Blog Archive

Thursday, June 24, 2010

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭

নাগগণের প্রতি কদ্রুর অভিসম্পাত ও বিনতার দাসীত্বের বিবরণ:

শৌনকাদি মুনিদের অনুরোধে সৌতি পুনরায় কদ্রু ও বিনতার প্রসঙ্গে আসেন।

উচ্চৈঃশ্রবা

সৌতি বলেন -কদ্রু ও বিনতা একদিন সুলক্ষণ যুক্ত একটি সুন্দর ঘোড়া দেখলেন।

কদ্রু বলেন –বিনতা, অশ্বটিকে দেখে বলত তার বর্ণ কি রূপ!

বিনতা বললেন –অশ্বটি শ্বেতবর্ণের। তিনি কদ্রুকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কোন বর্ণের দেখেছেন!

উত্তরে কদ্রু বলেন –কৃষ্ণবর্ণের।

দুজনের এরপর কলহ লাগে। তখন দু’জনে প্রতিজ্ঞা করলেন যার কথা মিথ্যা হবে সে অন্যজনের দাসী হয়ে থাকবেন। এই বলে দু’জনে ঘরে চলে গেলেন। ঠিক হল যেহেতু সূর্য অস্ত যাচ্ছেন, তাই পরেরদিন দু’জনে দিনের আলোয় ঘোড়াটি দেখবেন।

ঘরে গিয়ে কদ্রু তার সহস্র পুত্রকে ডাকলেন। পুত্রদের সব কথা জানালেন।
পুত্রেরা বললেন -কি করলে মা! সাদাবর্ণের বলেইতো ঘোড়াটি অর্থা উচ্চৈঃশ্রবা বিখ্যাত।

কদ্রু বললেন –অশ্বের রঙ সাদা হলে যেকরে হোক তাকে কৃষ্ণবর্ণের কর। কারণ বিনতার কাছে আমি পণ করেছি, হারলে তার দাসী হতে হবে।

সমস্ত ঘটনা শুনে নাগেরা বিরস বদনে মাকে বললেন –বিনতাও তাদের কাছে কদ্রুর সমান। তাকে তারা কি ভাবে দুঃখ দেবেন!

একথায় কদ্রু রেগে গেলেন এবং শাপ দিলেন জন্মেজয়ের যজ্ঞে সকল নাগ ভস্ম হবে।

কদ্রুর শাপ শুনে সকল দেবতারা খুশি হলেন। কারণ সকলে বিষাক্ত সাপেদের হিংসা করে। তাদের বিষে মানুষের মৃত্যু হয়। তার থেকে বাঁচতে ব্রহ্মা কশ্যপকে তার মন্ত্র দিলেন। কশ্যপের থেকে তা মর্তে প্রচার হল।

মায়ের বচনের নাগেদের ভয় হল। তারা গিয়ে উচ্চৈঃশ্রবাকে ধরল এবং তাকে নিজেদের দিয়ে ঢেকে দিল। ফলে উচ্চৈঃশ্রবার বর্ণ কালো হয়ে গেল।

সকালে বিনতা ও কদ্রু ঘোড়া দেখতে এলেন। পথে সমুদ্র পড়ল, যাতে পর্বতের মত বড় বড় জলচর! কেউ শত, কেউবা বিংশতি যোজন বড়। এগুলি ছিল কুমীর, কচ্ছপ ও মৎস।

এসময় তারা উচ্চৈঃশ্রবা যেখানে ছিল সে স্থানে উপস্থিত হলেন এবং দেখলেন তার বর্ণ কালো।

দেখে বিনতা বিষণ্ণ হলেন, কারণ কথা মত তাকে কদ্রুর দাসী হতে হবে।
.....................

গরুড়ের জন্ম ও সূর্যের রথে অরুণের সারথ্যকার্য্যে নিয়োজন:
যখন বিনতা কদ্রুর দাসীরূপে অবস্থান করছেন তখন মহাবীর গরুড়ের জন্ম হয়।

গরুড়
ডিম ফেটে হঠাৎ বের হয়ে তার আকৃতি বাড়তে থাকে। দিন যত বাড়তে লাগল তার তেজ ও তত বাড়ল। তার নিশ্বাসে পাহাড়ের চূড়াও যেন উড়ে যায়। বিদ্যুতের মত গায়ের আকার, লালবর্ণের চোখ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথা আকাশকে ছুঁল।

দেবদানব সবাই ভয়ে টথস্থ। সবাই যেন ‘যুগান্তের অগ্নি’ দেখছেন।
সকলে অগ্নি স্তব শুরু করলেন। অগ্নি বললেন ভয়ের কিছু নেই।
তিনি দেবতাদের আত্মসম্বরণ করতে বললেন। তিনি দেবতাদের কশ্যপ-পুত্র গরুড়ের স্তব করতে বললেন।


দেবতাদের স্তবে গরুড় সন্তুষ্ট হলেন এবং নিজেকে সম্বরণ করলেন।

গরুড় তার দাদা অরুণকে নিয়ে গিয়ে সূর্যের রথে উপর বসালেন।

সূর্যের সারথি অরুণ

সূর্যের তেজে ত্রিভূবন পুড়ছিল, অরুণের আচ্ছাদনে তা নিবারণ হল।

মুনিরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সৌতি বললেন –যখন নারায়ণ দেবতাদের অমৃতবন্টন করছিলেন তখন গোপনে রাহু তা পান করেন। সূর্য তা জানিয়ে দিলেন। সুদর্শনচক্রে রাহুর মুন্ডু কাটা গেল। এরপর রাহু সূর্যকে তার এই কর্মের জন্য গ্রাস করত।

সূর্যকে দৈত্য গ্রাস করছে দেখে দেবতারা পরিহাস করলে, সূর্য ক্রোধ করে বললেন তিনি ত্রিভুবন পোড়াবেন।

দেবতারা ভয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা তাদের অভয় দিলেন। তিনি বললেন- কশ্যপ ও বিনতার পুত্র অরুণ সুর্যের তেজ কমাবেন। দীর্ঘদিন এই কষ্ট সহ্য করার পর অরুণের উদয়ে দেবতারা সন্তুষ্ট হলেন।
......................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers