Blog Archive

Thursday, December 3, 2009

এবার পূজোর দিনগুলি যেমন কেটেছিল

শুভ মহালয়া
(১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯)


মহালয়া মানেই ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর শুনে দিনের শুরু। এ বহু ছোট থেকে শুনছি। তখন ভোররাতে দাদু রেডিও চালাত। ওত বুঝতাম না, কিন্তু ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে কি একটা অদ্ভূত তেজ আছে! আর সাথে পাওনা অন্যদের সুন্দর সব গান।

http://www.esnips.com/doc/6da7010d-aede-4bf8-988c-fcd0db11c9b5/Mahalaya_part1

http://www.esnips.com/doc/f88a1600-935e-41cf-a1ae-fb4c88570ad5/Mahalaya_part2

এখন কম্পিউটর, নেট হয়ে ভালই হয়েছে। অত ভোরে টাইম করে রেডিও চালাতে পারি না। তাই ডাউনলোড করে শুনে মনটা ফুর ফুরে হয়ে উঠল। হাওয়ায় কেমন পূজো পূজো গন্ধ!




মা দূর্গা এবার স্বামী, পুত্র, কন্যাদের নিয়ে কিছুদিন বাপের বাড়ি ঘুরতে এলেন। আমরাও তাদের সাথে কিছুদিন আনন্দে মেতে উঠবো। ড্যাং কুড়াকুড়...ড্যাং কুড়াকুড়...ঢাকের বাদ্যি এবার বেজে উঠবে।





শুভ মহালয়ায় সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা




...........................................................

চতুর্থী
(২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)

আজ চতুর্থী...তিথি অনুযায়ি আজ পাপার মৃত্যুদিন...একটু ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই সকালটা কাটল...তারপর বেরিয়ে এই ফিরছি...খুব যে মন খারাপ তা না!

ক’দিন ধরে খুব কাকদাদার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

আজও যার কথা ভাবলে মনটা আদ্র হয়ে ওঠে -সে হল আমার ভেবলু কাকাদাদা।

সম্পার স্টুডেন্ট অলক তখন h.s দিচ্ছে। কমার্স কলেজ়ে সিট পরেছে। সম্পা একদিন এসে আমায় বললো কলেজের উঁচু নারকেল গাছ থেকে নাকি একটা দাঁড়কাকের ছানা পরে গেছে। বাচ্চারা ঢিল ছুড়ছিল, ও বকেছে। বিকেলে আমি ওর সাথে কলেজ়ে গেলাম। তখনও একপাশে পরে ছিল। ভাবলাম মরে গেছে। কিন্তু না! মাথা ঝুঁকে পরে আছে। সেটাকে তুলে রিক্সা করে বাড়ি ফিরলাম, একটু ভয়ে ভয়ে।

প্রথম সাতদিন সেই ছোট্ট ছানা মাথা নিচু করে ঝিমিয়েই রইল। মুখ তুলে তুলে খাওয়াতে হত। তারপর তিনি মাথা তুললেন। আর সারাদিন মোটা গলায় ডাকতে লাগলেন। সে সময়টা আবার ছিল পয়লা বৈশাখ! বাড়িতে একটু খিটিমিটি হল।

তবু কাকাদাদা আমার ঘরের সামনে ঘেরা বারান্দায় নিজের আসন পেতে ফেললেন। যেহেতু আকারে একটু বড় আর থুম মেরেই থাকে তাই খোলাই থাকত। একটা মোটা লাঠি ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। সেটাতেই বসে বাগানের শোভা দেখত। একটু টুক-টুক করে লাঠির উপরেই পায়েচারি করে নিত। ভুলো মাঝে মাঝে মুখ উচু করে দেখে হয়ত অবাক হত। কিন্তু কাকদাদা ভুলোকে ভয় পেত না। আপন মনে থাকত। খিদে পেলেই গম্ভীর গলায় ‘কঁ...কঁ’ করলেই আমি দৌড়ে মুখে খাবার দিয়ে আসতাম। পাপা ওর জন্য মাছ, মাংস নিয়ে আসত।

মন ভাল থাকলে কাকাদাদা আমার গলা ফুলিয়ে নিচু স্বরে আবার গানও গাইত!

সে সময় পাপার ট্রানসফারের কথা চলছে আর খুব তাড়াতাড়ি আমরা কলকাতায় আসব। প্রতিদিন দু’বেলা কাকাদাদাকে নিয়ে বাগানে ওকে ওড়ানোর চেষ্টা করতাম। বুলবুলিটা নিজের ফুরফুর করে উড়ত। এটি বয়সে ছোট ছিল বলে উড়তেই চাইত না। আমি ডাল থেকে ঠেলে ঠেলে দিতাম। এখন তা ভেবে খুব দুঃখ হয়।

কাকাদাদাকে বেশি সময় দিতে পারি নি।

ওকে ছারলেই রাজ্যের দাঁড়কাক চলে আসত আর ওকে ঠোকড়াতো। কাকাদাদাকেই বেশ বড় লাগল আমার। গাটা কুচকুচে বার্নিস করা কালো। দেখতে দেখতে আমার কেমন একটা গর্বই হত। মনে হতো ও বিশাল হবে। আবার বাগানে ছারলে যারা ওকে তারা করত তাদের পাশে ওকে একদম পুঁটকি লাগত!

শেষে কলকাতায় আসার দিন ঠিক হয়ে গেল। ওকে এখানে আনা সম্ভব নয়। আর কলকাতায় তো দাঁড়কাক দেখাই যায় না! সব ছোট ছোট পাতিকাক! আমার ইনোসেন্ট, ভেবলা কাকাদাদা তাও উড়তে চাইলো না।

সম্পাদের বাড়ি প্রচুর পশুপাখি ছিল। কাকুর এসব সখ ছিল। আমায় পেলে কাকু খুব খুশি হতেন। এখনও ফোনে সেই গল্পই করেন। তো, আমি সম্পাকে বলতে ও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হল। যাবারদিন সকালে সম্পার বাড়ি কাকদাদাকে রাখতে গেলাম। ভেবলু দাদা কিছুই বুঝলো না। আমার কোলে থাকলে খুব নিশ্চিন্ত থাকত। ওর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে এলাম। মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক কাটলে নিওস্প্রিন দিতাম, তাও বুঝিয়ে এলাম। আসার সময় খুব কাঁদলাম।

এখনও ওর কথা মনে হলেই খুব কান্না পায়।



.................................................................. ...

পঞ্চমী

(২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)







..........................................................................

মহাষষ্ঠীতে একটু গল্প শুনি

(২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯)











...................................................................................

মহাষ্টমীর শুভ সন্ধ্যায় সবাইকে শুভেচ্ছা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯






আমাদের পাড়ার ঠাকুর...

আজ মহাষ্টমী, ভোগ–প্রসাদ খেয়ে চলে এলাম। সকালে উঠে অঞ্জলী দিয়েছি। তারপর পাড়াতেই বসে আড্ডা। রাতে আবার সন্ধিপূজো আছে।

কাল সপ্তমী সকালে আটটায় বাড়িতে থেকে বেড়িয়ে ছিলাম। রাত সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরেছি। পিসির সাথে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় গেছিলাম।
সারাদিন খুব ভাল ঘুরেছি। রাতে ফেরাটাই একটু কষ্টের হয়। সারা শহরে রাস্তায় এত জ্যাম! কালকের দিন কি ভাবে কাটলো সেটাই এখন বলি।

এমনিই আমি ভিষণ ঘরকুনো! পরশু পিসি রাতে বলল কাল বেলুড় যাবি। ঘুরতে কিন্তু বেশ লাগে! তার উপর ট্রেনেতো শহরে তেমন চরা হয় না! ভোরে উঠে গুছিয়ে-গাছিয়ে বেরতে বেরতে আটটা। ট্রেনে তেমন ভিড়ও ছিল না। ট্রেনের ওই ঝিকির ঝিকির্‌-ঝিক ঝিক আওয়াজ আর দুলুনী খুব ভাল লাগে। লেডিস কমপার্টমেন্টে উঠলাম খানিক পরে যমজ দু’টি ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে একজন মা উঠল। একটি উঠেই আমার সামনে জানলার ধারে এসে গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে পরল। পরে আদ্যাপীঠেও এদের সাথে দেখা হয়।






শিয়ালদায় ট্রেন বদলালাম। এবার আমাদের সামনে একজন মা তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে বসল। তারাও দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছে। আমি বাইরের ভিডিও তুলছি। ছোট মেয়েটি অনেকক্ষণ ধরেই আমায় লক্ষ করছিল। পরে আমাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। নামার জন্য সবাই উঠতেই সে এসে আমার হাত ধরে দারায়।


আমার ছোট্ট বন্ধু...


আদ্যাপীঠ...

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে অনেকবার গেলেও আদ্যাপীঠে কখন যায়নি। এসব কথা হচ্ছিল। পিসি বললো চল ওখানেই আগে যাই। ট্রেন থেকে নেমে বাচ্চা মেয়েটির সাথে গল্প করতে করতে রওনা দিলাম। তার অনেক কথা! স্কুল যাচ্ছে কিন্তু ক্লাস হচ্ছে না! ক্লাস টুতে পড়ে। পূজ়োয় কি কি হল জিজ্ঞেস করতে বললো শাড়ি হয় নি। মা তিনটেই জামা দিয়েছে। দিদিটি খুব শান্ত। মা ছোটভাইকে সামলাচ্ছে। দিদিটি এইটে পড়ে সেই বোন, মা-ভাই সবাইকে চোখে চোখে রাখছে।



ওরাও আদ্যাপীঠে এলো। আমরা প্রথমে ওখানে দুর্গা ঠাকুর দর্শন করে নিলাম। তারপর পূজো দেওয়ার বিশাল লাইনে। আমি আর আমার ছোট্ট সঙ্গিটি যদিও চারপাশ একবার দেখে নিলাম।



আদ্যাপীঠ খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখে খুব ভাল লাগল। মূল বড়মন্দিরে মার কাছে যাওয়া যায় না। মন্দিরের উল্টো দিকে নাটমন্দির সেখানে সামনে বসে সবাই মাকে দর্শন করছেন। এখানে প্রতিমা একটু অদ্ভূত ভাবে সাজান। সবার উপরে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি, তারপরের ধাপে আদ্যামার বিগ্রহ। শেষের ধাপে রামকৃষ্ণদেব।


পূজোয় সবাই প্রায় মাকে কাপড় দিয়েছেন। ঠাকুরমশায়রা মাকে তা পরাচ্ছেন। যারা কাপড় দিয়েছেন তারা নাটমন্দির থেকে তা দর্শন করছেন।

সারদামঠের পাশের পূজো...

পুজোর পর আমার ছোট্ট বন্ধুটি মা, দিদি, ভায়ের সাথে মামার বাড়ি চলে গেল। আমি-পিসি ওখানেই ভোগ খেলাম। একটু ঘুরে সারদামঠের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। কিন্তু যানতাম না মিশন সাড়ে এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে ছোট গেট দিয়ে সারদামঠে ঢুকেই একটা অদ্ভূত স্নিগ্ধ ভাব, দেখে মনটা এক অন্য ধরনের আনন্দে ভরে ওঠে। ওখানে পিসির কিছু অফিসিয়াল কাজ ছিল, বলতে ক’জন কাছেই অন্য একটি অফিসে নিয়ে চললো। বেরিয়ে দেখি একটা বড় গাড়িতে করে সন্যাসিনীরা যাচ্ছেন। হঠাৎ আমার নিলিমাদির কথা মনে পরল। কতদিন দেখিনি! উনি নিবেদিতা স্কুলে সেলাই বিভাগের দায়িত্বে আছেন। একটু উঁকি মারতেই দেখি ড্রাইভারের পাশে বসে! আমি তো ওনার নাম ধরে ডেকে উঠলাম। উনিও আমাদের দেখে অবাক হয়ে গেলেন। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। মঠে ঢুকতে পারলাম না তো কি! ওনার সাথে তো দেখা হয়ে গেল। প্রণাম করলাম।





এরপর আবার দক্ষিণেশ্বর ফিরে এলাম। তখন খুব বৃষ্টি শুরু হয়েছে! আর মার দর্শনও খানিক্ষণ বন্ধ! আমরা পঞ্চবটী ঘুরে ঘাটে গেলাম। বেলুড় যাব। নৌকায় করে যাত্রা শুরু হল। কোনদিন নৌকার একদম ধারে বসার সুযোগ হয় নি। ওখানে বসেও ভয়ে ভয়ে ভিডিও তুলেছি। দুটি মেয়ে সামনে বসেছিল। আমি একটু ছাতা নামাতে বললে, তাদেরও ফটো তুলে দেবার আবদার জুরলো।


বেলুড়ের পূজো...

বেলুড়ে পৌঁছে চারদিক সবুজ়ে সবুজ দেখে খুব ভাল লাগল। কত্তোলোক এসেছে! আমরা কিছু বই কিনেছিলাম, সে সব একটু পড়লাম গঙ্গার ধারে বসে। তারপর বেলুড়ে একটু ঘুরলাম। মন্দিরে প্রবেশের বড় লাইন! পিসিকে এক যায়গায় বসিয়ে লাইনে দাড়ালাম। আজ আরাত্রিক শুনেই যাব, মনে মনে ঠিক করেছি।




মন্দিরটির আর্কিটেক্টটাও দুর্দান্ত। কোন আড়ম্বর নেই, ছিমছাম। মন্দিরে রামকৃষ্ণদেব দর্শন করে ওখানেই বসে আমরা বই পড়ছিলাম। হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে বেরিয়ে পরলাম। তখন একাই চারদিক ঘুরে, বেলুড়ের দুর্গাপ্রতিমা দর্শন করে আবার ভিডিও তুলতে সাধ হল। কিন্তু বেটারী একদম লো! তুলতে তুলতে গঙ্গার দিকে যেতে যেতেই অফ হয়ে গেল।

আবার মন্দিরে ফিরে এলাম। সন্ধে হচ্ছে। ছ’টা নাগাদ আরাত্রিক শুরু হল।

সামনে রামকৃষ্ণের মর্মর মূর্তি। গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত। সামনের সারিতে সন্যাসীরা বসেছেন। তার পিছনে ব্রহ্মচারীরা। কিছুটা ছেরে পুরুষ ভক্তরা। তার পিছনে মহিলাদের বসার ব্যবস্থা। শেষে তো পরে সবাই ভীড় করে যে যেখানে পারে বসে। ভীড় গেট ছারিয়ে সিড়ি ছাড়িয়ে বাইরেও চলে যায়! এর আগে একবার তেমনি বাইরে থেকে শুনেছিলাম।
চারদিক শান্ত। তার মাঝে সন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা উদাত্তকন্ঠে যখন ভজন শুরু করলেন তখন মনে হল যেন অন্য জগতে চলে গেছি। আমিও গলা মেলালাম।


http://www.rkmissionrahara.org/gallery_audio_new.asp?af=khandana.mp3&fc=Khandana-Bhava


......................................................


মহানবমী...বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে......প্রকৃতিও এক পশলা কেঁদে নিল
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯








.........................................................



“এবার মাগো বিদায় তবে, আসছে বছর আবার হবে!”......বিজয়া দশমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা....
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯


প্রতিমা বরণ...








প্রতিমা বরণ...

No comments:

Post a Comment

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers