Blog Archive

Sunday, February 7, 2016

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২৩

[পূর্বকথা - সভাপর্বঃ....অগ্নির হাত থেকে রক্ষা করায় কৃতজ্ঞ ময়দানব কৃষ্ণের আদেশে ত্রিলোক বিখ্যাত দিব্য মণিময় সভা নির্মাণ করলেন ইন্দ্রপ্রস্থে........]



যুধিষ্ঠিরের সভায় নারদের আগমন ও জিজ্ঞাসাচ্ছলে বিবিধ উপদেশ প্রদানঃ 

মুনি বৈশ্বম্পায়ন বলেন –হে রাজন শ্রী জন্মেজয় এভাবে পাণ্ডবরা মহাসুখে রাজ্যশাসন করছিলেন। 

একদিন হঠাৎ শ্রী নারদমুনি উপস্থিত হলেন। তাঁর সর্বত্র গমনের অধিকার। ইনি ধ্যান ও জ্ঞানের অধিকারী, অমর দেবতা ও অসুরদেরও পূজ্য। এনার জিহ্বাগ্রে চতুর্বেদ বসেন।

ব্রহ্মার অঙ্গে এঁনার জন্ম এবং সকল ব্রহ্ম কর্মের ইনি বিজ্ঞ। সমগ্র ব্রহ্মান্ড ইনি অনায়াসে ভ্রমণ করেন। ইনি পরম সত্যের অনুবর্তী। 

কলহযুদ্ধে বিজ্ঞ তাই কলহ লাগিয়ে বড়ই প্রীত হন। 

এঁনার মাথায় পিঙ্গল(রক্তবর্ণ) জটা, ললাটে পিঙ্গল ফোঁটা, কর্ণে সিত(সাদা) কুণ্ডল। হাতে বীণা নিয়ে সর্বক্ষণ হরিনাম জপেন। জল ভরা মেঘের মত তাঁর আঁখি। পুলকে কদম্ব পুষ্পের মত অঙ্গ। শরদিন্দু(শরতের চাঁদ) মুখাম্বুজ(অম্বুজ-পদ্ম), আজানুলম্বিত(হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত) ভুজ(হাত), প্রজ্বলিত অনলের(আগুন) দীপ্তি সারা দেহে। পরিধানে কৃষ্ণাজিন(কৃষ্ণসার মৃগের চামড়া)। 

সঙ্গে আরো মুনিদের নিয়ে তিনি পাণ্ডবদের কাছে এলেন। নারদ মুনিকে দেখে সভার সকলে সম্ভ্রমের উঠে দাঁড়াল। শশব্যস্ত হয়ে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভাইরা এগিয়ে এসে মুনিকে প্রণাম করেন। 

যুধিষ্ঠির সুগন্ধি উদক(জল) দিয়ে মুনির পা ধুয়ে তাকে সিংহাসনে বসালেন এবং ভক্তিভরে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে পূজা করলেন।

তখন নারদ স্নেহ স্বরে বলেন – হে রাজন, বলুন কেমন আছেন! আপনার কুলের কৌলীন্য/কুলাচার, ধন উপার্জন কর্ম নির্বিঘ্নে হচ্ছে তো! সাদু, বিজ্ঞ ও অনুরক্ত মন্ত্রীদের কিভাবে পালন করেন। বহু মানুষের সাথে কক্ষনো একসাথে মন্ত্রণা করবেন না। 
যে কোন কার্য্যক্ষেত্রে মুখ্যলোককেই নিয়োগ করবেন। 
রাজ্যে ভক্ষ্য দ্রব্য সামগ্রী ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয় কিনা লক্ষ্য রাখবেন। 
কখনও প্রাপ্যের দক্ষিণা বাকি রাখা উচিত না। 
রাজ্যে বিজ্ঞজন, যোগ্য পুরুষরা, পুরোহিত, দৈবজ্ঞ, জ্যোতিষবিদ, বৈদ্য, চিকিৎসক যথেষ্ঠ আছেন তো! 
অনাথ, অতিথি, ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণদের সর্বদা অন্নদান করবেন। 
রাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন কিনা দেখবেন। তারা সর্বদা যেন আপনার অনুগত থাকেন! 
ধন, ধান্য, উদক, আয়ুধে(অস্ত্র) ভান্ডার পূর্ণ রাখবেন। 
প্রাতকালে নিদ্রাবশ, বিকালে ক্রীড়ারস, আলস্য নিবারণ করেন তো! 
ধর্ম কর্মে ধন ব্যয় করবেন, নিত্য উপচয়(শ্রীবৃদ্ধি) করবেন। 
আশাকরি প্রজাদের পুত্রের সমান পালন করেন। 

এভাবে ব্রহ্মাপুত্র নারদ বিভিন্ন বিষয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছ থেকে সংবাদ নিলেন ও উপদেশ দিলেন। 
সব শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বিনয়ের সাথে মুনিকে প্রণাম করে বলেন –যা কিছু আপনি বললেন আমি সবই যথাসাধ্য পূর্বজ্ঞান মত করার চেষ্টা করি। এখন আপনার কাছ থেকে আরো জ্ঞান আহোরণের আশা করছি। এবং তা সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করব। 
হে তপোধন, আপনার কাছে আমার কিছু নিবেদন আছে। চরাচরের সব কিছু আপনার গোচর। আপনিই বলুন এই সভার মত মনোহর অনুরূপ আর কি দেখেছেন ব্রহ্মাণ্ডে! 

যুধিষ্ঠিরের কথায় নারদমুনি হেসে বলেন – আপনার সভার মত সভা মনুষ্যলোকে আর দেখি নি। তবে ব্রহ্মার সভা-সে বিচিত্র যেন কৈলাসের প্রভা। এছাড়া ইন্দ্র, যম, বরুণের পুরীও আমি দেখেছি। সে সব স্থানের অদ্ভূত কথা আপনাকে বলবো ধর্মরাজ। 

যুধিষ্ঠির সবিনয়ে বলেন –সে সব সভার কথা বলুন, শুনি। 

দিব্যসভাপর্ব কথা, বিচিত্র মহাভারত গাঁথা, শুনলে অধর্ম নাশ হয়। 

গোবিন্দের চরণে সর্বদা অনুক্ষণ মন সমর্পণ করে কাশীরাম দাস এই অপূর্ব কথা রচনা করলেন।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers