Blog Archive

Sunday, November 15, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১১

[পূর্বকথা দুর্যোধনের কন্যা লক্ষণার স্বয়ম্বর হলে, কৃষ্ণ পুত্র শাম্ব তাকে হরণ করেন...কর্ণের সাহায্যে তাকে বন্দি করা হয়...নারদের মুখে পুত্রের দুর্দশার সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ ক্রোধে যুদ্ধে যাত্রা করতে গেলে বলরাম তাকে নিরস্ত করে নিজে যান…কিন্তু দুর্যোধন শাম্বকে ছাড়তে না চাইলে ক্রোধে বলরাম হস্তিনানগর ধ্বংসে উদ্যত হন…তখন দুর্যোধন ভয়ে কন্যা লক্ষণা ও জামাতা শাম্বকে বলরামের হাতে তুলে দেন…এদিকে সুভদ্রা বিবাহ-কারণে সত্যভামার মহাচিন্তা শুরু হল ..... কৃষ্ণের মত জেনে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিলেন সুভদ্রাকে বিবাহের .....অন্যদিকে বলরাম হস্তিনায় দূত প্রেরণ করে দুর্যোধনে বিবাহের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন ......]

দুর্যোধনের বরবেশে দ্বারকায় গমনঃ 



দুর্যোধন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে দূত পাঠাল –আপনারা সকলে সপরিবারে আমার বিবাহে আসবেন। 

পত্র পেয়ে যুধিষ্ঠির অবাক হলেন। তিনি সহদেবকে বলেন –অর্জুন আগে লিখে জানাল সুভদ্রার কথা। দুর্যোধন আবার এখন সেই ভদ্রাকে বিবাহ করতে চলেছে। এযে অসম্ভব ব্যাপার! একিভাবে সম্ভব সহদেব, কিছু বল! 

সহদেব বলেন –শুনুন নরনাথ! সুভদ্রার সাথে অর্জুনের সাতদিন আগেই বিবাহ হয়ে গেছে। সত্যভামা লুকিয়ে এই বিবাহ দিয়েছেন। কৃষ্ণের আজ্ঞায় বলরামকে সে কথা জানান হয়নি। বলরামের ইচ্ছে ভদ্রাকে দুর্যোধনের হাতে দেবেন। তাই রামের অনুরোধে দুর্যোধন চলেছে। এর উচিত বিধান আপনাকেই করতে হবে, মহারাজ! এ নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। 

যুধিষ্ঠির বলেন –এতো লজ্জার বিষয়। আমার সেখানে যাওয়া উচিত হবে না। কেউ না গেলে রাজা দুর্যোধন দুঃখী হবে। 
সে কারণে যুধিষ্ঠির ভীমকে সসৈন্য যাত্রার আজ্ঞা দিলেন। 

রাজার আজ্ঞা পেয়ে বীর বৃকোদর ভীম পাঁচ অক্ষৌহিণীর দল নিয়ে দ্রুত রওনা হলেন। 

আনন্দে দুর্যোধন বরবেশে সেজে ওঠে। রত্নময় চতুর্দোলায় আরোহণ করে। নানা শব্দে বাদ্য বাজতে থাকে। হয়(ঘোড়া), হাতি, রথ, সেনা অগণন চলতে থাকে। 

দুর্যোধনের বরবেশ দেখে ভীম রেগে বলেন –আরে অবোধ! এখান থেকে দ্বারকা তো বহু দূর। এখান থেকে বরবেশে যাত্রার কি আছে! 

দুঃশাসন বলে –এতে কি দোষ হল! সুন্দর সজ্জা যদি সহ্য না হয় তবে আমাদের পিছু পিছু এস। 

ভীম বলেন –ভাল কি মন্দ তা শেষে বুঝবে। কোন কন্যাকে বরবেশে বিবাহ করতে চলেছ! তোমাদের কাছে দূত দেরিতে গেছে। সুভদ্রার বিবাহ আজ এক সপ্তাহ আগেই হয়ে গেছে। অকারণে সভার মাঝে বরবেশে গিয়ে লজ্জা পাবে। তাই ও বেশের দরকার নেই বলছিলাম। পিছু পিছু কেন যাব, আমি বরং এগিয়ে চলি। 
এই বলে সসৈন্য বীর ভীম বেগের সাথে এগিয়ে গেলেন।

ভীমের কথা শুনে শকুনি, কর্ণ সহ দুর্যোধন বিস্মিত হল। ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর পরস্পরের মধ্যে কানাকানি করতে থাকেন। 

দুঃশাসন বলে –বৃকোদর এমন ভাবে কথা গুলো বলে গেল যেন সবই সত্য। তোমরা কি যান না ভীমের দুষ্ট বুদ্ধি! দুর্যোধনকে বরবেশে দেখে তার হিংসা হয়েছে। তাই বাতুলের(ক্ষেপা) মত যা মুখ এল তাই বলে গেল। বুকে শেল বেজেছে তাই এত দ্রুত চলেছে। 

কর্ণ ও দুর্যোধন সে কথায় খুশি হয়ে বলে –ঠিক বলেছ।এই বৈভব দেখতে পারছে না বলে এগিয়ে গেছে। 
এসব বিচার করে তারা যাত্রা করতে লাগল। তিন দিনে শত যোজন পথ চলল। 

রাজা দুর্যোধন তখন যুক্তি করে দূতের হাতে পত্র লিখে শীঘ্র গতি বলরামের কাছে পাঠাল –রোহিণীনক্ষত্র শেষ অক্ষয় তৃতীয়া দ্বিতীয় প্রহরে কাল আমরা উপস্থিত হচ্ছি। আজ রাতেই কন্যার অধিবাসের(বিবাহের পূর্ববর্তী শুভ অনুষ্ঠান) ব্যবস্থা করুন। কাল রাত্র বিবাহের জন্য শ্রেষ্ঠ লগ্ন তিথি। 

দূত সেই পত্র গিয়ে মুষলীর(বলরাম) হাতে দিল। 
পত্র পড়ে আনন্দিত বলরাম সভায় সকলকে বলেন –আজ রাতেই ভদ্রার গন্ধ অধিবাস করা হোক। রাজা দুর্যোধন সাজসজ্জা করে কাছেই চলে এসেছেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম কহেন সদা, শুনেন পুণ্যবান।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers