Blog Archive

Sunday, February 22, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮০

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে ভাই ধৃষ্টদ্যুম্ন ক্ষত্রিয়দের বারবার লক্ষ্যভেদের জন্য অনুরোধ জানাতে লাগলেন...শেষে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় লক্ষ্য ভেদ করতে উঠলেন... তিনি গুরুজনদের প্রণাম জানালেন...কৃষ্ণ বলরামকে বলেন তিনি অর্জুনকে সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন ... ] 

অর্জ্জুনের লক্ষ্যবিদ্ধ করণঃ 
 

অর্জুন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন। যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণদের দিকে তাকিয়ে বললেন –লক্ষ্যভেদকারী ব্রাহ্মণ আপনাদের প্রণাম জানাচ্ছেন। আপনারা সবাই তাকে আশীর্বাদ করুন। 
শুনে ব্রাহ্মণমন্ডলী ‘স্বস্তি, স্বস্তি’ রবে কল্যাণবানী শোনালেন ও লক্ষ্যভেদ করে দ্রুপদনন্দিনীকে প্রাপ্তির আশীর্বাদ জানান। 

ধনুক নিয়ে ধনঞ্জয় অর্জুন পাঞ্চালরাজকে বলেন –নিশ্চিত করে বলুন কি বিদ্ধ করব এবং সেটি কোথায় স্থাপিত। 

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেন –এই জলে দেখুন। চক্রছিদ্রপথে মৎস দেখতে পাবেন। সোনার মাছ তাঁর মাণিক নয়ন। সেই মাছের চোখে যিনি লক্ষ্যভেদ করবেন তিনিই আমার ভগিনীর বল্লভ(পতি) হবেন। 

এত শুনে পার্থ মহাবীর জলের দিকে তাকিয়ে ঊর্দ্ধবাহু করে আকর্ণ গুণ টেনে অধোমুখে বাণ ছারেন। জগন্নাথ কৃষ্ণও তাঁর সুদর্শন অদৃশ্য করেন। সহজেই অর্জুনের শর মৎসচক্ষু ছেদ করল। মহা শব্দে শর মৎসকে ছেদ করেই পুনরায় তাঁর সামনে এলো। 

আকাশ থেকে দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করলেন। সভার ব্রাহ্মণরা ‘জয়, জয়’ ধ্বনি দিতে লাগলেন। লক্ষ্যভেদ হয়েছে –এই বলে মহা হৈহল্লা শুরু হল। 
দেখে শুনে সব রাজারা অবাক হল। 

হাতে দৈয়ের পাত্র ও পুষ্পমালা নিয়ে দ্রুপদকন্যা ব্রাহ্মণরূপী অর্জুনকে বরণ করতে এলেন। সকল রাজারা বিস্মিত হয়ে তাকে ডেকে ‘রহ, রহ’ ডাক দিল। 
তারা যাজ্ঞসেনী(দ্রৌপদী)কে বাঁধা দিয়ে বলে –এতো ভিক্ষুক, দরিদ্র হীনজাতি। লক্ষ্যভেদ করার শক্তি এ পায় কোথা থেকে! মিথ্যে কেন ব্রাহ্মণমন্ডলী গোলমাল কর। গোল করে বামুনের কন্যা পাওয়ার ইচ্ছা। ব্রাহ্মণ বলেই সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। না হলে এর উচিত শিক্ষা আমরা দিতে পারি। পাঁচক্রোশ উপরে লক্ষ্য শূণ্যে আছে। লক্ষ্য ঠিকঠাক বিদ্ধ হল কিনা কে যানে ‘বিঁধেছে, বিঁধেছে’ করে লোক জানানো হচ্ছে! দেখি কোথায় মৎস আর তা কেমন বিদ্ধ হয়েছে। 

তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন সহ বহু ব্রাহ্মণ জলে তা দেখতে গেল। দুষ্টেরা বলল বেঁধেনি, শিষ্টেরা বলল বিঁধেছে। 
দুষ্টমতির লোকজন বলতে লাগল -ছায়া দেখে কিভাবে বিশ্বাস হবে। শূণ্য থেকে যদি মাছটা কেটে পড়ত তবে বোঝা যেত। যদি সত্যিই শক্তি থাকে তবে মাছটাকে কেটে পাড়। সব শুনে বিস্মিত হলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। 

তখন বীর অর্জুন হেসে বলেন –অকারণে কেন সবাই মিথ্যে বিবাদ কর। যে মিথ্যে কথা বলে তাঁর দ্বারা আসলে কোন কাজ হয় না। জলের তিলক কতক্ষণ কপালে থাকে, তেমনি শূণ্যে শিলা মারলে কতক্ষণ তা শূণ্যে থাকে! সব সময় দিন বা রাত্রি থাকে না। মিথ্যে মিথ্যেই। তেমনি সত্য যা তা সত্য বলেই লোকের কাছে সত্য। অকারণে মিথ্যে বলে সব নষ্ট করলে। সবাই দেখুক আমি লক্ষবার এমন লক্ষ্যভেদ করে দেখাতে পারি। তাই একবার নয়, যতবার বলবে ততবার লক্ষ্যভেদ করে এই সভাতেই দেখাতে পারি। 

 
এই বলে অর্জুন তীর ধনুক তুলে নিলেন। ধনুকে গুণ পরিয়ে আকর্ণ টেনে তীর ছুড়লেন দৃঢ ভাবে। সুরাসুর-নাগ-নর সকলে কৌতুহলের সঙ্গে দেখলেন লক্ষ্য কেটে সভার সামনে পরল। দেখে সব রাজারা অবাক হল। ব্রাহ্মণরা আবার জয় জয় ধ্বনি দিতে লাগল। 
হাতে দধিপাত্র ও মালা নিয়ে দ্রৌপদী সুন্দরী পার্থের কাছে গিয়ে কৃতাঞ্জলি করেন। কিন্তু অর্জুন দধিমাল্য দিতে বারণ করলেন। 

দেখে রাজারা অনুমান করে বলে –দেখ ব্রাহ্মণ নিজেই বরণ করতে নিষেধ করছে। সহজেই বোঝা যায় দরিদ্র ব্রাহ্মণের অন্নও হয়ত মেলে না। পায়ে ছিন্ন পাদুকা, অতি দরিদ্র তাই পরিধানে জীর্ণ বস্ত্র, তেলহীন চুল জটায় আচ্ছন্ন। এমন লোকের ঘরে কি রাজকন্যা শোভা পায়! সেই জন্য বরণ করতে বারণ করছে। আসলে এ ধনলোভী। ব্রহ্মতেজে, তপস্যার সাহায্যে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হয়েছে। যার অন্ন পর্যন্ত নেই তাঁর কাছে গিয়ে কন্যা কি করবে। চর পাঠিয়ে খোঁজ নাও দেখবে এই ব্রাহ্মণের মনে অনেক ধন প্রত্যাশা আছে। 

এই বলে রাজারা বিচার করে অর্জুনের কাছে ব্রাহ্মণদূত পাঠালো। দূত অর্জুনের কাছে গিয়ে বলে –শুনুন ব্রাহ্মণ! রাজারা আমায় আপনার কাছে পাঠালেন। তাদের কথাই আমি আপনার সামনে নিবেদন করছি। তোমার মত অসাধ্য কর্ম কেউ করতে পারেনি। দুর্যোধন আপনাকে নিবেদন করেছেন যে তিনি আপনাকে তাঁর সভার মুখ্যপাত্র করে রাখবেন। বহু রাজ্য, দেশ, ধন ও নানা রত্ন দেবেন। একশত কুমারী ব্রাহ্মণ কন্যার সাথে বিবাহ দেবেন। আর যা যা চাইবেন সবই তিনি দিতে সক্ষম। কেবল তার পরিবর্তে তাকে দ্রুপদকন্যা দান করতে হবে। 

শুনে অর্জুন আগুনের মত জ্বলে উঠলেন। দুই চোখ লাল করে তিনি দূতকে বলেন –ওহে দ্বিজ, কি কথা বল! তুমি অবধ্য ব্রাহ্মণ তাই আজ বেঁচে গেলে আমার হাত থেকে। যদিও তোমার কিবা দোষ! তুমিতো দূত মাত্র। ঠিক আছে আবার আমার দূত হয়ে যাও। দুর্যোধন আর অন্য রাজাদেরও বলো তাদের যদি মনে ইচ্ছে থাকে ধনের তবে আমি সবাইকে পৃথিবী জয় করে কুবেরের নানা ধনরত্ন এনে দেব। কেবল তোমাদের সবার স্ত্রীকে আমায় দান করতে হবে। এই কথা তুমি সভাস্থলেই বলবে। 

একথা শুনে দ্রুত দ্বিজদূত সভায় গিয়ে রাজাদের সামনে সব কথা বললো। জ্বলন্ত আগুনে ঘি পরলে যেমন জ্বলে তেমনি সব শুনে রাজারা ক্রোধে বলে –দেখ কেমন বামুনের মতিচ্ছন্ন হয়েছে। লক্ষ্যভেদ করে তাঁর অহঙ্কার হয়েছে। রাজাদের এমন কথা বলার সাহস সে যখন দেখালো এর উচিত শাস্তিও সবাই মিলে দেবো। প্রাণের আশা থাকলে কেউ রাজাদের এত বড় কথা বলতে সাহস পায় না। ব্রাহ্মণ বলে ভাবছে যা খুশি করতে পারে, কেউ মারবে না। কিন্তু একে মারলে কোন পাপ হবে না। এমন কুৎসিত বাক্য কে সহ্য করবে। বিশেষ করে এ স্বয়ম্বর ব্রাহ্মণের জন্য ছিল না। ক্ষত্রিয়ের স্বয়ম্বরে বামুনের কি কাজ! বামুন হয়ে কন্যা নিয়ে গেলে তা ক্ষত্রিয়কূলের লজ্জা হবে। এ যদি বেঁচে থাকে তবে সব ব্রাহ্মণও এর মত দুষ্ট মতির হবে। সে কারণে একে ক্ষমা করা যায় না। অন্য কোন স্বয়ম্বরে যেন এমন না হয় সেটা আমাদেরই লক্ষ্য রাখতে হবে। দ্রুপদরাজার ভাগ্যটাই খারাপ। আমাদের কথা না শুনে অহঙ্কার করে ব্রাহ্মণদের লক্ষ্যভেদে আহ্বান জানাতে গেল। যে কন্যাকে ঈশ্বর, কিন্নররাও মনে মনে চায় সে যাবে দরিদ্র বামুনের ঘরে! এ কুৎসিত কাজ কে সহ্য করতে পারে! আজ দ্রুপদকেও মারতে হবে তাঁর পুত্রের সাথে। সেই সাথে এই ব্রাহ্মণকেও বধ করতে হবে। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সদা শুনে পুণ্যবান। 
................................... 

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৯

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে রাজারাকেউই লক্ষ্যভেদে সক্ষম হল না...রাজারা ক্রুদ্ধ হল...শ্রীকৃষ্ণ বলরামকে বলেন এক মাত্র অর্জুনই এ লক্ষ্য ভেদ করবেন...দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্ন ক্ষত্রিয়দের বারবার লক্ষ্যভেদের জন্য অনুরোধ জানাতে লাগলেন...শেষে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় লক্ষ্য ভেদ করতে উঠলেন...

অর্জুনের লক্ষ্যভেদে গমনঃ 

 

রাজারা যখন পরস্পর আলোচনায় ব্যস্ত সে সময় কুন্তীপুত্র অর্জুন ধনুকের কাছে যান। প্রথমেই তিনি তিনবার ধনুকটিকে প্রদক্ষিণ করেন। বরদাতা মহাদেবকে প্রণাম জানালেন। বাম হাতে অনায়াসে ধনুক তুলে নিলেন। কর্ণের পরান গুণ খুলে ফেললেন। পুনরায় গুণ পরিয়ে ধনুকে টঙ্কার দিলেন। সেই শব্দে সকলের কানে তালা লেগে গেল। 

মনে মনে তিনি গুরুকে প্রণাম করতে চাইলেন। কিন্তু এই অজ্ঞাতবাসকালে ছদ্মবেশে কিভাবে তা সম্ভব! 
গুরু দ্রোণাচার্য এক সময় বলেছিলেন –আমাকে যদি প্রণাম করতে চাও তাহলে প্রথমে এক অস্ত্র মেরে সম্বোধন করবে। অন্য অস্ত্র মেরে পায়ে প্রণাম জানাবে। সে কথা মনে করে পার্থ চিন্তা করলেন এবং দুটি তীর ছুঁড়লেন। বরুণ অস্ত্রে গুরুর চরণ ধৌত করলেন। অন্যটি গুরুর চরণের সামনে এসে তাঁকে প্রণাম জানালেন। 

দ্রোণাচার্য আশ্চর্য হয়ে আশীর্বাদ জানালেন। 
দ্রোণ বিস্মিত হয়ে চিন্তিত হন –এই আমার প্রিয় শিষ্য অর্জুন হবে। 
কুরুশ্রেষ্ঠ পিতামহ গঙ্গাপুত্র ভীষ্মকেও অর্জুন নমস্কার জানালেন। 

দ্রোণ তখন ভীষ্মকে বলেন -শান্তনুপুত্র! দেখুন যে ব্রাহ্মণ লক্ষ্যভেদ করতে উঠেছেন, তিনি আপনাকে প্রণাম জানাচ্ছেন। 

ভীষ্ম বলেন –আমি ক্ষত্রিয়, উনি ব্রাহ্মণ হয়ে আমাকে কি কারণে প্রণাম জানাচ্ছেন! 

দ্রোণ বলেন -ইনি কখনই ব্রাহ্মণ হতে পারেন না। ক্ষত্রিয়কুলশ্রেষ্ঠ কেউ এমন ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ নিয়েছেন। যে বিদ্যা এখনি আমাদের সামনে ইনি দেখালেন এ কেবল আমার প্রিয় শিষ্যের পক্ষেই সম্ভব। বড় বড় রাজারাও যা জানেন না, তা ভিক্ষু ব্রাহ্মণ শিখবে কি ভাবে। বিশেষ করে ইনি আপনাকে যে ভাবে প্রণাম জানাচ্ছেন তাতে বোঝা যায় ইনি আপনার বংশেই জন্মেছেন।এখনি এ ছদ্মবেশ মুছে যাবে, কতক্ষণ জ্বলন্ত আগুনকে লুকিয়ে রাখা যায়! 

ভীষ্ম বলেন –তাই তো! আমিও তাই ভাবছি, একে যেন কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে। ওর সুন্দর চন্দ্রমুখ দেখে আমার যে অন্তরে কি দুঃখ জন্মাচ্ছে বলে বুঝাতে পারব না। বলুন গুরুদেব আপনি এর সম্পর্কে আর কি কি জানেন। কার পুত্র, কি এঁনার নাম! 

দ্রোণাচার্য বলেন –আমি এখনি এঁনার পরিচয় প্রকাশ করতে পারি। তবে স্বপক্ষ ও বিপক্ষ দেখে মনে ভয় হয়। বিশেষ করে যে অনেকদিন মৃত বলে সবাই জানে, তাঁর নাম নেওয়া ঠিক হবে কিনা ভাবছি। 

ভীষ্ম আকুল হয়ে প্রশ্ন করেন –গুরুদেব বলুন কি ভয় পাচ্ছেন! কে মারা গেছে! কার কথা ভাবছেন! 

দ্রোণ বলেন –যে বিদ্যা ইনি দেখালেন, এ আমার প্রিয় পার্থ ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অনেকদিন আগে আমি অর্জুনকে বলেছিলাম তোমার মত আর কাউকে আমি শিষ্য করব না। সে কারণেই এই বিদ্যা কেবল তোমাকেই দিচ্ছি। আমাকে একদিন আমার গুরু ভৃগুপুত্র পরশুরাম যা শিখিয়েছিলেন নিজপুত্র অশ্বত্থামাকেও তা না শিখিয়ে তোমাকে শেখালাম। আজ তাই ইনি দেখালেন, তাই আমার মন বলছে ইনি অর্জুন ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না। 

পার্থ অর্জুনের নাম শুনে পিতামহ ভীষ্ম শোকাকুল হলেন। দুই চক্ষু দিয়ে অঝরে জল ঝরতে লাগল। 
তিনি আকুল হয়ে বললেন –কি বললেন আচার্য! একি কাজ করলেন! নিভন্ত অগ্নিকে জ্বালিয়ে আমার অন্তরকে আবার দগ্ধ করছেন! বারো বছর হয়ে গেল তাদের কথা শুনলাম না, দেখতেও পেলাম না। সেই সাধু পুত্রদের আর কোথায় পাবো! 
এই বলে ভীষ্ম ক্রন্দন করতে লাগলেন। 

দ্রোণ বলেন –ভীষ্ম, শোক ত্যাগ করুন। নিশ্চিন্ত ভাবে জানুন ইনিই কুন্তীর পুত্র। দেবতার সাহায্যে পঞ্চপান্ডবের জন্ম। সকলে বলে তারা মৃত কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা জীবিত আছেন। বিদুরের মন্ত্রণায় তারা অবশ্যই বেঁচে গেছে- একথা আমি দিনরাত ভাবি। মুনিদের এমন উক্তিও শোনা যায় এই পৃথিবীর ভূমিতে পান্ডবদের মরণ নেই। 

এই কথা শুনে বীর ভীষ্ম ক্রন্দন ত্যাগ করলেন এবং দুজনেই আনন্দমনে আশীর্বাদ জানালেন -যদি এই কুন্তীপুত্র ফাল্গুনি(অর্জুন) হন তবে ইনিই লক্ষ্যভেদ করে দ্রুপদ নন্দিনীকে গ্রহণ করুন। 

এরপর পার্থ যোড়হাতে কৃষ্ণকে প্রণাম জানালেন। এঁনার হাতেই তাঁর জন্য পাঞ্চজন্য শঙ্খবাদ্য বেজে উঠেছে। দেখে কৃষ্ণ হেসে তাকে শুভেচ্ছা জানালেন। 
হেসে কৃষ্ণ বলরামকে বলেন – দেখুন হে, রেবতীর স্বামী! আপনাকেও ইন্দ্রের পুত্র পার্থ প্রণাম জানাচ্ছেন। আশীর্বাদ করুন পার্থ যেন লক্ষ্যভেদে সক্ষম হন। 
শুনে বলরামের হৃদয় চঞ্চল হল। তিনি বলেন –অর্জুন লক্ষ্যভেদে সক্ষম হবেন। কিন্তু কন্যা নিয়ে যাওয়ার সাধ্য হবে না। একা ধনঞ্জয়ের এত শত্রু! এক লক্ষ রাজারা সসৈন্য এসেছেন। অনুপমরূপা কৃষ্ণা মদনমোহিনী, তিনি সবার মন হরণ করেছেন। সে জন্য সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করবে। কন্যাকে নিয়ে যুদ্ধ আসন্ন। বিশেষত পার্থকে সকলে ব্রাহ্মণ বলেই জানছেন। এতজনকে একা পার্থ অর্জুন কি ভাবে পরাজিত করবেন! 

কৃষ্ণ বলেন –দুষ্টরা অন্যায় করবে আর আমরা বসে কি তা দেখবো! আমার সামনে যদি এমন বলপ্রয়োগ করে তবে আমার জগন্নাথ নাম মিথ্যে। জগতে সৎ ব্যক্তির অন্তে আমি হই ত্রাতা, দুর্বলের বল ও সর্ব ফলদাতা। আমিই যদি উপযুক্ত ফলপ্রদান না করি তবে জগন্নাথ নাম ধারণ করব কেন! সুদর্শনচক্রে সকল দুষ্টমতিকে বিনষ্ট করব। পূর্বেও পরশুরাম পৃথিবীকে ক্ষত্রিয় শূণ্য করেছিলেন। আমিও প্রয়োজনে পৃথিবীর ভার লাঘব করব। সে জন্যেই পৃথিবীতে আমার জন্ম। 

গোবিন্দের কথায় বলরাম মনে মনে চিন্তিত হলেন। কৃষ্ণের অনুরোধে তিনি অর্জুনকে আশীর্বাদ করলেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত লহরী, কাশীরাম দাস কহেন যা শুনলে সব পাপে পার হয় মানব-মানবী। 
................................... 

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers