Blog Archive

Saturday, November 1, 2014

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৭

অর্জ্জুন-অঙ্গারপর্ণ সংবাদঃ

ব্যাসদেব পঞ্চপান্ডবকে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের অদ্ভূত আয়োজনের কথা শোনান। দ্রুপদরাজের আমন্ত্রণে বহু রাজরাজেশ্বর এসেছেন পাঞ্চালনগরে। রাজা অদ্ভূত এক লক্ষ্য রচনা করেছেন, সেই লক্ষ্যভেদ শক্তি কারও নেই। অর্জুন গিয়ে সেই লক্ষ্য সভা মাঝে ভেদ করবেন। এভাবে পাঞ্চালকন্যা প্রাপ্ত হবে। মুনি তাদের শীঘ্র পাঞ্চাল যেতে বললেন এবং নিজস্থানে ফিরে গেলেন।

মা কুন্তীদেবীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডব উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। দিনরাত্রি তারা পথ চললেন। নানা দেশ, নদ-নদী, গ্রাম পেরলেন। বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের নেই। ঘোর রজণীতেও ধনঞ্জয় অর্জুন আগে আগে মশাল ধরে পথ দেখিয়ে চলেন। কয়েকদিন চলার পর তারা সন্ধ্যায় গঙ্গাতীরে পৌছলেন। সেখানে স্ত্রীসহ এক গন্ধর্ব বিহার করছিলেন।

পান্ডবদের শব্দ শুনে তাদের ডেকে তিনি বলেন – মানুষ হয়েও দেখি তোমাদের খুব অহঙ্কার! প্র্য়াগগঙ্গার মাঝে আমার বাস। প্রাতঃসন্ধ্যার পূর্বকাল পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি যক্ষ-গন্ধর্ব -রাক্ষসদের, অবশিষ্ট কাল মানুষের। রাত্রিতে কোন মানুষ, এমন কি সসৈন্য নৃপতিও যদি জলের কাছে আসে তবে ব্রহ্মজ্ঞরা নিন্দা করেন। আমি কুবেরের সখা গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ এই বন আমার, তোমরা এখান থেকে দূরে চলে যাও।

গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ

অর্জুন বলেন– সমুদ্র, হিমালয় পার্শ্বে এবং এই গঙ্গায় দিনে, রাত্রিতে বা সন্ধ্যায় কারও আসতে বাঁধা নেই। তোমার কথায় কেন আমরা গঙ্গার পবিত্র জল স্পর্শ করব না!

তখন অঙ্গারপর্ণ পান্ডবদের উদ্দেশ্যে অনেকগুলি বাণ ছুঁড়লেন। অর্জুন তার মশাল ও ঢাল ঘুরিয়ে সমস্ত বাণ নিরস্ত করে দ্রোণের থেকে পাওয়া প্রদীপ্ত আগ্নেয় অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। গন্ধর্বরাজের রথ পুড়ে গেল। তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে পালালেন। অর্জুন তাকে তাড়া করে তার চুলের মুঠি ধরলেন।

স্বামীর ঘোর বিপদ বুঝে গন্ধর্বের স্ত্রী কুম্ভীলসী যুধিষ্ঠিরের পায়ে পরে স্বামীর হয়ে ক্ষমা চাইলেন। তিনি বলেন- সাধু শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম অবতার। তোমার আশ্রয়ে সবার দুঃখমোচন হয়। এই পরম সঙ্কটে আমাদের উদ্ধার কর। সহস্র সতীনের সাথে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও।

নারীর শোকাশ্রু দেখে যুধিষ্ঠিরের মন আদ্র হল। তিনি অর্জুনকে গন্ধর্বরাজকে ছেড়ে দিতে আজ্ঞা দিলেন। যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে অর্জুন তাকে ছেড়ে দিলেন।

যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে অর্জুন অঙ্গারপর্ণকে ছেড়ে দিলেন

গন্ধর্বরাজ জোড় হাতে বিনয়ের সাথে বলেন– আমায় আপনি প্রাণদান করলেন, আমিও আপনাকে কিছু দিতে চাই। অদ্ভূত চাক্ষুসী বিদ্যা আমি আপনাকে দান করতে চাই। আপনি ত্রিলোকের যা কিছু দেখতে ইচ্ছা করবেন, এই বিদ্যা বলে তাতে দেখতে পাবেন। মনু এ বিদ্যা চন্দ্রকে দিয়েছিলেন। পরে তিনি তা আমায় দান করেন। আজ তা আমি আপনাদের দেব। এছাড়া আপনাদের প্রতি ভাইকে একশত দিব্যবর্ণ বেগবান গন্ধর্বদেশীয় অশ্ব দিচ্ছি, এরা প্রভূর ইচ্ছানুসারে উপস্থিত হয়। পূর্বে ইন্দ্র বেত্রাসুরে বজ্র দিয়ে প্রহার করেছিলেন। অসুরের মুন্ডে বজ্র শতখান হল। স্থানে স্থানে সেই বজ্রকে নিয়োগ করা হল। সবার শ্রেষ্ঠ বজ্র ব্রাহ্মণের বচন। শূদ্ররা কাজ করে, বজ্র তাদের সেবা করে। বৈশ্যরা দান করেন- বজ্র তাদের ও বলে। ক্ষত্রিয় হয়ে আপনার সেই শক্তির বজ্রে আমার রথ আজ দগ্ধ হল। সে কারণে আপনাকে এই অশ্বদান করবো।
অর্জুন বলেন– গন্ধর্ব, আপনার প্রাণ সংশয়ে ভীত হয়ে যা আমাকে দিতে চাইছেন, তা নিতে আমার প্রবৃত্ত হচ্ছে না।

.....................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers