Blog Archive

Sunday, July 26, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৭

[পূর্বকথা - ইন্দ্রপ্রস্থে কৃষ্ণের সহায়তায় পঞ্চপাণ্ডবরা অবস্থান করতে লাগলেন...দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডব সুখে বাস করতে লাগলো... একদিন অর্জুন বাধ্য হলেন যুধিষ্ঠির ও দ্রৌপদী একসাথে অবস্থান কালে গৃহে প্রবেশ করায়...তিনি নিজেই বারো বছরের বনবাসে যান... উলুপী ও চিত্রাঙ্গদার সাথে তার বিবাহ হয়... পরে প্রভাস তীর্থে এলে গোবিন্দ শুনে শীঘ্র সেখানে এসে পার্থকে আলিঙ্গন করলেন এবং দ্বারকায় নিয়ে আসেন..সেখানে সুভদ্রাকে দেখে অর্জুনের ভাল লাগে, সুভদ্রাও অর্জুনের প্রেমে পাগল হন এবং সত্যভামাকে তার মনের কথা জানান... ] 

সুভদ্রার সহিত অর্জুনের বিবাহ কারণ সত্যভামার সহিত অর্জুনের কথাঃ 



রাত্রে সত্রাজিতের কন্যা সত্যভামা একান্তে শ্রীকৃষ্ণকে বলেন –অবধান কর, তোমার ভগিনী ভদ্রা প্রাণ ত্যাগ করতে চায় তার উপায় কর। যখন থেকে সে অর্জুনকে দেখেছে তখন থেকে আমায় ধরেছে অর্জুনকে পতিরূপে তাকে পাইয়ে দিতে হবে। অর্জুনকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে আর সে দোষ আমার হবে। 

গোবিন্দ বলেন –আমিও মনে মনে তাই ভাবছিলাম। অর্জুন এখানে বহুদিন এসেছে। তাকে কি ধন দেব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ভাল হল সুভদ্রাকেই তার হাতে দান করব। তুমি আজ রাত্রেই সুভদ্রাকে আমার সম্মতির কথা জানিয়ে দিও। 

সত্যভামা বলেন –সে বিলম্ব সহ্য করতে পারছে না। আজ রাত্রেই পার্থকে না পেলে সে প্রাণত্যাগ করবে। 

গোবিন্দ বলেন –এতো আমার সাধ্যে নেই। তুমি গিয়ে দেখ কোন বিপদ যেন না হয়। 

কৃষ্ণের আদেশ পেয়ে সত্যভামা সুভদ্রাকে নিয়ে পার্থের কাছে চললেন। 
কনক কপাট দিয়ে পার্থ রত্নময় খাটে শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন। সত্যভামা –‘অর্জুন, অর্জুন’ বলে ডাক দিতে থাকেন। 

পার্থ জিজ্ঞেস করেন –কে তুমি! 

সত্যভামা বলেন –সত্রাজিতের কন্যা আমি সত্যভামা। দরজা খোল কিছু গোপন কথা আছে। 

অর্জুন বেলন –মাঝরাত্রে আপনি এখানে কি কারণে এলেন! অতি দরকারি কাজ থাকলে দূত পাঠাতে পারতেন, আমি উপস্থিত হতাম! তা না করে এত রাত্রে আপনি কেন এলেন! আপনি কাল আমায় আজ্ঞা করবেন। 

সত্যভামা বলেন –দূতের মাধ্যমে একথা বলা সম্ভব নয়। বিপদে পরে আমি তোমার কাছে এসেছি। 
তোমার সব কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। পাঁচভায়ের মাত্র এক স্ত্রী! তার উপর সে কারণেই বার বছরের বনবাস। তোমার কষ্টে আমি থাকতে না পেরে এক পরমাসুন্দরীকে তোমায় দিতে চাই। 

অর্জুন বলেন –এত স্নেহ করেন আপনি, আমি ধন্য। তবে আপনার আজ্ঞা আমি গোবিন্দের সামনেই পালন করব। 

সত্যভামা বলেন –দেরি করে কি কাজ। এই রজনীতেই গন্ধর্ব মতে বিবাহ কর। 

পার্থ বলেন –একি অদ্ভূত কথা! কিছু না জেনে কিভাবে বিবাহ করব! কে সেই সুন্দরী, কার কন্যা-এসব কিছুই তো আমি জানি না। 

সত্যভামা বলেন –দরজা খুলে দেখ। স্বচক্ষে কন্যাকে দেখে নাও। তাকেও সঙ্গে করে এনেছি। একন্যা যদুকুলে জন্মেছেন। এখন তিনি প্রথম যৌবনা। বিদ্যুতবরণী রূপে ত্রৈলোক্যমোহিনী। 

অর্জুন বলেন –এ আমার শক্তিতে সম্ভব নয়। বলভদ্র ও জনার্দন কৃষ্ণ যদুকুলপতি, তাদের আজ্ঞাতেই যাদবী সুভদ্রাকে আমি গ্রহণ করব। আপনি তাদের কাছে আমায় বিপদে ফেলছেন। 

সত্যভামা তখন রেগে বলেন –সেই তো! তুমি কি ভাবে করবে! তোমার মন বাঁধা পরেছে কৃষ্ণা দ্রৌপদীর ওষুধের গুণে। পাঞ্চালের এই কন্যা ভাল ভাবেই জানে পাঁচ স্বামীকে কিভাবে নিজের মুঠোয় রাখতে হয়। একটি স্বামীকেও সে হাতছাড়া করবে না। বার বছর বনে বনে ঘুরছে তাও তার কথা ভুলতে পারছে না! নারদের বাক্য অমান্য করার সময় তোমার লজ্জা করেনি! এতদিন বাড়ি ছাড়া তাও দ্রৌপদীর ভয়ে কিছু করতে পারছ না। 

পার্থ বলেন –দেবী, দ্রৌপদীর নিন্দা করবেন না দয়া করে। আপনার মহৌষধির গুণও কম নয়। ষোলশত সহস্র স্ত্রী ও আট পাটরাণীর মধ্যে সব থেকে আপনি কৃষ্ণের সোহাগিনী কোন্‌ গুণে বলুন। সাত অন্য পাটরাণীরা কি কেউ অপুত্রা, কি রূপহীনা বা হীনকুলজাত! তাদের মধ্যে তো রুক্মিণী বিখ্যাত। তবু আপনার ওষুধের গুণে হরি আপনাকে ভয় পান। আপনার সাক্ষাতে অন্যের দিকে চোখ তুলে চান না। দিব্য-রত্ন, বসন, ভূষণ, অলঙ্কার যেখানে যা পান কৃষ্ণ আগে আপনাকে এসে দেন। অন্য জনকে দিলে আপনি তা আর গ্রহণ করেন না। বলুন দেবী তা আপনি কোন গুণে করেন! 
দেবী রুক্মিণীকে কৃষ্ণ এজদিন পারিজাত দিলেন। তাই নিয়ে আপনি এক সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটালেন।

-জন্মেজয় মুনিকে জিজ্ঞেস করেন –আমিও পারিজাত হরণের কথা শুনেছি। কি কারণে রুক্মিণীর সাথে সত্যভামার সংঘাত হল তা শুনতে মন চায়। 

মহাভারতের কথা অমৃতের ধারা, কাশীরাম বলেন এটি ছাড়া আর কিছুতেই সুখ নেই।
...................................

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers