[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন ....... যথাকালে যুধিষ্ঠির যথাযথ ভাবে যজ্ঞ সমাপন করলেন.....সকলকে যার যা যজ্ঞভাগ তা দান করে তুষ্ট করলেন.... ভীষ্মের পরামর্শে যুধিষ্ঠির সকলের শ্রেষ্ঠ কৃষ্ণের পূজা করতে গেলে চেদিরাজ শিশুপাল তীব্র প্রতিবাদ করে কৃষ্ণ নিন্দা করতে লাগল .....কিছু রাজারা শিশুপালের সঙ্গ দিল...... ভীষ্ম শিশুপালের কৃষ্ণ নিন্দার বিরোধ করলেন .....শিশুপাল ভীষ্মকেও অপমান করতে থাকে.. ... ভীষ্ম শিশুপালের জন্মকথা সবাইকে বলেন, যা শুনে শিশুপাল রেগে যায়......]
শিশুপাল বধ ও যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ সমাপনঃ
শিশুপালের গর্জন শুনে কমললোচন কৃষ্ণ মৃদু হেসে বলেন –সকল রাজারা মন দিয়ে শুনুন এই দুষ্ট শিশুপাল প্রথম থেকেই কিভাবে যাদবদের উপর অত্যাচার করছে। এক যাদবী নারীর গর্ভে জন্মেও এই দুরাচার আমাদের অপকার করে চলেছে।
একসময় আমি দ্বারকা ছেড়ে প্রাগজ্যোতিষে গেছিলাম, সেই সুযোগে এই দুষ্ট সসৈন্য দ্বারকায় আক্রমণ করে। রাজা উগ্রসেন তখন রৈবত পর্বতে ছিলেন। আমার পিতা বসুদেব যিনি শিশুপালের মাতুল(মামা)-তার শত উপরোধও সে শোনেনি, দ্বারকা নিষ্ঠুর ভাবে লুঠ করে নিয়ে যায়।
তারপর একসময় আমার পিতা অশ্বমেধ যজ্ঞ সঙ্কল্প করেন। তিনি তুরঙ্গ(ঘোড়া) ছারেন, যদুরা সে অশ্ব রক্ষণাবেক্ষণ করতে থাকে। সেই ঘোড়াটিও এই দুর্জন হরণ করে নিয়ে যায়। এর যে আরো কত দুষ্কর্ম আছে, কত বলি!
এক সময় সৌরীর দেশে মহোৎসব হচ্ছিল, যাদব বভ্রুর গুণবতী ভার্যা(স্ত্রী) সেখানে যাচ্ছিলেন তাকেও এই পাপমতি বল প্রয়োগ করে হরণ করে।
এর আরো দুষ্ট কাহিনী আছে। যাদব নন্দিনী ভদ্রাকে এ হরণের চেষ্টা করেছিল। মাতুলের কন্যা তো নিজের ভগিনী সমান! তাকেও এ হরণ করতে চায়।
এভাবে এর কত দোষের কথা শোনাবো! একে দেখেই সে সব কথা মনে পরছে। তবু পিতৃষ্বসার(পিসি) কাছে সত্যবচন করায় আমি সব ক্ষমা করে চলেছি।
আজ আপনাদের সবার সামনে অপমান করেই চলেছে, ভালই হয়েছে সকলের সামনে এসব বলে চলেছে। আজ আমি আর একে সহ্য করব না। এ পাপী আজ নিজেই মৃত্যু প্রার্থনা করছে।
এক সময় এ আমার স্ত্রী, ভীষ্মকের কন্যা লক্ষ্মীরূপা রুক্মিণীকে কামনা করেছিল। শূদ্র যেমন বেদবাক্য পাঠের ইচ্ছে করে, শিশু যেমন চাঁদ ধরতে চায় বা চন্ডাল যেমন কখনও হব্যের(যজ্ঞে দেবতাদের উৎসর্গ করা অন্ন) ভাগ পায় না, তেমনি এও আর রুক্মিণীকে পায় নি।
শ্রীমধুসূদনের এত কথা শুনে শিশুপাল হাসতে হাসতে কৃষ্ণ নিন্দা করে বলে –কৃষ্ণ তুমি দেখছি অতি নির্লজ্জ। তোমার দুষ্কর্ম তো সংসার বিখ্যাত। ভীষ্মকের কন্যার সাথে আমার বিবাহ স্থির হয়, সে কথা তো বললে না! তুমি তাকে সভা থেকে হরণ করেছিলে। আর আজ সে কথা সবার সামনে নির্লজ্জের মত বলছ! তোমরা সবাই বল অন্যের বাগদত্তাকে কি হরণ করা উচিত! ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কৃষ্ণ তুমি সবচেয়ে বেশি এমন কর্ম করেছ। গোকুলে তুমি কি করতে সকলে জানে। কত ব্রজাঙ্গনার পরদা হরণ করেছ কে জানে! তোমার সে সব কাজকর্ম আবার সভার মাঝে গর্ব করে বলছ! তুমি আমাকে ক্ষমা করছ! ক্ষমা করা ছাড়া তোমার আর কি ক্ষমতা আছে শুনি! ক্রোধ করেই বা তুমি আমার কি করতে পার! আমিও আজ তোমার শক্তি দেখতে চাই।
চেদীশ্বরের এত কথা শুনে শ্রীধর কৃষ্ণ সুদর্শন চক্রকে আজ্ঞা দিলেন। সুদর্শন মহাচক্র অগ্নির মত জ্বলতে জ্বলতে শিশুপালের শির কেটে ভূমিতলে ফেলল। বজ্রাঘাতে যেন পর্বত চূর্ণ হল। দেখে সব ক্ষিতীশ্বর(রাজারা) বিস্মিত হল। তারা দেখল শিশুপালের শরীর থেকে এক উজ্জ্বল জ্যোতি বের হয়ে আকাশে উঠে গেল, যেন দ্বিতীয় মিহির(সূর্য)। রাজারা এক দৃষ্টে অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
সেই উজ্জ্বল জ্যোতি পুনরায় এসে কৃষ্ণের চরণ প্রণাম করে কৃষ্ণপদেই অদৃশ্য হল। এসব দেখে সভাসদরা বিস্মিত হল।
বিনা মেঘে বর্ষণ, বজ্রপাত শুরু হল, বসুন্ধরা কেঁপে উঠল। আর যে সব রাজারা তর্জন গর্জন করছিল তারা ভয়ে আকুল হয়ে লুকাতে লাগল। অধর কামড়ে কেউবা ইঙ্গিত ইশারা করে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগল। অনেকেই আবার গোবিন্দের স্তুতি শুরু করে দিল।
রাজা যুধিষ্ঠির তখন সহোদরদের ডেকে আজ্ঞা দিলেন –শিশুপালের শরীরের সৎকারের ব্যবস্থা কর।
শিশুপালের পুত্রকে চেদীরাজ রূপে অভিষেক করা হল। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে সকল রাজারা তাদের অর্ঘ্য নিবেদন করতে লাগল। এভাবে রাজসূয় যজ্ঞ সুসম্পন্ন হল।
সকল রাজারা একযোগে যুধিষ্ঠিরকে বলে –আপনি লক্ষ রাজার উপরে, আপনিই আমাদের মহারাজ। আপনার মহিমা অপার। এখন আজ্ঞা দিন, আমরা নিজ নিজ রাজ্যে ফিরি।
রাজাদের কথা শুনে যুধিষ্ঠির ভাইদের ডেকে বলেন –সকল রাজাকে পুজো করা হোক। সকলকে যথাযোগ্য মান্য করে তাদের গন্তব্য পথে এগিয়ে দিয়ে আসবে।
এভাবে সকল রাজাদের বহু ধনরত্ন দিয়ে সন্তুষ্ট করে বিদায় জানানো হল।
মহাভারতে কথা সুধার সাগর, যা শ্রবণে নিষ্পাপ হয় নর।
......................................
শিশুপাল বধ ও যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ সমাপনঃ
শিশুপালের গর্জন শুনে কমললোচন কৃষ্ণ মৃদু হেসে বলেন –সকল রাজারা মন দিয়ে শুনুন এই দুষ্ট শিশুপাল প্রথম থেকেই কিভাবে যাদবদের উপর অত্যাচার করছে। এক যাদবী নারীর গর্ভে জন্মেও এই দুরাচার আমাদের অপকার করে চলেছে।
একসময় আমি দ্বারকা ছেড়ে প্রাগজ্যোতিষে গেছিলাম, সেই সুযোগে এই দুষ্ট সসৈন্য দ্বারকায় আক্রমণ করে। রাজা উগ্রসেন তখন রৈবত পর্বতে ছিলেন। আমার পিতা বসুদেব যিনি শিশুপালের মাতুল(মামা)-তার শত উপরোধও সে শোনেনি, দ্বারকা নিষ্ঠুর ভাবে লুঠ করে নিয়ে যায়।
তারপর একসময় আমার পিতা অশ্বমেধ যজ্ঞ সঙ্কল্প করেন। তিনি তুরঙ্গ(ঘোড়া) ছারেন, যদুরা সে অশ্ব রক্ষণাবেক্ষণ করতে থাকে। সেই ঘোড়াটিও এই দুর্জন হরণ করে নিয়ে যায়। এর যে আরো কত দুষ্কর্ম আছে, কত বলি!
এক সময় সৌরীর দেশে মহোৎসব হচ্ছিল, যাদব বভ্রুর গুণবতী ভার্যা(স্ত্রী) সেখানে যাচ্ছিলেন তাকেও এই পাপমতি বল প্রয়োগ করে হরণ করে।
এর আরো দুষ্ট কাহিনী আছে। যাদব নন্দিনী ভদ্রাকে এ হরণের চেষ্টা করেছিল। মাতুলের কন্যা তো নিজের ভগিনী সমান! তাকেও এ হরণ করতে চায়।
এভাবে এর কত দোষের কথা শোনাবো! একে দেখেই সে সব কথা মনে পরছে। তবু পিতৃষ্বসার(পিসি) কাছে সত্যবচন করায় আমি সব ক্ষমা করে চলেছি।
আজ আপনাদের সবার সামনে অপমান করেই চলেছে, ভালই হয়েছে সকলের সামনে এসব বলে চলেছে। আজ আমি আর একে সহ্য করব না। এ পাপী আজ নিজেই মৃত্যু প্রার্থনা করছে।
এক সময় এ আমার স্ত্রী, ভীষ্মকের কন্যা লক্ষ্মীরূপা রুক্মিণীকে কামনা করেছিল। শূদ্র যেমন বেদবাক্য পাঠের ইচ্ছে করে, শিশু যেমন চাঁদ ধরতে চায় বা চন্ডাল যেমন কখনও হব্যের(যজ্ঞে দেবতাদের উৎসর্গ করা অন্ন) ভাগ পায় না, তেমনি এও আর রুক্মিণীকে পায় নি।
শ্রীমধুসূদনের এত কথা শুনে শিশুপাল হাসতে হাসতে কৃষ্ণ নিন্দা করে বলে –কৃষ্ণ তুমি দেখছি অতি নির্লজ্জ। তোমার দুষ্কর্ম তো সংসার বিখ্যাত। ভীষ্মকের কন্যার সাথে আমার বিবাহ স্থির হয়, সে কথা তো বললে না! তুমি তাকে সভা থেকে হরণ করেছিলে। আর আজ সে কথা সবার সামনে নির্লজ্জের মত বলছ! তোমরা সবাই বল অন্যের বাগদত্তাকে কি হরণ করা উচিত! ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কৃষ্ণ তুমি সবচেয়ে বেশি এমন কর্ম করেছ। গোকুলে তুমি কি করতে সকলে জানে। কত ব্রজাঙ্গনার পরদা হরণ করেছ কে জানে! তোমার সে সব কাজকর্ম আবার সভার মাঝে গর্ব করে বলছ! তুমি আমাকে ক্ষমা করছ! ক্ষমা করা ছাড়া তোমার আর কি ক্ষমতা আছে শুনি! ক্রোধ করেই বা তুমি আমার কি করতে পার! আমিও আজ তোমার শক্তি দেখতে চাই।
চেদীশ্বরের এত কথা শুনে শ্রীধর কৃষ্ণ সুদর্শন চক্রকে আজ্ঞা দিলেন। সুদর্শন মহাচক্র অগ্নির মত জ্বলতে জ্বলতে শিশুপালের শির কেটে ভূমিতলে ফেলল। বজ্রাঘাতে যেন পর্বত চূর্ণ হল। দেখে সব ক্ষিতীশ্বর(রাজারা) বিস্মিত হল। তারা দেখল শিশুপালের শরীর থেকে এক উজ্জ্বল জ্যোতি বের হয়ে আকাশে উঠে গেল, যেন দ্বিতীয় মিহির(সূর্য)। রাজারা এক দৃষ্টে অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
সেই উজ্জ্বল জ্যোতি পুনরায় এসে কৃষ্ণের চরণ প্রণাম করে কৃষ্ণপদেই অদৃশ্য হল। এসব দেখে সভাসদরা বিস্মিত হল।
বিনা মেঘে বর্ষণ, বজ্রপাত শুরু হল, বসুন্ধরা কেঁপে উঠল। আর যে সব রাজারা তর্জন গর্জন করছিল তারা ভয়ে আকুল হয়ে লুকাতে লাগল। অধর কামড়ে কেউবা ইঙ্গিত ইশারা করে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগল। অনেকেই আবার গোবিন্দের স্তুতি শুরু করে দিল।
রাজা যুধিষ্ঠির তখন সহোদরদের ডেকে আজ্ঞা দিলেন –শিশুপালের শরীরের সৎকারের ব্যবস্থা কর।
শিশুপালের পুত্রকে চেদীরাজ রূপে অভিষেক করা হল। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে সকল রাজারা তাদের অর্ঘ্য নিবেদন করতে লাগল। এভাবে রাজসূয় যজ্ঞ সুসম্পন্ন হল।
সকল রাজারা একযোগে যুধিষ্ঠিরকে বলে –আপনি লক্ষ রাজার উপরে, আপনিই আমাদের মহারাজ। আপনার মহিমা অপার। এখন আজ্ঞা দিন, আমরা নিজ নিজ রাজ্যে ফিরি।
রাজাদের কথা শুনে যুধিষ্ঠির ভাইদের ডেকে বলেন –সকল রাজাকে পুজো করা হোক। সকলকে যথাযোগ্য মান্য করে তাদের গন্তব্য পথে এগিয়ে দিয়ে আসবে।
এভাবে সকল রাজাদের বহু ধনরত্ন দিয়ে সন্তুষ্ট করে বিদায় জানানো হল।
মহাভারতে কথা সুধার সাগর, যা শ্রবণে নিষ্পাপ হয় নর।
......................................