Blog Archive

Sunday, December 6, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৪

[পূর্বকথা - কৃষ্ণের কথা মত অর্জুন সরস্বতীর তীর থেকে সুভদ্রাকে হরণ করলেন...যদুবীররা ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল ... সুভদ্রা অর্জুনের সারথি হলেন...যদুবীররা পরাস্ত হতে লাগল .. ] 

বলরামের নিকট অর্জ্জুনের রণজয় সংবাদঃ



বলরাম যখন সসৈন্যে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন, তখন দূত এসে তাকে প্রণাম জানাল। 
সে উর্দ্ধশ্বাসে কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে –হে প্রভু! আর অর্জুনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা নেই। তাঁর উপর সুভদ্রা রথ চালাচ্ছেন। তারা কখনও মেঘে লুকায়, কখনওবা শূন্য মাঝে। খঞ্জন পাখির মত যেন নাচ করছে। সৈন্যদের মধ্যে দিয়ে ঘন ঘন ফণির মত চলে। সৈন্যদের ঘন ঘন প্রদক্ষিণ করে, যেমন মৎস জলে চরে। ডানদিকে, বামদিকে রথ বায়ুবেগে ছুটে, কখনও মাটিতে কখনওবা সূর্যমণ্ডলে ওঠে। 
সৈন্যদের সাথে অর্জুন যুদ্ধ করলেও, সে যে কোথায় কেউ বুঝতেই পারছে না। নানাবর্ণে ধনঞ্জয় অস্ত্র বর্ষণ করছেন। অগ্নি অস্ত্রে কোথাও দাবানল দেখা দিল। কোনখানে সৈন্য মাঝে বায়ু অস্ত্র মারছেন। কোথাও বা ভুজঙ্গ(সর্প) অস্ত্র মারলেন। কোনখানে জল-বৃষ্টি-শীতে তনু কাঁপে। কোথাওবা শর জালে ভানু(সূর্য) ঢেকে দেন। অর্জুনই সবাইকে মেরে যাচ্ছেন। কেউ তাঁকে ছুঁতেও পারছে না। কত যে সৈন্য মরছে, তা কেউ বলতে পারবে না। 
তাঁর এই যুদ্ধ দেখে সকলেই চমৎকৃত। সকল কুমাররা মিলে আমায় দূত করে বার্তা পাঠাল। 

মুষলী(বলরাম) দূতে বলেন –সত্য করে বল। অর্জুন এমন তুরগ রথ কোথায় পেল! 

দূত বলে –হে যাদবেন্দ্র(বলরাম), বলতে ভয় হয়। গোবিন্দের রথ, সুগ্রীবাদি ঘোড়া [কৃষ্ণের রথের চারটি ঘোড়া। শৈব্য-গায়ের রং সবুজাভ হরিতাভ, সুগ্রীব-স্বর্ণাভ তুষারসদ বর্ণ, মেঘপুষ্প-নীলাভ নবীন জলধরের মত এবং বলাহক-ভস্মবর্ণ] দেখলাম। 
সারথি দারুককে দেখলাম বাঁধা অবস্থায় রথে বসে আছেন। 
সুভদ্রাকে দেখলাম সারথি হয়ে রথ চালাচ্ছেন। 

দূত মুখে এত কথা শুনে বলরাম মাটিতে মাথা হেঁট করে বসে পরলেন। অভিমানে তাঁর চোখ দিয়ে জল বইতে থাকল। তাঁর অঙ্গের কস্তূরী গন্ধে চারদিক আমোদিত হয়ে উঠল। সর্বাঙ্গ বয়ে তাঁর কালঘাম বইতে থাকে। 
যদুবীরদের দিকে তাকিয়ে বলরাম বলেন –গোবিন্দ দেখছি আমায় অপমান করছে। নিজের সারথি ও ঘোড়া সহ রথ অর্জুনকে দিল। অর্জুনের কি শক্তি যে এমন কাজ করতে পারে! না বুঝে আমি অর্জুনকে দোষি মনে করেছিলাম। আমার সামনে মিথ্যে কথা বলল! এখন আমার সামনে আসবে কিভাবে তাই ভাবছে।
দুর্যোধনকে বিবাহ কারণে ডেকে পাঠালাম। অধিবাস অনুষ্ঠানের জন্য ব্রাহ্মণরা বসে আছেন! 

এতসব বলে বলরাম অধোমুখে বসে রইলেন। সেই সময় নবঘনশ্যাম কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হলেন। ভূমিতে পরে বলরামকে প্রণাম করলেন। ক্রোধে বলরাম তাঁর দিকে তাকালেন না। 

গোবিন্দ বলেন –হে স্বামী(প্রভু), রাগ কেন করছেন! আপনার পদতলে আমি কোন অপরাধ করলাম! 

উগ্রসেন(বলরাম) বলেন –তুমি বড়ই কুকর্ম করেছ। তুমি পার্থকে ভদ্রা হরণ করতে বলেছ। সে কারণেই নিজের রথ, সারথি ও তুরঙ্গ(ঘোড়া) দিয়েছ। তোমাকে দোষ দেব না তো আর কাকে দোষ দেব! 

গোবিন্দ বলেন –সবাই জানেন সেই রথে পার্থ ভ্রমণ করতেন। আমি কি ভাবে জানব সে ভদ্রা হরণ করবে! নরমায়া বুঝতে আমি পারি না। প্রভু অকারণে আমার উপর আক্রোশ করছেন। সুভদ্রা যদি নিজেই রথ চালাতে চান, দারুকের তাতে কি দোষ! 
হে দূত সত্য করে বল দারুক সে রথে কি করছিল! 

দূত বলে –দারুক নিজের বশে নেই। পার্থ তাকে বেঁধে রেখেছেন। 

শ্রীকৃষ্ণ বলেন –যাদবরা সকলে শুনুন আমার কথা অনুভব করুন। 

আদিপর্ব মহাভারতের বিচিত্র উপাখ্যান, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers