[পূর্বকথা - পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করে পিতাকে রাজা হরিশচন্দ্রের মত ইন্দ্রের স্বর্গে স্থান করে দিতে চায় ......অর্জুন, ভীম ও সহদেব সে কারণে দ্বিগ্বিজয় যাত্রা করেন]
নকুলের দিগ্বিজয়ঃ
পশ্চিমদিকে গেলেন নকুলবীর। সঙ্গে গেল বহু গজ, বাজি(ঘোড়া), রথ, রথী ও পদাতিক। তাদের সিংহনাদ, শঙ্খনাদ, ধনুকের টঙ্কার, রথের নির্ঘোষে(প্রচন্ড শব্দ) সংসার স্তব্ধ হল।
প্রথমে তার সাথে রোহিতক দেশের রাজার যুদ্ধ হল। এই রাজার সমর-সখা হলেন ময়ূরবাহন। ফলে তার সৈন্যবাহিনী শিখী(ময়ূর)পূর্ণ। নকুলের সাথে তাদের অপ্রমিত যুদ্ধ হল, যেন নকুল(নেউল/বেজি)-ভুজঙ্গের(সাপ) যুদ্ধ। নকুল বায়ু অবতার অস্ত্র হানলেন। মহাবজ্রাঘাত শব্দে শিখীরা আতঙ্কিত হল। অনল অস্ত্রে বীর নকুল শিখীদের পাখা পোড়ালেন। ভয়ে শিখীরা রাজাকে একা ফেলে পালাল। রাজাও ভয়ে প্রচুর কর এনে দান করলেন।
সেখান থেকে নকুলবীর মালব, শিরীষ/শৈরীষক, শিবি, বর্বর পুষ্কর প্রভৃতি দেশের রাজাদের জয় করলেন।
পশ্চিম দিগন্তে সিন্ধুনদীকূলে নকুল উপস্থিত হলেন। সরস্বতী তটে যত রাজারা আছে সকলে মাদ্রীপুত্রের বশ্যতা মানল।
খরক, কন্টক আর পঞ্চনদ দেশ জিতে নকুল সৌতিকপুরে প্রবেশ করলেন।
বৃন্দারক, দ্বারপাল নরপতি, প্রতিবিন্ধ্য রাজা প্রমুখদের কাছে দূত পাঠিয়ে কর আদায় হল।
তারপর দ্বারকানগরে দূত গেল। সব শুনে দেবকীপুত্র কৃষ্ণ খুব সুখি হলেন।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা কৃষ্ণ শিরোধার্য করে শকট(রথ) ভর্তি করে কর পাঠালেন।
এভাবে একে একে বহু দেশ জয় করতে করতে নকুল মাতুলালয় মদ্রদেশে এলেন।শল্য নরপতি সে খবর শুনে ভাগ্নেকে আদর করে এনে বহু উপহার দিলেন। এভাবে সেখান থেকে কর নিয়ে নকুল সমুদ্রতীরে ম্লেচ্ছদেশে গেলেন। সেখানে দারুন দুর্দান্ত সব যবনের বাস। তাদের সবাইকে জয় করে সেখান থেকেও বহু ধন পেলেন। সেখানে যত রাজারা ছিল সকলকে নকুল অনায়াসে জয় করলেন।
এভাবে বহু ধন নিয়ে মহামতি নকুল ইন্দ্রপ্রস্থে প্রত্যাবর্তন করতে লাগলেন। সঙ্গে বহু ধন, মত্ত হাতির দল চলল। ‘জয় জয় বীর’ কোলাহলের মধ্যেই চতুরঙ্গ দল নিয়ে তিনি রাজ্যে প্রবেশ করলেন।
বিভিন্ন দেশ থেকে যত ধন পেয়েছিলেন নকুল সব ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে নিবেদন করলেন।
সব কিছু ভাণ্ডারে সঞ্চিত করে তিনি নিজ আলয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেন।
পান্ডব বিজয়-কথা যে যন শুনেন, তার জয় হয়ে থাকে সর্বত্র গমনে।
সভাপর্ব সুধারস বেদব্যাস বিরচিলেন, কাশীরাম দাস তাই কহেন সঙ্গীতের মাধ্যমে।
........................
যুধিষ্ঠিরের রাজ্য-বর্ণনঃ
এভাবে সকল পৃথিবীর সকল রাজারা কর প্রদান করলে ধর্মরায় যুধিষ্ঠির পরমানন্দে যজ্ঞের আয়োজন করতে লাগলেন। এই সত্যপ্রিয় ধর্মের রক্ষক, প্রজা পালক দুষ্ট চোর এবং বৈরী(শত্রু)দের উচিত দন্ড দিতেও পারদর্শী। যজ্ঞ এবং নানা মহোৎসবে দেশ মেতে উঠল। এমন কি সেই সময় অনুসারে জীমূত(মেঘ) বর্ষণ ঘটায়। গবীরাও প্রচুর দুগ্ধ দেয়, শস্য ফলে চতুর্গুণ।
এই স্বপ্নের রাজ্যের মানুষরা যেন প্রতিকুলের রূপই ভুলেছে। ব্যাধিভয়, অগ্নিভয় এই রাজ্য থেকে পালিয়েছে। কারণ ধর্মপুত্র স্বয়ং ধর্মের রূপ নিয়ে রাজ্য শাসন করছেন। ধন্য ধান্যে সংসার পূর্ণ হল। চারদিকে ধন্য ধন্য ধ্বনি উচ্চারিত হতে লাগল। অক্ষয় অব্যয় ধন দেখে সকলে মোহিত হল।
যুধিষ্ঠিরের ভাইরা, মন্ত্রী, সুহৃদ বন্ধুরা সকলে এবার যজ্ঞ শুরুর অনুরোধ করলেন। পৃথিবীর সকল রাজারা এত ধন ও গবী উপহার দিয়েছে যে গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। এখন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের অসাধ্য কিছুই নেই। সময়ে কাজ করে নেওয়া উচিত।
এতসব পরামর্শ শুনতে শুনতে রাজা কৃষ্ণের কথা ভাবতে লাগলেন। তখন স্বয়ং কৃষ্ণ সনাতন সেখানে উপস্থিত হলেন।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন শুনেন পুণ্যবান।
.....................
ইন্দ্রপ্রস্থে শ্রীকৃষ্ণের আগমনঃ
শরতের পদ্মের কলির মত অরুণ যুগল নেত্র, শ্রুতিমূলে মকর কুণ্ডল, বিকশিত মুখপদ্ম-যেন কোটি সুধাকর পদ্ম, ওষ্ঠাধর অধর মণ্ডল। তনুটি যেন নীলাম্বুজ(নীলপদ্ম), আজানুলম্বিত ভুজ(হাত)-ইনিই ঘোরতর তিমির বিনাশক কৃষ্ণ।
মস্তকে তার মুকুট শোভে, যেন শত দিবাকর(সূর্য) প্রভা। কনক(সোনা)-বরণ পীতবাস(হলুদবস্ত্র)।
তার যুগলপদ যেন কোকনদ(লালপদ্ম)-যা অখিল ভুবনকে অভয় দেয়, যায় স্মরণে ভবের সকল বিঘ্ন খন্ডিত হয়। যে পদ অহর্নিশ ধ্যান করছেন অজ(অজর অমর) ঈশ(ঈশ্বর), শুকদেব(ব্যাসদেবের ব্রহ্মচারী পুত্র), ধ্রুব(রাজা উত্তানপাদের হরিভক্ত পুত্র), নারদমুনি, প্রহ্লাদ(দানবরাজ হিরণ্যকশিপুর হরিভক্ত পুত্র) প্রমুখ। এই পাদপদ্মেই মোক্ষ মেলে।
যার থেকে সুরনদীর(দেবনদী/গঙ্গা) জন্ম এবং যিনি তিনলোকের পরিত্রাতা। যার পদচিহ্ন পেয়ে অনন্তনাগ অভয় হলেন।
ইনি বক্র, বক, কেশী, কংস, কালীয় সকলের দর্প ধ্বংস করেন।
নিজের ভক্তের ইনি রক্ষক।
পাণ্ডবদের বন্ধু, যিনি নিজরূপে অখিল সৃজন করেন –সেই কৃষ্ণ গরুড়ধ্বজে চড়ে অগণিত অশ্ব-গজ-চতুরঙ্গ-যদুদের নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে উপস্থিত হলেন।
ধর্মরাজের জন্য অনেক রত্ন সঙ্গে আনলেন। তার আগমনে চারদিক আনন্দ মুখর হয়ে উঠল। পাঞ্চজন্য বেজে উঠলেই ইন্দ্রপ্রস্থে সকলে বুঝলেন হরি উপস্থিত হয়েছেন।
কৃষ্ণের আগমন বার্তা পেয়ে যুধিষ্ঠির ব্যস্ত হয়ে ভাইদের ও মন্ত্রীদের কৃষ্ণকে অভ্যর্থনার জন্য পাঠালেন। ভীমপার্থ অনুব্রজি(অভ্যর্থনা) গোবিন্দে ষড়ঙ্গে(ছয় অঙ্গ-মস্তক, দুইহাত, দুইপদ ও কোমর) পূজে রাজপুরীতে নিয়ে চললেন।
ধর্মপুত্রকে দেখে শ্রীকৃষ্ণ দুর থেকেই ভুমিতে লুটিয়ে তাকে প্রণাম জানালেন। অসংখ্য অমূল্য ধন, অশ্ব, গজ, শৃঙ্গী(বৃক্ষ) অগণিত বিতরণ করলেন।
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরও আনন্দিত হয়ে কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করে বহু পূজা করলেন।
পঞ্চপাণ্ডবদের মাঝে কৃষ্ণ যেন দ্বিজরাজ। সভার সর্বজন দুচোখ ভরে তাদের দেখে।
গোবিন্দের পাশে বসে যুধিষ্ঠির মৃদু ভাষে বিনয়ের সাথে বলেন –আপনার অনুগ্রহে আমি এ ভারতভূমণ্ডল জয় করতে সক্ষম হলাম। আমি না চাইতেই এত সম্পদ পেয়েছি যে রাখার স্থান নেই। আপনার অনুমতি পেলে সব দ্বিজ-ব্রাহ্মণদের দান করতে চাই। আমি স্বর্গ কামনা করি না, কেবল আপনার পদাম্বুজ ভিক্ষা চাই। পিতার আজ্ঞা পালনের জন্য আপনার অনুমতি চাই।
হে প্রভূ, আপনার মুখাম্বুজে শুনতে চাই আমি কিভাবে যজ্ঞের দীক্ষা নেব। আপনি আজ্ঞা দিলে সকল রাজাদের নিমন্ত্রণ পাঠাই।
রাজার বিনয়বাক্য শুনে কোমল গভীর বাণীতে গঙ্গাধর আশ্বাস দিয়ে বলেন –এ জগতে যত রাজা আছেন সকলে আপনার গুণেই আপনার বশে এসেছেন। আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনার যজ্ঞ আমিও দেখতে পাব। আপনি নিষ্কণ্টক মনে যজ্ঞ শুরু করুন।
আমায় আপনি আজ্ঞা করুন, আমার দ্বারা যা যা করা সম্ভব তাই আমি করব। আমার সাথে সকল যদুরাও আছেন একাজে। ভাই, মন্ত্রী, বন্ধু যার যা কাজ সেখানে তাদের নিয়োগ করুন।
গোবিন্দের আজ্ঞা পেয়ে ভূপতি যুধিষ্ঠির সানন্দে তাকে কৃতাজ্ঞলি স্তব করে বলেন –আপনি আসতেই আমি বুঝে গেছি আমার মন বাঞ্ছা এবার পূর্ণ হবে। আপনাতেই প্রভূ ভক্তি ঋদ্ধি(সমৃদ্ধি)। হে প্রভূ, ভক্তের মনের বাঞ্ছা সিদ্ধি করুন, আপনিই যে ভক্তজনে কৃপাবান।
কাশীদাস বলেন যদি তরিবে এই ভবনদী ভজনা করুন সাধুজন দেব ভগবানে।
......................................
নকুলের দিগ্বিজয়ঃ
পশ্চিমদিকে গেলেন নকুলবীর। সঙ্গে গেল বহু গজ, বাজি(ঘোড়া), রথ, রথী ও পদাতিক। তাদের সিংহনাদ, শঙ্খনাদ, ধনুকের টঙ্কার, রথের নির্ঘোষে(প্রচন্ড শব্দ) সংসার স্তব্ধ হল।
প্রথমে তার সাথে রোহিতক দেশের রাজার যুদ্ধ হল। এই রাজার সমর-সখা হলেন ময়ূরবাহন। ফলে তার সৈন্যবাহিনী শিখী(ময়ূর)পূর্ণ। নকুলের সাথে তাদের অপ্রমিত যুদ্ধ হল, যেন নকুল(নেউল/বেজি)-ভুজঙ্গের(সাপ) যুদ্ধ। নকুল বায়ু অবতার অস্ত্র হানলেন। মহাবজ্রাঘাত শব্দে শিখীরা আতঙ্কিত হল। অনল অস্ত্রে বীর নকুল শিখীদের পাখা পোড়ালেন। ভয়ে শিখীরা রাজাকে একা ফেলে পালাল। রাজাও ভয়ে প্রচুর কর এনে দান করলেন।
সেখান থেকে নকুলবীর মালব, শিরীষ/শৈরীষক, শিবি, বর্বর পুষ্কর প্রভৃতি দেশের রাজাদের জয় করলেন।
পশ্চিম দিগন্তে সিন্ধুনদীকূলে নকুল উপস্থিত হলেন। সরস্বতী তটে যত রাজারা আছে সকলে মাদ্রীপুত্রের বশ্যতা মানল।
খরক, কন্টক আর পঞ্চনদ দেশ জিতে নকুল সৌতিকপুরে প্রবেশ করলেন।
বৃন্দারক, দ্বারপাল নরপতি, প্রতিবিন্ধ্য রাজা প্রমুখদের কাছে দূত পাঠিয়ে কর আদায় হল।
তারপর দ্বারকানগরে দূত গেল। সব শুনে দেবকীপুত্র কৃষ্ণ খুব সুখি হলেন।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা কৃষ্ণ শিরোধার্য করে শকট(রথ) ভর্তি করে কর পাঠালেন।
এভাবে একে একে বহু দেশ জয় করতে করতে নকুল মাতুলালয় মদ্রদেশে এলেন।শল্য নরপতি সে খবর শুনে ভাগ্নেকে আদর করে এনে বহু উপহার দিলেন। এভাবে সেখান থেকে কর নিয়ে নকুল সমুদ্রতীরে ম্লেচ্ছদেশে গেলেন। সেখানে দারুন দুর্দান্ত সব যবনের বাস। তাদের সবাইকে জয় করে সেখান থেকেও বহু ধন পেলেন। সেখানে যত রাজারা ছিল সকলকে নকুল অনায়াসে জয় করলেন।
এভাবে বহু ধন নিয়ে মহামতি নকুল ইন্দ্রপ্রস্থে প্রত্যাবর্তন করতে লাগলেন। সঙ্গে বহু ধন, মত্ত হাতির দল চলল। ‘জয় জয় বীর’ কোলাহলের মধ্যেই চতুরঙ্গ দল নিয়ে তিনি রাজ্যে প্রবেশ করলেন।
বিভিন্ন দেশ থেকে যত ধন পেয়েছিলেন নকুল সব ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে নিবেদন করলেন।
সব কিছু ভাণ্ডারে সঞ্চিত করে তিনি নিজ আলয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেন।
পান্ডব বিজয়-কথা যে যন শুনেন, তার জয় হয়ে থাকে সর্বত্র গমনে।
সভাপর্ব সুধারস বেদব্যাস বিরচিলেন, কাশীরাম দাস তাই কহেন সঙ্গীতের মাধ্যমে।
........................
যুধিষ্ঠিরের রাজ্য-বর্ণনঃ
এভাবে সকল পৃথিবীর সকল রাজারা কর প্রদান করলে ধর্মরায় যুধিষ্ঠির পরমানন্দে যজ্ঞের আয়োজন করতে লাগলেন। এই সত্যপ্রিয় ধর্মের রক্ষক, প্রজা পালক দুষ্ট চোর এবং বৈরী(শত্রু)দের উচিত দন্ড দিতেও পারদর্শী। যজ্ঞ এবং নানা মহোৎসবে দেশ মেতে উঠল। এমন কি সেই সময় অনুসারে জীমূত(মেঘ) বর্ষণ ঘটায়। গবীরাও প্রচুর দুগ্ধ দেয়, শস্য ফলে চতুর্গুণ।
এই স্বপ্নের রাজ্যের মানুষরা যেন প্রতিকুলের রূপই ভুলেছে। ব্যাধিভয়, অগ্নিভয় এই রাজ্য থেকে পালিয়েছে। কারণ ধর্মপুত্র স্বয়ং ধর্মের রূপ নিয়ে রাজ্য শাসন করছেন। ধন্য ধান্যে সংসার পূর্ণ হল। চারদিকে ধন্য ধন্য ধ্বনি উচ্চারিত হতে লাগল। অক্ষয় অব্যয় ধন দেখে সকলে মোহিত হল।
যুধিষ্ঠিরের ভাইরা, মন্ত্রী, সুহৃদ বন্ধুরা সকলে এবার যজ্ঞ শুরুর অনুরোধ করলেন। পৃথিবীর সকল রাজারা এত ধন ও গবী উপহার দিয়েছে যে গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। এখন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের অসাধ্য কিছুই নেই। সময়ে কাজ করে নেওয়া উচিত।
এতসব পরামর্শ শুনতে শুনতে রাজা কৃষ্ণের কথা ভাবতে লাগলেন। তখন স্বয়ং কৃষ্ণ সনাতন সেখানে উপস্থিত হলেন।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন শুনেন পুণ্যবান।
.....................
ইন্দ্রপ্রস্থে শ্রীকৃষ্ণের আগমনঃ
শরতের পদ্মের কলির মত অরুণ যুগল নেত্র, শ্রুতিমূলে মকর কুণ্ডল, বিকশিত মুখপদ্ম-যেন কোটি সুধাকর পদ্ম, ওষ্ঠাধর অধর মণ্ডল। তনুটি যেন নীলাম্বুজ(নীলপদ্ম), আজানুলম্বিত ভুজ(হাত)-ইনিই ঘোরতর তিমির বিনাশক কৃষ্ণ।
মস্তকে তার মুকুট শোভে, যেন শত দিবাকর(সূর্য) প্রভা। কনক(সোনা)-বরণ পীতবাস(হলুদবস্ত্র)।
তার যুগলপদ যেন কোকনদ(লালপদ্ম)-যা অখিল ভুবনকে অভয় দেয়, যায় স্মরণে ভবের সকল বিঘ্ন খন্ডিত হয়। যে পদ অহর্নিশ ধ্যান করছেন অজ(অজর অমর) ঈশ(ঈশ্বর), শুকদেব(ব্যাসদেবের ব্রহ্মচারী পুত্র), ধ্রুব(রাজা উত্তানপাদের হরিভক্ত পুত্র), নারদমুনি, প্রহ্লাদ(দানবরাজ হিরণ্যকশিপুর হরিভক্ত পুত্র) প্রমুখ। এই পাদপদ্মেই মোক্ষ মেলে।
যার থেকে সুরনদীর(দেবনদী/গঙ্গা) জন্ম এবং যিনি তিনলোকের পরিত্রাতা। যার পদচিহ্ন পেয়ে অনন্তনাগ অভয় হলেন।
ইনি বক্র, বক, কেশী, কংস, কালীয় সকলের দর্প ধ্বংস করেন।
নিজের ভক্তের ইনি রক্ষক।
পাণ্ডবদের বন্ধু, যিনি নিজরূপে অখিল সৃজন করেন –সেই কৃষ্ণ গরুড়ধ্বজে চড়ে অগণিত অশ্ব-গজ-চতুরঙ্গ-যদুদের নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে উপস্থিত হলেন।
ধর্মরাজের জন্য অনেক রত্ন সঙ্গে আনলেন। তার আগমনে চারদিক আনন্দ মুখর হয়ে উঠল। পাঞ্চজন্য বেজে উঠলেই ইন্দ্রপ্রস্থে সকলে বুঝলেন হরি উপস্থিত হয়েছেন।
কৃষ্ণের আগমন বার্তা পেয়ে যুধিষ্ঠির ব্যস্ত হয়ে ভাইদের ও মন্ত্রীদের কৃষ্ণকে অভ্যর্থনার জন্য পাঠালেন। ভীমপার্থ অনুব্রজি(অভ্যর্থনা) গোবিন্দে ষড়ঙ্গে(ছয় অঙ্গ-মস্তক, দুইহাত, দুইপদ ও কোমর) পূজে রাজপুরীতে নিয়ে চললেন।
ধর্মপুত্রকে দেখে শ্রীকৃষ্ণ দুর থেকেই ভুমিতে লুটিয়ে তাকে প্রণাম জানালেন। অসংখ্য অমূল্য ধন, অশ্ব, গজ, শৃঙ্গী(বৃক্ষ) অগণিত বিতরণ করলেন।
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরও আনন্দিত হয়ে কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করে বহু পূজা করলেন।
পঞ্চপাণ্ডবদের মাঝে কৃষ্ণ যেন দ্বিজরাজ। সভার সর্বজন দুচোখ ভরে তাদের দেখে।
গোবিন্দের পাশে বসে যুধিষ্ঠির মৃদু ভাষে বিনয়ের সাথে বলেন –আপনার অনুগ্রহে আমি এ ভারতভূমণ্ডল জয় করতে সক্ষম হলাম। আমি না চাইতেই এত সম্পদ পেয়েছি যে রাখার স্থান নেই। আপনার অনুমতি পেলে সব দ্বিজ-ব্রাহ্মণদের দান করতে চাই। আমি স্বর্গ কামনা করি না, কেবল আপনার পদাম্বুজ ভিক্ষা চাই। পিতার আজ্ঞা পালনের জন্য আপনার অনুমতি চাই।
হে প্রভূ, আপনার মুখাম্বুজে শুনতে চাই আমি কিভাবে যজ্ঞের দীক্ষা নেব। আপনি আজ্ঞা দিলে সকল রাজাদের নিমন্ত্রণ পাঠাই।
রাজার বিনয়বাক্য শুনে কোমল গভীর বাণীতে গঙ্গাধর আশ্বাস দিয়ে বলেন –এ জগতে যত রাজা আছেন সকলে আপনার গুণেই আপনার বশে এসেছেন। আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনার যজ্ঞ আমিও দেখতে পাব। আপনি নিষ্কণ্টক মনে যজ্ঞ শুরু করুন।
আমায় আপনি আজ্ঞা করুন, আমার দ্বারা যা যা করা সম্ভব তাই আমি করব। আমার সাথে সকল যদুরাও আছেন একাজে। ভাই, মন্ত্রী, বন্ধু যার যা কাজ সেখানে তাদের নিয়োগ করুন।
গোবিন্দের আজ্ঞা পেয়ে ভূপতি যুধিষ্ঠির সানন্দে তাকে কৃতাজ্ঞলি স্তব করে বলেন –আপনি আসতেই আমি বুঝে গেছি আমার মন বাঞ্ছা এবার পূর্ণ হবে। আপনাতেই প্রভূ ভক্তি ঋদ্ধি(সমৃদ্ধি)। হে প্রভূ, ভক্তের মনের বাঞ্ছা সিদ্ধি করুন, আপনিই যে ভক্তজনে কৃপাবান।
কাশীদাস বলেন যদি তরিবে এই ভবনদী ভজনা করুন সাধুজন দেব ভগবানে।
......................................