Blog Archive

Sunday, November 29, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৩

[পূর্বকথা - সুভদ্রা বিবাহ-কারণে সত্যভামার মহাচিন্তা শুরু হল ..... কৃষ্ণের মত জেনে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিলেন সুভদ্রাকে বিবাহের .....অন্যদিকে বলরাম হস্তিনায় দূত প্রেরণ করে দুর্যোধনে বিবাহের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন ...দুর্যোধন আনন্দে বরবেশে দ্বারকায় গমন করল...যুধিষ্ঠির ও সংবাদে আশ্চর্য হলেও ভীমকে সাথে যেতে আজ্ঞা দিলেন...কৃষ্ণের কথা মত অর্জুন সরস্বতীর তীর থেকে সুভদ্রাকে হরণ করলেন... ] 

যাদবগণের অর্জ্জুনের পশ্চাদ্ধাবনঃ



গদ, শাম্ব, চারুদেষ্ণ, সাত্যকি, সারণ প্রমুখ বীর তাদের রথ পবনের গতিতে চালিয়ে দিল। 
যদুবীররা উচ্চস্বরে অর্জুনকে বলতে থাকে –পালিও না, হে অর্জুন! আমাদের কথা শোন। 

শুনে অর্জুন সারথি দারুককে বলেন –হে দারুক, রথের মুখ ফেরান। ক্ষত্রিয়েরা ডাকছে, তাদের প্রবোধ না দিয়ে যেতে পারব না। 

দারুক বলে –পার্থ একি অদ্ভুত কথা বলছেন! গোবিন্দের চেয়েও গোবিন্দের সন্তানদের কথা বেশি শুনচ্ছেন! পিছনে দেখুন অপ্রমিত, পরাক্রমী, ত্রৈলোক্য অজেয় সেনাবাহিনী। এদের সাথে আপনার একা যুদ্ধ করা ঠিক হবে না। ক্ষত্রনীতিতেও বলে সময় বুঝে যুদ্ধ করা উচিত। আমি রথ ফেরাতে পারব না। আপনি যেখানে যেতে চান নিয়ে যাব। বলুন এখন ইন্দ্রপ্রস্থে রথ নেব, না ইন্দ্রের নগরে যাব। কুবের, বরুণ, যম, ইন্দ্রের সদন যেখানেই বলবেন সেখানেই যেতে পারি। কিন্তু রথের মুখ ঘোরাতে পারব না। আর কি ভাবে যাদবদের সাথে যুদ্ধ করাব! কৃষ্ণের এই রথে চড়ে কৃষ্ণপুত্রদের মারতে দিতে আমি পারি না।

পার্থ বলেন –দারুক, এ উচিত কার্য নয়। তারা যুদ্ধের জন্য আমায় ডাকছে। ক্ষত্রধর্ম অনুসারে আমি এখন পালাতে পারি না। তাঁর উপর এরা যে আমায় তাড়া করেছে। এখন পালালে এই অপযশ পৃথিবীতে প্রচার হবে যে শৃগালের মত আমি পালিয়েছি। কৃষ্ণপুত্র আসুক কিংবা স্বয়ং কৃষ্ণ অথবা যুধিষ্ঠির বা ভীম যুদ্ধক্ষেত্রে যিনি আমায় যুদ্ধে ডাকবেন ক্ষত্রধর্ম অনুসারেই আমি তাঁর সাথে সংগ্রাম করব। 
আমি জানি তুমি যদুকুলের হিত চাইবে। এখন আর তোমার সারথি কর্ম সম্ভব নয় বুঝেছি। প্রবোধ দেওয়া বন্ধ কর, ছাড় কড়িয়ালি(বলগার কড়া যা ঘোড়ার মুখে থাকে)। আমি নিজেই রথ চালিয়ে যুদ্ধ করব, তুমি সরে যাও। 

এই বলে পার্থ নিজেই রথের রশি কেড়ে নিয়ে ডান দিকের রথস্তম্ভে দারুককে বাঁধলেন। এক পায়ে কড়িয়ালি, অন্য পায়ে বাড়ি(লাঠি/দন্ড) আর হাতে তুলে নিলেন ধনুর্গুণ। 

সুভদ্রা বলেন –হে মহাবীর, এত কষ্ট কেন করছেন। আজ্ঞা করুন আমি ঘোড়াদের চালাই। এই রথে আমি সত্যভামা, রুক্মিণীর সাথে তিনপুর ভ্রমণ করতাম। সত্যভামা স্নেহ করে সব সময় আমায় সঙ্গে নিতেন। আমিই তাঁর সারথি হয়ে রথ চালাতাম। আমার নৈপুণ্য দেখে দেব দামোদর কৃষ্ণ কত ধন্য ধন্য করতেন! আজ্ঞা করুন কোন পথে রথ চালাতে হবে। 
এই বলে ভদ্রা কাড়িয়ালি হাত বাড়িয়ে নিয়ে বায়ুবেগে রথ চালালেন। চোখের নিমেষে রথ আদিত্যমন্ডলে গেল। সেখান থেকে ভদ্রা হয়বর(ঘোড়াদের) সৈন্যদের প্রদক্ষিণ করে নিয়ে এলেন। রথের চঞ্চল গতি অতি মনোহর, দেখে মনে হয় যেন সৈন্য মাঝে নর্তকী নাচ করছে। বিদ্যুৎবরণী ভদ্রা, পার্থ জলধর। বিদ্যুতের মত তিনি যেন মেঘে প্রবেশ করেন। 

দেখতে দেখতে যাদববীররা মুর্চ্ছিত হয়ে রথে পরে গেল। পার্থ ধনুর্ধর অনেক সেনা মারলেন। কোটি কোটি রথী মারা পরল, অসংখ্য কুঞ্জর(হাতি) কাটা পরল। রক্তের নদী বয়ে গেল। সকলে তাতে সাঁতার কাটে। 

পার্থকে কালরূপে দেখে সকলে ভয় পেল। কামদেব ও সারণ বিচার বিবেচনা করে বলরামের কাছে দূত প্রেরণ করল। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরামদাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers