Blog Archive

Monday, December 26, 2016

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩৫

[পূর্বকথা - পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করে পিতাকে রাজা হরিশচন্দ্রের মত ইন্দ্রের স্বর্গে স্থান করে দিতে চায় ......অর্জুন, ভীম নকুল ও সহদেব সে কারণে দ্বিগ্বিজয় যাত্রা করেন......চারদিকে ধন্য ধন্য ধ্বনি উচ্চারিত হয় ......যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে যজ্ঞের আয়োজন করেন ....... চারদিকে দূতদের আমন্ত্রণের জন্য পাঠান শুরু হল...... মুনিরা হোম যজ্ঞের আয়োজন শুরু করেন......] 



দেবগণকে নিমন্ত্রণ করিতে অর্জ্জুনের যাত্রাঃ 

জন্মেজয় বৈশম্পায়ন মুনিকে বলেন –হে মুনিবর, কে কোন দিক থেকে এলো শুনলাম। কত সৈন্য নিয়ে এল এবং পিতামহ যুধিষ্ঠিরকে কে কি ভেট দিলেন সব শুনলাম। কিন্তু পার্থ কিভাবে দেবতাদের নিমন্ত্রণ করতে গেলেন-তা জানতে ইচ্ছে হয়। দেব পশুপতিও কি এসেছিলেন! সব কথা বিস্তারিত বলে মনের ধন্দ ভাঙ্গুন। পিতামহদের কথা আমায় মকরন্দের(পুষ্পমধু) মত টানে। 

মুনি বলেন –হে নরপতি, তবে কিছু প্রধান প্রধান কথা শুনুন। 
কপিধ্বজ আরোহণ করে পার্থ পবন বেগে অশ্ব ছোটালেন। পর্বতে যত রাজা ছিল সকলকে নিমন্ত্রণ করে তিনি কৈলাস পর্বতে গেলেন। কুবেরের সাথে দেখা করে সকল কথা বললেন –ধর্মপুত্র সকলের আশীর্বাদ নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞ করতে চান। 

কুবের বলেন –আমি আপনার আমন্ত্রণ স্বীকার করলাম। আমি নিজের সঙ্গীদের নিয়ে যজ্ঞে অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। 

কুবেরের কথায় প্রীত হয়ে অর্জুন কৃতাজ্ঞলি করে পুনরায় বলেন –দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে আমন্ত্রণ করতে যেতে চাই। কোন পথে যাব, সঙ্গে যদি কোন জ্ঞাতজনকে দেন-খুবই কৃতজ্ঞ হই। 

কুবের তখন গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনকে ডেকে বলেন –আপনি অর্জুনকে পথ দেখিয়ে সুরপতি ইন্দ্রের স্থানে নিয়ে যান। 

আজ্ঞা পেয়ে চিত্রসেন কপিধ্বজ রথের সারথি হয়ে অর্জুনকে নিয়ে রওনা হলেন। 

কিছুদুর গিয়ে হরের ভবন দেখে পার্থ জানতে চান –এটি কার পুরী! 

চিত্রসেন বলেন –এখানে ত্রিপুরারি(ত্রিপুর অসুর হন্তা-শিব) বাস করেন। যজ্ঞের জন্য আপনি ত্রিলোচন শিবকে নিমন্ত্রণ করুন। সর্ব কার্যসিদ্ধি হবে হরের আগমনে। 

এত শুনে ধনঞ্জয় রথ থেকে নেমে হরগৌরীর সামনে এসে অনেক স্তুতি করেন। 

হর খুশি হয়ে বলেন – বর প্রার্থনা করুন। 

অর্জুন বলেন –ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ করতে চান। সেখানে যদি আপনারা উপস্থিত হন-আমরা কৃতার্থ হই। 
হর-পার্বতী হেসে সম্মতি দেন। 

হর বলেন –আমি অবশ্যই যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে তা নির্বিঘ্নে যাতে হয় তা দেখব। 

পার্বতী বলেন –যজ্ঞপুরী গিয়ে ত্রিভুবনের সকলকে আমার প্রসাদে সুখী করব। আমি সংসারে অন্নপূর্ণা নামে খ্যাত। আমার নাম নিয়ে সূপকাররা অল্প দ্রব্যেই সুতৃপ্ত করবে বহুজনকে। সকল কিছু অক্ষয় অব্যয় হবে, অমৃত সমান। যার যাতে মন প্রীত হয় তাই আমি উপস্থিত করব। 

হর পার্বতীর বর পেয়ে ধনঞ্জয় তাদের প্রণাম করে আনন্দ মনে চিত্রসেনের সাথে ইন্দ্রের ভবনে চললেন। পবন রথে চিত্রসেন ক্ষণিকেই ইন্দ্রের সামনে উপস্থিত হলেন। দেবরাজকে পার্থ ভুমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করেন। 

ইন্দ্র পার্থকে উঠিয়ে আলিঙ্গন করে নিজ কোলে বসিয়ে বলেন –হে তাত(প্রিয়), কি কাজে এখানে এলে! 

অর্জুন বলেন –হে দেব, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের কারণে আপনার কাছে পাঠালেন। সেই যজ্ঞে অধিষ্ঠান করে আপনি ও স্বর্গের সব সুর সিদ্ধ মুনিরা আমাদের ধন্য করুন। 

ইন্দ্র বলেন –রাজসূয় যজ্ঞের কথা শুনেই যাব স্থির করেছি। তুমি না আসলেও আমি অবশ্যই যেতাম। এই দেখ আমরা দেবতারা সকলে সেখানে যাওয়ার জন্য সুসজ্জিত হচ্ছি। চার মেঘ, অষ্ট হস্তী, সকল পবন নেওয়া হয়েছে। স্বর্গের সকল দ্রব্য যা পৃথিবীতে দুর্লভ সে সব সাজিয়ে নিচ্ছি সব তোমাদের যজ্ঞের কারণ। আমি এই যজ্ঞেরস্থানে রওনা দিচ্ছি। তুমি নিশ্চিন্ত মনে অন্যদের নিমন্ত্রণ করতে যাও। 

ইন্দ্রের মুখের কথা শুনে আনন্দিত মনে পার্থ তাকে প্রণাম জানিয়ে অন্যদিকে গমন করলেন। 

পৃথিবীর দক্ষিণে সূর্যের পুত্র যমের ভবন। সেখানেই চিত্রসেন পবন বেগে রথ চালালেন। মুহূর্তে তারা প্রেতপতির ভবনে উপস্থিত হলেন। 

অর্জুন যমালয়ে যমদেবকে প্রণাম করলে যমরাজ আশীর্বাদ করে বলেন –হে ইন্দ্রপুত্র অর্জুন! কি কারণে আপনার আগমন! আমি আপনার জন্য কি করতে পারি বলুন। 

অর্জুন বলেন –হে দেব, রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেছেন রাজা যুধিষ্ঠির। আপনি সেখানে আপনার সকল সাথীদের নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি খুবই খুশি হবেন। 
যমরাজ শমন তার আমন্ত্রণ স্বীকার করলেন। 
পার্থ পুনরায় জোড়হাতে বলেন –হে রাজন, নারদ মুনি আপনার সভার কথা আমাদের বলেছিলেন। মর্তে যারা মারা যান তারা আপনার ভবনে স্থান পান শুনেছি। এখানে আমাদের পিতা পান্ডূর মনোবাঞ্ছা মেনেই এই রাজসূয় আরম্ভ হচ্ছে। কিন্তু এখানে তো আমার পিতা পিতামহদের দেখছি না, তারা কোথায় আছেন, যদি বলেন ধন্য হই। 

হেসে যম বলেন –মৃতজনদের তুমি দেখবে কি করে! জীবন্ত মানুষ ও মৃত মানুষের দেখা হওয়া কখনও সম্ভব নয়। 
শুনে পাণ্ডূপুত্র বিস্ময়াপন্ন হলেন। যমের কাছ থেকে মেলানি নিয়ে তিনি বরুণালয়ে চললেন। 

পশ্চিম দিকে জলপতির আলয়। সেখানে পৌছে বরুণকে যজ্ঞের বিবরণ দিয়ে তার পুরীর সকলকে আমন্ত্রণ জানান। 
বরুণ বলেন –যজ্ঞে আমার সব অনুচরদের নিয়ে অবশ্যই যাব। তবে দৈত্য দানবদেরও যদি নিয়ে যেতে বলেন তবে তাদের গিয়ে নিমন্ত্রণ যানাতে হবে। 

বরুণের কথা শুনে ধনঞ্জয় ময়দানবরাজের কাছে গেলেন। ময়কে পার্থ সকল কথা জানালেন। পূর্বে ময়দানবের উপকারের কথা স্বীকার করে তাকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর জোড়হাতে পার্থ বলেন –হে বন্ধু, এখানে যত দৈত্যদানব আছেন সকলকে নিয়ে আমাদের রাজসূয় যজ্ঞে উপস্থিত হলে আমরা ধন্য হব। 

শুনে ময়দানব বলেন –বন্ধু, নিশ্চিন্তে আপনি অন্য কাজে যেতে পারেন। আমি অবশ্যই আমার সকল অনুচরকে নিয়ে যজ্ঞে উপস্থিত হব। 

শুনে অর্জুন ময়কে আলিঙ্গন করে পৃথিবীর দক্ষিণে লঙ্কাপুরে বিভীষণকে নিমন্ত্রণ করতে গেলেন। পার্থ রথ চালিয়ে লঙ্কাপুরে উপস্থিত হয়ে অবাক হলেন। ইন্দ্র-যমপুরীর সমান সুন্দর নির্মাণ এই রাক্ষসদের লঙ্কাপুরী। পুরী ঘুরে পার্থ খুশি হলেন। আনন্দ মনে রাজা বিভীষণের কাছে গেলেন। সিংহাসনে বসে রাক্ষস-ঈশ্বর বিভীষণ। ইন্দ্রপুত্র পার্থ তাকে প্রণাম করেন। 

বিভীষণ বলেন –আপনি কে! 

অর্জুন তখন নিজ পরিচয় দিয়ে বলেন –যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ করছেন। যদুবীর শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। 

অর্জুনের মুখে সব কথা শুনে হৃষ্ট মনে তাকে আলিঙ্গন করে বসিয়ে বিভীষণ বলেন –অবশ্যই আপনাদের এই যজ্ঞ দেখতে যাব। আমার সৌভাগ্য আমি নারায়ণের সাক্ষাৎ করতে পারব। আপনার কথা মত পুরীর সকলকে সঙ্গে নিয়ে যাব। আপনি নিজ কাজে নিশ্চিন্ত মনে যান। 

বিভীষণকে নিমন্ত্রণ করে অর্জুন নিজ রাজ্য ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলেন। 
অন্যান্য রাজাদের নিমন্ত্রণ করতে অন্য দূতরা গেল। শোনামাত্র রাজারা সকলে আসল। 
দূত বাক্য অবহেলা করে যে আসল না অর্জুন তাদের বন্দি করে আনলেন। 

সভাপর্ব সুধারস রাজসূয় কথায়, কাশীরাম দাস কহেন সুধাসিন্ধু গাঁথায়।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers