Blog Archive

Saturday, October 29, 2016

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩১

[পূর্বকথা - পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করে পিতাকে রাজা হরিশচন্দ্রের মত ইন্দ্রের স্বর্গে স্থান করে দিতে চায় ......অর্জুন ও ভীম সে কারণে দ্বিগ্বিজয় যাত্রা করেন



সহদেবের দিগ্বিজয়ঃ

বাম্যদিকে(দক্ষিণদিকে) সহদেব সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলেন। 
প্রথমে তিনি শূরসেন(মথুরার কাছে) রাজ্যে এলেন। সেখানের নরপতি প্রীতিপূর্বক বহু রত্ন প্রদান করলেন। 
এরপর সহদেব মৎস্যদেশও জয় করলেন। অধিরাজের মহাবলধর দন্তবক্রের সাথেও সহদেবের সংগ্রাম হল এবং তাকে হারিয়ে বহু কর আদায় করলেন। 
এরপর সুকুমার ও সুমিত্র নামে দুই রাজাকেও হারালেন। 
নিষাদ রাজাকে হারিয়ে গোশৃঙ্গ জয় করলেন। 
শ্রেণীমান রাজাও তার কাছে হেরে গেল। 
এরপর সহদেব কুন্তিভোজ রাজ্যে চতুরঙ্গ নিয়ে প্রবেশ করলেন। কুন্তিভোজ রাজা প্রীতমনে সহদেবকে কর প্রদান করেন। 
এরপর সহদেব অবন্তী নগরে বিন্দ অনুবিন্দ রাজাকে পরাস্ত করলে নানা ধন ও বহু পূজা পেলেন।

পরে বিদর্ভ নগরে এসে রাজা ভীষ্মকের কাছে দূত পাঠান হল। ভীষ্মক জানতে পারলেন জামাই কৃষ্ণ-গোবিন্দের সখা এঁরা, তাই আনন্দ মনে তিনি সহদেবকে যথোচিত পূজা করে নানা রত্ন প্রদান করলেন। 

এরপর কান্তার, কোশলাধিপ, নাটকেয়, হেরম্ব, মারুধ, মুঞ্জগ্রাম, বাতাধিপ, পান্ড্যদেশ জয় করা হল। তারপর কিষ্কিন্ধ্যা প্রদেশে সহদেব প্রবেশ করলেন। সেখানের দুই কপিরাজ(বানররাজ) মৈন্দ ও দ্বিবিদ। তারা শত্রু সৈন্য দেখে প্রচুর বানরসৈন্য নিয়ে বৃক্ষ-শিলা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করল। এভাবে বানর-মনুষ্যের মহারণ শুরু হল। সাতদিন ধরে অবিরাম সে যুদ্ধ চলল। রাতেও তা বন্ধ হল না। 
শেষে বানররাজরা খুশি হয়ে সহদেবকে বলে –কে তুমি, কি কারণে এখানে এলে! 

সহদেব তার সকল কথা জানালেন। 

বানররাজরা বলে –এটা কিষ্কিন্ধ্যানগর, মানুষের এত শক্তি নেই যে আমাদের জয় করে। তবে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির যজ্ঞ করবেন। আমরা কর না দিলে সে যজ্ঞে বিঘ্ন ঘটবে, তাই ধন দিতে সম্মত হচ্ছি। তুমি যত পার নিয়ে যাও। 

এই বলে শত শত রত্ন রাজি দান করা হল। যত রত্ন পেলেন সহদেব সব দেশে পাঠিয়ে মাহিষ্মতীপুরে উপস্থিত হলেন। 
মাহিষ্মতীপুরীর রাজা হলেন মহাতেজা নীল। তিনি শত্রুর আক্রমণ শুনে মহারণে ধেয়ে এলেন। নীলরাজের সাথে সহদেবের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ হল। হুতাশন অগ্নি স্বয়ং নীলের সেনাপতি। শত্রু দেখে অগ্নি নিজ মূর্তি ধারণ করলেন। ফলে সহদেবের চোখের সামনে দাবদাহে তার সৈন্যরা প্রাণ দিতে লাগল। সব দেখে পান্ডুপুত্র বিস্মিত হলেন। 

জন্মেজয় তখন বৈশম্পায়ন মুনিকে জিজ্ঞাসা করেন –সেকি! হুতাশন অগ্নি কিভাবে রাজা নীলের কাছে বাঁধা পরলেন! 

মুনি বলেন – নীল রাজা সর্বদা যজ্ঞ করতেন। সর্বদা অগ্নি প্রজ্বলিত থাকতেন। রাজা নীলের সুন্দরী তনয়া সকলের পূর্বে অগ্নি বৈশ্বানরের পূজা করতেন। যতক্ষণ না এই কন্যা পূজা করেন, ততক্ষণ অগ্নি উজ্জ্বল হতেন না। কন্যার বিম্বোষ্ঠ(লাল ঠোঁট), চন্দ্র আনন(মুখ) দেখে অগ্নিদেব কামানলে দগ্ধ হলেন। দ্বিজ মূর্তি ধরে তিনি কন্যার কাছে এসে মধুর বচনে আলাপ করতে লাগলেন। 

রাজা নীল তা দেখে ক্রোধে তাকে দন্ড দিতে গেলেন। বৈশ্বানর এবার প্রচন্ড রেগে স্বমূর্তি ধারণ করেন। তাই দেখে রাজা ভয় পেয়ে তার স্তব করতে থাকেন এবং নিজ কন্যাকে অগ্নির হাতে সমর্পণ করেন। সন্তুষ্ট হয়ে অগ্নি রাজাকে বর দিতে চান। 

রাজা বলেন –আপনি সর্বদা আমার সদনে থাকুন। শত্রুরা যেন কোনদিন আমায় পরাস্ত না করে, দেখবেন। সন্তুষ্ট হয়ে অগ্নি সেই বর দিয়ে কন্যার সাথে রাজপুরীতেই অবস্থান করতে লাগলেন। যারা এতসব না যেনে মাহিষ্মতীপুরী আক্রমণ করতে এল, তারাই মৃত্যু মুখে পরল। তাই ভয়ে আর কেউ সে মুখ হয় না। নিষ্কন্টক হয়ে রাজা নীল মহানন্দে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। 

এদিকে অগ্নি যখন সহদেবের সৈন্যদের পুড়িয়ে মারতে লাগলেন, সৈন্যরা ভয়ে পালাতে লাগল। মদ্রসুতাসুত(মদ্রকন্যা মাদ্রীর পুত্র) সহদেব সব দেখে শুনে অবাক হলেন। 
অনেক চিন্তা করে তিনি অস্ত্র ত্যাগ করে অগ্নির স্তব শুরু করলেন –হে অগ্নিদেব! সকল দেবতার উৎপত্তি আপনার মাধ্যমে। আপনি পাপহন্তা, সর্ব ঘটে আপনার স্থিতি। রুদ্রগর্ভ, জলোদ্ভব, বায়ুসখা, শিখী, চিত্রভানু, বিভাবসু প্রমুখ আরো কত নামে আপনি খ্যাত। আপনার পিঙ্গ(অগ্নিবর্ণ) আঁখি(চোখ)। আপনাকে আরাধনা করলে দেব পিতৃগণ তুষ্ট হন। সে কারণে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির যজ্ঞের আয়োজন করছেন। নিজের ভক্তের কাজে বিঘ্ন ঘটান কি উচিত কর্ম, প্রভূ! জগতে আপনি সবার হিতের জন্যেই বিখ্যাত। প্রসন্ন হন, প্রভূ! 

সহদেবের স্তুতিবাক্যে দেব হুতাশন অগ্নি শান্ত হলেন। সহদেবকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন –উঠুন হে কুরু পুত্র! ভয় পাবেন না। এই নীলধ্বজপুর আমার রক্ষণ। সে কারণে আপনার সেনা দহন করলাম। আপনি আমার প্রিয় পাত্র তাই ক্ষমা করলাম। আমি আপনার সাহায্য করব। নীলরাজাকে বলব তিনি আপনার যোগ্য সম্মান করবেন। 

অগ্নির কথা মত রাজা নীল সহদেবের পূজা করে প্রচুর ধনরত্ন দান করলেন। 

এরপর সহদেব ত্রিপুরের দেশে প্রবেশ করলেন। সে দেশ জয় করে কৌশিক, সুরাষ্ট্র জয় করে ভোজ কটকে প্রবেশ করলেন। কৃষ্ণের শালা রুক্মির সাথে সহদেবের যুদ্ধ হল। রুক্মি যুদ্ধে হেরে বহু রত্ন কর দিল। 
তারপর সহদেব শর্পকের দেশে গেলেন দন্ডককাননে। সমুদ্রের তীরে ম্লেচ্ছ কিরাতদের বসতি। খুব সহজেই এদের সকলকে জয় করা গেল। 
আরো দক্ষিণে বহু রাক্ষসদের বাস। পান্ডুর এই পুত্র তাদের সংহার করলেন। 

সেখান থেকে বীর সহদেব দীর্ঘকর্ণদেশে গেলেন। সেখানের অধিবাসীদের অতি দীর্ঘ দুই কান, শরীর বিবর্ণ। কালমুখ, হ্রস্বমুখ, কোলগিরি প্রভৃতি বহু রাজাদের জিতে বহু ধনরত্ন পেলেন। 
তাম্রদ্বীপ, রামগিরি অবহেলায় জয় হল। 
এরপর সহদেব কৌতূহল নিয়ে একপদ দেশে গেলেন। সেখানে যত মানুষ বাস করে সকলের একটি মাত্র পা। হাতে তারা ধনুক ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ব্যাঙের মত লাফিয়ে চলে। 
সঞ্জয়ন্তীনগরের ভূপতিকেও জয় করা গেল। 
এছাড়া কর্ণাটক, কলিঙ্গ, পান্ড্য, দ্রাবিড়, উষ্ট্র, কেরল, অন্ধ্র-এই আটদেশের বীর রাজা দূত মুখে সহদেবের সংবাদ শুনে কর দিলেন। 

আরো দক্ষিণে সেতুবন্ধে সমুদ্রতীরে এসে সহদেব লঙ্কায় বিভীষণের কাছে দূত পাঠালেন। সময় বুঝে রাক্ষসরাজ বহু ধনরত্ন তাকে ভেট করলেন। এই পর্যন্ত গিয়ে মাদ্রীর এই পুত্র নিবর্ত হলেন। 
আনন্দ মনে তিনি ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলেন। ধন রথ সব তিনি ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে নিবেদন করলেন। 
আনন্দিত মনে তার বিজয়কাহিনী বললেন। 

দক্ষিণ ভারতে পাণ্ডবদের জয়ের কথা যে জন শুনেন তার সর্বত্র জয় কাশীদাস ভণেন। 
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers