Blog Archive

Thursday, July 15, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২

পরীক্ষিতের নিকট তক্ষকের আগমনঃ


সৌতি বললেন ভাল ভাবে শুনুন মুনিগণ –মন্ত্রীরা অনেক উপায় করলেন রাজাকে রক্ষা করার জন্য। কাশ্যপ নামে এক মুনি রাজাকে সাপে কামড়াবে শুনে রাজ দরবারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন-ধন, ধর্ম, যশ পাওয়ার আশায়।

তিনি তাড়াতাড়ি হস্তিনাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। অন্যদিকে তক্ষক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে আসছিলেন। পথে দু’জনের দেখা হল বটগাছের তলায়।
তক্ষক বললো –ব্রাহ্মণ, তুমি কোথা থেকে আসছ, কোথায় বা এত দ্রুত চলেছ!
ব্রাহ্মণ তাকে তার মনের আকাঙ্খার কথা জানালেন। এবং আশা প্রকাশ করলেন তিনি রাজাকে মন্ত্রবলে রক্ষা করতে পারবেন।

তক্ষক তাকে বললো –তুমি অবোধ! কারো শক্তি নেই রাজাকে তক্ষকের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু শুধু লজ্জা পাবে। তার আগেই বাড়ি ফিরে যাও।

তখন ব্রাহ্মণ তাকে বললেন –গুরুমন্ত্রবলে তক্ষকের বিষও আমি তুলতে পারি।

সব শুনে তক্ষক রেগে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল এবং বললো -তুমি কেমন বিষ হরণ করতে পার দেখি! আমি এই গাছটিকে দংশন করবো। দেখি কেমন এটিকে রক্ষা করতে পার।

এই বলে তক্ষক দংশনের মাধ্যমে গাছটিকে ছাই-এ পরিণত করল।

লাফ দিয়ে কাশ্যপ ছাই মুঠিতে ধরে নিলেন এবং মন্ত্রবলে ভষ্ম গর্তে ফেললেন। দেখতে দেখতে সেখানে অঙ্কুর হল, তার দু’টি পাতা থেকে ধিরে ধিরে সেটি বৃক্ষে পরিণত হল। শেষে পূর্বের রূপে ফিরে এলো।

দেখে তক্ষল বিষণ্ণ হল! কাশ্যপকে বিনয়ের সঙ্গে বুঝাতে শুরু করল দৈববাক্য খন্ডান উচিত নয়। ব্রাহ্মণ যে শাপ দেয়, তাকে ভগবানও ভয় পান। তাদের জোর হাতে ভয়ে স্তব করেন। তাদের গালি দিয়েই চাঁদের কলঙ্ক হল, ইন্দ্রের ভগাঙ্গ হল। পৃথিবীতে সবাই সে কারণে তাদের ভয় পায়। তা ব্রহ্মার শাপের বিরোধ করারই সমকক্ষ!

শেষে বললো –তুমি যদি ব্রহ্মার শাপের বিরোধ করতে চাও তবে অবশ্যই সভায় যাও। যশ অর্থাৎ খ্যাতির আশায় গেলে সভায় লজ্জা পাবে। ধনের আশায় গেলে, আমি দেব রাজার রাজ ভান্ডারের থেকেও বেশি।

এতশুনে কাশ্যপ ভাবনায় পরলেন। ভাবলেন তক্ষক ঠিকই বলছে। ব্রহ্মার শাপের বিরোধি হওয়া উচিত নয়। তিনি বুঝলেন রাজার আর আয়ু নেই।
তাই তক্ষকের কথাই মেনে নিয়ে বললেন –আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ! ধন, যশ, ধর্মের আশায় রাজসভায় যাচ্ছিলাম। তুমি যদি তা দাও আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ব্রহ্মার বিরোধ করাও ভয়ের! তুমি যদি ধন দাও তো ফিরে যাই।

এত শুনে তক্ষক কাশ্যপকে এক মণি দিলেন, যার পরশে লোহা সোনা হয়। হৃষ্ট চিত্তে ব্রাহ্মণ বাড়ি ফিরে গেলেন। তক্ষকের চিন্তাও দুর হল।

এদিকে রাজ্যে বিভিন্ন কথা শোনা গেল। রাজা উচ্চস্থানে অবস্থান করছেন। তাকে তক্ষক কখনও কামড়াতে পারবে না, সবাই ধরে নিল। এছাড়া তক্ষক বিষ ঢাললেই গুণিরা নানান মহৌষধি দেবেন। তারা মন্ত্রবলে মৃত্যুর পথ রোধ করবেন।

সব শুনে কদ্রুপুত্র তক্ষক চিন্তিত হলেন। রাজার সাথে ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারো সাক্ষাৎ করান হচ্ছে না শুনে, তক্ষক অনুচর সাপদেরও ব্রাহ্মণের বেশ ধরতে বললো।
আরো বললো -ব্রাহ্মণের বেশে রাজাকে আশির্বাদ করে এই ফলমূলগুলি তার হাতে দেবে। তাড়াতাড়ি ফিরবে না, ধিরে ধিরে ফিরবে। কেউ যেন চিনতে না পারে। এই বলে সেই ফলের মধ্যে তক্ষক প্রবেশ করল।

সকল অনুচর নাগ ব্রাহ্মণের মূর্তি ধরে সেই ফল ও নানা ফুল হাতে নিয়ে যে মঞ্চে রাজা বসে আছেন সেখানে গেল। আনন্দের সাথে রাজা ফলমূল নিলেন। ব্রাহ্মণবেশী সাপেরা তাকে আশির্বাদ করল।

খুঁত ফল দেখে রাজা নখ দিয়ে তা খুঁটলেন। দেখলেন ছোট্ট একটি কীট। তার বর্ণ লাল এবং মুখ তার কৃষ্ণবর্ণ।



এই সময় রাজা মন্ত্রিদের বললেন –আজ ব্রহ্মশাপের সাতদিন শেষ হতে চললো, অথচ ব্রহ্মশাপ ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে এ জন্য আমার মন আশঙ্কিত।
ব্রাহ্মণের শাপ সফল হোক। এই মুহূর্তে এই কীট তক্ষকের রূপ ধারণ করুক, এবং আমায় দংশন করুক। এই বলে রাজা কীটটিকে মস্তকে ধারণ করলেন।

সব দেখে মন্ত্রীরা ‘নাঃ, নাঃ!’ করে উঠলেন।

এভাবে যখন বাকবিতন্ডা চলছে তখন তক্ষক নিজ মূর্তি ধরল। প্রলয়ের মেঘ যেন গর্জন শুরু করল। তা শুনে সব মন্তীরা পালাল। ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে সবাই ভয়ে কেঁপে উঠল। তক্ষক তখন তার ল্যাজ দিয়ে রাজাকে জড়াতে শুরু করেছে। সহস্র ফণা ছাতার মত তুলে রাজার ব্রহ্মতালু শব্দ করে দংশন করল। রাজাকে দংশন করেই সে আকাশে উড়ে গেল। সবাই আকাশে রক্তপদ্মের আভা তনু দেখল।

এদিকে বিষের আগুনে রাজাসহ মঞ্চ জ্বলছে! মন্ত্রীরা হাহাকার করছে! অন্তপুরেও কান্নাকাটি শুরু হল। তারপর বিধিমত রাজার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা হল। প্রজাবৎসল রাজা স্বর্গে গেলেন।

মন্ত্রী এবং প্রজারা পরামর্শ করে তার পুত্র জন্মেজয়কে রাজা করলেন। বালক হলেও জন্মেজয় বুদ্ধিমান। তার বিক্রমে দুষ্টেরা শান্ত। মন্ত্রীরা তার প্রশংসা করতে লাগল।

কাশী রাজকন্যা বপুষ্টমার সঙ্গে তার বিবাহ হল। রাজকন্যা অনেক রত্ন সঙ্গে আনলেন।

জন্মেজয় তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসতেন। এক পত্নী ছাড়া তার এখন আর অন্য কিছুতে মন নেই-উর্বশীর সঙ্গে যেন বুধের নন্দন!

নাগেদের চরিত্র এবং কাশ্যপের কর্ম। পরীক্ষিতের স্বর্গবাস এবং জন্মেজয়ের জন্ম-এসব রহস্যকথা শুনে যারা। তাদের বংশবৃদ্ধি, ধনবৃদ্ধি এবং হরিপদে চিরদিন মন থাকে। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলেন –এ অংশ শুনলে স্ববাঞ্ছিত ফল পাওয়া যায়, সর্ব পাপ মুক্ত হয়ে পুণ্যের প্রকাশ ঘটে।
..........................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers