Blog Archive

Monday, May 4, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৭

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন .....অর্জুনের সঙ্গে দ্রৌপদী কুম্ভকারালয়ে গমন করলেন...পঞ্চপান্ডবরা গৃহে উপস্থিত হলে মা কুন্তী ঘরের ভিতর থেকে বললেন –যা এনেছ তা পাঁচভাই ভাগ করে নাও।...পরে ভুল বুঝে বিলাপ করতে থাকেন...বলরাম ও কৃষ্ণ কুন্তীর সাথে দেখা করতে এলেন...দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদীর শোকে অভিভূত...পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে প্রবোধ দেয়...রাজা দ্রুপদ পুরোহিত পাঠিয়ে পঞ্চপাণ্ডবদের আমন্ত্রণ জানান...

 

যুধিষ্ঠিরকে দ্রুপদের পরিচয় জিজ্ঞাসাঃ 

দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন পুত্রদের সাথে বসেন, পাত্রমিত্র ও দ্বিজ পুরোহিত তাদের বেষ্টিত করে থাকে। সকলে পঞ্চভায়ের মুখচন্দ্র নিরীক্ষণ করে আনন্দিত হয়। 

রাজা সুখি মনে প্রশ্ন করেন –কে তোমরা, কোথায় বসবাস কর-সব সত্য করে বল। কে তোমাদের পিতা-মাতা। তোমাদের আকৃতি প্রকৃতি দেবতুল্য। রূপে পাঁচজনেই সমান শ্রেষ্ঠ। দেখে ইন্দু(চাঁদ), ইন্দ্র, কামদেব ও অশ্বিনীকুমারদের কথা মনে হয়। আমাদের মনে হচ্ছে তারাই উপস্থিত হয়েছেন। 
জেনে রাখ সত্যের সমান ধর্ম নেই ও মিথ্যের সমান পাপ নেই-সর্বশাস্ত্রে তাই বলে। আমার বিশ্বাস এসকল সত্য তোমরা জান ও বিশ্বাস কর। তাই সব কথা খুলে বল, আমার মনের অন্ধকার দুর কর। 

এত শুনে ধার্মিক যুধিষ্ঠির সজল জলদ গম্ভীর বচনে বলেন –আমরা পাঁচভাই পান্ডুর পুত্র। আমি যুধিষ্ঠির, এরা দুজন ভীমার্জুন। এরা নকুল ও সহদেব। অন্তপুরে গেলেন আমাদের মা কুন্তীদেবী। 

এত শুনে রাজা আনন্দিত হলেন। মুখে কথা ফুটে না। কদম্বকুসুমের মত কলেবর আনন্দের ফুলে ওঠে। আনন্দে চক্ষে অশ্রু দেখা দেয়। 
দ্রুত উঠে এসে তিনি যুধিষ্ঠিরকে আলিঙ্গন করেন ও চারভাইকে একে একে সম্ভাষেণ। 

রাজা বলেন –আমার পূর্বের ভাগ্যের ফল পাচ্ছি। মনের কামনা আজ পূর্ণ হতে চলেছে। সকল ঘটনা বল আমরা তো গৃহদাহে তোমাদের মৃত্যুর কথা শুনেছিলাম। 

যুধিষ্ঠির বলেন –সে গৃহ-দাহ নয়, জৌগৃহ করেছিল পুরোচন পাপাশয়। বিদুরের মন্ত্রণায় সে যাত্রায় রক্ষা পাই। 

শুনে দ্রুপদরাজা প্রচন্ড রেগে বলেন –অন্ধ নৃপরাজ ধৃতরাষ্ট্র এত নির্দয় হয়ে উঠেছেন! তার কি ধর্ম ভয়, লোক ভয়–লজ্জা নেই! ধর্মপথে ছিলে বলে তোমরা বেঁচে গেলে। পাপিরা তাদের কপটতার দোষেই মরবে। গৃহদাহে তোমরা মারা গেছ প্রচার করল। এখন জানছি জতুগৃহে তোমাদের পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। এখন আর সে সব দুঃখের কথা মনে রেখ না। আমার ধন-রাজ্য সব তোমাদেরই। 

এই ভাবে তারা অনেক্ষণ আলাপচারিতা করলেন। 

শেষে রাজা অনুরোধ করেন –এবার শুভক্ষণ দেখে তবে পার্থ কৃষ্ণাকে বিবাহ করুন। 
শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির অসম্মতি দিলে তিনি বলেন –ঠিক আছে তোমার যা বিচার! তুমি অথবা ভীম কিংবা মাদ্রীর দুইপুত্রের একজন কৃষ্ণাকে গ্রহণ কর। 

যুধিষ্ঠির বলেন –মায়ের বচনানুসারে দ্রৌপদীকে আমরা পাঁচভাই বিবাহ করতে চাই। 

যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে দ্রুপদ বিস্মিত হলেন। অধোমুখে ভূমি নিরীক্ষণ করে বলেন –কুন্তীপুত্র শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম অবতার। তুমি এমন কথা বলছ শুনে বিস্মিত হচ্ছি। পুরুষের বহু স্ত্রী হতে পারে কিন্তু এক স্ত্রীর বহুপতি বেদে বা লোকমাঝে কখনও শুনিনি। পূর্বে সাধুরা যা করেন নি, বর্তমানে ধার্মিকরাও তা করেন না। এমন অদ্ভূত কথা কখনও শুনিনি। ইতরপ্রায় বাক্য তুমি কি ভাবে বললে! 

যুধিষ্ঠির বলেন –রাজন আপনার কথাই সত্য। পূর্বের সাধুদের নির্দেশকে মান্য করতে হয়। লোকে-বেদে সকলেই বলে গুরুবাক্য লঙ্ঘন অনুচিত। লোকমত কর্ম আমরা সব সময় করব। 
লোকমতে গুরু শ্রেষ্ঠ হলেন জননী। সেই মায়ের বাক্য কিভাবে লঙ্ঘন করবো বলুন। মাকেই আমরা গুরু ও ইষ্টদেবতা জানি। মায়ের বচন আমরা দেবতুল্য মানি। মায়ের বচন যে দুরাচার লঙ্ঘে তার সকল সুকৃতি কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। 

যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে দ্রুপদ চিন্তিত হলেন। অধোমুখে বসে বিপদ গণেন। অনেক্ষণ পর তিনি বলেন –এ বিধি মানার শক্তি আমার নেই। আমি ধৃষ্টদ্যুম্ন ও পুরোহিতদের সাথে এখন বিচার বিবেচনা করতে চাই। আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রয়োজন। 

মহাভারতের কথা সুধাসিন্ধুবত। কাশীদাস কহেন সাধু পিয়েন অনুব্রত। 
................................... 

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers