ঘোষণা করলেন পুরুই পরবর্তি রাজা হবেন।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র-রাজ্যের সকলকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন।
পুরুর অভিষেক দেখে প্রজারা রাজাকে প্রশ্ন করলেন বিজ্ঞ রাজা জ্যৈষ্ঠ পুত্র বিদ্যমান থাকতে কনিষ্ঠকে রাজা করলেন কেন!

রাজা বলেন -যে পুত্র পিতামাতার বাক্য অমান্য করে সে কোন শাস্ত্রমতেই পুত্রের যোগ্য নয়। পুরুই কেবল আমার প্রকৃত পুত্র-অন্যরা অকারণ। পুরু পরম পন্ডিত, সেই কেবল পুত্রের কর্ম করেছে। জরা পীড়িত পিতাকে যৌবন দিয়েছে। অন্য চারপুত্র পিতার বাক্য মানেনি। পিতৃ আজ্ঞায় পুরু সহস্র বছর জরাগ্রহণ করলেন সে কারণেই সে প্রকৃত রাজ্যের উত্তরাধিকারী।

প্রজারা বলেন শুক্র তার দৌহিত্রদের এই বঞ্চনা সহ্য করবেন না, আর শুক্রের ক্রোধ সকলেই অবদিত।

রাজা বলেন শুক্র নিজেই এই আশির্বাদ করেছেন যে পুত্র তার জরাগ্রহণ করবেন সেই হবে রাজ্যের প্রকৃত দাবিদার। প্রজারা একথায় সন্তুষ্ট হয়।

সকলের সহমতে পুরুর অভিষেক সম্পন্ন হয়।

যযাতি পুত্রকে রাজনীতির শিক্ষা দান করেন।
..........................................

Tuesday, October 12, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৯


যযাতির প্রতি শুক্রের অভিশাপঃ

একদিন যযাতি দেবযানীর সঙ্গে বনবিহারে এলেন, নানা বৃক্ষে সুশোভিত অশোক বনে। শর্মিষ্ঠা সেখানে উপস্থিত হলেন। তার তিনপুত্রও পিতাকে দেখে ছুটে এলো। তিন সুন্দর পুত্র দেখে দেবযানী রাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন এদের পিতা কে!
রাজা নিরুত্তর থাকলে তার সন্দেহ হল। তিনি পুত্রদের সত্বর আত্মপরিচয় জানাতে চাইলেন এবং এস্থানে তারা কি কারণে এসেছে জিজ্ঞাসা করলেন।


তিনকুমার এত কথা শুনে বললো তাদের মার নাম শর্মিষ্ঠা এবং রাজাকে দেখিয়ে বললো ইনিই তাদের পিতা-এই বলে তারা রাজাকে প্রণাম করলো।
দেবযানীর ভয়ে রাজা বিরস বদনে শিশু তিনটিকে কোলে নিলেন।

সবকথা শুনে দেবযানী ক্রোধিত হয়ে শর্মিষ্ঠাকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন আগে সে বলেছিল এরা ঋষিকুমার অর্থাৎ সে মিথ্যাবাক্য বলেছিল!


একথা শুনে শর্মিষ্ঠা অবাক হলেন। করজোড়ে বললেন ধর্ম মতে তিনি মিথ্যা বলেন নি। দেবযানী তার ঈশ্বরী হওইয়ায় রাজাই ধর্মত তার পতি-সে কারণে তার পুত্রদের দেখে দেবী যেন ক্রোধ না করেন।

দেবযানী বললেন সেবিকা হয়ে শর্মিষ্ঠার সাহস দেখে তিনি স্তম্ভিত! কি সাহসে সে তার স্বামীকে ভোগ করে!

দেবযানী রাজাকেও ক্রোধের সঙ্গে বলেন –রাজা শুক্রাচার্যের বাক্য লঙ্ঘন করে সেবিকা গমন করেছেন-এ ঘোর পাপ কর্ম।

তাই তিনি আর রাজার সঙ্গে থাকবেন না।
এত বলে দেবযানী কাঁদতে কাঁদতে পিতৃগৃহে গমন করেন। রাজা বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাতে থাকেন, কিন্তু তার ক্রোধ দেখে তিনি ভয় পান। রাজাও তার সঙ্গে চললেন।

পিতার সামনে উপনিত হয়ে দেবযানী স্বামীর চরিত্রবর্ণনা করেন –অধর্মে প্রবৃত্ত হয়ে রাজা শুক্রের বাক্য লঙ্ঘন করে বৃষপর্বের কন্যা শর্মিষ্ঠার সঙ্গে রমণ করেছেন।

একথা শুনে শুক্র ক্রোধের সঙ্গে রাজাকে বলেন –রাজা সর্বধর্মজ্ঞাত পরম পন্ডিত হয়েও তার বাক্য লঙ্ঘন করলেন! গুরুবাক্য লঙ্ঘন করার অপরাধে তাকে জরা অঙ্গে ধারণ করতে হবে।

গুরুর শাপে রাজা কম্পিত হৃদয়ে করজোড়ে বললেন, প্রভুবাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। তিনি কামভাবে শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করেন নি। ঋতুদানে শর্মিষ্ঠা বারবার প্রার্থনা করায় তিনি তার ঋতু রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা না শুনলে তিনি মহাপাপে পতিত হতেন, নপুংসক হয়ে জন্মাতেন এবং নরকে যেতেন। ধর্মের ভয়েই তিনি ঋতুদান করেন। আর রাজার কাছে যে যা প্রার্থনা করে তা তিনি পূরণ করতে বাধ্য সে কারণেও এই কর্ম।

শুক্র বলেন -ধর্মের ভয়ে তুমি এ কাজ করলে, আমার ভয় তোমার ছিল না - এতো তোমার অহংকার!
এত কথা বলার সাথে সাথেই জরা এসে রাজাকে আক্রমণ করল।

নিজের এই বৃদ্ধ বেশ দেখে রাজা হতবুদ্ধি হলেন এবং দুঃখের সঙ্গে শুক্রকে বললেন এখনও তিনি যুবক রূপে সব কামনায় তৃপ্ত হননি এবং শুক্রের কন্যা দেবযানীও প্রথম যৌবনা, এভাবে বৃদ্ধ হয়ে তিনি সংসারের সব সুখ থেকে বঞ্চিত হলেন। প্রভু যদি কৃপা করেন তবে তিনি এই শাপ থেকে মুক্ত হন।

শুক্র বলেন, তার বাক্য খন্ডন হওয়ার নয়, যদি রাজার মন এখনো ভোগে আসক্ত থাকে তা হলে তিনি নিজের জরা অন্য কাউকে দিয়ে তা ভোগ করতে পারেন।

রাজা বলেন তার পাঁচ পুত্র যে তার জরা গ্রহণ করবে তাকেই তিনি রাজ্যভার দান করবেন।

শুক্র আশির্বাদ দিয়ে বলেন যে জন রাজার জরা গ্রহণ করবেন সে দীর্ঘায়ু হবেন রাজ্যের কল্যানে। তার বংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সে জন পরম পন্ডিত ও মহাতেজা হবেন।শুক্রের বাণী শুনে রাজা যযাতি দেবযানীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে গমন করেন।
..........................................

Monday, October 11, 2010

মহালয়ার গান :)

বাজে ওই আগমনি গান ঝরে শেফালি দোলে কাশের গুচ্ছ মধুর বায়ে হল উতলা পরাণ শুভ্র মেঘের ভেলা সুনীল আকাশে ধানের মঞ্জরী দোলে বাতাসে পুলকে জেগে ওঠে আনন্দ তান। শারদ অজ্ঞলী বাঁশির সুরে আনে আশার বাণী হৃদয় জুরে শিশির ভেজা ঘাসে ঝরা মালতী আসিবে ঘরে চির চেনা অতিথি বনে মর্মরে শুনি তারি আহ্বান। http://www.esnips.com/doc/ee974917-df31-4452-a894-8db638f53d71/Baaje-oi-agomoni-gaan মা মেনকাঃ বর্ষা গেল আশ্বিন এল উমা এল কই শূন্য ঘরে কেমন করে পরাণ বেঁধে রই! ও গিরিরাজ সবার মেয়ে মায়ের কোলে এলো ধেয়ে আমারি ঘর রইল আধাঁর আমি কি মা নই! নাই শাশুড়ি ননদ উমার আদর করার নাই কেউ আদর করার নাই। অনাদরে কালি মেখে বেড়ায় পথে তাই, মোর গৌরী বড়ই অভিমাণী সে বুঝবে না মা কান পোরানি আনতে তারে সাধতে হবে ওর যে স্বভাব ওই। http://www.esnips.com/doc/ee974917-df31-4452-a894-8db638f53d71/Baaje-oi-agomoni-gaan যাও যাও গিরিরাজ আনিতে গৌরী, উমা আমার ওগো কেমনে রয়েছে। এক বছর গত হল কৈলাশে গিয়াছে। শুনেছি নারদের মুখে উমা আছে বড়ই দুখে, তার কাছে নাকি উমা ‘মা’ বলে কেঁদেছে। ভাঙ্গেতে ভোলা জামাই তো তোমার, সোনার প্রতিমা গৌরী আমার। ভাঙ্গে মত্ত হয়ে জামাই তো তোমার বসন ভূসন বেচে ভাঙ্গ খেয়েছে। http://www.esnips.com/doc/fc7183f4-852d-4174-ba80-b44320de1779/07--JAO-JAO-GIRIRAJ আর না রাখিব গিরি প্রাণের গৌরী শিবের ঘরে এবারে আসিলে তারে পাঠাবো না পুন ফিরে। নির্গুণ জামাতা হেরে, সমর্পিলে গিরিজারে সেও তো পালিতে নারে, শুনি গৌরী পালে তারে। নহে শিব পালনকারী, কহে তায় সংহারকারী জেনে শুনে সে ভিখারী কেন কন্যা দিলে তারে মনেতে রহিল কালি, গৌরী নাকি হল কালী দুঃখে কাটে চিরকালি, সুখ নাহি দিনেরও তরে।। http://www.esnips.com/doc/1f681074-308a-4a36-9efe-cc7cad39974c/10--AAR-NA-RAKHIBO-GIRI হে গিরি শোন ধরি দুটি পায়। এনে দাও উমারে আমায় স্বপনে দেখেছি তারে লুটাতে ধুলায়। লোকে বলে উমা নাকি উন্মাদিনী ঘর ছেরে হয়েছে সে শ্মশানবাসিনী। বসন ভূষণ নাই, অঙ্গে মেখেছে ছাই আপনি নাচিয়া সে যে ভোলারে নাচায়। কেমনে বোঝাই গিরি তুমি যে পাষাণ উমারে দেখিতে বুঝি আছে এ পরাণ। চেয়ে দেখ ওগো নাথ ঘরে ঘরে ওই মায়ের বুকেতে শিশু, আমাদেরর উমা কই। আত্মঘাতিনী হয়ে এ জ্বালা জুড়াই স্ত্রী বধের পাপ আমি দেবো গো তোমায়। http://www.esnips.com/doc/473efecb-9167-4023-8bae-66ffe5004520/06--HE-GIRI-SHONO-DHORI-DUTI-PAAY উমাঃ হর কর অনুমতি যাই হিমালয়ে জনক জননী বিনে বিদি মরি হৃদয়ে। এ জানা কি জানি ওমনি, আমি মা একা কমনি গিয়ে তিন দিন জন্যে রব পিত্রালয়ে। গণপতি লয়ে সপ্তমী প্রবেশা হয়ে আসিব ওই নাশি গুণে নবমী উদয় জানি মা মেনকা অন্ধ হল কেঁদে কেঁদে মরেছে কি আছে বেঁচে হতেছে সংশয়।। http://www.esnips.com/doc/d8ea8e98-45fd-45a1-8293-aff1ebf01ed7/13--HARA-KARO-ANUMATI বাবা গিরিরাজঃ গিরি রাণী, রাণী এই নাও তোমার উমারে। ধর ধর হরের জীবন ধন। কত না মিনতি করি, তুষিয়ে ত্রিশুলধারী প্রাণ উমা আনিলাম নিজ পুরে। রাণী এই নাও তোমার উমারে। দেখ মনে রেখ ভয়, সামান্যা তো নয় আর নয়। যারে সেবে বিধি বিষ্ণু হরে। রাণী এই নাও তোমার উমারে। ও রাঙা চরণ দুটি হৃদে রাখে মধুর জ্যোতি। কি আদ্র বিচ্ছেদ নাহি করে। রাণী এই নাও তোমার উমারে। তোমার উমার মায়া, নির্গুণের স্বগুণ কায়া, ছায়া মাত্র জীবে নামে ধরে। রাণী এই নাও তোমার উমারে। অসংখ্য তাপেরই ফলে কপোত তনয়া ছলে মা বলে তোমারে মেনকা রাণী, এই নাও তোমার উমারে। কমলাকান্তের বাণী, ধন্য ধন্য গিরিরাণী। তব পূণ্য কে কহিতে পারে। এই নাও তোমার উমারে। ধর ধর হরের জীবন ধন। এই নাও তোমার উমারে।। http://www.esnips.com/doc/270c4c3f-3eae-49e1-b2ad-178f80341001/15--GIRIRANI-RANI-EI-NAO মাঃ বোঝাবো মায়েরই ব্যাথা গনেশ তোর আটকে রেখে। মায়ের প্রাণে বাজে কেমন বুঝবি তখন আপনি ঠেকে। মা গো...... তবু দেখে আছে আমার, গিরিপুরী ছিল আধাঁর। আমি পাঠাবো না তোরে তো আর লিখতে গেলে কৈলাশ থেকে। জামাই সে তো পেটের ছেলে, দোষ কি হবে হেথায় এলে। বেড়ান তিনি নেচে খেলে, রাজা গিয়ে আনবে ডেকে। বেড়ায় তো সে যেথায় সেথায়, যে ডাকে সে তার কাছে যায়। মাগো, রাজার জামাই থাকবে হেথায় প্রাণ জুড়াবে জুগল দেখে। http://www.esnips.com/doc/e0e9aac6-d5cd-46fc-8304-8242fbb31d75/14--BOJABO-MAYER-BYATHA উমাঃ মা, কোলে তুলেনে গো মা উমারে তোর বড় ক্লান্ত হয়েছি পথে জেগেছে মা ঘোর। এসেছি মা শিবে ছেরে তাতে যে মন পড়ে তার উপরে তোরি তরে হয়েছি যে কাতর। জগতেরই নাথ মা গো মোর ভোলানাথ দেবাদিদেব সে যে, তবু যে অনাথ। যেন মা শিশুর প্রাণ, আঁচল ছারেনা হায় আমি তার সে আমার বুকেরই পাঁজড়। http://www.esnips.com/doc/d09fdc65-1b80-4b41-bb63-03c65b2993c0/16--KOLE-TULE-NE-GO-MA-UMARE---INH100510232 মাঃ আয় মা উমা রাখব এবার ছেলের সাজে সাজিয়ে তোরে, মার কাছে তুই থাকবি নিতুই, যাবিনে আর শ্বশুড় ঘরে। মা হওয়ার মা কি যে জ্বালা বুঝবি না তুই গিরিবালা, তোরে না দেখিলে শূন্য এ বুক, কি যে হাহাকার করে। তোর টানে মা শংকর শিব আসবে নেবে গভির রাতে, মাগো আনন্দেরই হাট বসাবো নিরানন্দ পৃথিবীতে। দেখব বলে মা তোর লীলা পরে আছি পাষাণ শিলা, ওমা কৈলাসে তুই নাচবি এবার বৃন্দাবনের নুপুর পড়ে। http://www.esnips.com/doc/94557feb-8af8-42bf-9c1c-3f80e61c5824/17--AAY-MAA-UMA-RAKHBO-EBAR---INH100618066 আগমনী গান রামকুমার চট্টোপাধ্যায় শেফালি সুরভী জাগা স্নিগ্ধ রাতে দশ দিশি উজল করি রাজ রাজেশ্বরী মা আমার ওই আসে মরি গো মরি। তাই আলো আলপনাতে ধরা চায় নিজেরে সাজাতে স্নিগ্ধ কমল বনে, মৃদু মধু গুঞ্জনে পড়েছে যে ভ্রমর ভ্রমরী রে।। শিশিরের মরকত হেম জিনি ঝলিছে নবীন ধানের শীষে মঞ্জরী দোলে গো শুভ্র কাশের বনে, বায়ু বহে আনমনে অমল ধবল মেঘ নীলিমার কোণে গো। অন্নদারূপিণী যে আনন্দময়ী মা যে নিরানন্দ তার দুখ জানে সবই মা তার কি অসুখ বলো মা যার ভুবন তরে।।

Wednesday, September 29, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৮


দেবযানীর বিবাহঃ

এভাবে দেবযানী নানা আনন্দে দিন কাটাতে লাগলেন। দৈত্যরাজ নন্দিনী শর্মিষ্ঠা তাকে সেবা করতে লাগলেন।

আবার একদিন সহস্র দাসীসহ দেবযানী চৈত্রবনে বেড়াতে গেলেন। তিনি কিশলয়–শয্যায় শয়না, দৈত্য-রাজকন্যা শর্মিষ্ঠা তার পদ সেবায় রত।

দৈবের লিখন ঠিক সে সময় পুনরায় যযাতি সেখানে উপস্থিত হলেন।
তিনি দেবযানীর ও শর্মিষ্ঠার পরিচয় জানতে চাইলেন। দেবযানী পরিচয় দিলেন।

রাজা অবাক হলেন এমন সর্বাঙ্গসুন্দরী অসুররাজকন্যা কি করে দাসী হলেন।
দেবযানী বলেন -সবই দৈবের বিধানে ঘটে, এর দাসীত্বও সেই কারণে ঘটেছে।
দেবযানী আরো বলেন –রাজন, পূর্বে তুমি অন্ধকূপ থেকে আমাকেই হাত ধরে উদ্ধার করেছিলে। এখন আমার হাত গ্রহণ কর–আমায় বিবাহ কর।

রাজা জানান দেবযানী ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ গুরু শুক্রাচার্যের কন্যা, তিনি ক্ষত্রিয়-সে কারণে দেবযানীর যোগ্য নন।

দেবযানী বলেন –কোন ভয় নেই, আমি স্বেচ্ছায় তোমার কাছে ধরা দিচ্ছি।
তবু যযাতি শুক্রাচার্যের ভয়ে ভীত হন। জানান গুরু শুক্র যদি অনুমতি দেন তবেই এ বিবাহ সম্ভব।

দেবযানী পিতাকে সব কথা জানালেন। শুক্রাচার্য নিজে যযাতির কাছে উপস্থিত হলেন।

ব্রাহ্মণকন্যাকে বিবাহ করলে পাপ হবে কি না তা জানতে চান যযাতি।
শুক্র বলেন –ব্রাহ্মণকন্যা অপর তিন শ্রেণীর জননী তুল্য।
তবু যযাতি এ বিবাহ করুক। কাচের শাপে দেবযানীর স্ববর্ণে বিবাহ হতে পারে না। তপোবলে তিনি যযাতির সব দোষ খন্ডন করবেন।

এরপর তিনি যযাতির সাথের কন্যা দেবযানীর বিবাহ দেন এবং সাবধান করেন দৈত্য-কন্যা দাসী শর্মিষ্ঠাকে যেন শয়নের সময় কখনও ডাকা না হয়। দৈত্যরাজ শর্মিষ্ঠাসহ সহস্র দাসীর জন্য অশোকবনে রাজা বসতি স্থাপন করেন।

দেবযানী হলেন রাজার প্রধান পাটেশ্বরী। দেবযানী আনন্দে রাজার সাথে অবস্থান করলেন। দশমাস পর দ্বিতীয় চন্দ্রসম তাদের পুত্র হল। নাম রাখা হল যদু।

এ সময় দৈবের নির্দেশে দৈত্যকন্যা শর্মিষ্ঠা ঋতুমতী হলেন। ঋতুস্নান করে কন্যা চিন্তিত হলেন। ভাবলেন, নিজের দোষে তিনি স্বামীহীনা হলেন। দাসীরূপে পুত্রহীনা হয়ে তার যৌবন বৃথা গেল!

এসব ভাবতে ভাবতে তিনি ঠিক করলেন দেবযানী তার ঈশ্বরী, দেবযানীর ঈশ্বর যযাতি। সুতরাং যযাতি তারও অধিকারী।



যযাতি ছিলেন সংসারে সত্যব্রত নামে বিখ্যাত।

সে সময় রাজা সে বনে একা ভ্রমণ করতে এলেন। শর্মিষ্ঠা তার সামনে উপস্থিত হয়ে প্রার্থণা করলেন তাকে কাম ভাবে গ্রহণ না করে ধর্ম রক্ষার্থে তার ঋতুরক্ষা করুন, রাজন।

রাজা বলেন বিবাহের সময় তিনি গুরু শুক্রকে কথা দিয়েছেন শয়নকালে কখনও শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করবেন না।

শর্মিষ্ঠা বলেন –রাজা, ধর্ম মতে আমি তোমারই। তোমার স্ত্রী আমার সখী এবং ঈশ্বরীও বটে! তাই তুমিই আমার অধিকারী।

শর্মিষ্ঠা যযাতির কাছে ধর্ম রক্ষার্থে সন্তান ভিক্ষা করেন।
রাজাও বলেন –আমিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে যা চাইবে তাকে তাই দেব। এই বলে তিনি শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করলেন। কেউ একথা যানতে পারল না। তিনি আপন আলয়ে ফিরে গেলেন।

দশমাস দশদিন পর শর্মিষ্ঠার হস্ত-পদে চক্র শোভিত অপূর্ব পুত্র জন্মাল। সকলে সে কথা আলোচনা করতে লাগল। দেবযানী সে কথা শুনে তাকে দেখতে বনে এলেন এবং কামে মত্ত হয়ে সতীধর্ম নষ্ট করায় শর্মিষ্ঠাকে গাল দিলেন।

শর্মিষ্ঠা বলেন দৈবের লিখনে তার ঋতুকালে এক অপরূপ ঋষি বনে উপস্থিত হন এবং ধর্ম রক্ষার্থে তাকে গ্রহণ করেন। দেবযানী ঋষির পরিচয় যানতে চান। শর্মিষ্ঠা বলেন তার সূর্যের মত তেজ দেখে সাহস হয়নি পরিচয় জানবার।

দেবযানী বলেন –সখি, তুমি পূণ্যবতী। ঋষির বরেই তোমার চন্দ্রের মত পুত্র হল।

এই বলে দেবযানী অন্তঃপুরে ফিরে গেলেন। এর কিছুদিন পর দেবযানীর দ্বিতীয় পুত্র হল। নাম রাখা হল তুর্বসু। এভাবে দেবযানীর দুই পুত্র হল-যদু ও তুর্বসু।

অন্যদিকে শর্মিষ্ঠার গর্ভে রাজার তিনটি পুত্র জন্মাল। তারা হলেন-দ্রুহ্যু, অনু ও সর্ব কনিষ্ঠ সর্ব গুণাধার পুরু। রাজার কুমাররা এভাবে বড় হতে থাকেন। দেবযানী জানেন তারা ঋষির কুমার।
..........................................

Wednesday, September 22, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৭


বৃষপর্ব্ব-কন্যা শর্মিষ্ঠার দাসীত্বের বিবরণঃ

জন্মেজয় যোড়হাতে পুনরায় কি হল জিজ্ঞাসা করলেন।

মুনি বলেন –কচের দুঃখ দেবযানীর মনে থেকে গেল।

তিনি একদিন বৃষপর্ব্বপুরে স্নান করতে গেলেন।

বৃষপর্বরাজার কন্যা শর্মিষ্ঠাও দাসীদের সাথে সেখানে স্নান করতে এলেন।

চৈত্ররথ নামে বনে এক সরোবর ছিল। সেখানেই সকলে জলক্রীড়া করছিলেন। সকলে আপনার বস্ত্র পাড়ে রেখে জলে নামেন।

এমন সময় খরতর বায়ু বয়। সকলের বস্ত্র একত্র হয়ে যায়।
দৈত্য কন্যা শর্মিষ্ঠা সকলের আগে উঠে ভুল বশত দেবযানীর বস্ত্র পরিধান করেন।

দেবযানী দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন -শুদ্র কন্যা হয়ে শর্মিষ্ঠার এত অহংকার! যে সে ব্রাহ্মণ কন্যার বস্ত্র পরে!

দেবযানীর বাক্যে শর্মিষ্ঠাও কুপিতা হয়ে বলেন -সত্যি, তাদের মধ্যে অনেক অন্তর! কারণ তার পিতার অন্ন গ্রহণ করেন দেবযানীর পিতা, তার পিতার সদা স্তুতি গান দেবযানীর পিতা।

এসব কথা বলতে বলতে রাগে শর্মিষ্ঠা দেবযানীকে কূপে ফেলে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন।

দেবযানী বাঁচল কি মরল কেউ তা দেখল না।

সেই বনেই ভাগ্যের ফেরে সে সময় যযাতি মৃগয়া করছিলেন।
যযাতির সৈন্যরা তৃষ্ণার্ত হয়ে জলের সন্ধানে বেড়িয়ে কূপে সুন্দরীকে পড়ে থাকতে দেখে রাজাকে সে কথা জানায়।

যযাতি এসে দেখেন এক অতি পুরাতন কূপ তৃণে আচ্ছন্ন, সেখানে চন্দ্রের সমান এক কন্যা পড়ে আছেন। তিনি কন্যার পরিচয় জানতে চান।

দেবযানী বলেন –সব পরিচয় দেব, আগে হাত বাড়িয়ে তোল। আমি শুক্রাচার্যের কন্যা।

রাজা ভয় পান। একে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ শুক্রের কন্যা, তায় যুবতী।

দেবযানী আশ্বস্ত করলেন নারীকে অন্ধকূপ থেকে বাঁচালে রাজার কোন পাপ হবে না।

যযাতি কন্যার ডান হাত ধরে তাকে কূপ থেকে উদ্ধার করলেন। পরে নিজ দেশে ফিরে গেলেন।

সে সময় ঘূর্ণিকা দাসীকে দেখে দেবযানী কেঁদে সব বৃত্তান্ত জানিয়ে পিতাকে বলে পাঠান তিনি কোন মুখে পিতৃগৃহে যাবেন।

ঘূর্ণিকার মুখে শর্মিষ্ঠার দেবযানীকে কূপে ফেলার ঘটনা শুনে শুক্র বিষণ্ণ হন এবং প্রাণপ্রিয় কন্যাকে দেখতে যান।

গিয়ে দেখেন কন্যা বনের ভিতর হেঁট মুখে বসে কাঁদছেন। তিনি কন্যাকে শান্তনা দিতে থাকেন। দেবযানী শর্মিষ্ঠার সকল কথা পিতাকে যানান।

শুক্র দেবযানীকে ক্রোধ দমন করতে বলেন।
তিনি বলেন –ক্রোধে মানুষ ভ্রষ্ট হয়, যে ক্রোধকে দমন করতে পারে সেই প্রকৃত সর্ব ধর্মে ধার্মিক।

তবু দেবযানীর মন থেকে কষ্ট দুর হয় না। শর্মিষ্ঠার অপমান তাকে পীড়িত করে।
বলেন –পিতা আমি ওসব কথা জানি, কিন্তু পন্ডিতেরা বলেন নীচ লোকের কাছে অপমানিত হওয়ার চেয়ে মরণ ভাল। অস্ত্রাঘাতে যে ক্ষত হয় তা সারে, কিন্তু বাক্ক্ষত সারে না।

কন্যার কথা শুনে শুক্র বৃষপর্ব রাজার সামনে উপস্থিত হয়ে জানালেন তিনি রাজ্য ত্যাগ করতে চান।
ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বৃহস্পতির নন্দন কচকে তারা মিথ্যা হত্যার চেষ্টা করেছে। তার কন্যা শর্মিষ্ঠা দেবযানীকে মারবার জন্য অন্ধকূপে ফেলেছে।
নারীবধ, ব্রাহ্মবধ যারা করে তারা পাপী। তাদের কাছে থাকলে তারও পাপ হবে।

দৈত্যরাজ শুক্রের পায়ে এসে পড়লেন। তাকে অনুনয় করতে লাগলেন, শুক্র যেন তাদের ত্যাগ না করেন। সকল পাপের জন্য তিনি ক্ষমা চাইলেন।

শুক্র বলেন –আমার আদরের কন্যা দেবযানীকে যদি তুষ্ট করতে পার তবেই আমি এস্থানে থাকব।

রাজা যোড়হাতে দেবযানীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান।
দেবযানী কোন কথা শুনতে নারাজ। তিনি শর্মিষ্ঠাকে দাসীরূপে চান।

রাজা অন্তপুরে দাসী পাঠান কন্যা শর্মিষ্ঠাকে আনার জন্য। কুল রক্ষার্থে, স্বজাতীর কল্যাণার্থে শর্মিষ্ঠা চতুরদোলায় চেপে পিতার সামনে উপস্থিত হলেন।

বৃষপর্ব বলেন দৈবের লিখন তাই শর্মিষ্ঠাকে দেবযানীর দাসী হতে হবে।
শর্মিষ্ঠা বলেন –পিতা আপনার আজ্ঞায় এবং নিজ কর্ম দোষে আমি দাসী হলাম।

দেবযানী বলেন –তুমি রাজকন্যা! তোমার পিতার স্তুতি আমার পিতা করেন। তুমি কি ভাবে আমার দাসী হবে!

এই ব্যঙ্গে শর্মিষ্ঠা বলেন –জ্ঞাতির কুশল আর পিতার বচন রাখতেই আমি দাসী হলাম। এতে আমার এতটুকু লজ্জা নেই।

এভাবে শুক্র কন্যা দেবযানীকে আপন গৃহে নিয়ে গেলেন। এবং শর্মিষ্ঠাও তার দাসীরূপে সে গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন।

..........................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers