Blog Archive

Monday, November 9, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১০

[পূর্বকথা - সুভদ্রার ইচ্ছে রাখতে সত্যভামা কৌশলে তার গন্ধর্ব বিবাহ দিলেন অর্জুনের সাথে ... কৃষ্ণ সভায় অর্জুনকে সুভদ্রার জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলে বলরাম ক্রুদ্ধ হল, তিনি দুর্যোধনকে পাত্র ঠিক করলেন ... দুর্যোধনের কন্যার সাথে কৃষ্ণের পুত্রের বিবাহ প্রসঙ্গ উঠল...দুর্যোধনের কন্যা লক্ষণার স্বয়ম্বর হলে, কৃষ্ণ পুত্র শাম্ব তাকে হরণ করেন...কর্ণের সাহায্যে তাকে বন্দি করা হয়...নারদের মুখে পুত্রের দুর্দশার সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ ক্রোধে যুদ্ধে যাত্রা করতে গেলে বলরাম তাকে নিরস্ত করে নিজে যান…কিন্তু দুর্যোধন শাম্বকে ছাড়তে না চাইলে ক্রোধে বলরাম হস্তিনানগর ধ্বংসে উদ্যত হন…তখন দুর্যোধন ভয়ে কন্যা লক্ষণা ও জামাতা শাম্বকে বলরামের হাতে তুলে দেন…]

সুভদ্রা বিবাহ-কারণ সত্যভামার মহাচিন্তা ও হস্তিনায় দূত-প্রেরণঃ


সুভদ্রার সাথে অর্জুন

মুনি বলেন –শুনুন মহারাজ, বলরামের কথা শুনে মা দেবকী ও রোহিণী অত্যন্ত দুঃখী হয়ে অধোমুখে বসে থাকেন। 

দেখে সতী সত্যভামা বলেন –হে ঠাকুরাণী, সর্বনাশ হবে। পার্থকে ভদ্রা সমর্পণ না করলে সে সকলকে মারবে। 

রোহিণি বলেন –কত প্রাণ যাবে তার ঠিক নেই। সুভদ্রার কারণে অনেক হত্যা হবে। এর চেয়ে এখনই ভদ্রার মৃত্যু ভাল ছিল। বিষ খাক, অথবা জলে ডুবে মরুক। তার মৃত্যুতে সব বিপদ কাটবে। আমি তাঁকে নিয়ে জলে ঝাঁপ দেব। 

সংসারে লোকলজ্জা, স্ত্রীহত্যা পাপ এসব ভেবে অস্থির সতী সত্যভামা আবার গোবিন্দের কাছে উপস্থিত হয়ে দেবকী ও রোহিণীর সব কথা বলেন। 

গোবিন্দ বলেন –হে প্রিয়ে, তোমার ভয় কি! এর উপায় আমি বার করব। তুমি দূত পাঠাও ধনঞ্জয়ের কাছে। 

সতী বলেন –এসব দূতের কাজ নয়, আমি নিজেই চললাম। 

এই বলে দেবি একাই পার্থের গৃহে উপস্থিত হলেন। 

সেখানে সুভদ্রার সাথে অর্জুনকে দেখে তিনি বলেন –কি নিশ্চিন্তে পার্থ ভদ্রার সাথে আছ! এদিকে যে কি বিপদ উপস্থিত হয়েছে কিছু যান না। 

পার্থ বলেন –কিসের বিপদ আমার! দেবী আপনার দুই পা যার সহায় তার কোন বিপদ হতে পারে না। 

পার্থকে নিয়ে সতী কৃষ্ণের কাছে উপস্থিত হলেন। 

কৃষ্ণ পার্থের হাত ধরে তাকে পালঙ্কে বসিয়ে বলেন –হে সখা, শুন! পিতার আজ্ঞা দিলেন সুভদ্রা তোমার হাতে সমর্পণের জন্য। কিন্তু লাঙ্গলী বলরাম বলছেন তিনি দুর্যোধনের হাতে ভদ্রাকে দেবেন। সে কারণে দুর্যোধনের কাছে দূতও পাঠান হয়েছে। এখন কি উপায় বার করা যায় বল। 

সব শুনে হেসে কুন্তীপুত্র বলেন –এই কথা ভেবে আপনার এত চিন্তা কেন, সখা! আপনার প্রসাদে আমি ত্রিভুবন জয় করতে পারি। কামপাল বলরামের কত শক্তি দেখি, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। আপনি এত চিন্তা করবেন না। আমি সবার সামনে দিয়ে ভদ্রাকে নিয়ে যাব। যুদ্ধ করতে হলে করব। হলধরও দেখবেন। 

শ্রীকৃষ্ণ বলেন –দ্বন্দ্বে কাজ নেই। তুমি লুকিয়ে ভদ্রাকে নিয়ে চলে যাও। আমার রথে চড়ে ছলনা করে মৃগয়া করতে যাও। পরে আমি ভদ্রাকে স্নানের হেতু পাঠাব। সে সময় তুমি তাকে নিয়ে চলে যাবে। পরে আমি রেবতীরমণ বলরামকে শান্ত করব। 

দেবকীপুত্র কৃষ্ণের সব কথা শুনে অর্জুন সম্মত হয়ে বলেন –হে দেবতা, যা আপনার আজ্ঞা তাই হবে। 

এতসব বিচার বিবেচনা করে দুজনে নিজেদের গৃহে শুতে গেলেন। 

প্রভাতে উঠে স্নানদান করে পার্থ চিন্তিত হলেন –বিপদ উপস্থিত হবে যদি বলরামের সাথে যুদ্ধ হয়। এদিকে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এসব কথা কিছুই জানেন না। 

এতসব ভেবে তিনি ইন্দ্রপ্রস্থে দূত পাঠালেন। 
দূতের হাতে সবিস্তারে সব লিখে জানালেন –হে মহারাজ! কৃষ্ণের ইচ্ছে আমার হাতে সুভদ্রাকে তুলে দেওয়ার। কিন্তু কামপাল বলভদ্র তা চান না। তাই কৃষ্ণ বলছেন ভদ্রাকে লুকিয়ে নিয়ে যেতে। এই কারণে আমি আপনার আজ্ঞা চাইছি। 

সব পড়ে, শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বলে পাঠান –বল ও বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ নারায়ণ কৃষ্ণ সব সময় পাণ্ডবদের প্রিয় সখা। তিনি যে কাজ করতে বলবেন তাই করবে। 

দাদার আজ্ঞা পেয়ে পার্থ মনে মনে আনন্দিত হলেন। এভাবে সাতটি রাত কেটে গেল। 
এদিকে রাজা দুর্যোধনও সকল বার্তা শুনল। পিতা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র ও মাতা গান্ধারী এ সম্বন্ধে আনন্দিত হল। 
অন্য সকলেও খুশি হয়ে ভাবে –কৃষ্ণের ভগ্নীপতি হবে দুর্যোধন! দেশে দেশে তার আরো বন্ধু সংখ্যা বেড়ে যাবে। 
সবাই সেই আনন্দে বিবাহ সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করে, স্থানে স্থানে বসে সে বিষয়ে বিচার বিবেচনা হতে থাকে। 
সবাই বলে –দুর্যোধনকে পাণ্ডবদের আর ভয় পেতে হবে না, আজ থেকে নির্ভয় হল। নারায়ণ কৃষ্ণ সব সময়ই পাণ্ডবদের সহায়। এখন থেকে দুর্যোধনও তাদের আত্মবন্ধু হল। 

দ্রোণাচার্য বলেন –কৃষ্ণ কুটুম্বতায় প্রীত হন না। কৃষ্ণ কেবল ভক্তের হিত করেন। 

বিদুর বলেন –এতো আশ্চর্য কথা বললেন! 

কৃপাচার্য বলেন –একথা মনে হচ্ছে ঠিক নয়। গোবিন্দ কখনই দুর্যোধনের উপর খুশি নন। তিনি এমন সম্বন্ধ করবেন বিশ্বাস হয় না। 

তখন তারা সকলে দূতের কাছে উপস্থিত হয়ে সবিস্তারে সব জানলেন –দ্বারকায় বর্তমানে কুন্তীপুত্র অর্জুন আছেন। অচ্যুত(যিনি নিজ পদ থেকে চ্যুত হন না) কৃষ্ণ তাকেই ভদ্রা দান করতে চান। কিন্তু পান্ডবে অপ্রীত বলরাম পার্থকে ভদ্রা দিতে অস্বীকার করেছেন। রোহিণীকুমার দুর্যোধনকেই ভগ্নী অর্পণ করতে চান। কৃষ্ণ দুর্যোধনকে ভদ্রা দিতে চান না। তাই এখনও কিছু ঠিক হয়নি। পরে কি হয় তাই দেখার। 

ভীষ্ম সব শুনে বলেন –দুর্যোধন গিয়ে লজ্জা পাবে মাত্র। তবে যেই বিয়ে করুক আমরা অবশ্যই বরযাত্রী হব। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম কহেন সদা শুনেন পুণ্যবান।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers