Blog Archive

Tuesday, April 15, 2014

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫৪

কুরুবালকদিগের বাল্যক্রীড়াঃ 

একদিন নগরের বাইরে কুরুপুত্ররা ক্রীড়া করছিল। এক গোটা লৌহভাঁটা(গোলক বিশেষ) মাটিতে ফেলে হাতের দন্ড বা ডান্ডা দিয়ে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ দৈব নির্দেশে লৌহভাঁটা জলশূণ্য কূপের মধ্যে পড়ে গেল। সকল কুমার সেটি কূপ থেকে তোলার অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু কৃতকার্য হল না। সকলে হতাশ হয়ে ভাবতে বসল। লজ্জিত হয়ে মলিন বদনে তারা বসে রইল। 

এমন সময় দ্রোণ সে স্থান দিয়ে গমন করছিলেন। শুক্ল বস্ত্র, শুক্ল বেশ, কাঁধে উত্তরীয়, শ্যামল দেহবর্ণ, গতি মত্ত হস্তীর মত। শিশুদের বিরস বদন দেখে তার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। 
তার প্রশ্ন শুনে সকল কুমার নিজেদের ক্ষত্রকুলে জন্মের জন্য ধিক্কার দিতে লাগলো। নিজেদের প্রাণ, অধ্যায়ণ –সকল বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করল। কারণ তারা একটি ভাঁটাকে উদ্ধার করার শক্তি রাখে না। অথচ সকলে উপর থেকে লৌহভাঁটা দেখতে পাচ্ছে। 

এত শুনে দ্রোণ হেসে বলেন, কূপ থেকে তিনি ভাঁটা উদ্ধার করে দিতে পারেন একটি ঈষীকা অর্থাৎ কাশতৃণের সাহায্যে। তার পরিবর্তে তাকে তুষ্ট করতে হবে। ভোজ্য পেলেই তিনি তুষ্ট হন। তিনি সকলকে একসাথে এ ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে বললেন। 

এত শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন ঈষীকার সাহায্যে ভাঁটা তুলে দিলে তাকে কি দ্রব্য ভোজনে দিলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। কৃপাচার্যের কাছে আশ্রিত দ্রোণ যে কোন ভোজ্যেই আনন্দিত। তিনি বালকদের স্থির থাকতে বললেন। 

নিজ অঙ্গুরী বা আংটি তিনি কূপে নিক্ষেপ করলেন এবং ভাঁটা ও ঐ অঙ্গুরী কয়েকটি কাশতৃণের সাহায্যে উদ্ধারের অঙ্গীকার করলেন। এত বলে তিনি একটি ঈষীকা আনলেন। মন্ত্র পড়ে দ্রোণ ঈশীকা ছুড়লেন। মন্ত্র তেজে ঈষীকা লৌহভাঁটা ভেদ করল। একের পর এক ঈশীকার উপর ঈশীকা ছুড়তে লাগলেন দ্রোণ। কাশতৃণের উপর কাশতৃণ যুক্ত হয়ে হয়ে দীর্ঘাকার হল। শেষ ঈশীকা ধরে টান দিয়ে দ্রোণ লৌহভাঁটা উপরে টেনে ওঠালেন। 
সকলে তা দেখে অবাক হল। দ্রোণ এরপর ধনুর্বাণ নিয়ে মন্ত্র পড়ে বাণ মারলেন এবং শরসহ অঙ্গুরী উপরে উঠে এল। 
এই দুষ্কর কর্মটি দেখেও সকলে চমৎকৃত হল। সকলে দ্বিজকে কোথা থেকে এসেছেন, তার গৃহ কোথায় এ সকল প্রশ্ন করতে লাগলো। সকলে তার কর্মে অভিভূত হয়ে তার সকল আজ্ঞা পালনে সম্মত হল। তাদের বচনে দ্রোণ সন্তুষ্ট হলেন এবং নির্দেশ দিলেন ভীষ্মকে গিয়ে তার আগমনের সমাচার জানানোর জন্য। ভীষ্মকে তার বর্ণনা দিলেই তিনি তাকে চিনতে পারবেন এবং যথার্থ সন্মান জানাবেন। 

এত শুনে সকল কুমার দ্রুত ভীষ্মের কাছে গমন করে এক শ্যামবর্ণ ব্রাহ্মণের অদ্ভূত কর্মের বিবরণ জানাল। সকল ঘটনা শুনে ভীষ্ম বুঝলেন এ দ্রোণাচার্য ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। এতদিনে কুরুবংশের যোগ্য গুরু মিললো ভেবে তিনি সন্তুষ্ট হলেন। 


দ্রোণাচার্য 

দ্রোণের কাছে ভীষ্ম দ্রুত উপস্থিত হলেন, তাকে প্রণাম জানালেন। 
দ্রোণ ভীষ্মকে আশীর্বাদ করে আলিঙ্গন করলেন। ভীষ্ম তাঁর সম্পর্কে আরো যানতে চাইলে দ্রোণ আত্ম বিবরণ দিলেন। 
তপোবনে বহু কষ্টে তিনি তপস্যা করেন। ফলমূলাহার করেন, জটাবল্ক পরিধান করেন। এভাবে বহুদিন তপস্যা চলে। এসময় তার পিতৃবাক্য স্মরণে আসে। বংশহেতু পিতৃ আজ্ঞানুসারে গৌতমী কৃপের ভগ্নী কৃপীকে বিবাহ করেন। তার গর্ভে একপুত্র জন্মায়। দেবতারা তার নাম রাখেন অশ্বত্থামা। পুত্র শিষ্যদের সাথে ক্রীড়া করে। একদিন হঠাৎ পুত্র পিতার কাছে এসে কাঁদে গরুর দুধ পান করার বায়না করল। পুত্রের তৃষ্ণা নিবৃত্তে দ্রোণ বহুস্থান ভ্রমণ করলেন যদি কোন সত্যশীল ব্যক্তি গবীদান করে। কিন্তু কেউ গবীদান করল না। গরু না পেয়ে তিনি গৃহে ফিরলেন। দেখলেন বালকের দল পিটলী জল পাত্রে ভরে এনেছে। সকলে তা দুধ বলে অশ্বত্থামাকে দিল এবং সে আনন্দিত মনে তা পান করল। অশ্বত্থামার বোকামিতে সকল বালক আনন্দ করতে লাগল। তাদের সাথে পুত্রও নাচতে লাগল দুগ্ধপান করেছে ভেবে। তা দেখে বালকরা বলাবলি করতে লাগলো যার পুত্র দুধ ভেবে চাল গোলা জল পান করে সেই দ্রোণকে শত শত ধিক্কার। সকলে দ্রোণকে উপহাস করতে থাকল। অভিমানী পুত্র পুনরায় পিতার কাছে এসে দুগ্ধপানের আকুতি জানাল। পুত্র বাক্যে তার চিত্তে অনুতাপ হল। জননীও বিলাপ করতে লাগলেন। দ্রোণ আপন জপ-তপ সব কিছুকে ধিক্কার জানালেন। পৃথিবীতে গৃহবাসী ধনহীন সকলকেই ধিক্কার। এত ভেবে তিনি বাল্য সখা দ্রুপদের কাছে যাবেন স্থির করেন। পূর্ব প্রেমের কথা ভেবে তিনি পাঞ্চালে উপস্থিত হলেন। কিন্তু দরিদ্র বলে নৃপ তাকে চিনতে চাইলেন না। নিষ্ঠুর বচনে তাকে আঘাত করলেন। তার সকল বাক্য দ্রোণের মর্মভেদ করল। সে কারণে তিনি প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা করেন। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে তিনি হস্তিনানগরে উপস্থিত হলেন। 

ভীষ্ম তার আগমনকে নিজের বড় ভাগ্যই মনে করলেন। ভীষ্ম কৌরব ও পান্ডব বালকদের শিক্ষার ভার দ্রোণের হাতে তুলে দিতে চাইলেন। দ্রোণ কৃপা করে তার পৌত্রদের শিক্ষাদান করুন এ অনুরোধ ভীষ্ম জানালেন। দ্রোণকে বহু ভাবে পূজা করলেন। থাকার জন্য সুরত্নময় গৃহদান করলেন।
....................................

Tuesday, April 1, 2014

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫৩

কৃপাচার্য্যের জন্ম-বিবরণঃ


পরীক্ষিত পুত্র জন্মেজয় মুনির কাছে সবিস্তারে সকল ঘটনা শুনতে চাইলেন। মুনি বৈশম্পায়ন বলেন পান্ডব চরিত্র শ্রবণে জগত পবিত্র হয়। তাই তিনি তাদের সকল ঘটনা ধিরে ধিরে বর্ণনা করবেন।

কিছুকাল পর গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম পৌত্রদের অস্ত্রশিক্ষা দানের জন্য সর্বশাস্ত্র বিশারদ কৃপাচার্য নিযুক্ত হলেন। শরদ্বান ঋষির পুত্র কৃপাচার্য হস্তিনানগরেই বাস করতেন। তিনি পঞ্চোত্তরশত ভাইকে ধনুর্বেদ শিক্ষা দিতে লাগলেন। 

জন্মেজয় বলেন ব্রাহ্মণের পুত্র ক্ষত্রিয়ের ধর্ম নিলেন কোন কারণে। 

মুনি বলেন- গৌতম ঋষির পুত্র শরদ্বান। শরসহ জন্মেছিলেন বলে তার এই নাম। এই শরদ্বান দ্বিজ কর্ম ত্যাগ করে ধনুর্বেদে রত হন। বেদশাস্ত্র না পড়ে ধনুর্বেদে মন দিলেন। তপোবনের মধ্যে অনুক্ষণ তপস্যা করলেন। তাঁর তপস্যার শক্তি দেখে শতক্রুর অর্থাৎ ইন্দ্র শঙ্কিত হলেন। মুনির তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য একটি উপায় খুঁজে পেলেন। দেবকন্যা জানপদীকে মুনির কাছে পাঠালেন। কন্যাকে দেখে শরদ্বান হত ধৈর্য্য হলেন। ধনুঃশর হাত থেকে পরে গেল এবং বীর্য্যও স্খলিত হল। মুনি সচেতন হলেন। সে বন ত্যাগ করে অন্য বনে গেলেন। 

ঋষির বীর্য্য মাটিতে পড়ে দুই খন্ড হয়ে গেল। তপস্বী ঋষির বীর্য্য কখনও নষ্ট হয় না। ধিরে ধিরে এক গুটি কন্যা হল, অপরটি পুত্র। 

সে সময় রাজা শান্তনু সে বনে মৃগয়া করতে গেছিলেন। অনুচরেরা অনাথ দুটি শিশু দেখে রাজাকে জানালেন। তাদের কথা শুনে রাজা চমৎকৃত হলেন। শিশু দুটি রোদন করছিল। তাদের পাশে তীর ধনুক এবং কৃষ্ণচর্ম দেখে রাজা অনুমান করলেন শিশু দুটি কোন ঋষির। রাজা তাদের নিজের সাথে এনে পালন করতে লাগলেন। 

অনেকদিন পর শরদ্বান মুনি সে বনে এসে সব জানলেন। রাজার কাছে এসে তাকে এই ধার্মিক কর্মের জন্য আশির্বাদ জানালেন। 

কৃপা করে রাজা তার পুত্র ও কন্যাকে রেখেছেন। তাই তাদের নাম রাখলেন কৃপ ও কৃপী। 

শরদ্বান মুনি কৃপকে নানা অস্ত্রবিদ্যা শেখালেন যত্ন করে। পরে দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষার জন্য পাঠালেন। দ্রোণাচার্য তাকে সর্বশাস্ত্র শিক্ষা দেন। ধনুর্বেদে কৃপ অপ্রতিদন্দী হয়ে ওঠে। অল্পকালে সবাই তাকে আচার্য বলে ডাকতে থাকে। কুরুবংশ, যদুবংশ, অন্ধক, বৃষ্ণিবংশ এবং আর যত রাজা দেশে দেশে আছেন সকলে কৃপাচার্যের কাছে ধনুর্বেদ শিক্ষার জন্য আসতেন। এভাবে কৃপগুরুর নাম ভুবনে ছড়িয়ে পড়ল। 

পরে ভীষ্ম মহাবীর যখন পৌত্রদের শিক্ষাদানের কথা চিন্তা করলেন তখন দ্রোণের কাছে সমর্পণ করলেন। দ্রোণাচার্য সর্বশাস্ত্রে তাদের জ্ঞানদান করলেন। 
...........................

দ্রোণাচার্যের উৎপত্তিঃ 



রাজা জন্মেজয় দ্রোণাচার্য সম্পর্কেও সম্পূর্ণরূপে জানতে চাইলেন। তার উৎপত্তি কি ভাবে হল। কি ভাবেইবা তিনি কুরুদেশে গুরু হলেন। 

মুনি বলেন, ভরদ্বাজ নামে এক মহামুনি ছিলেন। তিনি একদিন গঙ্গাস্নানে গেলেন। সে সময় অন্তরীক্ষে ঘৃতাচী অপ্সরা যাচ্ছিলেন। অপ্সরা পরমা সুন্দরী, বরণ তার অপূর্ব সুন্দর। হঠাৎ সে সময় দক্ষিণ পবন বইল এবং অপ্সরার বসন উড়ল। মুনি তার অঙ্গ দর্শন করলেন। দেখে তার মনে উদ্বেগ জন্মাল। পঞ্চশরের আঘাত শরের আঘাতের চেয়েও বেশি। কেউ নেই যে কামিনীর মোহে না পরে। মুনির রেত স্খলিত হলে, মুনি চিন্তিত হলেন। সামনে দ্রোণী অর্থাৎ ছোট্ট ডিঙ্গা বা কলসী দেখে তাতে রেত রাখলেন। দ্রোনীর মধ্যে দ্রুত এক পুত্রের জন্ম হল। পুত্র দেখে ভরদ্বাজ মুনি আনন্দিত হলেন। পুত্রকে নিয়ে আপন গৃহে গেলেন। 

দ্রোণীতে জন্ম বলে পুত্রের নাম রাখলেন – দ্রোণাচার্য বা দ্রোণী। বেদবিদ্যা ও সর্বশাস্ত্রে তাকে শিক্ষা দিলেন। 

পৃষত নামে পাঞ্চালের এক রাজা ছিলেন। তার পুত্র দ্রুপদ। দ্রুপদ ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে যেতেন। তিনি দ্রোণের সমবয়সীও ছিলেন। তারা একসথে থাকতেন, খেলতেন। একসাথে খাওয়া, বসা, শোওয়া- দেখে মনে হত তারা অভিন্ন আত্মা। এক মুহুর্তেও তারা পরস্পরকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। কিছুকাল পর পৃষত রাজা মারা গেলে দ্রুপদকে রাজা হয়ে পাঞ্চালে ফিরতে হল।

এদিকে ভরদ্বাজ মুনিও স্বর্গে গেলেন। তপস্যা করতে দ্রোণ তপোবনে চলে গেলেন। কিছুকাল পর পিতার ইচ্ছানুসারে দ্রোণ কৃপাচার্যের ভগিনী কৃপীকে বিবাহ করেন। পরমা সুন্দরী, ব্রতে অনুব্রতা, যজ্ঞ-হোম-তপে নিষ্ঠাবতী সতী পতিব্রতা কৃপী। তাদের এক পুত্রের জন্ম হয়। জন্মমাত্র পুত্র অশ্বের গর্জন করে উঠল। সে সময় আকাশবাণী হল জন্মমাত্র পুত্র অশ্বধ্বনি করায় এর নাম হবে অশ্বত্থামা। পুত্র দীর্ঘজীবী ও সর্বগুণে পূর্ণ হবে। পুত্রের মুখ দর্শন করে দ্রোণ আনন্দিত হলেন। নানা বিদ্যা তাকে দান করতে লাগলেন। 

কিছুকাল পর দ্রোণ একদিন শুনলেন অস্ত্রজ্ঞগণের শ্রেষ্ঠ ভৃগু নন্দন পরশুরাম সকলকে দান করছেন। তিনি ব্রাহ্মণদের নানা ধন-রত্ন দান করছেন শুনে দ্রোণও তার কাছে যাবেন স্থির করলেন। 


পরশুরাম

মহেন্দ্র পর্বতের মাঝে পরশুরামের আলয়, দ্রোণ সেখানে উপস্থিত হলেন। 

দ্রোণকে দেখে ভৃগুর নন্দন জিজ্ঞেস করলেন তিনি কোথা থেকে কি প্রয়োজনে এসেছেন। 

দ্রোণ বলেন তিনি ভরদ্বাজমুনির পুত্র। লোক মুখে শুনেছেন পরশুরাম দান করছেন, তাই তিনি এসেছেন তার সকল মনস্কামনা পূর্ণ করতে। 

পরশুরাম বলেন - আমার কাছে সুবর্ণাদি যা ছিল সবই ব্রাহ্মণদের দিয়েছি, সমগ্র পৃথিবী কশ্যপকে দিয়েছি, এখন কেবল আমার প্রাণ আর অস্ত্রশস্ত্র অবশিষ্ট আছে। 
সবকিছু দান করে তিনি এখনই বনে যাবেন স্থির করেছেন, ঠিক সময়েই দ্রোণ এসেছেন। এর মধ্যে কোনটি পেলে দ্রোণ খুশি হবেন তিনি জানতে চাইলেন। 

দ্রোণ বলেন – আপনি সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র আমাকে দিন এবং তাদের প্রয়োগ ও প্রত্যাহরণের বিধি আমাকে শেখান। 

মন্ত্রসহ অস্ত্রশিক্ষা দিয়ে পরশুরাম দ্রোণের প্রার্থনা পূর্ণ করলেন। ধনুর্বেদে নিপুন হলেন দ্রোণাচার্য।

এরপর তিনি দ্রুপদের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। অত্যন্ত দরিদ্র দ্রোণ কখনও কারো কাছে কিছু সাহায্য চান না। কিন্তু পুত্রের কষ্ট দেখে তার অন্তর কাঁদে। তিনি ভাবলেন বাল্যসখা দ্রুপদ রাজের কাছে গেলেই তার দুঃখ দুর হবে। এই ভেবে দ্রোণ পাঞ্চাল নগরে গেলেন। রাজার সম্মুখেও উপস্থিত হলেন। 

মলিন জীর্ণ ধুতি, শীর্ণ কৃষ্ণবর্ণের শরীর- দারিদ্রের প্রতি মূর্তি দ্রোণ। 
রাজা দ্রুপদকে বলেন দ্রোণ, তিনি তার বাল্যসখা, তার কাছে সাহায্যের কারণে উপস্থিত হয়েছেন।

সকল বাক্য শুনে দ্রুপদ চোখ রাঙ্গিয়ে তাকে দরিদ্র ভিক্ষুক, অজ্ঞান বাতুল, দুর্মুখ বলে অপমান করলেন সভার মাঝে। 
ধনী এবং দরিদ্রের কখনও সখ্যতা হতে পারে না। যেমন দেবতা ও অসুরে সখ্যতা অসম্ভব। তেমনি রাজা এবং ভিক্ষুকেরও সখ্যতা সম্ভব নয়। সমানে সমানেই কেবল সখ্যতা হতে পারে। উত্তম ও অধমের সখ্যতা সুখের নয়। 
এসকল নিষ্ঠুর বাক্য বলে দ্রোণকে তিরস্কার করতে থাকেন। 
তার বাল্যকালে কোন সখা ছিল বলে তিনি মনে করতে পারলেন না। 

এত নিষ্ঠুর বাক্য শুনে অভিমানে দ্রোণ কাঁপতে থাকেন। দু’চোখ থেকে যেন রক্ত বহে, শ্বাসে তার সর্পের গর্জন। 
মুহূর্তকাল স্তব্ধ থেকে দ্রোণ আর রাজাকে দর্শণ না করে, কিছু না বলে সে স্থান ত্যাগ করেন। 

ক্রোধে অভিভূত দ্রোণ হস্তিনানগরে শ্যালক কৃপাচার্যের কাছে আশ্রয় নেন। দ্রোণকে দেখে কৃপাচার্য আনন্দিত হলেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দ্রোণ সেখানেই থেকে যান। এভাবে গোপনে দ্রোণ বেশ কিছুকাল কাটান।
....................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers