Blog Archive

Wednesday, September 16, 2015

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৭

[পূর্বকথা সুভদ্রা হরণের কথা... সুভদ্রার ইচ্ছে রাখতে সত্যভামা কৌশলে তার গন্ধর্ব বিবাহ দিলেন অর্জুনের সাথে ... কৃষ্ণ সভায় অর্জুনকে সুভদ্রার জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলে বলরাম ক্রুদ্ধ হল, তিনি দুর্যোধনকে পাত্র ঠিক করলেন ]

দৈবকী-রোহিণী সহ বলরামের কথাঃ



দিন অবসানে সকল যদুরা যে যার গৃহে ফিরে গেল। 

সত্যভামা কৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন –হে প্রাণপতি, ভদ্রার বিবাহের বিলম্ব করছ কেন! 

গোবিন্দ বলেন –সখি, কিসের বিবাহ! পার্থের নাম শুনলেই বলরামের অঙ্গ জ্বলে। তিনি দুর্যোধনকে পাত্র নির্বাচন করেছেন। তার কাছে দূতও পাঠান হয়েছে। 

শুনে সত্যভামা চমকে ওঠেন। 
অধোমুখে মাটিতে বসে পরে বলেন –হে দেব এখন কি হবে! সুভদ্রার কারণে দেখছি অনর্থ ঘটবে। সব শুনে অর্জুন যদি পালিয়ে যান, তাহলে কি ভগিণীর অন্য বরের সাথে বিবাহ দেবে! কিছু না বলে চুপ করে আছ কেন! যদুকুলে কি কলঙ্ক দেবে! 

গোবিন্দ বলেন –দেবী, গোল কেন করছ! উতলা হয়ো না, আমি ঠিক উপায় বার করব। 

সত্যভামা বলেন –আর বিলম্ব কর না। কেউ যদি সব কথা বলরামকে গিয়ে বলে! সেই লজ্জার ভয়ে আমি কাঁপছি। আর যে মুখ দেখাতে পারব না, জলে ঝাঁপ দিতে হবে। স্ত্রীলোকই স্ত্রীলোকের বেদনার কথা ঠিক ঠিক বুঝবে। আমি আগে গিয়ে শাশুড়িমাকে সব জানিয়ে আসি। 

এই বলে সত্যভামা উঠে দেবকীর গৃহে গেলেন।

দেবকীকে ডেকে তিনি বেলন –শুনুন ঠাকুরাণী আমার নিবেদন। কুললজ্জার ভয়ে আমি অস্থির। সুভদ্রা বীর ধনঞ্জয়ের প্রতি আসক্তা হয়ে ভয় দেখাল তাকে না পেলে সে প্রাণ দেবে। সে জন্য আমি দ্রুত তাদের গান্ধর্ব বিবাহ দিলাম। এখন শুনছি তার জন্য অন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। 

সব শুনে দেবকী দেবী বিস্মিত হলেন। রোহিণীর(বলরামের মা) সাথে বলরামের গৃহে যান। 

দেবকী বলরামকে ডেকে বলেন –হে হলপাণি, সুভদ্রাকে অর্জুনের হাতে দিচ্ছ না কেন। রূপে, গুণে, কূলে, শীলে সে ভদ্রার যোগ্য। কুটুম্বে কুটুম্বে সম্বন্ধও হবে। 

বলরাম বলেন –মা, সব না বুঝে একথা বলছেন। পাণ্ডবদের অবস্থার কথা সবাই জানে। পার্থ আমাদের কুটুম্বের যোগ্য নয়। অযোগ্য সম্বন্ধে মা সব নষ্ট হয়। সে জন্য দুর্যোধনের কাছে দূত পাঠিয়েছি। সে নিষ্কলঙ্ক সুভদ্রার যোগ্য। তিনলোকে সকলে জানে পাণ্ডবরা জারজ সন্তান। এমন জনকে সুভদ্রার স্বামী করতে চাও! 

রোহিণী বলেন –পুত্র, সবাই বিচার করেই পার্থকে নির্বাচিত করেছে। কেন সকলের বাক্য অবহেলা কর। সবাই আমরা চাই অর্জুনের হাতে সুভদ্রাকে সমর্পণ করা হোক। পার্থ সাধু ব্যক্তি, ধর্মশীল, সর্ব গুণে গুণী। তাকে না দিয়ে সুভদ্রাকে অন্যের হাতে দেবে! ক্রোধ ত্যাগ কর পুত্র! তুমি যাই বল কাল সকালেই আমি ভদ্রাকে অর্জুনের হাতে তুলে দেব। 

মায়ের কথা শুনে বলরামের ক্রোধে অধর(ঠোঁট) কাঁপে। দুই চোখ রাগে জ্বলতে থাকে। 
তিনি ক্রোধের সাথে বলেন –আপনারা বাতুলের(পাগলের) মত কথা বলছেন। সকলে গোবিন্দের মতে মত দিয়ে যাচ্ছে। কৃষ্ণের তো জাতিকুলের কোন বিচার নেই। ভক্তি ভরে যে জন ডাকে, কথা কয়, কোন বিচার না করেই সে তার বন্ধু হয়। 
অথচ কিছুকাল আগে তার পুত্রের হাতেই দুর্যোধন তার কন্যা দান করেছে। সেই নব কুটুম্বিতায় কৃষ্ণের সামান্য স্নেহও নেই! আমি তাকে শিষ্য বলে অতি স্নেহ করি, তাই সবাই তার উপর ক্রুদ্ধ। দেখি কার কত ক্ষমতা সুভদ্রাকে অর্জুনের হাতে তুলে দেয়! মা আপনারা যান, আমায় আর কিছু বলবেন না। 

বলরামের এত কথা শুনে বিষণ্ণ বদনে দেবকী ও রোহিণী উঠে চলে এলেন। 

জন্মেজয় বৈশম্পায়ন মুনিকে বলেন –হে মুনিরাজ, কৃষ্ণের কোন পুত্রকে দুর্যোধন তার কন্যা দিলেন! কই আমায় তো সে কাহিনী বললেন না! সে কাহিনী শুনতে মন চায়। 

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন শুনেন পুণ্যবান।
................................................

No comments:

Post a Comment

Run To You - Live at Slane Castle, Ireland.mp3

Followers