Blog Archive

Wednesday, September 16, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৯

[পূর্বকথা সুভদ্রা হরণের কথা... সুভদ্রার ইচ্ছে রাখতে সত্যভামা কৌশলে তার গন্ধর্ব বিবাহ দিলেন অর্জুনের সাথে ... কৃষ্ণ সভায় অর্জুনকে সুভদ্রার জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলে বলরাম ক্রুদ্ধ হল, তিনি দুর্যোধনকে পাত্র ঠিক করলেন ... দুর্যোধনের কন্যার সাথে কৃষ্ণের পুত্রের বিবাহ প্রসঙ্গ উঠল...দুর্যোধনের কন্যা লক্ষণার স্বয়ম্বর হলে, কৃষ্ণ পুত্র শাম্ব তাকে হরণ করেন...কর্ণের সাহায্যে তাকে বন্দি করা হয়...]

শাম্বের বন্ধন-সংবাদ লইয়া নারদের গমনঃ 



নারদ মুনি কৃষ্ণের কাছে চললেন পুত্রের সংবাদ নিয়ে। 

কৃষ্ণকে গিয়ে নারদ বলেন –হে হরি, শাম্বের সংবাদ শুনুন। দুর্যোধনের কন্যার স্বয়ম্বরের স্থান থেকে তাকে হরণ করার অপরাধে দুর্যোধন তাকে যুদ্ধে ইন্দ্রজালে জয় করে বন্দী বানিয়েছে। তাকে এত মারা হল যে বলে বোঝাতে পারব না। শেষে শ্মশানে কাটতে নিয়ে যায়। যুধিষ্ঠিরের চেষ্টায় ভীমসেন তাকে রক্ষা করেন। অনেক কষ্টে ভীষ্ম তাকে তাঁর গৃহে বন্ধ করে রেখেছেন। সেখানেও ক্ষুধায় আকুল শাম্ব নানা কষ্টে প্রাণ মাত্র নিয়ে বেঁচে আছে। দুর্যোধন আপনাকে এত গালি দিল, আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। 

সব শুনে কৃষ্ণ ক্রোধে অস্থির হয়ে তখনই যদু সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিলেন। 
সব ঘটনা শুনে হলধর বলরাম দুর্যোধনের জন্য চিন্তিত হলেন। ক্রোধে কৃষ্ণ সেনা সাজিয়ে চলেছেন, আজ দুর্যোধন সবংশে ধ্বংস হবে নিশ্চয়ই। 
এত সব চিন্তা করে রেবতীপতি বলভদ্র কৃষ্ণের কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বলেন –তুমি কি কারণে যাচ্ছ! আমি নিজে গিয়ে পুত্রবধূ ঘরে আনব। 
এভাবে কৃষ্ণকে অনেক বুঝিয়ে বলরাম নিজেই কৃষ্ণকে দ্বারকায় রেখে হস্তিনাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। 

হস্তিনানগরে পৌছে তিনি দ্রুত দুর্যোধনের কাছে দূত পাঠিয়ে বলেন –দুর্যোধন, না বুঝে তুমি কৃষ্ণের কুমারকে গৃহে বন্দি করেছ। তাই তোমার দোষ ক্ষমা করছি। এখন আমার সামনে পুত্র ও পুত্রবধূ এনে দাও। 

দূতের কাছে এ বার্তা শুনে দুর্যোধন ক্রোধে থরথর কাঁপতে গর্জন করে বলে –বলরামকে গুরু মেনেছি তাই ছেড়ে দিলাম, অন্য কেউ হলে আজই শেষ করে দিতাম। আগে পুত্রকে চুরি করার জন্য পাঠান হল। আর এখন পুত্রবধূ এনে দাও হুকুম হচ্ছে! তার লজ্জা করে না এমন আবদারে! 
হে দূত, তুমি গিয়ে বল বলরাম ভালয় ভালয় নিজ গৃহে ফিরে যান। 

দূত গিয়ে সে সংবাদ দিতে বলরাম ক্রোধে ফেটে পরলেন। হাতে হাল ও মুগুর তুলে নিলেন। লাফ দিয়ে রথ থেকে তিনি ভূমিতে পরলেন। ক্রোধে থরথর অঙ্গ, পা চলে না। ধরণীতে সেখানেই তার লাঙ্গল গাঁথলেন। সেই লাঙ্গল টেনে তিনি পঞ্চ যোজন বিস্তৃত হস্তিনানগরকে বিদীর্ণ করে চললেন। রাজা, প্রজা, পাত্র, মন্ত্রী সকলে নগর সমেত গঙ্গাজলে পরতে লাগল। নগরে হাহাকার শুরু হল। সকলে উর্দ্ধশ্বাসে বলরামের স্থানে দৌড়াতে লাগল। 

ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, বিদুরকে নিয়ে শত ভাই দুর্যোধন ও পাণ্ডবরা করজোড়ে বলভদ্রের স্তুতি শুরু করে –হে রেবতীপতি, আমাদের রক্ষা করুন। আপনিই ব্রহ্মা, আপনিই বিষ্ণু ও মহেশ্বর। আপনার আদি-অন্ত নেই, আপনি চরাচরে ব্যাপ্ত। আপনি এভাবে ক্রোধী হলে সংসার ভস্ম হয়, সেখানে হস্তিনানগর কোন ছার! এখানে কত অসহায় বৃদ্ধ, শিশু, গো, ব্রাহ্মণ, যুবা, নর, নারী বাস করে। 
বিশেষ করে আপনার পুত্রবধূ লক্ষণাও এখানে আছেন। ক্ষমা করুন, কৃপা করুন। আমরা সবাই আপনার পায়ে পরছি। এইবার প্রভূ দয়া করে রক্ষা করুন। 

সবার এত স্তুতু শুনে বলরামের ক্রোধ শান্ত হল। তিনি লাঙ্গল তুলে রাখলেন। 

ততক্ষণে দুর্যোধন শাম্বকে আদর যত্ন করে নানা অলঙ্কারে সাজিয়ে লক্ষণার সাথে রথে করে বলরামের সামনে উপস্থিত হল। বিবিধ যৌতুক রামের সামনে সাজিয়ে রাখা হল। 

সব দেখে শুনে রেবতীরমণ বলভদ্র আনন্দিত হলেন। তখনই তিনি পুত্রবধূ নিয়ে রওনা দিলেন। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহেন, সাধু সদা করেন পান। 
......................................

No comments:

Post a Comment

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers