Blog Archive

Sunday, February 26, 2017

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩৯

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন ....... মুনিরা হোম যজ্ঞের আয়োজন শুরু করেন......দেবগণকে নিমন্ত্রণ করতে অর্জ্জুন যাত্রা করেন ...বাসুকি নাগকে নিমন্ত্রণে পাতালে পার্থ যাত্রা করেন......দ্রুপদ ও অন্যান্য গণ্যমান্য রাজারা আসতে লাগলেন... কৃষ্ণদর্শনে লঙ্কার রাজা বিভীষণ উপস্থিত হলেন....কৃষ্ণের শত অনুরোধেও রাজাজ্ঞা বিনা দক্ষিণ ও পূর্ব দ্বার দিয়ে তাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হল না... ] 



শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক চারিজন রাজার প্রাণদানঃ 

বিভীষণকে নিয়ে গদাধর কৃষ্ণ যখন যাচ্ছিলেন তখন পথে দেখেন ভীমের কিছু অনুচর চারজন রাজাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। 

মাধব কৃষ্ণ তাদের ডেকে বলেন –তোমরা কারা! এই চারজনকে এভাবে বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ! এরা কি অপরাধ করেছে! 

দূতরা বলে –আমরা ভীমের কিঙ্কর। এই চারজন দুষ্ট কর্ম করে অপরাধী। এই দুজন শ্বেত ও লোহিত মণ্ডলের রাজা। এদের দেশ সমুদ্রের তীরে। পার্থ এদের জয় করে সঙ্গে আনেন। এখন এরা কাউকে কিছু না জানিয়ে দেশে পালাচ্ছিল। অর্ধপথ থেকে এদের ধরে আনা হয়েছে। আর এই দুজন দুই দরিদ্র ব্রাহ্মণকে উপহাস করে অত্যাচার করছিল। তাই চারজনকে বেঁধে নিয়ে চলেছি। ভীম এদের শূলে দিতে বলেছেন। 

কৃষ্ণ বলেন –ঠিক আছে এদের পরে নিয়ে যেও, এখন এরা আমার সাথে থাকুন। ভীমসেন কোথায়! তার কাছে আমায় নিয়ে চল। 

দূতরা কৃষ্ণকে বৃকোদরের কাছে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। কিছুদুরে ভীমকে দেখা গেল এক লক্ষ রথীদের নিয়ে চারদিক ঘুরে তদারকি করছেন। 

ভীমের সামনে এসে কৃষ্ণ বলেন –হে ভীম, এই চারজন রাজাকে মুক্তি দাও। যজ্ঞের জন্য নিমন্ত্রণ করে এনে এখন শূলে দেওয়া ঠিক হবে না। হে বীর, এত বড় যজ্ঞস্থলে ভাল মন্দ দু ধরনের মানুষই আসবে। এই সামান্য ঘটনাগুলি ক্ষমা না করলে কাজে বড়ই বিঘ্ন ঘটবে। 

বৃকোদর বলেন –হে দেবকীনন্দন, দোষ অনুসারে দুর্জনকে শাস্তি না দিলে অন্যেরাও তাদের পথ অনুসরণ করবে। আর এদের ক্ষমা করে কি সুবিধা হবে শুনি! দুষ্টজনকে ক্ষমা করতে পারব না। এরা কখনই পাপ কাজ থেকে বিরত হতে পারবে না। এসব দুষ্ট পাপীদের নিজের তেজ না দেখালে এরাও অবজ্ঞা করতে শুরু করবে, তাতেই বিপদ বাড়বে। এদেরতো চিনতামও না, এরাই তেজ দেখিয়ে অশান্তি শুরু করেছে। এদের ক্ষমা নেই। 

কৃষ্ণ কমললোচন অনুরোধ করে বলেন –শুন শুন ভীমসেন! তোমাদের জন্যই তিনলোক আজ এক হয়েছে। এখন একটু শান্ত হয়ে ভাব। এই যজ্ঞের জন্য এক লক্ষেরও বেশি রাজারা আজ এখানে উপস্থিত। এর মধ্যে কে ভাল, কে মন্দ জানা সম্ভব নয়। এখন সবাই যদি এই ঘটনা নিয়ে দ্বন্ধ শুরু করে তখন কি করবে! তখন তো আরো সাঙ্ঘাতিক অবস্থা হবে! নৃপরা রেগে যজ্ঞ পণ্ড করতে পারে। পৃথিবীর সবাই তোমার বিরুদ্ধে যাবে। কত জনকে তুমি শাস্তি দেবে! পার্থও এখন পাতালে থেকে গেল। তোমাকেই তো এখন সবদিক দেখতে হবে! 

কৃষ্ণের কথা শুনে ভীম বলেন –হে দেব দামোদর, এতো আপনার যোগ্য কথা নয়! আপনি যে এক লক্ষ নৃপের কথা বলছেন তাদের তো দেখে এলাম। বাঘের চোখে অজাযূথের(ছাগলের দল) যেমন লাগে, আমারও তাদের তেমন লাগল। এরা যদি এক যোটও হয় মুহূর্তে আমি এদের পরাজিত করতে পারি। মানুষ কেন তিনলোক এক হয়ে গেলেও আমি একেশ্বর হয়ে তাদের সাথে লড়তে পারি। আর হে দেব আপনি যাদের পক্ষে তাদের ত্রিভুবনে কে পরাজিত করতে পারে! 

গোবিন্দ বলেন –হে ভীম, তোমার পক্ষে সব সম্ভব আমি জানি। তোমার বিরোধ কেইবা করছে! এদের না হয় আমার অনুরোধেই এখন ছেড়ে দাও। এরপর কেউ অন্যায় করলে অবশ্যই দন্ড দেওয়া হবে। 
এই বলে তিনি নিজেই চারজনকে মুক্ত করলেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত লহরী, কাশীরাম কহেন ইহা শুনলে সহজে উদ্ধার হয় সংসার তরী।

......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers