(এলোমেলো মগজের ভাবনা......)
ভালবাসা কি? সে কি কেবল দুঃখ দেয়? না – সুখও দেয়? কিন্তু সেই সুখে কি শান্তি আসে? যাকে ভালবাসি – তাকে সব সময় কেন কাছে পেতে চাই? সে ধরা দেবে না জেনে খুশিও হই। ভালবাসা কিন্তু সবসময় স্থীতি চায় না। ভালবাসায় দুঃখ পেলেও তা কেন মনকে অদ্ভুত আনন্দ দেয়? হয়তো সবই কল্পনা – তাই এমন মনে হয়। বাস্তব বড়ই কঠিন। তবু সেখানেও হয়ত ভালবাসাকে অনুভব করা যায়। কিন্তু তবু যেন কেন ভয় হয়! ভালবাসায় রূপের স্থান কোথায়? ভয়ঙ্কর-দর্শ মানুষ ভালবাসতে পারে সবাই এ কথা মানি – কিন্তু তার ভালবাসা ক’জন চায়! আসলে ভালবাসা সোজা নয়! প্রিয়কেও কি সব সময় ভালবাসা যায়! না হলে কি বুঝতে হবে তা আসলে ভাল লাগা! ভালবাসা ধিরে২ অন্তরের গহনে ভাল – বাসাও চেয়ে বসে। তখন! তখন সেই বাসা ধিরে২ সুন্দর নীড় থেকে আধুনিক গৃহের দিকে পা বারায়। তখনই দেখা যায় উপলক্ষের জন্য লক্ষ যেন কবে দুরে সরে গেল – ভালবাসা যেন কোথায় হারিয়ে গেল! তখন আবার প্রিয়কে নিয়ে পথে নেমেই শান্তি। ভালবাসা আসলে কখনও ফুরায় না। দুরত্ব তাকে আপন করায়। আসলে অকৃত্রিম ভালবাসা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় এক।।
Blog Archive
Monday, June 22, 2009
দিদা
পাপার পরেই যার কথা ভাবলে মনটা কৃতঞ্জতায় ভরে ওঠে সে হল-দিদা। ঠাকুমাকে আমরা দিদা বলি। ‘দিদা’ বলতেই লালপাড় সাদা শাড়ি পরা, উঁচু কপালে বড় লাল সিঁদুরের টিপ পরা, মাথায় ঘোমটা, ছোট্ট-খাট্ট চেহারার সাধারণ অথচ দরদী এক মানবীর ছবি ভেসে ওঠে।
আত্মীয়দের মুখে, কথা প্রসঙ্গে দিদার ছোটবেলার যে গল্প শুনি তা হল – দিদা ভবানীপুরের মিত্র বাড়ির মেজ মেয়ে। দিদার বাবার ছবি দেখেছি। খুব লম্বা, গোঁফওলা, রাগি মাস্টারমশাই ধরনের চেহারা। দিদারা চার বোন, দুই ভাই। ছোট ভাই হবার পর সম্ভবত দিদার মা মারা যান। ছোট ভায়ের দায়িত্ব দিদার ছিল। মামাদাদু এখনও দিদার প্রসঙ্গে স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে। দিদা শান্ত, চুপচাপ ধরনের ছিল। ফলে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা শান্ত ভাবে সহ্য করে গেছে। দাদুর মুখে শোনা- কোন কাজে দাদু দিদাদের পাড়ায় যায়, সে সময় দিদা সিঁড়ি পরিষ্কার করছিল। দাদুর দিদাকে পছন্দ হয়, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে দিদার বাবার কাছে যায়। দাদুকে সে সময় নিজের সংসার করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। দিদা সব সময় দাদুর পাশে২ ছিল। আমার স্মৃতিতে দেখি, দাদু শুয়ে আছে, দিদা দাদুর পা টিপছে। দাদু যে বলেছে তা নয়, দিদার ওটা সখের মত ছিল। শেষে দাদু বেশ ভুগে মারা যান। যখন দাদু মারা গেছেন, তখনও দিদা দাদুর পায়ে হাত বুলাচ্ছিল। শুনেছি এখন আমরা যে বাড়িতে আছি এক সময় এখানে শিয়াল ঘুরত। দাদু সবে একটা ঘর তুলেছে, দরজায় মোটা চট ঝুলত। দিদা দিনেরবেলা একা এভাবেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকত। একবার চোরও আসে। তবে শুরু থেকেই দাদু-দিদা কুকুর পুষত-দেশি কুকুর, তাই রক্ষা পায়। পিসির মুখে শুনি দিদার একটা কালো কুচ্কুচে কুকুর ছিল। শান্ত, কিন্তু প্রচন্ড রাগী। সারাক্ষণ দিদার সাথে২ থাকত। অনেক বয়সে দিদার পায়ের উপর মাথা রেখে মারা যায়। এর অনেক পরে জিমি আসে, তাকে আমরা দেখেছি।
দাদু-দিদার তিন ছেলে, এক মেয়ে। পাপা বড়। দাদু ভিষণ রাগী ছিলেন। সবার একটা করে ডাক্ নাম হলেও পাপাকে দাদু ‘বাবি’ আর দিদা ‘তোতন’ ডাকত, তাই মনে হয় পাপা একটু বেশি আদুরে ছিল।
আমার হস্টেল জীবনটাই প্রথম মধুর স্মৃতি। তার আগের স্মৃতি সব বিক্ষিপ্ত ও কিছু কঠোর। তবু সেখানে একমাত্র স্নিগ্ধ ছায়া হল-‘দিদা’। পাপা সারাদিন বাড়ি থাকত না। আমরা ঘুমালে আসত, উঠে দেখতাম কাজে বেরিয়ে গেছে। দাদু হয়ত ভালবাসত, কিন্তু কঠোরতা এত বেশি ছিল যে মধুর স্মৃতি তেমন নেই। দিদা ভোরবেলা খুঁরিয়ে২ আমাকে স্কুলে দিয়ে আসত, দিদার বাত ছিল। বাড়িতে যা থাকত তাই টিফিনে দিয়ে দিত। তখন স্কুলে টিফিনে বন্ধুদের সাথে তা ভাগ করে খেতে লজ্জা লাগত। দাদু বাড়িতে আমাদের পড়াত, আর খুব মারত। বাপ্পাতো বাড়িতে ছোট্ট২ কারণে সারাক্ষণ মার খেত। দাদুর হরেক রকমের লাঠি আর চাবুক পর্যন্ত ছিল! দিদাকে কখন দাদুর উপর কিছু বলতে দেখিনি। শুধু আমি-বাপ্পা প্রচুর মার খেলে দিদা কাঁদতে২ বাতরুমে নিয়ে যেত। কত বিলাপ করতে২ আমাদের তেল মাখাত, চান করাত। কোলের কাছে নিয়ে শুত।
এরপর আমি হস্টেল চলে যাই। শনি-রবি গার্জন ডেট থাকত। পাপা জলপাইগুড়ি চলে গেছে। আমার বাড়ি থেকে খুবই কম কেউ আসত। তবু আমি সেজেগুজে বসে থাকতাম। দূর থেকে দিদাকে খুঁরিয়ে২ আসতে দেখলে মনটা কানায়২ আনন্দে ভরে উঠত। দিদা চিড়ে-মুড়ি-মুরকি-বাতাসা-মিষ্টি এসব আনত। পাপা খুব কম আস্তে পারত। এলে এই বড় পুতুল, বড়২ চিপ্সের প্যাকেট, কেক, বিস্কুট এসব আনত। যেহেতু পাপার আসা সম্ভব হতনা, তাই হয়ত দিদা সব সময় আসার চেষ্টা করত। কিন্তু দিদা একা কখন দূরে কোথাও যেত না। তবু আমার জন্য মাঝে মাঝেই একা বাসে করে হস্টেলে চলে আসত। চোখে তেমন ভাল দেখত না। উঁচু করে শাড়ি পরত, বাসে উঠবে বলে। একবার মনে আছে উল্টো শাড়ি পরেই চলে আসে।
এরপর আমি জলপাইগুড়ি চলে যাই। দাদু-দিদা প্রতি বছর কিছু সময় ওখানে কাটাত। তখন দেখেছি দাদু অনেক শান্ত হয়ে গেছে। সে সময় দিদাকে মনে পরে আচার প্রসঙ্গে। দিদা এত্ত ভাল আচার মাখত, কি বলব! লিখতে২ জিভে জল আসছে। কত্বেলের আচার –সর্ষের তেল, কাঁচা লঙ্কা, নুন দিয়ে মাখা, অসাধারণ! এছাড়া, কুল, তেঁতুল, লেবুর আচারও বানাত। কলকাতা থেকে শিশি করে নিয়েও যেত। জলপাইগুড়িতে রান্না করতে হত না। কিন্তু কোন কারণে একবার দিদা রান্না করে। কাঁচকলা আমি একদম পছন্দ করি না। কিন্তু দিদা সেই কাঁচকলার কোপ্তা এত সুন্দর রান্না করে যে কি বলব! ইস্! পাপার রান্না সম্পর্কে আগের লেখাতে জানানোই হয়নি! একবার পাপাকে মাংস রান্না করতে হয়। আমিই করতাম, কিন্তু খুব দরকারে বন্ধুর বাড়ি যেতে হয়। পাপা বল্ল তুই যা, আমি করব। ফেরার সময় ভাবছি পাপা কি কান্ডই না করে বসে থাকবে! কিন্তু এসে দেখি বড় সুন্দর পাত্রে অপুর্ব মাংস পাপা রান্না করে রেখেছে। আমি আর বাপ্পা সারাদিন তুলে২ খেলাম।
তো, দিদার কথা বলছিলাম। দিদা হয়ত পাপাকে একটূ বেশি প্রশ্রয় দিত। মনে আছে পাপা দিদার পিছু২ কিছু একটা চেয়ে ঘুর২ করে ফিরছে। পরে বাপ্পাটাও পাপার পিছু২ ওমন ঘুরত। দিদা কিন্তু খুব খিঁচ-খিঁচও করত। আবার ভালোও বাসত।
দাদু মারা যাবার পর দিদা খুব একা হয়ে যায়। দিদা আসলে দাদুর ছায়া হয়ে গেছিল। তের বছর বয়সে দিদার বিয়ে হয়। ফলে দাদু যেতে যেন দিদার অস্তিত্বই হারিয়ে যায়। আর জলপাইগুড়ি যেতে চাইত না। শেষে খবর পেতেম সিঁড়ি থেকে, চেয়ার থেকে পড়ে গেছে। পা দুটো বরাবর কম জোরি ছিল। বাততো ছিলই! শেষে কলকাতায় যখন এলাম তখন দিদা পুর শষ্যাশায়ী। শিশুর মত হয়ে যায়। সূপর্ণাদি দেখভাল করত। তার উপর তাও একটু বকাবকি করত। সে যেতে একদম শান্ত, চুপচাপ হয়ে যায়। খুব কম কথা বলত। অনেকদিন একভাবে শুয়ে ছিল। খুব কষ্ট হত দেখে। তখন বোকা ছিলাম, বরাবর ভাবতাম দাদু তেমন হয়ত দিদাকে ভালবাসত না। একদিন কথা প্রসঙ্গে জিঞ্জেসও করলাম। ফোগ্লা মুখে দিদা একগাল হেসে ফেলল। দেখে এত ভাল লাগল! নাঃ, দাদু অবশ্যই দিদাকে খুব ভালবাসত। দাদু যেতে দিদা তাই এত একা।
দিদা আমার বরাবর দাদুর আড়ালেই থেকেছে। আজও সবাই বেশি দাদুর কথাই বলে। তবু আমার সাদাসিধে, ছোট্টখাট্ট দিদার কথা খুব মনে পরে। বাপ্পাও দিদাকে খুব ভালবাসে। যখন আমরা শিশু তখন ভিন্ন পরিবেশে কেবল দিদাই আমাদের ডানা দিয়ে আগলেছিল, লুকিয়ে২ অনেক স্নেহ করেছিল। যে কারণে আজও দিদার প্রতি কৃতঞ্জতা বোধ করি।
আত্মীয়দের মুখে, কথা প্রসঙ্গে দিদার ছোটবেলার যে গল্প শুনি তা হল – দিদা ভবানীপুরের মিত্র বাড়ির মেজ মেয়ে। দিদার বাবার ছবি দেখেছি। খুব লম্বা, গোঁফওলা, রাগি মাস্টারমশাই ধরনের চেহারা। দিদারা চার বোন, দুই ভাই। ছোট ভাই হবার পর সম্ভবত দিদার মা মারা যান। ছোট ভায়ের দায়িত্ব দিদার ছিল। মামাদাদু এখনও দিদার প্রসঙ্গে স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে। দিদা শান্ত, চুপচাপ ধরনের ছিল। ফলে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা শান্ত ভাবে সহ্য করে গেছে। দাদুর মুখে শোনা- কোন কাজে দাদু দিদাদের পাড়ায় যায়, সে সময় দিদা সিঁড়ি পরিষ্কার করছিল। দাদুর দিদাকে পছন্দ হয়, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে দিদার বাবার কাছে যায়। দাদুকে সে সময় নিজের সংসার করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। দিদা সব সময় দাদুর পাশে২ ছিল। আমার স্মৃতিতে দেখি, দাদু শুয়ে আছে, দিদা দাদুর পা টিপছে। দাদু যে বলেছে তা নয়, দিদার ওটা সখের মত ছিল। শেষে দাদু বেশ ভুগে মারা যান। যখন দাদু মারা গেছেন, তখনও দিদা দাদুর পায়ে হাত বুলাচ্ছিল। শুনেছি এখন আমরা যে বাড়িতে আছি এক সময় এখানে শিয়াল ঘুরত। দাদু সবে একটা ঘর তুলেছে, দরজায় মোটা চট ঝুলত। দিদা দিনেরবেলা একা এভাবেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকত। একবার চোরও আসে। তবে শুরু থেকেই দাদু-দিদা কুকুর পুষত-দেশি কুকুর, তাই রক্ষা পায়। পিসির মুখে শুনি দিদার একটা কালো কুচ্কুচে কুকুর ছিল। শান্ত, কিন্তু প্রচন্ড রাগী। সারাক্ষণ দিদার সাথে২ থাকত। অনেক বয়সে দিদার পায়ের উপর মাথা রেখে মারা যায়। এর অনেক পরে জিমি আসে, তাকে আমরা দেখেছি।
দাদু-দিদার তিন ছেলে, এক মেয়ে। পাপা বড়। দাদু ভিষণ রাগী ছিলেন। সবার একটা করে ডাক্ নাম হলেও পাপাকে দাদু ‘বাবি’ আর দিদা ‘তোতন’ ডাকত, তাই মনে হয় পাপা একটু বেশি আদুরে ছিল।
আমার হস্টেল জীবনটাই প্রথম মধুর স্মৃতি। তার আগের স্মৃতি সব বিক্ষিপ্ত ও কিছু কঠোর। তবু সেখানে একমাত্র স্নিগ্ধ ছায়া হল-‘দিদা’। পাপা সারাদিন বাড়ি থাকত না। আমরা ঘুমালে আসত, উঠে দেখতাম কাজে বেরিয়ে গেছে। দাদু হয়ত ভালবাসত, কিন্তু কঠোরতা এত বেশি ছিল যে মধুর স্মৃতি তেমন নেই। দিদা ভোরবেলা খুঁরিয়ে২ আমাকে স্কুলে দিয়ে আসত, দিদার বাত ছিল। বাড়িতে যা থাকত তাই টিফিনে দিয়ে দিত। তখন স্কুলে টিফিনে বন্ধুদের সাথে তা ভাগ করে খেতে লজ্জা লাগত। দাদু বাড়িতে আমাদের পড়াত, আর খুব মারত। বাপ্পাতো বাড়িতে ছোট্ট২ কারণে সারাক্ষণ মার খেত। দাদুর হরেক রকমের লাঠি আর চাবুক পর্যন্ত ছিল! দিদাকে কখন দাদুর উপর কিছু বলতে দেখিনি। শুধু আমি-বাপ্পা প্রচুর মার খেলে দিদা কাঁদতে২ বাতরুমে নিয়ে যেত। কত বিলাপ করতে২ আমাদের তেল মাখাত, চান করাত। কোলের কাছে নিয়ে শুত।
এরপর আমি হস্টেল চলে যাই। শনি-রবি গার্জন ডেট থাকত। পাপা জলপাইগুড়ি চলে গেছে। আমার বাড়ি থেকে খুবই কম কেউ আসত। তবু আমি সেজেগুজে বসে থাকতাম। দূর থেকে দিদাকে খুঁরিয়ে২ আসতে দেখলে মনটা কানায়২ আনন্দে ভরে উঠত। দিদা চিড়ে-মুড়ি-মুরকি-বাতাসা-মিষ্টি এসব আনত। পাপা খুব কম আস্তে পারত। এলে এই বড় পুতুল, বড়২ চিপ্সের প্যাকেট, কেক, বিস্কুট এসব আনত। যেহেতু পাপার আসা সম্ভব হতনা, তাই হয়ত দিদা সব সময় আসার চেষ্টা করত। কিন্তু দিদা একা কখন দূরে কোথাও যেত না। তবু আমার জন্য মাঝে মাঝেই একা বাসে করে হস্টেলে চলে আসত। চোখে তেমন ভাল দেখত না। উঁচু করে শাড়ি পরত, বাসে উঠবে বলে। একবার মনে আছে উল্টো শাড়ি পরেই চলে আসে।
এরপর আমি জলপাইগুড়ি চলে যাই। দাদু-দিদা প্রতি বছর কিছু সময় ওখানে কাটাত। তখন দেখেছি দাদু অনেক শান্ত হয়ে গেছে। সে সময় দিদাকে মনে পরে আচার প্রসঙ্গে। দিদা এত্ত ভাল আচার মাখত, কি বলব! লিখতে২ জিভে জল আসছে। কত্বেলের আচার –সর্ষের তেল, কাঁচা লঙ্কা, নুন দিয়ে মাখা, অসাধারণ! এছাড়া, কুল, তেঁতুল, লেবুর আচারও বানাত। কলকাতা থেকে শিশি করে নিয়েও যেত। জলপাইগুড়িতে রান্না করতে হত না। কিন্তু কোন কারণে একবার দিদা রান্না করে। কাঁচকলা আমি একদম পছন্দ করি না। কিন্তু দিদা সেই কাঁচকলার কোপ্তা এত সুন্দর রান্না করে যে কি বলব! ইস্! পাপার রান্না সম্পর্কে আগের লেখাতে জানানোই হয়নি! একবার পাপাকে মাংস রান্না করতে হয়। আমিই করতাম, কিন্তু খুব দরকারে বন্ধুর বাড়ি যেতে হয়। পাপা বল্ল তুই যা, আমি করব। ফেরার সময় ভাবছি পাপা কি কান্ডই না করে বসে থাকবে! কিন্তু এসে দেখি বড় সুন্দর পাত্রে অপুর্ব মাংস পাপা রান্না করে রেখেছে। আমি আর বাপ্পা সারাদিন তুলে২ খেলাম।
তো, দিদার কথা বলছিলাম। দিদা হয়ত পাপাকে একটূ বেশি প্রশ্রয় দিত। মনে আছে পাপা দিদার পিছু২ কিছু একটা চেয়ে ঘুর২ করে ফিরছে। পরে বাপ্পাটাও পাপার পিছু২ ওমন ঘুরত। দিদা কিন্তু খুব খিঁচ-খিঁচও করত। আবার ভালোও বাসত।
দাদু মারা যাবার পর দিদা খুব একা হয়ে যায়। দিদা আসলে দাদুর ছায়া হয়ে গেছিল। তের বছর বয়সে দিদার বিয়ে হয়। ফলে দাদু যেতে যেন দিদার অস্তিত্বই হারিয়ে যায়। আর জলপাইগুড়ি যেতে চাইত না। শেষে খবর পেতেম সিঁড়ি থেকে, চেয়ার থেকে পড়ে গেছে। পা দুটো বরাবর কম জোরি ছিল। বাততো ছিলই! শেষে কলকাতায় যখন এলাম তখন দিদা পুর শষ্যাশায়ী। শিশুর মত হয়ে যায়। সূপর্ণাদি দেখভাল করত। তার উপর তাও একটু বকাবকি করত। সে যেতে একদম শান্ত, চুপচাপ হয়ে যায়। খুব কম কথা বলত। অনেকদিন একভাবে শুয়ে ছিল। খুব কষ্ট হত দেখে। তখন বোকা ছিলাম, বরাবর ভাবতাম দাদু তেমন হয়ত দিদাকে ভালবাসত না। একদিন কথা প্রসঙ্গে জিঞ্জেসও করলাম। ফোগ্লা মুখে দিদা একগাল হেসে ফেলল। দেখে এত ভাল লাগল! নাঃ, দাদু অবশ্যই দিদাকে খুব ভালবাসত। দাদু যেতে দিদা তাই এত একা।
দিদা আমার বরাবর দাদুর আড়ালেই থেকেছে। আজও সবাই বেশি দাদুর কথাই বলে। তবু আমার সাদাসিধে, ছোট্টখাট্ট দিদার কথা খুব মনে পরে। বাপ্পাও দিদাকে খুব ভালবাসে। যখন আমরা শিশু তখন ভিন্ন পরিবেশে কেবল দিদাই আমাদের ডানা দিয়ে আগলেছিল, লুকিয়ে২ অনেক স্নেহ করেছিল। যে কারণে আজও দিদার প্রতি কৃতঞ্জতা বোধ করি।
Subscribe to:
Posts (Atom)