Blog Archive

Thursday, June 24, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭

নাগগণের প্রতি কদ্রুর অভিসম্পাত ও বিনতার দাসীত্বের বিবরণ:

শৌনকাদি মুনিদের অনুরোধে সৌতি পুনরায় কদ্রু ও বিনতার প্রসঙ্গে আসেন।

উচ্চৈঃশ্রবা

সৌতি বলেন -কদ্রু ও বিনতা একদিন সুলক্ষণ যুক্ত একটি সুন্দর ঘোড়া দেখলেন।

কদ্রু বলেন –বিনতা, অশ্বটিকে দেখে বলত তার বর্ণ কি রূপ!

বিনতা বললেন –অশ্বটি শ্বেতবর্ণের। তিনি কদ্রুকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কোন বর্ণের দেখেছেন!

উত্তরে কদ্রু বলেন –কৃষ্ণবর্ণের।

দুজনের এরপর কলহ লাগে। তখন দু’জনে প্রতিজ্ঞা করলেন যার কথা মিথ্যা হবে সে অন্যজনের দাসী হয়ে থাকবেন। এই বলে দু’জনে ঘরে চলে গেলেন। ঠিক হল যেহেতু সূর্য অস্ত যাচ্ছেন, তাই পরেরদিন দু’জনে দিনের আলোয় ঘোড়াটি দেখবেন।

ঘরে গিয়ে কদ্রু তার সহস্র পুত্রকে ডাকলেন। পুত্রদের সব কথা জানালেন।
পুত্রেরা বললেন -কি করলে মা! সাদাবর্ণের বলেইতো ঘোড়াটি অর্থা উচ্চৈঃশ্রবা বিখ্যাত।

কদ্রু বললেন –অশ্বের রঙ সাদা হলে যেকরে হোক তাকে কৃষ্ণবর্ণের কর। কারণ বিনতার কাছে আমি পণ করেছি, হারলে তার দাসী হতে হবে।

সমস্ত ঘটনা শুনে নাগেরা বিরস বদনে মাকে বললেন –বিনতাও তাদের কাছে কদ্রুর সমান। তাকে তারা কি ভাবে দুঃখ দেবেন!

একথায় কদ্রু রেগে গেলেন এবং শাপ দিলেন জন্মেজয়ের যজ্ঞে সকল নাগ ভস্ম হবে।

কদ্রুর শাপ শুনে সকল দেবতারা খুশি হলেন। কারণ সকলে বিষাক্ত সাপেদের হিংসা করে। তাদের বিষে মানুষের মৃত্যু হয়। তার থেকে বাঁচতে ব্রহ্মা কশ্যপকে তার মন্ত্র দিলেন। কশ্যপের থেকে তা মর্তে প্রচার হল।

মায়ের বচনের নাগেদের ভয় হল। তারা গিয়ে উচ্চৈঃশ্রবাকে ধরল এবং তাকে নিজেদের দিয়ে ঢেকে দিল। ফলে উচ্চৈঃশ্রবার বর্ণ কালো হয়ে গেল।

সকালে বিনতা ও কদ্রু ঘোড়া দেখতে এলেন। পথে সমুদ্র পড়ল, যাতে পর্বতের মত বড় বড় জলচর! কেউ শত, কেউবা বিংশতি যোজন বড়। এগুলি ছিল কুমীর, কচ্ছপ ও মৎস।

এসময় তারা উচ্চৈঃশ্রবা যেখানে ছিল সে স্থানে উপস্থিত হলেন এবং দেখলেন তার বর্ণ কালো।

দেখে বিনতা বিষণ্ণ হলেন, কারণ কথা মত তাকে কদ্রুর দাসী হতে হবে।
.....................

গরুড়ের জন্ম ও সূর্যের রথে অরুণের সারথ্যকার্য্যে নিয়োজন:
যখন বিনতা কদ্রুর দাসীরূপে অবস্থান করছেন তখন মহাবীর গরুড়ের জন্ম হয়।

গরুড়
ডিম ফেটে হঠাৎ বের হয়ে তার আকৃতি বাড়তে থাকে। দিন যত বাড়তে লাগল তার তেজ ও তত বাড়ল। তার নিশ্বাসে পাহাড়ের চূড়াও যেন উড়ে যায়। বিদ্যুতের মত গায়ের আকার, লালবর্ণের চোখ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথা আকাশকে ছুঁল।

দেবদানব সবাই ভয়ে টথস্থ। সবাই যেন ‘যুগান্তের অগ্নি’ দেখছেন।
সকলে অগ্নি স্তব শুরু করলেন। অগ্নি বললেন ভয়ের কিছু নেই।
তিনি দেবতাদের আত্মসম্বরণ করতে বললেন। তিনি দেবতাদের কশ্যপ-পুত্র গরুড়ের স্তব করতে বললেন।


দেবতাদের স্তবে গরুড় সন্তুষ্ট হলেন এবং নিজেকে সম্বরণ করলেন।

গরুড় তার দাদা অরুণকে নিয়ে গিয়ে সূর্যের রথে উপর বসালেন।

সূর্যের সারথি অরুণ

সূর্যের তেজে ত্রিভূবন পুড়ছিল, অরুণের আচ্ছাদনে তা নিবারণ হল।

মুনিরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সৌতি বললেন –যখন নারায়ণ দেবতাদের অমৃতবন্টন করছিলেন তখন গোপনে রাহু তা পান করেন। সূর্য তা জানিয়ে দিলেন। সুদর্শনচক্রে রাহুর মুন্ডু কাটা গেল। এরপর রাহু সূর্যকে তার এই কর্মের জন্য গ্রাস করত।

সূর্যকে দৈত্য গ্রাস করছে দেখে দেবতারা পরিহাস করলে, সূর্য ক্রোধ করে বললেন তিনি ত্রিভুবন পোড়াবেন।

দেবতারা ভয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা তাদের অভয় দিলেন। তিনি বললেন- কশ্যপ ও বিনতার পুত্র অরুণ সুর্যের তেজ কমাবেন। দীর্ঘদিন এই কষ্ট সহ্য করার পর অরুণের উদয়ে দেবতারা সন্তুষ্ট হলেন।
......................................

Saturday, June 19, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬

সুধা বন্টন ও রাহু-কেতুর বিবরণ:

এবার সৌতি বললেন -সাবধান মুনিগণ, শ্রবণ করুন। পূর্বেই হরিহরের মিলনের কথা বলেছি।

এদিকে দেবতারা দৈব প্রভাবে চেতনা পেলেন। অসুরেরাও জাগল। তারা কোথায় কন্যা, কোথায় কন্যা বলে বিষ্ণুকে খুঁজতে শুরু করলেন।

সকলে মোহিনীকে ঘিরে দাঁড়াল। সকলে ছবির পুতুলের মত দেবীর দিকে তাকিয়ে থাকল।
নারায়ণ তখন বললেন -এই ক্ষীরসিন্ধুর মধ্যেই আমার বাস। আমার নাম মোহিনী। আমি অযোনি সম্ভুতা। তোমাদের কলহ আমি সহ্য করতে না পেরে এখানে উপস্থিত হয়েছি। কি কারণে তোমরা কলহ করছ!

এই কথা শুনে সকলে বলল, অমৃতের কারণে সুরাসুরের এই দ্বন্দ্ব।
তারা বলে দেবীর আগমনে ভালই হল। এবার তিনিই সুধা ভাগ করে দিন।

প্রথমে দেবী মধ্যস্থতা করতে চাইলেন না।
তিনি বলেন -সকলে আমার বিধান নাও মানতে পারে! এর ফলে তারা আমার উপর ক্রুদ্ধ হবেন।

তখন দেবাসুর সকলে এক সাথে বলে যে তারা দেবীর সিদ্ধান্ত মেনে নেবে।

মোহিনীরূপী হরি তখন সুধাভান্ড নিয়ে এক দিকে দেবতাদের ও অন্যদিকে অসুরদের দুই সারিতে বসালেন। তিনি কাঁখে সুধাভান্ড নিয়ে সুধা বন্টন শুরু করলেন। দেবতার জ্যেষ্ঠভাগ বলেন মোহিনী এবং দেবতাদের আগে সুধা বিতরণ করেন। দৈত্যেরা তা মেনে দিল। এভাবে তিনি দেবতাদের অমৃত পান করাতে থাকেন। এভাবে তেত্রিশ কোটি দেবতাদের সুধাদান করে বাকিটা তিনি নিজে খেয়ে নিলেন।

এই সময় চন্দ্র ও সূর্য তাঁকে ডেকে বলেন যে দৈত্য রাহু দেবতার রূপ নিয়ে সুধা পান করেছে।

এই শুনে নারায়ণ সুদর্শনচক্রের সাহায্যে রাহুর মুন্ড দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন।
যদিও রাহু মারা গেল না, কেননা সে অমৃত পান করেছে। তার মুন্ড হল রাহু ও দেহ হল কেতু।

দৈত্যদের বঞ্চিত করায় তারা ক্রোধে জ্বলে উঠল। কিন্তু ততক্ষণে অমৃত গোপনস্থানে রাখা হয়ে গেছে। দৈত্যরা দেবতাদের মারতে গেল। এভাবে দেব ও দৈত্যের যুদ্ধ শুরু হল।

অমৃত পান করে দেবতারা শক্তিশালী হয়েছিল। দৈত্যরা তাদের পরাজিত করতে পারল না। তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে নিজেদের স্থানে ফিরে গেল। দেবতারাও স্বর্গে ফিরে গেলেন।
..................

Wednesday, June 16, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫


অমৃতের নিমিত্ত সুরাসুরের যুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণের মোহিনীরূপ ধারণ:

মুনিরা বলে -শোন সুতের নন্দন, শুনলাম যে কথা সে অদ্ভূত কথন! অমর, অসুর মিলে সমুদ্রমন্থন করল। দেবতারা সব রত্ন নিল। রত্নের ভাগ কিছু কি অসুররা পেল?

সৌতি বললেন -দৈত্যেরা একত্র হয়ে দেবতাদের কাছ থেকে অমৃত-ভান্ড কেড়ে নিল। সকলে শ্রম দিয়ে সমুদ্রমন্থন করল। যা কিছু উঠল তা নিল দেবতারা। ঐরাবত, উচ্চৈঃশ্রবা, লক্ষ্মী, কৌস্তভমনি – সবই দেবতারা নিল। এতকিছু বলে দৈত্যরা সুধাভান্ড কেড়ে নেয়। ফলে দেবতা ও দৈত্যদের মধ্যে কলহ শুরু হল।

তখন শিব তাদের ডেকে বললেন সকলের অর্জিত সুধা সকলে সমান করে নাও। এভাবে কলহ মিটল।

কিন্তু কে সুধা বন্টন করে দেবে!

সেই সময় নারায়ণ নারী বেশে সেখানে উপস্থিত হলেন।

তাঁর রূপে চতুর্দিক আলোকিত হয়ে উঠল। তাঁর চরণের নূপুর সোনায় রচিত, পদ্ম দিয়ে যেন তাঁর চরণ গঠিত এবং তাঁর গতিও অতি মনোহর।

এই চরণ থেকেই জন্মালেন গঙ্গা-ভাগীরথী।

তাঁর অঙ্গের সৌরভে মৌমাছিরা অলি ত্যাগ করে তাঁর দিকে মধুগন্ধে ছুটে এল। দুই উরু তাঁর কদলীবৃক্ষের ন্যায় সুপুষ্ট ও সুন্দর। কটি তাঁর ক্ষীণ, তা দেখে মৃগনাথও দুঃখ পাবেন। অপূর্ব সুন্দর তাঁর পদ্মসদৃশ নাভি। বক্ষ দুটি তাঁর দাড়িম্বের ন্যায়। হাত দুটি যেন পদ্মের নাল!

তাঁর রূপ দেখে সুরাসুর মুর্চ্ছাপ্রায়। দেবীর অঙ্গুলী যেন চাঁপাফুলের মত। নখবৃন্তে চাঁদের প্রভা। কোটিকাম যেন তাঁর শরীরে অবস্থান করেছে।
ঠোঁট দুটি অরুণের মত রক্তাভ। তাঁর নাসিকার কাছে শুকচঞ্চুও লজ্জা পাবে। চোখ দুটি যেন নীলপদ্ম দিয়ে গঠিত। ভ্রু দুটি কামদেবের ধনুর মত। কপোল দুটি প্রাত দিননাথের মত গোলাপি।

হলুদবস্ত্র পরিধান করে তিনি স্থির বিদ্যুতের মত হাসচ্ছেন। দন্তপাটি মুক্তার গাঁথনির মত উজ্জল। পিঠে তাঁর লম্বা বেনী দুলছে। তাঁর দৃষ্টিতে সর্বদা কামাগ্নি জ্বলছে।

সুরাসুর সকলেই তাঁর দিকে ঢলে পরল। তাঁর রূপে মোহিত হয়ে সকলে মূর্চ্ছাগত।

শূলপানিও বহুক্ষণ অচেতন রইলেন। মোহিনীর প্রতি তিনি একদৃষ্টে চান এবং দুই হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে পেতে চান।

মোহিনী কন্যা বলেন -যোগী, এ তোমার কেমন প্রকৃতি! বৃদ্ধ বয়সের ছন্নমতি!

এই বলে নারায়ণ এগিয়ে চলেন, শিবও তাঁর পিছে পিছে চলেন।

হর বলেন -হরিণাক্ষি মুহুর্তের জন্য একটু দাড়িয়ে আমার সাথে কথা কহ। কে তুমি! কার কন্যা! কিসের কারণে তোমার আগমণ! সত্য করে কহ।
ত্রিভূবনের যত রূপবতী আছেন, সকলে তোমার কাছে পায়ের নখের তুল্য। দূর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, শচী, অরুন্ধতী, উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা, রতি, নাগিনী, মানুষী, দেবী সকল ত্রৈলোক্যবাসিনী। সকলে আমায় চেনে, আমিও চিনি। ব্রহ্মান্ডে কোথায় তুমি ছিলে! কখনো তো তোমায় দেখিনি! কোথা থেকে এলে সত্য করে কহ, হে শশিমুখী।

কন্যা বলে -বুড়া তোমার লজ্জা নেই! আমার পরিচয়ে তোমার কি কাজ? মাথায় তোমার তেলহীন জটা, ছাই। দাঁত না মেজে তা স্ফটিকাকার। দেহের পরিধান বাঘের ছাল! বড় বড় হাতের নখ, পাকা দাড়ি-গোঁফ! গায়ের গন্ধে মুখে বমন আসে।

দেখ আমার অঙ্গের সৌরভে ব্রহ্মান্ড পূর্ণ। আমার অঙ্গের ছটায় ত্রিভূবন দীপ্ত। কোন লজ্জায় তুমি আমায় প্রার্থনা কর! কি সাহসে তুমি আমার কাছে আসো?
.....................

মোহিনীর সহিত হরের মিলন:

হর নানা ভাবে মোহিনীকে তুষ্ট করতে চান।
তিনি বলেন -ত্রিভূবনের সকলের ঈশ্বর আমি। ব্রহ্মার পঞ্চমশির নখেতে ছেদন করে বহুকাল সেবা করে বিষ্ণু অভয় পেলেন। ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের, অগ্নি সকলে আমার আরাধনা করেন। জ্ঞান যোগে আমি মৃত্যুকে জয় করেছি। কামদেব আমার নয়নানলে ভস্ম হন। মহামায়া অর্থাৎ দূর্গা, গঙ্গা আমায় দাসীভাবে সেবা করেন। আমায় যে মন দিয়ে ভজনা করে সে মনের মত বর লাভ করে। তুমিও তোমার মান ভঙ্গ করে আমার ভজনা কর। তোমারও অভিলাষ সিদ্ধ হবে।

মোহিনী বলেন –যোগী তোমায় আমি এতক্ষণে চিনলাম। তোমাকে সকলে মহেশ অর্থাৎ মহান ঈশ্বর বলে। কিন্তু তোমার জপ-তপ-যোগ-জ্ঞান সব ব্যর্থ। তুমি ব্যর্থ যোগী, ভন্ডামী করে লোকে বলে তোমায় বৈরাগী। কামিনী দেখে তুমি এত বিহ্বল হলে! কোন মুখে তুমি বল যে কামদেবকে তুমি ভস্ম করেছ!

হর বলেন -মনহরা, এখন তোমায় দেখে আমার জ্ঞান হয়েছে। আমি এক কামকে নয়নে ভস্ম করেছিলাম, এখন সহস্র কাম আমার দেহ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তপ, জপ, যোগ, জ্ঞান, জ্ঞানের বৈরাগ্য এই সকল কর্ম যদি হয় সর্বশ্রেষ্ঠ তবে তুমি আমায় আলিঙ্গন করে আমায় হরষিত কর। যত আমি জপ, তপ করেছিলাম শ্মশানে বসে তার সমুচিত ফল আজ মিলল বিধাতা তোমাকে পাঠিয়ে সর্ব কর্ম আজ আমি তোমার পায়ে সমর্পন করলাম। কৃপা করে তুমি আমায় আলিঙ্গন কর।

হরের বাক্য শুনে হাসেন হয়গ্রীব।
তিনি বলেন –অপ্রাপ্য দ্রব্য কেন তুমি চাও! সর্ব কর্ম যে ত্যাগ করতে পারে, অন্যমনা না হয়ে যে আমার প্রতি একমনা হয়, তাকে আমি যেচে আলিঙ্গন করি।

শিব বলেন –কন্যা, আমি এই সত্য অঙ্গীকার করছি, আজ হতে তোমা বিনা আর কিছু আমার নেই। আজ আমি সর্ব কর্ম ত্যাগ করলাম। স্ত্রী-পুত্রকেও আমি ছারলাম। তোমার চরণ আমি সেবা করব। এবার তুমি আমায় আলিঙ্গন কর।

হরি তখন বলেন –তুমি আমায় ছলনা করছ। কেমন করে তুমি তোমার স্ত্রী-পুত্র ত্যাগ করবে! এক স্ত্রীকে তুমি জটায় রেখেছ। অন্য স্ত্রীকে অর্ধেক দেহ দিয়েছ।

হর বলেন –হরিণাক্ষি, কেন ছলনা কর। কপটতা ত্যাগ করে আমায় অনুগ্রহ কর। কি ছার সেই নারী পুত্রের নাম কর! শত গঙ্গা ও দূর্গা তোমায় দাসীরূপে সেবা করবে। আমি নিজে তোমায় তোমার দাস হয়ে সেবা করব। এবার তুমি আমার আশা পূরণ কর। আর যদি তুমি তা না কর, তবে আমি এখনই নিজ়েকে বধ করব। আমার দিকে একবার চাও, চারু মুখে! না হলে আমি ত্রিশূল দিয়ে প্রাণ ত্যাগ করব। এই বলে তিনি ত্রিশূল হাতে তুলে নিলেন।

হরি এবার হেসে উঠলেন।
বললেন –তোমার এত জ্ঞান! আর তুমি কিনা কামের বশ হয়ে প্রাণ ত্যাগ করতে চাও! ধৈর্য্য ধর, দুঃখ ত্যাগ কর, স্থির হও। আমি তোমায় আলিঙ্গন করব। বিশ্বনাথ তুমি আমার হৃদয় চেন না। যে ভক্ত আমায় ডাকে, তাকে আমি অভয় দিই। যে ভক্ত যে ভাবে আমায় কাছে চায়, আমি তার কাছে সে ভাবেই ধরা দিই। তুমি আমায় পূর্ব হতেই চাইছ, তাই আমি তোমায় আমার অর্ধ অঙ্গ দেব।

এই বলে জগন্নাথ দুই হাত বাড়িয়ে হরকে আহ্বান করলেন।
আলিঙ্গনের ফলে দুই দেহ এক হল।
অর্ধ অঙ্গ জটাযুক্ত, ফণাধর, শশিকলাযুক্ত, হাড়মালা পরিহিত, নীলকন্ঠ, বাঘাম্বর, ভস্ম আবৃত।
আর অর্ধেক অঙ্গ হল কস্তুরীগন্ধ যুক্ত, কুঞ্চিত কেশ বিশিষ্ট, মুকুট পরিহিত, কস্তুরী তিলক যুক্ত, বনমালা শোভিত, কর্ণ বালাযুক্ত, কটি হলুদবাস পরিহিত।
এক পায়ে সাপ, অন্য পায়ে নূপুর।
এক হাতে শঙ্খ-চক্র, অন্য হাতে ত্রিশূল-ডম্বুর।
একদিকে দূর্গা, অন্যদিকে লক্ষ্মী।

হরিহর মূর্তি
.....................
পাদটীকাঃ
হয়গ্রীব - অশ্বের মত সুন্দর গ্রীবা বা ঘাড় যার
মৃগনাথ - হরিণ

Saturday, June 12, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত – ৪

সমুদ্র–মন্থন স্থানে মহাদেবের আগমন:

পার্বতীর কটুকথা শুনে মহাদেব ক্রোধিত হলেন। তিনি তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে সমুদ্রমন্থন স্থানে উপস্থিত হলেন। তাঁর ভয়ংকর রূপ দেখে জগৎ প্রমাদ গুনল।
…………………………



পুনরায় সিন্ধু মন্থন ও মহাদেবের বিষপান:

করজোড়ে সকল দেবতা তাঁর সামনে দাড়াল।
শিব বললেন -মন্থন বন্ধ হল কেন?
ইন্দ্র উত্তর দিলেন -মন্থন শেষ করে এখনি বিষ্ণু প্রস্থান করেছেন।
পূর্বেই মহাদেব ক্রুদ্ধ ছিলেন। ইন্দ্রের বাক্যে আরো ক্রোধিত হয়ে বললেন -দেবতাদের এত স্পর্ধা যে নিজেদের মধ্যে সমস্ত ভাগ করে নিলেন অথচ মহাদেবের কথা ভুলে গেলেন!

তিনি আদেশ দিলেন পুনর্বার মন্থনের। তাঁর কথা শুনে সকলে ভয়ে চুপ করে রইলেন।

তখন কশ্যপমুনি মহাদেবকে বললেন সিন্ধু-মন্থনের কারণ।

পারিজাতমালা দুর্বাসার গলায় ছিল। তিনি স্নেহ ভরে তা ইন্দ্রের গলায় পরান। হাতির পিঠে ইন্দ্র থাকায়, মালাটি হাতির দাঁতে পড়ল। হাতিটি মালাটির মূল্য না বুঝে তা শুঁড়ে করে মাটিতে ফেলল। এই দেখে দুর্বাসা ক্রুদ্ধ হলেন। ভাবলেন অহঙ্কারে ইন্দ্র তাঁর মালা ছিঁড়ে ফেলল। তিনি শাপ দিলেন ইন্দ্রের সাম্রাজ্য লক্ষ্মীহারা হবে। ব্রহ্মশাপে লক্ষ্মী পাতালে প্রবেশ করলেন।
লক্ষ্মীর অভাবে ত্রিলোকে হাহাকার পড়ে গেল। ব্রহ্মা সকলের এই কষ্টের কথা বিষ্ণুকে জানালেন। বিষ্ণুর আজ্ঞায় দেব ও দানব সমুদ্রমন্থন শুরু করল। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মী পাতাল থেকে উঠে আসলেন এবং বিষ্ণুর আজ্ঞায় মন্থন বন্ধ হল।

কশ্যপমুনি বললেন -আবার মহাদেব তাদের মন্থনের আদেশ দিচ্ছেন। পূর্বে বিষ্ণুর কৃপায় মন্থনকালে সকলে জীবিত ছিল, এখন বিষ্ণু বিনা সকলে ভীত। তাছাড়া প্রথমবার মন্থনের ফলে নাগরাজ প্রচন্ড আহত হন, তিনি এখনও সুস্থ হননি। বরুণ অর্থাৎ সমুদ্রেরও কষ্টের শেষ নেই। তাই তারা প্রার্থনা করছেন মহাদেব যেন আর মন্থনের আজ্ঞা না দেন।

শিব অনুরোধ করলেন -আমার জন্য একবার অন্তত সমুদ্রমন্থন কর, যাতে আমার আগমন অকারণ না হয়।
শিববাক্য কেউ অমান্য করতে পারলেন না, তাই পুনরায় সুরাসুর মন্থন শুরু করল।

পূর্ব শ্রমের ফলে সকলের শরীরই অশক্ত। নাগের ফণা দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। অত্যন্ত ঘর্ষণে মন্দর পাহাড় আগুনের মত তপ্ত। নাগের শরীর খন্ড খন্ড হতে থাকল। ক্ষীরোদ সাগরে বিষ বইতে লাগল। নাগের সহস্র মুখ দিয়ে বিষ উদ্গার হতে থাকল। সিন্ধুর ঘর্ষণের অগ্নি, নাগের গরলের অগ্নি, দেবতাদের নিশ্বাসের অগ্নি ও পর্বতের ঘর্ষণের অগ্নি- এই চারি অগ্নি মিলিত হয়ে এক হল। এভাবে চারদিকে দাবানলের সৃষ্টি হল। তিনলোকে হাহাকার শুরু হল।

সব কিছুই ত্রিলোচন শিব বিষণ্ণ নয়নে দেখতে লাগলেন।
দূরে থেকে সকল দেবতা তাঁর স্তুতি করতে থাকলেন। সকলে ভুতনাথকে(শিব) রক্ষা করতে বললেন।
শিব বললেন এবার মন্থনের ফলে যে রত্ন উঠবে তাই হবে তাঁর। সুতরাং এবার মন্থনে যে বিষ উঠল তা তিনি পান করলেন। কিন্তু সে বিষ তিনি পান করে কন্ঠে ধারন করলেন। এভাবে তাঁর কন্ঠ নীলবরণ ধারন করল। তার থেকেই তিনি নীলকন্ঠ নামে জগৎ বিখ্যাত হলেন।
স্বর্গ, মর্ত, পাতালের সকলে তা দেখে অবাক হয়ে গেল। সকলে হরের স্তব শুরু করল।

মহাদেব সকলকে আজ্ঞা দিলেন মন্দর পর্বত যেখানে ছিল সেখানে রাখতে এবং মন্থন বন্ধ করতে আজ্ঞা দিলেন। সব শুনে দেবতারা খুশি হলেন। কিন্তু কেউ মন্দর পর্বত যথাস্থানে রাখতে পারল না। তখন শিবই সেই কাজটি করলেন। এভাবে সমুদ্রমন্থন শেষ হল এবং যে যার দেশে ফিরে গেল।
……………

Wednesday, June 9, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩


সমুদ্র-মন্থনঃ

সৌতি বলেন -

গদাধর বিষ্ণু প্রথম ব্রহ্মাকে বললেন দেবাসুরদের দিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে। সমুদ্রে মন্থনের ফলে যে সুধা বা অমৃত উঠবে তা পান করে দেবতারা অমর হবেন। মন্দর পর্বত দিয়েই এই মন্থন করা হবে।

বিষ্ণুর আজ্ঞায় দেবতারা মন্দর পর্বতের কাছে গেলেন। কিন্তু এই বিশাল পর্বতকে তারা উপ্‌রাতে পারলেন না। বিষ্ণুর সাহায্যেই মন্দরকে সমুদ্রে আনা হল।

বরুণকে সকলে অনুরোধ করলেন মন্দর পর্বতকে বহন করার জন্য। কিন্তু বরুণ রাজি হলেন না। তিনি বললেন তাঁর মধ্যেই একটি মহাশক্তিমান কচ্ছপ আছে সেই কেবল মন্দরকে বহন করতে পারে। দেবতারা তখন সেই কচ্ছপের আরাধনা করলেন। কচ্ছপ মন্দর পর্বতকে বহনে সম্মত হলেন।

বাসুকি-নাগকে দড়ি করা হল। লেজের দিক দেবতারা এবং সম্মুখভাগ অসুররা ধরল। তারপর শুরু হল সিন্ধু সমুদ্র মন্থন।

পাহাড়ের ঘর্ষণে বাসুকি নিশ্বাস ছাড়লেন। তা আকাশে মেঘের সৃষ্টি করল। দেবতারা সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি সৃষ্টি করে সকলের ক্লেশ দুর করলেন।

সাপের গর্জনে ত্রিভুবন কাঁপতে লাগল। বিষের জ্বালায় অনেক দৈত্য মরল। মন্দরের আন্দোলনে বরুণ উথাল পাথাল হল। জলচরেরা প্রাণ ত্যাগ করতে শুরু করল। পর্বতের ঘর্ষণে পাহাড়ের গাছে আগুন লেগে গেল। এভাবে পর্বতবাসীরা মরতে লাগল।

এসব দেখে বিষ্ণু কষ্ট পেলেন। তার আজ্ঞায় মেঘ পর্বতে বৃষ্টি ঘটাল। আগুন নিভল। ঔসধিগাছের রস সমুদ্রে পড়ল। জলচররা সেই রসে পুনরায় প্রাণ পেল।

এত শ্রম করে সমুদ্র মন্থন করা হল কিন্তু অমৃত উঠল না। দেবতারা ব্রহ্মাকে বললেন তারা পুনরায় মন্থনের মত শক্তি পাচ্ছেন না।

ব্রহ্মা বিষ্ণুকে স্মরণ করলেন। বিষ্ণুর তেজে দেবতারা পুনরায় শক্তি পেলেন এবং মন্থন শুরু করলেন।

হঠাৎ দ্বিজরাজ চন্দ্র মন্থনের ফলে সমুদ্র থেকে উঠলেন। তাকে দেখে সুরাসুর-নর সকলে খুশি হল।
পুনরায় মন্থন শুরু হলে ঐরাবত নামে হাতির আবির্ভাব হল।
তারপর উঠল উচ্চৈঃশ্রবা নামে ঘোড়াটি।
পরে পারিজাত পুষ্পবৃক্ষ উঠল।
এরপর অমৃতের কমন্ডলু বাঁ কাঁধে নিয়ে ধন্বন্তরিকে উঠতে দেখলেন সুরাসুর সকলে।
বিভিন্ন রত্নও উঠতে লাগল।
আনন্দে দেবাসুর পুনরায় মন্থন শুরু করল।

মন্দর পর্বতের আন্দোলন বরুণ আর সহ্য করতে পারলেন না। পাত্র-মিত্র নিয়ে তিনি বিচারে বসলেন।

সকলে ঠিক করলেন বিষ্ণুর স্মরণ নেবেন।
মন্থনের ফলে কমলকাননে যে কন্যার জন্ম হবে তা দিয়ে বিষ্ণুর পুজা করা হবে ঠিক হল। পূর্বে কন্যার নাম ছিল লক্ষ্মী। মুনির শাপে তাকে পুনর্বার জন্মাতে হয়। এখন সে শাপমুক্ত। তার কারণেই সমুদ্র মন্থন হয়। নারায়ণ তাকে পেলেই এই মন্থন বন্ধ করে দেবেন।

এত কথা শুনে জলরাজ বরুণ আর দেরি করলেন না। চতুরদোলা বানিয়ে পুত্রের সঙ্গে নিজে তা কাঁধে নিয়ে চললেন। নারীরা চামর দোলাতে লাগল।

সহস্র ফণার ছত্র মাথায় নিয়ে মা লক্ষ্মী উঠে এলেন। তাঁর রূপে ত্রিভুবন মোহিত হল। সূর্য তার কাছে ম্লান মনে হল। লক্ষ্মী যেন পদ্মফুল দিয়ে গঠিত - অতি কোমলা। তাঁর দেহ বিদ্যুতের মত রত্ন দিয়ে সজ্জিত।
স্বর্গ–মর্ত-পাতাল সকলের অধিবাসীরা তাকে নত মস্তকে প্রণাম জানালেন। চতুরদোলায় করে তাঁকে নারায়ণের কাছে নিয়ে যাওয়া হল।

লক্ষ্মীকে নারায়ণের হাতে তুলে দিয়ে বরুণ সবিনয়ে জানতে চাইলেন তিনি কি পাপ করেছেন যে তার জল-রাজ্যে এত দুঃখ-দুর্দশা দেখা দিয়েছে। জলের একটিও প্রাণী বেঁচে নেই মন্দর পাহাড় এবং দেবাসুরের কর্মকান্ডের ফলে।

তার এই দুঃখের কথা শুনে বিষ্ণু বললেন দুর্বাশার শাপে লক্ষ্মীকে সিন্ধু সাগরে প্রবেশ করতে হয়। লক্ষ্মী বিহনে সারা জগৎ অচল। সেই কারণেই সমুদ্র মন্থন। এখন লক্ষ্মীই যখন উঠে এসেছেন তখন সমুদ্র মন্থনের আর কোন প্রয়োজন নেই।

একথা শুনে বরুণ হৃষ্টচিত্তে তার রাজ্যে গমন করলেন।

সমুদ্র মন্থনের ফলে যে কৌস্তভ রত্ন উঠেছিল-যার কিরণ চন্দ্র-সূর্য তুল্য, তা বিষ্ণুর গলায় শোভা পেল। লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর হাতে দিয়ে বরুণ হৃষ্ট মনে ফিরলেন।

...............

নারদ কর্ত্তৃক মহাদেবের নিকট সমুদ্রমন্থনের সংবাদ প্রদান:

সুরাসুর, যক্ষ, রক্ষ, ভুজঙ্গ, কিন্নর সকলে মিলে সিন্ধু মন্থন করলেন। অথচ, শিব কিছুই জানতে পারলেন না দেখে নারদমুনি চিন্তিত হলেন।

কৈলাসে গিয়ে তিনি হর–পার্বতীকে সব জানালেন। বললেন, বিষ্ণু কমলা(লক্ষ্মী), কৌস্তভমণি প্রভৃতি পেয়েছেন। ইন্দ্র ঊচ্চৈঃশ্রবা, ঐরাবত পেলেন। নানা রত্ন পেলেন লোক, জলধর(সমুদ্র) পেলেন জল, দেবতারা অমৃত পেলেন, নরলোক পেল নানা ধাতু, মহৌষধি –এভাবে স্বর্গ, মর্ত, পাতালের সকলেই সব কিছু পেল, কেবল তাঁরা বাদে!

এভাবে তিনি মহাদেবকে উত্তেজিত করতে চাইলেন। শিব শান্ত মনে সকল কথা শুনলেন।

কিন্তু পার্বতী ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি মহাদেবকে শান্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে নারদকে বললেন -এত কথা কাকে বলছে সে! বৃক্ষকে কথা শুনালেও সে শুনতে পায় না। কন্ঠের হাড়মালা যার ভূষণ কৌস্তভমণি তার কি প্রয়োজন! চন্দনে তার প্রয়োজন নেই ধূলিতেই তার কাজ। অমৃতের চেয়ে সিদ্ধিগুলিতেই তার আসক্তি, হাতির বদলে বলদবাহনই তার শ্রেয়, পারিজাতের তুলনায় ধুতরাই তার কাছে শ্রেয়। এসব চিন্তা করলেই পার্বতীর অঙ্গ জরজর করে। এই শিবের জন্যেই পূর্বজন্মে তাকে দেহত্যাগ করতে হয়।

পার্বতীর এত কথা শুনে শিব হেসে বললেন তাঁর এসবের প্রয়োজন নেই। সকলে যা ত্যাগ করে তিনি তাই গ্রহণ করেন।
ঘৃণা করে ব্যাঘ্রচর্ম কেউ নিল না, তাই তাকে ব্যাঘ্রচর্ম পরিধান করতে হল। অগুরু, চন্দন, কুঙ্কুম, কস্তুরী সকলে নিলেও বিভূতি কেউ না নিলে তিনি বিভূতি ভূষণ ধারণ করলেন।
মণিমুক্ত সকলে গ্রহণ করলে তিনি নিলেন হাড়মালা।
ধূতুরাফুল সকলে বর্জন করলে তিনি তা গ্রহণ করলেন।
রথ, গজ-প্রভৃতিকে সকলে বাহন করে বলদকে সরিয়ে দিলে, তিনি বলদকেই বাহন নির্বাচন করেন।
প্রথমে দক্ষ তাঁকে না জেনে পূজা করেনি তাই অজ্ঞান তিমিরে দক্ষ মোহিত হলেন। যদিও এর সমুচিত দন্ড তিনি পান। তার মাথা ছাগলের মুন্ডে পরিণত হয়। যজ্ঞকুন্ড মূত্রপূরীষে পূর্ণ হয়।

তিনি পার্বতীকে বললেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্র, যম, বরুণ, তপন সকলেই তাঁর পূজা করেন।

পার্বতীও বললেন সকলে যে তাঁকে কেমন পূজা করেন তা তিনি বুঝেছেন, তাইতো তাঁকে কিছু না দিয়ে নিজেরা সবকিছু ভাগ করে নিয়েছেন।

তিনি আরও বললেন, সংসারী পুরুষ বলদ, ধুতরা, হাড়মালা প্রভৃতি গ্রহণ করে না। তাদের স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকতে হয়। সম্পত্তি, ঐশ্বর্য, বিদ্যা প্রভৃতি থেকে কোন সংসারী বিমুখ নয়।
যে সংসারী এ থেকে বিমূখ তাকে কাপুরুষ বলা উচিত।

এত কথা শুনে শিব ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি নন্দীকে বলদ সাজাতে বললেন।
..............................

Monday, June 7, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত-২

জরৎকারুর বিবরণ:

জটাচার্ব্ব বংশে জরৎকারু মুনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরম যোগী ছিলেন। উলঙ্গ, উন্মত্ত অবস্থায় তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতেন।

একদিন এক বনে তিনি অদ্ভূত দৃশ্য দেখলেন। বনে এক বিরাট গর্ত। গর্তের উপর একটি প্রাচীন বৃক্ষের মূল ধরে অনেকগুলি মানুষ ঝুলছে।
একটি ইদুঁর আবার সেই মূলটি কাটছে।
জরৎকারু সেই মানুষগুলিকে এরূপ ঝুলে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন ইদুঁরটা মূল কেটে ফেললে তারা ঐ বিরাট গর্তে পরে মরবে তবু কেন এই ঝুলে থাকা।

তখন তারা বলল – আমরা জটাচার্ব্ব বংশে জন্মে ছিলাম। এখন নির্বংশ হয়ে পড়ছি বলে এই অবস্থা। শেষ বংশধর জরৎকারু নামে এক মূর্খ সেই এই দশার জন্য দায়ী।
সবশুনে জরৎকারু চমকে উঠলেন। তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে তাঁদের আদেশ প্রার্থনা করলেন।
পিতৃগণ তাকে বিবাহ করে বংশরক্ষা করতে বললেন। জরৎকারু বললেন তিনি যত্ন সহকারে বিবাহ করবেন না প্রতিজ্ঞা করেছেন। কেউ যদি তার নামে কন্যা যেচে দেন তবে তিনি সেই কন্যাকে বিবাহ করবেন।
এত শুনে পিতৃপুরুষরা অন্তর্ধান হলেন।
দৈববানীর মাধ্যমে জরৎকারু জানতে পারলেন তিনি বর্তমান বলেই ঐ শিকড়টি এখনও ছেড়েনি। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপুরুষরা বংশলোপের ফলে ঐ বিরাট গহ্বরে পতিত হবেন। যে ইদুঁরটি মূল কাটছিল তিনি ছদ্মবেশী ধর্মদেব।

সবশুনে জরৎকারু মহাবনে প্রবেশ করলেন এবং ‘কন্যা কার আছে দেহ’ বলে তিনবার ডাক দিলেন।

ঐ বনে বাসুকির এক অনুচর ছিল। সে বাসুকিকে গিয়ে জরৎকারুর কথা বলল। বাসুকি সব শুনে খুশি হলেন। তার বোনকে নিয়ে ঐ বনে জরৎকারুর কাছে গিয়ে তার বোনকে বিবাহ করতে অনুরোধ করলেন।

জরৎকারু বললেন যদি তার নামে কন্যার নাম হয় তবেই তিনি কন্যাকে বিবাহ করবেন।

বাসুকি বললেন তার বোনের নাম জরৎকারী। জরৎকারুর জন্যই তার জন্ম। এতদিন তিনি বোনকে বহু যত্নে বড় করেছেন মুনির জন্যেই।

জরৎকারু বিবাহে সম্মত হলেন। সকল নাগ এই বিবাহের সংবাদ শুনে সুখী হল।
..................

নাগ পঞ্চমীতে পূজিত নাগ দেবতারাঃ অনন্ত নাগ, শেষ নাগ, বাসুকি, পদ্মনাভ, শঙ্খপলা, কালিয়া, তক্ষক, কম্বাল এবং ধ্রুতরাষ্ট্রা/মহাপদ্ম!

নাগেদের উৎপত্তি এবং অরুণের জন্ম:

এই পর্যন্ত শুনে মুনিরা সৌতিকে জিজ্ঞাসা করলেন বোনকে জরৎকারুর কাছে নাগরা দিল কি প্রয়োজনে। জরৎকারীর জন্ম কেন জরৎকারুর জন্যই!

সৌতি তখন সবিস্তারে এর কারণ জানালেন।

দক্ষের কন্যা কদ্রু ও বিনতা তাদের স্বামী কশ্যপের বহু সেবা করেন। খুশি হয়ে কশ্যপ তাদের বর দিতে চাইলেন। কদ্রু সহস্র নাগকে তার পুত্র হিসাবে চাইলেন। বিনতা কেবল দুটি পুত্র প্রার্থনা করলেন।

মুনির বরে দু’জনেই গর্ভবতী হলেন। তারা বনে চলে গেলেন। সেখানেই দু’জনে প্রসব করলেন।
কদ্রু সহস্র ডিম ও বিনতা দুটি ডিম প্রসব করলেন। ডিমগুলি তারা স্বর্ণপাত্রে রেখেছিলেন। পাঁচশ বছর বাদে সহস্র ডিম ফুটে কদ্রুর সহস্রনাগ-পুত্রের জন্ম হল।

তা দেখে বিনতার হিংসে হল। সে একটি ডিম ফাটালে তার থেকে লাল বর্ণের এক অপূর্ব অর্ধাঙ্গবিহীন পুত্র বের হলেন।
ইনিই অরুণ।
ক্রোধে তিনি জননীকে শাপ দিলেন, অকালে বিনতা যেমন তাকে অঙ্গহীন ভাবে জন্ম দিয়ে কষ্ট দিলেন, তেমনি যে বোনকে হিংসা করে একাজ করা সেই বোনেরই দাসী তাকে হতে হবে।
আরো বললেন, অপর ডিমে মহাবীর্যবন্ত বীর আছেন। সহস্র বছর বাদে সে আপনিই ফুটবে। সেই তার শাপমোচন করবে।

এসময় কদ্রু ও বিনতা একসঙ্গে বাস করছিলেন। দৈবের ঘটনায় একদিন তারা উচ্চৈঃশ্রবা নামে অপরূপ ঘোড়াটিকে দেখতে পেলেন। এই ঘোড়াটি সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠেছিল।
এত শুনে মুনিরা সৌতিকে সমুদ্র মন্থনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
.......................

Friday, June 4, 2010

আমার মেয়েবেলার কিছু ছবি :)

মায়ের কোলে আমি :)







আমি আর বাপ্পা











আমি আর ভুলো

পাপার সাথে :)

Thursday, June 3, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত- ১

[ কিছু কথাঃ দাদু মারা যাওয়ার পর আমি দাদুর অনেক বই থেকে একটি বই পাই ‘কাশীদাসী মহাভারত’- খুব উৎসাহ নিয়ে খুলে বসি এবং কবিতা দেখে একটু থমকালেও পড়তে থাকি, খুব ভাল লাগে। ভাইবোনরা উৎসুক হয়ে দেখতে এসে সরে পরে। তখন ঠিক করি যদি গল্পগুলো সরল গদ্যে করা যায়, কেমন হয়! অনেক উৎসাহ নিয়ে শুরুও করি। পরে খাতাটি যদিও হাত বদল হয়ে থাকে অনেকদিন! এখন উদ্ধার করে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। ]



[মহাভারত রচনাঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলছেন এবং গনেশ তা লিপিবদ্ধ করছেন]

সৌতের প্রতি শৌনকাদি ঋষিগণের প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা:

"নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্‌।
দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততো জয়মুদীরয়েৎ।।"

-নারায়ণ, নরোত্তম নর(ঋষি) ও দেবী সরস্বতীকে নমস্কার করে তারপর পুরাণ-মহাভারত আখ্যান পাঠ করবেন।

কুলপতি মহর্ষি শৌনকমুনি নৈমিষারণ্যে বারোবছর ধরে একমনে তপোবনে যজ্ঞ করছিলেন। এসময় লোমহর্ষেণের পুত্র পুরাণকথক সৌতি-যিনি ব্যাসদেবের উপদেশে সর্বশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন-ঘুরতে ঘুরতে সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি মুনিদের আশীর্বাদ নিলেন। মুনিরা বসতে অনুরোধ করে যানতে চাইলেন তিনি কোথা থেকে আসছেন, কোথায় এতদিন ছিলেন।

তখন সৌতি সবিনয়ে জানালেন যে – পরীক্ষিতের পুত্র জন্মেজয় সর্প বিনাশের জন্য যে যজ্ঞ শুরু করেন সেখানে মুনি শ্রেষ্ঠ বৈশম্পায়ন ব্যাস-রচিত কাব্য তাদের শোনান। মুনিরা যদি আজ্ঞা করেন তবে তিনি সেই কথা তাদের শোনাতে পারেন।

[মহাভারত রচনার পর ব্যাসদেব ভাবছিলেন কোন উপায়ে এই ইতিহাস শিষ্যদের পড়াবেন!
তখন ব্রহ্মা তাঁর কাছে এসে বলেন- তুমি গণেশের স্মরণ নাও। তিনি তোমার গ্রন্থের লিপিকার হবেন।
ব্যাস গণেশকে অনুরোধ করলে তিনি সম্মত হন, তবে একটি শর্তে-যে তার লেখনী কোন সময়ই থামবে না।
ব্যাস মনে মনে ভাবলেন তার রচনায় আটহাজার আটশ জটিল শ্লোক আছে। যার অর্থ কেবল তিনি ও তার পুত্র শুক জানেন।
তাই তিনি গণেশের শর্ত মেনে বললেন- আমি যা বলে যাব আপনি তার অর্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না।
গণেশ বললেন- তাই হবে।
গণেশ সর্বজ্ঞ হলেও এইসব কূটশ্লোক লেখার সময় তাকেও ভাবতে হত। সেই অবসরে ব্যাস অন্য শ্লোক রচনা করতেন।]



মুনিরা বললেন সৌতির কাকাও সুত্রধর ছিলেন তার কাছেও অনেক কাহিনী শুনেছেন। সৌতিও যদি ভৃগুবংশের উৎপত্তি কি ভাবে হল তা জানান তবে তারা সুখি হবেন। সৌতি তখন ভৃগু বংশের কথা বলতে শুরু করলেন।

ব্রহ্মার পুত্র ভৃগু পুলোমাকে বিবাহ করেন। একদিন গর্ভবতী পুলোমাকে রেখে ভৃগু স্নানে গেলে হঠাৎ সেখানে একজন দৈত্য এসে পুলোমাকে হরণ করতে চাইল। পুলোমা তাকে ফলমূল দিতে গেলে কামে পীড়িত দানব তা নিল না।
সে কুটীতে ঢুকে অগ্নিকে দেখতে পেল। দানব অগ্নিকে বলল পুলোমার পিতা প্রথমে পাত্র হিসাবে এই দানবকে নির্বাচন করলেও পরে ভৃগুর সঙ্গে তার বিবাহ দেন। ভৃগুও এর কোন বিচার না করে কন্যাকে বিবাহ করেন। এতদিন পরে সে এসেছে তার অধিকার নিয়ে, অগ্নিই বলে দিন তার কি কর্তব্য।

অগ্নি সব শুনে ভয় পেলেন। তিনি অনেক ভেবে বললেন দৈত্যই পূর্বে কন্যাকে বরণ করে কিন্তু বিধি মতে বিবাহ হয় ভৃগুর সঙ্গে, তিনি তার সাক্ষী। তবু, ন্যায় মতে পুলোমা দৈত্যেরই ঘরনী।

অগ্নির কথা শুনে দৈত্য শুকরের ছদ্মবেশে কন্যাকে হরণ করল। রাক্ষসের এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পুলোমার গর্ভের পুত্র প্রবল তেজে বাহির হয়ে দৈত্যকে ভষ্ম করে দিলেন। এই পুত্রই পরে চ্যবনমুনি নামে বিখ্যাত হন।

পুলোমা কাঁদতে কাঁদতে শিশুকে কোলে নিয়ে আশ্রমে ফিরলেন। সেই সময় ব্রহ্মা সেখানে উপস্থিত হলেন। পুলোমার ক্রন্দন নিবারণের বহু চেষ্টা করলেন, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার পুলোমা এত কাঁদলেন যে, একটি নদীর সৃষ্টি হল। ব্রহ্মা তার নাম রাখলেন- বধূসরা নদী।

ব্রহ্মা চলে গেলেন, পুলোমাও শিশুকে নিয়ে আশ্রমে প্রবেশ করলেন। সেই সময় ভৃগু স্নান করে গৃহে ফিরলেন। পুলোমার বিরস বদন দেখে তাঁর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
স্বামীকে দেখে পুলোমা আবার কেঁদে ফেললেন এবং সমস্ত ঘটনা বলে অগ্নির উপর সব দোষ দিলেন। ভৃগু সব শুনে ক্রোধে অগ্নিকে অভিশাপ দিলেন,“সর্ব ভক্ষ হও"”।

ভয়ে অগ্নি বললেন তিনি যা জানতেন তাই বলেছেন এর জন্য মুনি কেন তাকে শাপ দিলেন! জেনেশুনে মিথ্যা কথা বললে তার নরক গমন হত। অগ্নি সকল দেবতাকে নিয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা সব শুনে অগ্নিকে আশির্বাদ করলেন,“সকল হইবে শুদ্ধ তোমার পরশে" ।

ব্রহ্মার আশির্বাদে অগ্নি খুশি হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে এসে বসবাস শুরু করলেন।
........................

রুরুর সর্প-হিংসা:

সৌতি তারপর বললেন - এরপর ভৃগুপুত্র হন চ্যবন, তাঁর পুত্র প্রমতি এবং প্রমতির পুত্র হলেন রুরু।

রুরু মেনকার কন্যা প্রমদ্বরাকে বিবাহ করেন। রুরু তার পত্নীকে খুবই ভালবাসতেন।

একদিন সাপের কামড়ে প্রমদ্বরার মৃত্যু হল। রুরু দুঃখে বনে বনে কেঁদে বেড়াতে লাগলেন।

তাকে কেঁদে বেড়াতে দেখে দেবতারা এক দেবদূতকে কারণ জেনে আসতে বললেন।

দূত মর্তে এসে রুরুকে অনেক সান্তনা দিলেন। তবু রুরু স্ত্রীর জন্য বিলাপ করলে দূত বললেন একটি উপায় আছে, যদি রুরু তার অর্ধেক আয়ু প্রমদ্বরাকে দেন তবে সে বেঁচে উঠতে পারে। রুরু অর্ধেক আয়ু দিতে সম্মত হলে প্রমদ্বরা পূর্ণ জীবন লাভ করলেন।

স্ত্রী বেঁচে উঠলে রুরু প্রতিজ্ঞা করলেন, যত সাপ দেখবেন তাদেরকে হত্যা করবেন। এক হাতে দন্ড নিয়ে তিনি বনে বনে ঘুরতে লাগলেন এবং প্রচুর সাপ মারলেন।

এভাবে বনে ঘুরতে ঘুরতে রুরু একদিন এক ভয়ংকর সাপের দেখা পেলেন। তাকে মারতে উদ্যত হলে সাপটি বলে উঠল-সে নিরিহ প্রাণী, তাকে যেন রুরু না মারেন। রুরু তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন। সাপটি জানাল তাঁর নাম-ডুন্ডুভ।

ডুন্ডুভ জানালেন তিনি মুনিকুমার ছিলেন। খগম নামে তার এক বন্ধু ছিল। তিনি তালপাতার সাপ তৈরী করে বন্ধুকে ভয় দেখান। খগম ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে তিনি ডুন্ডুভকে শাপ দেন যে, ডুন্ডুভ হীনবীর্য সাপ হয়ে বনে থাকবেন। পরে করুনা করে বলেন-রুরুর সঙ্গে দেখা হলে তিনি মুক্ত হবেন।

ডুন্ডুভ রুরুকে বলেন ভৃগুবংশে জন্মে রুরু ক্ষত্রিয়ের মত কাজ কেন করছেন! ব্রাহ্মণের এটা কাজ নয়- তাকেই দেখুক! সামান্য কারণে তার কি দূর্গতি! রুরুকে তিনি উপদেশ দিলেন ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ পালন করতে এবং ভয়ার্ত জনকে রক্ষা করতে।

পূর্বে রাজা জন্মেজয় সর্প যজ্ঞ করেছিলেন। তবু ব্রাহ্মণের দয়ায় তখন সাপেরা বেঁচে যায়। আস্তিক নামে জরৎকারুর পুত্র এদের বাঁচান।

এত শুনে রুরু জন্মেজয় ও আস্তিকের কাহিনী শুনতে চাইলেন।

ডুন্ডুভ তখন বললেন যেকোন মুনিকেই এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেই তারা বলে দেবেন। এখন তিনি যাবার জন্য আজ্ঞা চান।
এত কথা বলতে বলতেই ডুন্ডুভ সাপ অপরুপ মানব মূর্তি ধারন করে অন্তর্ধান হলেন।

রুরু পুনরায় আশ্রমে ফিরে এলেন এবং পিতা প্রমতির কাছে আস্তিকের উপাখ্যান শুনতে চাইলেন।

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers