
ধার্মিক, মহাধনুর্দ্ধর রাজা বনে মৃগয়া(শিকার) করতে যান।

তিনি কন্যার কাছে গিয়ে তার পরিচয় জানতে চাইলেন।
তার রূপে রাজা মুগ্ধ। তিনি তাকে তার নারী হতে অনুরোধ করলেন।
কন্যা বলেন –রাজা, আমি তোমার স্ত্রী হবো, কেবল একটি নিবেদন। আমার কোন কাজে তুমি বাধা দেবে না, নিষেধও করবে না। যেদিন তুমি এর বিরোধীতা করবে, সেদিনই আমি তোমায় ত্যাগ করবো।

রাজা দিব্যরত্ন ভূষণে স্ত্রীকে সাজালেন। সর্বদা তাকে তুষিলেন। এভাবে মহাসুখে শান্তনু গঙ্গার সাথে অবস্থান করলেন।
ধিরে ধিরে অষ্টবসু শান্তনুর গৃহে পূর্ণশশীরূপে জন্ম নিতে লাগল। পুত্রের রূপ দেখে শান্তনু খুশি হলেন। নানা দান, যজ্ঞ করলেন।


ক্রুদ্ধ হয়ে শান্তনু গঙ্গাকে বলেন –কে তুমি মায়াবী! কোথা থেকে এলে! তোমার মত নিন্দিতা পৃথিবীতে দেখা যায় না, যে নিজ গর্ভের সন্তানকে নিজে হত্যা করে। কিভাবে তুমি নিজের সন্তানদের হত্যা করো, হে পাষানী!
এতো বলে নিজপুত্রকে কোলে তুলে নিলেন।
গঙ্গা বলেন –রাজা, পুত্র বাঞ্ছা করলে! তুমি আর আমায় চাও না। এই পুত্রটিকে তুমি যত্ন করে পালন করো। এবার আমি তোমায় নিজ পরিচয় দেবো।
রাজা বলেন -পূর্বের কথা বলো। কি কারণে বসুদের বশিষ্ট শাপ দিলেন।
গঙ্গা বলেন –বরুণের পুত্র বশিষ্ট মুনি। হিমালয় পর্বতে তার তপোবন। নানা ফলফুলে তার বন শোভিত। দক্ষ-কন্যা সুরভি তার গৃহিনী। কামধেনু তাদের কন্যা।
একদিন অষ্টবসুরা(ভব, ধ্রুব, সোম, বিষ্ণু, অনিল, অনল, প্রত্যুষ ও প্রভব-এরা দক্ষের কন্যা বসুর পুত্র)তাদের স্ত্রীদের সাথে সেই বনে উপস্থিত হলেন। তারা মুনির তপোবনে স্ত্রীদের সাথে ভ্রমণ করছিলেন।
প্রভব বা দিব্যবসুর স্ত্রী কামধেনুকে দেখে মুগ্ধ হলেন। স্বামীকে এই গাভীটি সম্পর্কে জানতে চাইলেন।

দিব্যবসু বলেন এটি মুনি বশিষ্টের গাভী। এর অনেক গুণ। এর একপলা দুধও যদি নরলোক পায় তবে তা পান করে দশ সহস্র বছর বাঁচা যায় এবং চির যৌবন প্রাপ্ত হয়।

স্ত্রীর বশ হয়ে বসু গাভীটি নিয়ে নিজ গৃহে যান।
এ সময় বশিষ্ট আশ্রমে ফিরে এসে গাভী দেখতে না পেয়ে তাকে খুঁজতে বের হন। অনেক খুঁজেও যখন পেলেন না, তখন চিন্তিত হয়ে ধ্যানে বসে জানতে পারেন অষ্টবসুর গৃহে তার গাভী হরণ করে নিয়ে গেছে।
মুনি বলেন –আমার বাক্য খন্ডন হবে না। প্রতি বছর একজন করে মুক্তি পাবে। তবে যে গাভীটি চুরি করেছে সেই দিব্যবসু পৃথিবীতে থেকে যাবে। সে ধার্মিক, সর্বশাস্ত্রবিশারদ, পিতার প্রিয়কারী এবং স্ত্রীসম্ভোগত্যাগী হবে। পরে যদিও মুক্তি পাবে।
এরপর গঙ্গা বলেন -মুনির শাপে কাতর বসুরা আমাকে স্তব করল এবং প্রার্থনা করল জন্ম মাত্র যেন তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হয়, তবেই তারা মুক্তি পাবে। সে কারণেই আমার মর্তে তোমার স্ত্রী রূপে আগমন।
রাজা, এই পুত্র অবতার। তবে মায়ের বিহনে পুত্র দুঃখ পাবে তাই এই পুত্র আমার সাথে এখন যাবে। পুত্র সুশিক্ষিত ও যৌবনপ্রাপ্ত হলে আবার তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যাবো।

রাজা শান্তনু স্ত্রী ও পুত্র শোকে কাঁদতে কাঁদতে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন।
..........................................