Blog Archive

Monday, August 31, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০২

[পূর্বকথা - পারিজাত হরণের কথা...নারদ পারিজাতপুষ্প কৃষ্ণকে দিলে তিনি তা স্ত্রী রুক্মিণীকে পরিয়ে দেন... সে কথা শুনে সত্যভামার অভিমান হয়...তিনি আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন, কৃষ্ণ এসে তার মানভঞ্জন করেন এবং পারিজাত বৃক্ষ উপহারের আঙ্গিকার করেন...শ্রীকৃষ্ণের সুরপুরী গমন করেন...শ্রীকৃষ্ণের সাথে ইন্দ্রের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়...মহাদেবের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ ইন্দ্রকে সম্মান দেখালে ইন্দ্র পারিজাত কৃষ্ণকে দান করেন ...] 

ইন্দ্রকে লইয়া কৃষ্ণের নিকটে গরুড়ের গমন ও কৃষ্ণের ক্রোধ নিবারণঃ 


শচীর হাসি দেখে সতী সত্যভামার অভিমান হল। 
তিনি গোবিন্দকে করজোড়ে বলেন –তুমি যখন ইন্দ্রের চরণ স্পর্শ করে তাকে প্রণাম করলে তখন শচী হেসে আমায় তা দেখায়। সে যা প্রতিজ্ঞা করেছিল তা সম্পূর্ণ হল। তুমি আমায় বলেছিলে আজ তাদের গর্ব চূর্ণ করবে। কি কারণে তুমি এমন করলে! পারিজাত না পেলে না হয় নাই পেতাম! 

হেসে প্রভু কমললোচন বলেন –সতী একারণে কেন তুমি দুঃখ করছ! তিন ভুবনে যত প্রাণী দেখছ, তাদের থেকে আমি ভিন্ন নই। সবার মাঝেই আমার অবস্থান। আজ আমি নিজেই নিজেকে নমস্কার করলাম না হয়! এতে তোমার লজ্জা হচ্ছে কেন! 

সতী সত্যভামা বলেন –আপনি শচীর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করলেন, কিন্তু নিজের প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হলেন! আপনিই তো বলেছিলেন সহস্রলোচন ইন্দ্রের গর্ব খর্ব করবেন। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা। বিশেষ করে শচীর হাসি দেখে পর্যন্ত আমার সর্ব অঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে। 

কৃষ্ণ বলেন –আমার প্রতিজ্ঞা স্থির নয়। দেবী, ভক্তদের আমি আমার শরীর দান করেছি। শিবের বাক্য লঙ্ঘন করতে না পেরে ইন্দ্রকে ক্ষমা করলাম। 

সতী বলেন –তার মানে আমি আপনার ভক্ত নই, অভক্ত! সে কারনেই আমার শরীর ক্রোধে দ্বগ্ধ হচ্ছে! 

গোবিন্দ বলেন –দেবী, ক্রোধ ত্যাগ কর। ঠিক আছে এখনি ইন্দ্রকে এনে তোমার চরণে লোটাব। 


সত্যভামাকে আশ্বাস দিয়ে দৈবকীতনয় কৃষ্ণ মৃত্যুঞ্জয় শিবকে ডেকে বলেন –আপনার বচন আমি লঙ্ঘন করতে পারিনি তাই ইন্দ্রকে তখন মান্য করেছি। তবে ইন্দ্রের সাথে আমার কিবা সম্বন্ধ! পৃথিবীতে তো আমি কতবার কত অবতার রূপে এসেছি। 
হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু দুইভাই প্রতাপে সকল ভুবন জয় করেছিল। তাদের বরাহ ও নরসিংহ অবতার রূপে হত্যা করে নিষ্কন্টক স্বর্গের অধিকার দিলাম। 
ধর্মবলে বলিরাজ ত্রিভুবন নিলে আমি দুই পদে ব্রহ্মান্ড ব্যাপিয়ে তাকে বামনাবতারে ছলনা করে পাতালে রাখলাম। পুনরায় নিষ্কন্টক করে স্বর্গ আখন্ডল ইন্দ্রকে দিলাম। 
কুম্ভকর্ণ ছিল রাক্ষসরাজ রাবণের প্রিয়। সে ধার্মিক, সাহসী ও বুদ্ধিবলে ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করে স্বর্গের অধিকার নিতে পারে যেনে ইন্দ্র হিংসা করে দেবী সরস্বতীর সাহায্যে কুম্ভকর্ণকে বিহ্বল করায়। ফলে ব্রহ্মা বর দিতে এলে কুম্ভকর্ণ “ইন্দ্রাসন” এর পরিবর্তে “নিদ্রাসন” চেয়ে বসে। সকলে যানে সে ইন্দ্রের কি অবস্থা করেছিল। তাদেরও আমি রাম অবতারে হত্যা করে নিষ্কন্টক স্বর্গ ইন্দ্রকে দান করি। 
এখন আপনিই বলুন শিব আমার সাথে তার কিসের সম্বন্ধ! তাকে আমার এসব কথা জানাবেন হে সদানন্দ শিব। বলবেন সে যেন ভূমিতে এসে সতীর চরণে লুটিয়ে প্রণাম করে। তবেই আমি তার অপরাধ মার্জনা করব। না হলে এখনই অন্য কাউকে স্বর্গপুরী দান করব। 

মহেশ্বর শিব সব কথা ইন্দ্রকে জানালেন। কিন্তু সব শুনে ইন্দ্র ক্রোধে কাঁপতে লাগলেন। 
শিব কৃষ্ণকে গিয়ে দুঃখের সাথে জানালেন ইন্দ্র তার শর্তে রাজি নন। 

কৃষ্ণ তখন গরুড়কে ডেকে বলেন –হে বীর খগেশ্বর, এখনই পাতাকে গিয়ে বিরোচনের পুত্র বলিকে [হিরণ্যকশিপু->প্রহ্লাদ->বিরোচন->বলি] নিয়ে এস। আজই আমি তাকে স্বর্গের অধিপতি করব। সাধুসেবার গুণে সে আমার ভক্ত। 

একথা শুনে গরুড়, যিনি ইন্দ্রের প্রতি অতিশয় প্রীত, তিনি বন্ধুর কারণে গোবিন্দের চরণে পরে সবিনয়ে বলেন –অদিতিকে(ইন্দ্রের মা) যে সত্য বচন করেছিলেন, তা ভুলে গেলেন, হে চক্রধর! এখন বলিকে স্বর্গের অধিকারী করতে চান! তাকে কেন ডাকছেন, হরি! ইন্দ্রকে কেন ছাড়ছেন! দেখি সে কেমন আপনাকে না মান্য করে! 

এই বলে খগেশ্বর নিজেই স্বর্গে চললেন। 
ইন্দ্রকে গিয়ে গরুড় বলেন –হে পুরন্দর, কেন অজ্ঞানের মত আচরণ করছ! যার জন্য এই সৃষ্টির সৃজন, যিনি তোমাকে এই স্বর্গের অধিকার দিলেন তাঁর আজ্ঞা অবহেলা করছ কেন! দেখেও কি দেখতে পাচ্ছ না! ইন্দ্রপদে এত মজেছ! এস বন্ধু আমি তোমার দোষ ক্ষমা করাব। সতী সত্যভামার চরণতলে তোমায় ফেলব। আমার কথাতেও যদি তুমি না সচেতন হও তবে যেন বলি রাজা এই ইন্দ্রপদ পাবে। তোমার উপর ক্রোধ আরো বারবে। 

খগেন্দ্রের(পাখির রাজা-গরুড়) কথা শুনে মেঘবান ইন্দ্র চিন্তিত হলেন। 
অনুশোচনা করে ইন্দ্র গরুড়কে বলেন –বুঝেছি ভগবান আমার উপর ক্রোধ করেছেন। ত্রৈলোকের নাথ প্রভু দেব নারায়ণ। অজ্ঞান হয়ে তার সাথে যুদ্ধ করেছি। সখা গরুড়, বিশ্বাস করুন আমি না জেনে গোবিন্দের ক্রোধ বাড়িয়ে ফেলেছি। 

খগেশ্বর বলেন –সখা আমার কথা শোন। তুমি আমার সাথে এসে চক্রপাণির ক্রোধ শান্ত কর। এস আমি তোমার দোষ ক্ষমা করাব। নারায়ণের সামনে তোমায় নিয়ে যাব। 


এত বলে গরুড় ইন্দ্রের হাত ধরে তাকে একেবারে সতী সত্যভামার চরণতলে এনে ফেললেন। ভূমিতে পরে সহস্রলোচন ধুলিতে চোখ ধাঁধিয়ে কিছু দেখতে পেলেন না। চারদিকে হাতড়াতে থাকেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পূণ্যবান। 
...................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers