Blog Archive

Thursday, December 3, 2009

এবার পূজোর দিনগুলি যেমন কেটেছিল

শুভ মহালয়া
(১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯)


মহালয়া মানেই ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর শুনে দিনের শুরু। এ বহু ছোট থেকে শুনছি। তখন ভোররাতে দাদু রেডিও চালাত। ওত বুঝতাম না, কিন্তু ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে কি একটা অদ্ভূত তেজ আছে! আর সাথে পাওনা অন্যদের সুন্দর সব গান।

http://www.esnips.com/doc/6da7010d-aede-4bf8-988c-fcd0db11c9b5/Mahalaya_part1

http://www.esnips.com/doc/f88a1600-935e-41cf-a1ae-fb4c88570ad5/Mahalaya_part2

এখন কম্পিউটর, নেট হয়ে ভালই হয়েছে। অত ভোরে টাইম করে রেডিও চালাতে পারি না। তাই ডাউনলোড করে শুনে মনটা ফুর ফুরে হয়ে উঠল। হাওয়ায় কেমন পূজো পূজো গন্ধ!




মা দূর্গা এবার স্বামী, পুত্র, কন্যাদের নিয়ে কিছুদিন বাপের বাড়ি ঘুরতে এলেন। আমরাও তাদের সাথে কিছুদিন আনন্দে মেতে উঠবো। ড্যাং কুড়াকুড়...ড্যাং কুড়াকুড়...ঢাকের বাদ্যি এবার বেজে উঠবে।





শুভ মহালয়ায় সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা




...........................................................

চতুর্থী
(২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)

আজ চতুর্থী...তিথি অনুযায়ি আজ পাপার মৃত্যুদিন...একটু ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই সকালটা কাটল...তারপর বেরিয়ে এই ফিরছি...খুব যে মন খারাপ তা না!

ক’দিন ধরে খুব কাকদাদার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

আজও যার কথা ভাবলে মনটা আদ্র হয়ে ওঠে -সে হল আমার ভেবলু কাকাদাদা।

সম্পার স্টুডেন্ট অলক তখন h.s দিচ্ছে। কমার্স কলেজ়ে সিট পরেছে। সম্পা একদিন এসে আমায় বললো কলেজের উঁচু নারকেল গাছ থেকে নাকি একটা দাঁড়কাকের ছানা পরে গেছে। বাচ্চারা ঢিল ছুড়ছিল, ও বকেছে। বিকেলে আমি ওর সাথে কলেজ়ে গেলাম। তখনও একপাশে পরে ছিল। ভাবলাম মরে গেছে। কিন্তু না! মাথা ঝুঁকে পরে আছে। সেটাকে তুলে রিক্সা করে বাড়ি ফিরলাম, একটু ভয়ে ভয়ে।

প্রথম সাতদিন সেই ছোট্ট ছানা মাথা নিচু করে ঝিমিয়েই রইল। মুখ তুলে তুলে খাওয়াতে হত। তারপর তিনি মাথা তুললেন। আর সারাদিন মোটা গলায় ডাকতে লাগলেন। সে সময়টা আবার ছিল পয়লা বৈশাখ! বাড়িতে একটু খিটিমিটি হল।

তবু কাকাদাদা আমার ঘরের সামনে ঘেরা বারান্দায় নিজের আসন পেতে ফেললেন। যেহেতু আকারে একটু বড় আর থুম মেরেই থাকে তাই খোলাই থাকত। একটা মোটা লাঠি ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। সেটাতেই বসে বাগানের শোভা দেখত। একটু টুক-টুক করে লাঠির উপরেই পায়েচারি করে নিত। ভুলো মাঝে মাঝে মুখ উচু করে দেখে হয়ত অবাক হত। কিন্তু কাকদাদা ভুলোকে ভয় পেত না। আপন মনে থাকত। খিদে পেলেই গম্ভীর গলায় ‘কঁ...কঁ’ করলেই আমি দৌড়ে মুখে খাবার দিয়ে আসতাম। পাপা ওর জন্য মাছ, মাংস নিয়ে আসত।

মন ভাল থাকলে কাকাদাদা আমার গলা ফুলিয়ে নিচু স্বরে আবার গানও গাইত!

সে সময় পাপার ট্রানসফারের কথা চলছে আর খুব তাড়াতাড়ি আমরা কলকাতায় আসব। প্রতিদিন দু’বেলা কাকাদাদাকে নিয়ে বাগানে ওকে ওড়ানোর চেষ্টা করতাম। বুলবুলিটা নিজের ফুরফুর করে উড়ত। এটি বয়সে ছোট ছিল বলে উড়তেই চাইত না। আমি ডাল থেকে ঠেলে ঠেলে দিতাম। এখন তা ভেবে খুব দুঃখ হয়।

কাকাদাদাকে বেশি সময় দিতে পারি নি।

ওকে ছারলেই রাজ্যের দাঁড়কাক চলে আসত আর ওকে ঠোকড়াতো। কাকাদাদাকেই বেশ বড় লাগল আমার। গাটা কুচকুচে বার্নিস করা কালো। দেখতে দেখতে আমার কেমন একটা গর্বই হত। মনে হতো ও বিশাল হবে। আবার বাগানে ছারলে যারা ওকে তারা করত তাদের পাশে ওকে একদম পুঁটকি লাগত!

শেষে কলকাতায় আসার দিন ঠিক হয়ে গেল। ওকে এখানে আনা সম্ভব নয়। আর কলকাতায় তো দাঁড়কাক দেখাই যায় না! সব ছোট ছোট পাতিকাক! আমার ইনোসেন্ট, ভেবলা কাকাদাদা তাও উড়তে চাইলো না।

সম্পাদের বাড়ি প্রচুর পশুপাখি ছিল। কাকুর এসব সখ ছিল। আমায় পেলে কাকু খুব খুশি হতেন। এখনও ফোনে সেই গল্পই করেন। তো, আমি সম্পাকে বলতে ও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হল। যাবারদিন সকালে সম্পার বাড়ি কাকদাদাকে রাখতে গেলাম। ভেবলু দাদা কিছুই বুঝলো না। আমার কোলে থাকলে খুব নিশ্চিন্ত থাকত। ওর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে এলাম। মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক কাটলে নিওস্প্রিন দিতাম, তাও বুঝিয়ে এলাম। আসার সময় খুব কাঁদলাম।

এখনও ওর কথা মনে হলেই খুব কান্না পায়।



.................................................................. ...

পঞ্চমী

(২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)







..........................................................................

মহাষষ্ঠীতে একটু গল্প শুনি

(২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)











...................................................................................

মহাষ্টমীর শুভ সন্ধ্যায় সবাইকে শুভেচ্ছা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯






আমাদের পাড়ার ঠাকুর...

আজ মহাষ্টমী, ভোগ–প্রসাদ খেয়ে চলে এলাম। সকালে উঠে অঞ্জলী দিয়েছি। তারপর পাড়াতেই বসে আড্ডা। রাতে আবার সন্ধিপূজো আছে।

কাল সপ্তমী সকালে আটটায় বাড়িতে থেকে বেড়িয়ে ছিলাম। রাত সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরেছি। পিসির সাথে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় গেছিলাম।
সারাদিন খুব ভাল ঘুরেছি। রাতে ফেরাটাই একটু কষ্টের হয়। সারা শহরে রাস্তায় এত জ্যাম! কালকের দিন কি ভাবে কাটলো সেটাই এখন বলি।

এমনিই আমি ভিষণ ঘরকুনো! পরশু পিসি রাতে বলল কাল বেলুড় যাবি। ঘুরতে কিন্তু বেশ লাগে! তার উপর ট্রেনেতো শহরে তেমন চরা হয় না! ভোরে উঠে গুছিয়ে-গাছিয়ে বেরতে বেরতে আটটা। ট্রেনে তেমন ভিড়ও ছিল না। ট্রেনের ওই ঝিকির ঝিকির্‌-ঝিক ঝিক আওয়াজ আর দুলুনী খুব ভাল লাগে। লেডিস কমপার্টমেন্টে উঠলাম খানিক পরে যমজ দু’টি ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে একজন মা উঠল। একটি উঠেই আমার সামনে জানলার ধারে এসে গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে পরল। পরে আদ্যাপীঠেও এদের সাথে দেখা হয়।






শিয়ালদায় ট্রেন বদলালাম। এবার আমাদের সামনে একজন মা তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে বসল। তারাও দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছে। আমি বাইরের ভিডিও তুলছি। ছোট মেয়েটি অনেকক্ষণ ধরেই আমায় লক্ষ করছিল। পরে আমাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। নামার জন্য সবাই উঠতেই সে এসে আমার হাত ধরে দারায়।


আমার ছোট্ট বন্ধু...


আদ্যাপীঠ...

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে অনেকবার গেলেও আদ্যাপীঠে কখন যায়নি। এসব কথা হচ্ছিল। পিসি বললো চল ওখানেই আগে যাই। ট্রেন থেকে নেমে বাচ্চা মেয়েটির সাথে গল্প করতে করতে রওনা দিলাম। তার অনেক কথা! স্কুল যাচ্ছে কিন্তু ক্লাস হচ্ছে না! ক্লাস টুতে পড়ে। পূজ়োয় কি কি হল জিজ্ঞেস করতে বললো শাড়ি হয় নি। মা তিনটেই জামা দিয়েছে। দিদিটি খুব শান্ত। মা ছোটভাইকে সামলাচ্ছে। দিদিটি এইটে পড়ে সেই বোন, মা-ভাই সবাইকে চোখে চোখে রাখছে।



ওরাও আদ্যাপীঠে এলো। আমরা প্রথমে ওখানে দুর্গা ঠাকুর দর্শন করে নিলাম। তারপর পূজো দেওয়ার বিশাল লাইনে। আমি আর আমার ছোট্ট সঙ্গিটি যদিও চারপাশ একবার দেখে নিলাম।



আদ্যাপীঠ খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখে খুব ভাল লাগল। মূল বড়মন্দিরে মার কাছে যাওয়া যায় না। মন্দিরের উল্টো দিকে নাটমন্দির সেখানে সামনে বসে সবাই মাকে দর্শন করছেন। এখানে প্রতিমা একটু অদ্ভূত ভাবে সাজান। সবার উপরে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি, তারপরের ধাপে আদ্যামার বিগ্রহ। শেষের ধাপে রামকৃষ্ণদেব।


পূজোয় সবাই প্রায় মাকে কাপড় দিয়েছেন। ঠাকুরমশায়রা মাকে তা পরাচ্ছেন। যারা কাপড় দিয়েছেন তারা নাটমন্দির থেকে তা দর্শন করছেন।

সারদামঠের পাশের পূজো...

পুজোর পর আমার ছোট্ট বন্ধুটি মা, দিদি, ভায়ের সাথে মামার বাড়ি চলে গেল। আমি-পিসি ওখানেই ভোগ খেলাম। একটু ঘুরে সারদামঠের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। কিন্তু যানতাম না মিশন সাড়ে এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে ছোট গেট দিয়ে সারদামঠে ঢুকেই একটা অদ্ভূত স্নিগ্ধ ভাব, দেখে মনটা এক অন্য ধরনের আনন্দে ভরে ওঠে। ওখানে পিসির কিছু অফিসিয়াল কাজ ছিল, বলতে ক’জন কাছেই অন্য একটি অফিসে নিয়ে চললো। বেরিয়ে দেখি একটা বড় গাড়িতে করে সন্যাসিনীরা যাচ্ছেন। হঠাৎ আমার নিলিমাদির কথা মনে পরল। কতদিন দেখিনি! উনি নিবেদিতা স্কুলে সেলাই বিভাগের দায়িত্বে আছেন। একটু উঁকি মারতেই দেখি ড্রাইভারের পাশে বসে! আমি তো ওনার নাম ধরে ডেকে উঠলাম। উনিও আমাদের দেখে অবাক হয়ে গেলেন। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। মঠে ঢুকতে পারলাম না তো কি! ওনার সাথে তো দেখা হয়ে গেল। প্রণাম করলাম।





এরপর আবার দক্ষিণেশ্বর ফিরে এলাম। তখন খুব বৃষ্টি শুরু হয়েছে! আর মার দর্শনও খানিক্ষণ বন্ধ! আমরা পঞ্চবটী ঘুরে ঘাটে গেলাম। বেলুড় যাব। নৌকায় করে যাত্রা শুরু হল। কোনদিন নৌকার একদম ধারে বসার সুযোগ হয় নি। ওখানে বসেও ভয়ে ভয়ে ভিডিও তুলেছি। দুটি মেয়ে সামনে বসেছিল। আমি একটু ছাতা নামাতে বললে, তাদেরও ফটো তুলে দেবার আবদার জুরলো।


বেলুড়ের পূজো...

বেলুড়ে পৌঁছে চারদিক সবুজ়ে সবুজ দেখে খুব ভাল লাগল। কত্তোলোক এসেছে! আমরা কিছু বই কিনেছিলাম, সে সব একটু পড়লাম গঙ্গার ধারে বসে। তারপর বেলুড়ে একটু ঘুরলাম। মন্দিরে প্রবেশের বড় লাইন! পিসিকে এক যায়গায় বসিয়ে লাইনে দাড়ালাম। আজ আরাত্রিক শুনেই যাব, মনে মনে ঠিক করেছি।




মন্দিরটির আর্কিটেক্টটাও দুর্দান্ত। কোন আড়ম্বর নেই, ছিমছাম। মন্দিরে রামকৃষ্ণদেব দর্শন করে ওখানেই বসে আমরা বই পড়ছিলাম। হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে বেরিয়ে পরলাম। তখন একাই চারদিক ঘুরে, বেলুড়ের দুর্গাপ্রতিমা দর্শন করে আবার ভিডিও তুলতে সাধ হল। কিন্তু বেটারী একদম লো! তুলতে তুলতে গঙ্গার দিকে যেতে যেতেই অফ হয়ে গেল।

আবার মন্দিরে ফিরে এলাম। সন্ধে হচ্ছে। ছ’টা নাগাদ আরাত্রিক শুরু হল।

সামনে রামকৃষ্ণের মর্মর মূর্তি। গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত। সামনের সারিতে সন্যাসীরা বসেছেন। তার পিছনে ব্রহ্মচারীরা। কিছুটা ছেরে পুরুষ ভক্তরা। তার পিছনে মহিলাদের বসার ব্যবস্থা। শেষে তো পরে সবাই ভীড় করে যে যেখানে পারে বসে। ভীড় গেট ছারিয়ে সিড়ি ছাড়িয়ে বাইরেও চলে যায়! এর আগে একবার তেমনি বাইরে থেকে শুনেছিলাম।
চারদিক শান্ত। তার মাঝে সন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা উদাত্তকন্ঠে যখন ভজন শুরু করলেন তখন মনে হল যেন অন্য জগতে চলে গেছি। আমিও গলা মেলালাম।


http://www.rkmissionrahara.org/gallery_audio_new.asp?af=khandana.mp3&fc=Khandana-Bhava


......................................................


মহানবমী...বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে......প্রকৃতিও এক পশলা কেঁদে নিল
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯








.........................................................



“এবার মাগো বিদায় তবে, আসছে বছর আবার হবে!”......বিজয়া দশমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা....
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯


প্রতিমা বরণ...








প্রতিমা বরণ...

কলেজ

কলেজের কথা লিখতে গিয়ে দেখছি সে সময়টা কেমন যেন হুস্‌ করে কেটে গেছিলো!
উচ্চমাধ্যমিকের পর কিছুদিন পি.ডি. কলেজে ক্লাস করি। সত্যি বলতে মেয়েদের কলেজ হলেও ওখানে কি একটা চাপ চাপ ব্যাপার ছিল। কিছু মেয়ে প্রচন্ড সিরিয়াস! সারাদিন পড়া পড়া। আবার কিছু সাজগোজ নিয়েই আছে! আর কলেজ থেকে বেরলে মনে হবে ছেলেদের মেলা! লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে!

সেদিক দিয়ে আনন্দচন্দ্র কলেজে এসে বেশ ভাল লাগলো।
মনে আছে, প্রথম কিছুদিন আমাদের আবার শাড়ি পরতে হচ্ছিল। সেটাও একটা মজা। প্রতিদিন নতুন নতুন শাড়ি পরে হোঁচট খেতে খেতে কলেজ যেতাম। কারণ কলেজ বাড়ি থেকে খুব কাছে না হলেও খুব বেশি দুরেও না। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দুরেই শিরীষতলা, তারপর কিছুটা হেটেই কলেজ। রিক্সায় গেলে একটু খুকি খুকি ভাববে বন্ধুরা! আবার ওই রাস্তাটা হেঁটে যাতায়াতও কেমন যেন লাগত। মনেহত সবাই বুঝি দেখছে। শিরীষতলায় বাজার মত ছিল।

যদিও শেষে একজন বন্ধু জুটে গেল। আমাদের ক্লাসেরই। তার কথা দিয়ে কলেজ পর্ব শুরু করি। খুব গম্ভীর আর গোঁয়ার টাইপের ছিল ছেলেটি-ইন্দ্র। কোনদিন ক্লাস করত কোনদিন করত না। আমাদের ক্লাসে কোন বন্ধুও তেমন ছিল না। যতদুর মনে হচ্ছে ইকনমিক্সসের দলে ঘুরত। কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার সময় ঠিক আমার সাথেই ফিরত। সারা রাস্তা আমিই কথা বলতাম। শিরীষতলা পেরিয়ে ফাঁকা সুন্দর পথটুকু আমি চলে আসতাম। শিরীষতলার গলিতেই ইন্দ্র থাকত।

কলেজে মানে বাধাধরা ক্লাস করার কোন চাপ নেই, এটা বেশ ভালই বুঝে গেলাম। তবু ক্লাস করতাম কারণ প্রধান কারণ ছিলেন AP। ওনার ক্লাসে অন্য ডিপারমেন্টের ছেলেমেয়েরাও ভিড় করে থাকত। বিশাল ঘরে বসার যায়গা থাকত না। বাইরের ছেলেরা সব দাঁড়িয়ে থাকত। স্যার ছন্দের ক্লাস নিতেন।
এখনও চোখের সামনে যেন ভাসছে! উনি ‘কৃষ্ণকলি’ আবৃত্তি করছেন, ক্লাস নিস্তব্ধ। আমার তো শুনতে শুনতে নিজেরই ওরকম কৃষ্ণকলি হতে ইচ্ছে করতো। পরে বন্ধুদেরও দেখেছিলাম একই অবস্থা!

স্যারের কোয়াটার কলেজ়ের সামনেই ছিল। আমরা বেশ ক’জন ওনার কাছে পড়তে যেতাম। টাউন থেকে কিছু আসত। ময়নাগুড়ি থেকে অনেকে আসত। কলেজ কোয়াটার বেশ সুন্দর ছিল। পড়তে যে খুব ভাল লাগত তা না। ফেল করলে ভাইবোন ধরে ফেলবে তাই এতদিন পড়তাম। কলেজ়ে শুনলাম প্রথম বছর এমনিই উঠিয়ে দেবে। তবু পড়তে যেতাম স্যারের জন্য।

এর আগে পেয়েছি অমিতদাকে। প্রচন্ড শাসনে রাখতেন। আর AP কেমন উদাস টাইপের মনে হত, সে জন্য কষ্টও হত। ওনার জলপাইগুড়িতে বোধহয় তেমন ভাল লাগত না। প্রায়ই ছুটিতে যেতেন। শুনেছি উনি শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ওনার স্ত্রীকে কাকিমা বলতাম। দু’জনেই শান্তিনিকেতনে পড়তেন।
ওনাদের ছেলে একদম APর ডুপ্লিকেট। গায়ের রঙ যা পরিষ্কার। সে হোলি চাইল্ডে ক্লাস ওয়ানে পড়ত।
স্যার শ্যামলা লম্বা গড়নের ছিলেন। খুব শান্ত! রাগলেও বোঝা যেত না।
স্যারের কথা শুনবো বলে যেতাম বটে, তবে একটা জানলার উল্টোদিকে বসে বেশ কিছুক্ষণ পড়া শুনতে শুনতে বোর হয়ে বাইরে তাকিয়ে গাছ, পাখি এসব লক্ষ্য করতাম। আমরা একটা চৌকি ঘিরে বসতাম। স্যারের পাশে উমা বসত। বেশ সুন্দরী আর সব পড়া করে আসত। স্যার কারো দিকে তেমন তাকাতেন না। আপন মনে পড়াতেন। তবু মাঝে মাঝে একবার আমার নাম ধরে ডাকলে আবার ঘরের মাঝে আসতেই হত।

মনেপরে অফপিরিওডে আমরা গাছেরতলায় বসে গুলতানি করছি। স্যার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওমনি আমায় ডেকে নিলেন-কি যে ভাল লেগেছিলো! যদিও উনি কি একটা দরকারি কথা সবাইকে বলে দিতেই ডেকেছিলেন।
তবু! আমরা মেয়েরা APকে নিয়ে সারাদিন আলোচনা করতাম। তাতে ছেলেগুলো বেশ টিটকিরি মারত। স্যার নাকি বুড়ো! মোটেও স্যার বুড়োটে ছিলেন না। ওনাকে অনেকটা সত্যজিৎ আর শ্রীকান্ত আচার্যের মাঝামাঝি লাগতো।
আর APর চোখে কি একটা ছেলেমানুষি সারল্য ছিল। ফিজিক্সের স্যার ওনার পাশেই থাকতেন। বেশ স্নেহ করতেন। একদিন দেখি উনি APকে বলছেন- কি বসন্ত তো এসে গেল, কবিতা লিখবে তো! শুনে APএকটু লজ্জাই পেলেন। তারপর দু’জনে হো হো করে হাসছিলেন।

একদিন আমি আর সম্পা রিক্সা করে টাউনে যাচ্ছি। সামনে উল্টোদিক দিয়ে হেলমেট মাথায় কে যেন দেখতে দেখতে গেল। পরে দেখি ওমা! এতো আমাদের AP! হা…হা…হাঃ, খুব মজা লেগেছিল।

সত্যি বলতে AP হচ্ছেন আমার দেখা প্রথম সুপুরুষ। মাঝে মাঝে সবাই ওনার ওখানে আড্ডা মারতাম। কে কি পড়ি এসব জিজ্ঞেস করলেন। আমাদের বাড়িতে অনেকদিন ধরেই আনন্দমেলা নেওয়া হয়। শুনে উনি গম্ভীর ভাবে বল্লেন এবার থেকে ‘দেশ’টা রাখ। আমিও বাড়ি এসে পাপাকে বলে ব্যবস্থা করলাম। খুব যে ভাল বুঝতাম, তা নয়। তবু পড়তাম। বইমেলার আগে উনি কিছু বই কিনতেও বলেছিলেন।

উনি হঠাৎ চলে গেলেন। কিন্তু দায়িত্ববোধ খুব ছিল। পরীক্ষার আগে আমাকে আর উমাকে ঠিক সাজেসন পোস্টে পাঠাতেন। উমা আমাদের মধ্যে টপার ছিল। AP উমাকে আগে চিঠি দিয়ে পরে আমায় লিখেছিলেন। যদিও উনি হঠাৎ করে যাবার পর কেউ আমাদের পড়াতে চাইলেন না। অনেক বলে একজনের কাছে সবাই ম্যানেজ করল। কিন্তু প্রথমদিনই উনি এমন ধরনের একটা ঠাট্টা করলেন যে APর স্থানে ওনাকে আর বসাতে পারলাম না। আমি আর সম্পা কারো কাছেই আর গেলাম না। শুনে পরেরবার AP আবার সাজেসন পাঠান। আমি আর সম্পা ওনাকে পয়লা বৈশাখ, টিচারস ডে’তে কার্ডও পাঠাতাম। আমাদের সেই চোদ্দ-পনেরোজন সবার নাম লিখে। উনি নিশ্চয়ই সে সব দেখে মুচকি হাসতেন।

আমাদের পরিতোষ নামে একটি বন্ধু ছিল। সে আবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সাথেই বেশি মেয়েলি গল্পে মেতে থাকত। সে আবার কি একটা পরীক্ষা দিতে বীরভূম গেল আর ঠিক খুঁজ়ে খুঁজ়ে দু’রাত স্যারের ওখানে কাটিয়ে এলো। স্যার এবং ওনার স্ত্রী খুব খাতির যত্ন করেছিলেন।

AP গেলেন আমারও পড়ার সখ মিটলো। তখন ছারা গরু টাইপ অবস্থা! কলেজ়েও নতুন সব প্রফেসর জয়েন করলেন।

তনুদি যেদিন আমাদের ক্লাস নিতে এলেন সে দিনের কথা স্পস্ট মনে আছে। সবাই এদিক ওদিক আড্ডা দিচ্ছে। শীতকাল। একটি মেয়ে সাধারণ একটা কাঁথাস্টিচের শাল গায়ে দিয়ে ঢুকছে। কেউ খেয়ালও করেনি। উনিই আবার ডেক্সের উপর উঠে ডাস্টার পেটাতে শুরু করলেন। সবাই অবাক! ইনি আমাদের নতুন প্রফেসর। এরকম চারজন নতুন এলেন। বন্ধুর মত হয়ে গেলেন।

আমি আর সম্পা তনুদির নতুন ফ্লেটে আড্ডা মারতাম। উদ্দেশ্য যদিও পড়া। আমিতো ওনার নতুন নতুন বিদেশী বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেতাম। উনি একা থাকতে খুব ভয় পেতেন। কিছুদিন পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার তনুদির মা আর ভাইও এলো। আমি তনুদির মার সাথে আড্ডা মারতাম পাশের ঘরে। তনুদি খুব চ্যাঁচালে ওনার মা আমায় ওনার লেপের মধ্যে আমায় লুকিয়ে নিতেন।

এ সময় খবর পেলাম সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং চলছে। অন্য ডিপারমেন্টে লম্বু ছিল। ওকে নিয়ে সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং নিতে শুরু করলাম।
ওটা শেষ করার কিছুদিন পর খবর পেলাম আসাম রাইফেল থেকে বর্ডারের কিছু সৈনিক এসেছে, তারা হঠাৎ আক্রমণ হলে আত্মরক্ষার জন্য গেরিলা ট্রেনিং দেবে, সেটা নিতেও ছুটলাম।

এবার লম্বু ছারাও সঙ্গে ছিল তপতি ও কুসুম, যাদের কথা আগে বলেছি। সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং টাউনের রবীন্দ্র সদনে হত।
কিন্তু পরেরটা আমাদের আসামমোরের হাইওয়ে ছারিয়েও প্রায় দু-তিন ঘন্টার পথ আর গ্রাম।

প্রথমদিন তো প্রচুর খুঁজে খুঁজে যাওয়া হল। শহর থেকে আমরাই গেছি, বেশ খাতির যত্ন হল। প্রথম ক’দিন আমরা চারজন টাউন থেকে দুটো রিক্সা ঠিক করে যেতাম। ফেরার সময় একটা ছোট বাস ধরতাম।

ওখানে গিয়ে তপতি-কুসুম যেন হাঁপ ছেরে বাঁচত। আমার লম্বুকেই বেশি মনে আছে। খুব দৌড়াদৌড়ি করাতো। ফেরার সময় আমরা চারজন প্রায়ই ঝামেলায় পরতাম। বাস একদিন মিস হল। শেষে অনেক বলে কয়ে শহরে একটা ছোট টেম্প যাচ্ছিল তাতে সন্ধ্যের পর টাউনে ফিরতে পারলাম। বাসের জন্য ট্রেনিং শেষে আমি আর লম্বু দৌড়–ঝাপ করতাম। সেই মওকায় তপতি-কুসুম কোন ঝোপ-ঝারে বসে প্রেম করত। আমরা চ্যাঁচামেচি করে ওদের আনতাম। তারা যেন আর বাড়িই ফিরতে চায় না। সম্পা, লম্বু বা এখানেও সব যায়গায় আমার সাথে যে থাকে সেই প্রায় আমার গার্জেন হয়ে আমায় গাইডে রাখে। কিন্তু ওদের প্রেমের ঠেলায় লম্বুর মেজাজো যখন সপ্তমে তখন আমাকে আসরে নামতে হল। আমি খুঁজে খুঁজে আবার ওদের মাঝে গিয়ে বকবো কি! ওদের দেখেই হেসে মরি! দু’জনে দু’জনের দিকে হাঁ করে কি যে দেখতো ভগবান যানে! তবু শেষ পর্যন্ত আমি আর লম্বু শত বিরক্তি সত্ত্বেও ওদের জুটিকে স্নেহ করতাম। কারণ টাউনে ওদের কি হেনস্থা হত আমরা দুরে থেকেও তার কষ্ট যেন বুঝতাম।

শেষে এমন হল আমার পাপা-যে আমাকে পুর ছার দিয়ে রেখেছিল সেও কোথায় কেন এত দেরি হয় সরেজমিনে দেখতে চললো। সঙ্গে বাপ্পা, লম্বুর বাড়ি থেকে কেউ যায়নি তবে পাপার সাথে বোধহয় কথা হয়েগেল।
সেদিন সারাবেলা পিকনিকই হয়ে গেল। পাশে ছেলেদেরও ট্রেনিং হচ্ছে শুনে পাপা বাপ্পাকেও ভর্তি করে দিল। পরে তপতির ভাইও জয়েন করলো। দু’টো রিক্সা সব সময়ের জন্য ঠিক হল। বাকি বাপ্পা আর তপতির ভাই আমাদের সাথে সাথে সাইকেলে যাতায়াত করত।
দু’দিনের মাথায় তপতি, যে কিনা ছেলে হতে হতে মেয়ে হয়ে গেছে আমার বিশ্বাস সেও বাপ্পাদের সাথে হাওয়া খেতে খেতে বোঁ বোঁ করে সাইকেলিং করে যাতায়াত করতে শুরু করলো। তপতির ভাই দেখলাম দিদিকে প্রচন্ড ভালবাসে। তপতির কথা ভেবে আমার এখনও দুঃখ হয়। কেবল ওর ওই ভাইকে দেখে একটাই শান্তনা যে সে চিরদিন তার খ্যাপা দিদিকে দেখবে।

এদিকে কলেজ়ে অনিয়মিত বলে বেশ বকুনীও খাই। যদিও আমার বন্ধুরা খুব ভাল ছিল। তনুদিরাও খুব সাহায্য করতেন।

এবার কলেজের বন্ধুদের কথা বলি। স্কুলের অনেকেই এলো। নতুনদের মধ্যে যার কথা আগে মনে আসে সে ছিল খুব সুন্দরী। গভমেন্ট স্কুলের মেয়ে। ওই স্কুলে জলপাইগুড়ির সব সুন্দরীরা পড়ে-এটা জনশ্রূতি। তো এর সাথে খুব বন্ধুত্ব হল। ওর সব সমস্যার কথা বলতো। মেয়েটির বাবা একদম উৎপল দত্তের মত রাগী ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওর বিয়ে দিয়ে দিলেন।

এ সময় লম্বুরও বিয়ে হয়ে গেল। তারপর কুসুমের। তপতিকে নিমন্ত্রণও করেনি। যদিও তপতি আমাদের কলেজে এসে কুসুমের কষ্টের গল্পই করত। পর পর সব হচ্ছিল। কেউই ফাস্ট ইয়ার সে ভাবে শেষ করতে পারল না।

তো আমার এই বন্ধুটি খুব মনকষ্টে ছিল। একে দেখলে আমার রাধার কথা মনে হত। তেমনই কোমল! খুব আস্তে আস্তে কথা বলত। একটি ছেলেকে ভালবাসত। সে দার্জিলিংএ জিওগ্রাফি অনার্স নিয়ে পড়তো। সমবয়সি। ছুটিতে কলেজ়ে পরিচয় হল। এক-একজন মানুষ আছে যাদের চোখ সব সময় হাসে। ছেলেটিও তেমনি ছিল। দু’জনেই জানত পরস্পরকে পাবেনা। আমার ভেবেই খারাপ লাগতো।

এদিকে কিছুদিনের জন্য ও কলকাতায় এলো। উঠলো ওর মায়ের বান্ধবীর বাড়ি। সঙ্গে কাকিমাও ছিলেন। কাকিমার বান্ধবী ও তার ছেলের আবার ওকে খুব পছন্দ হয়ে গেল। ও জলপাইগুড়ি এলো। এবার কতো চিঠি কলকাতা থেকে আসতে লাগলো। ওর মারও সম্বন্ধটা পছন্দের ছিল। কলকাতার ছেলেটি বোধহয় গানের জগতে যুক্ত, আমাদের চেয়ে কিছু বড় হবে। কি সুন্দর সুন্দর গানের ক্যাসেট পাঠাত! কেনা নয় কিন্তু! সব নিজের সংগ্রহ। ও সব আমায় শুনতে দিত। একটা খুব সুন্দর পিয়ানোর কম্পোজিসন শুনেছিলাম, সেই প্রথম মনে আছে। শেষে ও-ও একটা বিশাল চিঠি কলকাতায় পাঠালো। আমাকেও পড়ালো। সে চিঠি পড়ে দাদাটাও জলপাইগুড়ি চলে এলো। ওরা বাঁধে ঘুরতেও গেল। দাদাটা সব শুনে বলেছিল কোনদিন যদি কোন দরকার পরে যেন তাকে জানায়। শেষে এক ব্যাঙ্ক অফিসারের সাথে যদিও কাকু ওর বিয়ে দিয়ে দেন।

এই বন্ধুটি, AP সবাই যাবার পরে পরে যখন বেশ মনটা একটু ভার ভার তখন আমাদের ডিপারমেন্ট থেকে পিকনিক হল। অন্য বিভাগের ছেলেমেয়েরাও গেল। বিশাল লড়িতে যাওয়া হল। গাড়িও ছিল। তাতে প্রফেস্রররাই গেলেন। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে সেই গাড়ি গেল। আর ওভাবে যাবার জন্য পরে বকুনী খেলাম। কিন্তু খুব মজা হয়ে ছিল। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমাদের গ্রুপে নির্মল কেবল ক্যামেরা নিয়ে যায়। আর ফটো তোলা নিয়ে হুরোহুরি! আমিও বেশ মুটকি, তবু টুম্পাটা আর একটু বেশি হওয়ায় ইচ্ছে করে সবাই ওর হাতে কিছু না কিছু খাবার ধরিয়েই দিচ্ছিল ছবি তোলার সময়। তখন তো বুঝিনি! এবার ছবিগুলো দেখেতো আমরা হেসে বাঁচি না! সব কটা ছবিই ওর অদ্ভূত ওঠে। তাই দেখে ওর কি কাই মাই! হা…হা, সে সব দেখলে এখনো হাসি পায়।

লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এবার শেষ করি সেই ইন্দ্রকে দিয়েই। সমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি ম্যাচিওর হয়ে যায় মনে হয়। তাই আমার ক্লাসের সব ছেলেকেই কেমন ছেলেমানুষ গোছের লাগত। তেমন শক্তগোছেরও কেউ ছিল না, এক এই ইন্দ্রটা ছারা। তো এও বেশিদিন ক্লাস করলো না। কোথায় চলে গেল।

AP থাকতেই একবার বড়দিনের দিন ভোরবেলা আমরা চার্চ থেকে ফিরছি ঠিক সে সময় ইন্দ্রও ওর এক বন্ধুর সাথে বোধ হয় চার্চে যাচ্ছিল। আমাকে বাড়ির সামনে দেখে কি মনে হল বললো চল তোর বাড়ি যাবো। কিন্তু সে মুহুর্তে আমার কিছু অসুবিধে ছিল ওদের বাড়িতে আনার, কিন্তু ও তা শুনবেই না। ছেলেমানুষি গোঁ ধরলো। আমারও রাগ উঠে গেল। মাঝখান থেকে ওর বন্ধুটা ফাঁপরে পরে গেল। ও আমাদের পাড়ারই ছেলে। তো শেষ পর্যন্ত ইন্দ্র খুব রাগ করে ফিরে গেল।
পরে অনেকবার আমার অসুবিধে কি ছিল বোঝাতে গেলাম, শুনলো না। আমি যানি ও অন্য ধরনের ছিল। অন্য ক্লাসমেটদের মত নয়। কিন্তু এত একগুয়ে ছিল! ওর কথা এখন সে ভাবে কারো মনেও নেই। সম্পারা মনেই করতে পারে না!

একদিন ক্লাসে দেরি করে ঢুকছে, AP কি একটা বুঝিয়ে বলতে গেলেন। ওমনি রাগ করে ক্লাস থেকেই বেরিয়ে গেল। তারপর ক্লাস আর করছেই না। অন্য ক্লাসে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করতে গেলে উত্তর দেয় না। পরে কলেজও ছেরে দিল। ইকনমিক্স ডিপারটমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেল বাইরে কোথায় চলে গেছে। অদ্ভূত এক বন্ধু ছিল এই ইন্দ্র!
(সকল চরিত্রের নাম পরিবর্তন করা হল)

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers